রবিবার, ২২ এপ্রিল, ২০১২

মুসলিম বিশ্ব কি ইসলাম চায় না এবং তারা কি এর জন্য প্রস্তুতও নয়?


(নিম্নোক্ত প্রবন্ধটি আদনান খান রচিত “Geopolitical Myths” বইটির বাংলা অনুবাদের একাংশ হতে গৃহীত)
 
বছরের পর বছর ধরে পশ্চিমারা বলে আসছে যে, মুসলিমরা গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা চায়; কিন্তু তারা ইসলাম চায় না। তারা বলে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের কিছু সংখ্যালঘু মুসলিম ইসলাম চায়। বাকীরা পশ্চিমা ব্যবস্থাকে মেনে নিয়েছে এবং পুঁজিবাদ দ্বারা জীবনকে পরিচালিত করতে চায়। তথাকথিত কিছু আধুনিক মুসলিমরাও আজকাল বলে বসেন যে, মুসলিমরা ইসলাম চায় না এবং তারা এর জন্য প্রস্তুতও নয়। যদিও পশ্চিমা বিশ্ব ঠিকই বুঝতে পেরেছে যে, মুসলিম বিশ্ব ইসলাম চায় এবং ইসলাম ও মুসলিম বিশ্বের উত্থান তাদের জন্য হুমকি।

ইউ.এস ন্যাশনাল ইন্টিলিজেন্স কাউন্সিল তাদের গ্লোবাল ২০২০প্রজেক্টের আওতায় ম্যাপিং দি গ্লোবাল ফিউচারশীর্ষক রিপোর্ট প্রকাশ করে। দি ন্যাশনাল ইন্টিলিজেন্স কাউন্সিল (এন.আই.সি) হল আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা কেন্দ্র। এই রিপোর্টের মাধ্যমে ২০২০ সাল নাগাদ পুরো পৃথিবীর একটি প্রতিচ্ছবি অঙ্কন করবার চেষ্টা করা হয়েছে। রিপোর্টের উপসংহারে বলা হয়, মুসলিমরা আবার ইসলামের মূল ভিত্তিভূমির দিকে ফেরত যাচ্ছে - যখন ইসলামী সভ্যতা খিলাফতের মাধ্যমে পুরো বিশ্বকে নেতৃত্ব দিয়েছে। রিপোর্টে একটি কাল্পনিক দৃশ্যের অবতারণা করে বলা হয়, ‘কিভাবে একটি কট্টরপন্থী ধর্মীয় গোষ্ঠী কর্তৃক প্রণোদিত বিশ্বব্যাপী আন্দোলনের উত্থান সম্ভব।এছাড়াও বলা হয়, খিলাফতের উত্থানের দিকে দৃষ্টি রেখেই মার্কিন সব পরিকল্পনা, প্রস্তুতি নেয়া উচিত। মার্কিন অন্যান্য নীতি নির্ধারক ও থিঙ্কট্যাঙ্কদের রিপোর্টেও উল্লেখ করা হয় পুরো পৃথিবীব্যাপী একটি বৃহৎ আদর্শিক আন্দোলন খিলাফতকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবার জন্য কাজ করে আসছে। সি.আই.এ ইতোমধ্যে ঠান্ডা যুদ্ধকালীন সময়ের মত আরেকবার সাফল্য পাবার জন্য ইসলামিক মিডিয়া, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে লক্ষ্য করে গোপন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গ মুসলিম সমাজকে প্রভাবিত করবার জন্য ক্রমবর্ধমান হারে অর্থ, জনবল ও সম্পদের সরবরাহ পাচ্ছে।

একই সময়ে বিভিন্ন গবেষণা, উপাত্ত ও নীতিনির্ধারকদের রিপোর্ট এটা মেনে নিয়েছে যে, পুরো পৃথিবীব্যাপী মুসলিমরা পশ্চিমা মূল্যবোধকে প্রত্যাখান করেছে। পশ্চিমারা যখন তাদের আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে কোন ধরণের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে না, তখন এটা সত্যিই অপমানজনক এক পরাজয়। তার অর্থ মন এবং মগজের যুদ্ধে পশ্চিমারা ইতোমধ্যে পরাজিত। সেকারণে ভিন্ন একধরণের সরকার ব্যবস্থার উত্থানের পথকে রুদ্ধ করবার জন্য সরাসরি দখলদারিত্ব সর্বশেষ অস্ত্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

পশ্চিমাদের কর্মকান্ড দেখলে মনে হয় উম্মাহ্‌'র চাহিদা সম্পর্কে তারা অনেক মুসলমানের চেয়ে বেশী বিশ্বাসী। এসব কর্মকান্ড এটাও প্রমাণ করে যে, মুসলিমরা শুধুমাত্র ইসলাম চায়ই না; বরং তারা এর কাছাকাছি পৌছেও গেছে।

২০০৭ সালে ম্যারিল্যান্ড ইউনিভার্সিটি একটি ভোটের ব্যবস্থা করে, যার ফলাফল ইউনিভার্সিটি অব জর্ডানের চালানো পূর্বেকার পরিসংখ্যানের সাথে মিলে যায়। চারটি বৃহৎ মুসলিম অধ্যুষিত দেশে (মিশর, পাকিস্তান, মরক্কো এবং ইন্দোনেশিয়া) চালানো গবেষণায় বিস্ময়করভাবে খিলাফতের পক্ষে শতকরা ৭৫ ভাগেরও বেশী ভোট পড়ে। এ জাতিসমূহ মুসলিম রাষ্ট্রসমূহে শরীয়াহ্‌'র বাস্তবায়ন দেখতে চায়, বিভিন্ন রাষ্ট্রের ঐক্যের ভিত্তিতে সংগঠিত ইসলামী রাষ্ট্র - খিলাফত চায়-যা অবস্থান নেবে মুসলিম ভূমিসমূহে পশ্চিমাদের পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তিতে দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে, মুসলিম ভূমিতে পশ্চিমা মূল্যবোধের বিরুদ্ধে এবং নিরপরাধ সাধারণ জনগণের উপর আরোপিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে।

Worldpublicopinion.org কর্তৃক পরিচালিত আর একটি ব্যাপক ভোটে পুরো পৃথিবীব্যাপি মুসলিমরা শতকরা ৭০ ভাগেরও বেশী সমর্থন দেয় শারী'আহ্‌ আইন ও খিলাফতের পক্ষে।

মুসলিম উম্মাহ্‌ একটি দীর্ঘ সময় ধরে পতনের পর এখন তারা ইসলামী জীবনব্যবস্থাকে সমাধান হিসেবে গ্রহণ করতে চাচ্ছে। কোন ধরণের ব্যবস্থার ভেতর না থাকায় মুসলিম উম্মাহ্‌'র ভেতর যে দুর্নীতি বাসা বেধেছে তা থেকে বের হয়ে আসবার জন্যই আজকে মুসলিম বিশ্বে বিশৃংখলা হচ্ছে। এর মানে এই নয় উম্মাহ্‌ ইসলামের জন্য প্রস্তুত নয়; বরং এই বিশৃংখলার ভেতর দিয়েই সাধারণত পরিবর্তন আসে। ষোড়শ এবং সপ্তদশ শতাব্দীতে ইউরোপে উদার গণতন্ত্রের উত্থানের সময় এ অবস্থা দেখা দিয়েছিল, সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার উত্থানের সময় কিংবা চীনের বর্তমান উত্থানের সময়। মুসলিম উম্মাহের এ উচ্চাকাঙ্খা প্রতিফলিত হয় যখন ইসলাম কোনভাবে আক্রান্ত হলে তারা একত্রে প্রতিবাদে ঝাপিয়ে পড়ে তখন; যেমন: ফ্রান্সে হিজাব নিষিদ্ধ করার পর কিংবা রাসূলুল্লাহ (সা) এর ব্যঙ্গ কার্টুন অঙ্কন করবার পর। মুসলিম উম্মাহ্‌ ইসলামের জন্য অনেক বেশী প্রস্তুত। এখন তাদের দরকার কেবলমাত্র একটি রাষ্ট্র।

1 টি মন্তব্য: