শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

পিলখানা সেনা হত্যাকাণ্ডঃ যা ভুলার নয়

"আপনি মানবজাতির মধ্যে ইহুদী মুশরিকদের মুসলমানদের অধিক শত্রু হিসেবে পাবেন..." [সূরা মায়েদা: ৮২]

নিঃসন্দেহে প্রতিরক্ষা একটি জাতির গুরুত্বপুর্ণ বিষয় যদি জাতিটি বিশ্ব পরিমণ্ডলে টিকে থাকতে চাই যুগে যুগে প্রত্যেকটি উন্নত জাতিই তার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার রশদ যুগিয়ে গেছে আজো অবধি আমরা তা পরিলক্ষ করছি আদর্শিক দ্বন্দের মিথোস্ক্রিয়ায় যখন কোন জাতি অন্য জাতির উপর আগ্রাসন চালাতে চাই, স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যেকে চাই তার প্রতিপক্ষের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল করে দিতে যা তার আগ্রাসনকে বেগবান করে তেমনি এক স্বাভাবিক মিথোস্ক্রিয়ার অস্বাভাবিক উদাহরণ আমাদের পিলখানা সেনা হত্যাকাণ্ড ঠাণ্ডা মাথায় ঘটানো এক নশৃংস, বীভৎস হত্যাকাণ্ড আজ এই হত্যাকাণ্ডের ৩য় বর্ষ অতিক্রম করতে যাচ্ছে

বিডিআর সদর দপ্তরে ঘটে যাওয়া দুঃখজনক ঘটনা, বিশেষ করে পরিকল্পিতভাবে সেনা কর্মকর্তাদের নৃশংস হত্যাকান্ডে দেশবাসী মর্মাহত বিক্ষুদ্ধ আমরা এই মর্মান্তিক ঘটনায় নিহত সকলের রূহের মাগফেরাত কামনা করি শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাই নিরস্ত্র সেনা কর্মকর্তাদের নির্মমভাবে হত্যা করা, স্ত্রী সন্তানদের নির্যাতন হত্যা, গর্ভবতী মাকে খুন, লাশ পোড়ানো গণকবর তৈরী ইত্যাদি পৈশাচিক কর্মকান্ড নিঃসন্দেহে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ গত ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারী পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকান্ড নিয়ে ইতিমধ্যে অনেক আলোচনা পর্যালোচনা হয়েছে রহস্য উদঘাটনে গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি পরবর্তীতে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের কথা বলে সরকারের মন্ত্রীদের বাদ দিয়ে নতুন কমিটি করা হয় এরপর আবার সরকারের এক মন্ত্রীকে গঠিত কমিটিগুলোর সমন্বয়কারী হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়, যে কিনা সামরিক বাহিনীর অভ্যন্তরে সাম্রাজ্যবাদীদের পরীক্ষিত দালাল, যার উদ্দেশ্য তদন্ত কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং সত্যকে আড়াল করা ছাড়া আর কিছুই নয় আমাদের অবশ্য স্মরণ আছে অতীতে কোন তদন্ত কমিটির মাধ্যমে কখনোই প্রকৃত রহস্য উদঘাটিত হয়নি, হলেও দেশবাসী তা জানতে পারেনি ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারীরা সবসময় আড়ালেই থেকে গেছে তবুও আমরা দাবি করব জঘন্য হত্যাযজ্ঞের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে এবং মূল পরিকল্পনাকারীদের মুখোশও উম্মোচন করতে হবে

দুঃখজনক হলেও সত্য, জাতির এই চরম দুর্দিনেও আমরা ক্ষমতাসীন সরকারকে অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীনের মত আচরণ করতে দেখেছি প্রধানমন্ত্রী এবং তার একনিষ্ঠ সমর্থকরা যেভাবে কোনরকম দলিল-প্রমাণ ছাড়াই আক্রমণাত্মক কথার মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিসমূহকে দায়ী করেছে তাতে মনে হচ্ছে, সরকার প্রকৃত অপরাধীকে আড়াল করতে অথবা যেনতেন ভাবে দায় মুক্ত হতে চায় রাজনৈতিক সমাধানের সাধুবাদ দিয়ে এই হত্যাকাণ্ডকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও পরিকল্পনাকারীরা পারেনি সত্যকে গোপন করে রাখতে পারে নি মানুষকে ধোঁকা দিতে সমাজের কিছু আন্তরিক মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম ত্যাগের বিনিময়ে আজ মানুষের কাছে দিনের আলোর ন্যায় পরিষ্কার এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে আর কেউ নয়, দায়ী আমাদের প্রতিবেশী তথাকথিত বন্ধুপ্রতিম মুশরিক রাষ্ট্র ভারত তাদের এদেশীয় দোসর ক্রুসেডার সরকার তার সভাসদেরা মাছে ভাতের বাঙ্গালীকে ডাল ভাতের বিদ্রোহ দিয়ে মনোরঞ্জন করার যে অপুর্ব প্রয়াস তারা চালিয়েছিল তা তাদেরকে প্রশংসার (!) দাবীদার করে রেখেছে তবুও আমরা পুনরায় ফিরে যাব সেই দুঃসহ স্মৃতিচারণায় যাতে আমরা সতর্ক হতে পারি, সেই বীভৎস ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে পারি

ঘটনার বিশ্লেষণ - ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটঃ
পিলখানা সেনা হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের মূল রহস্য উদঘাটন করতে হলে প্রথমে সমগ্র বিষয়টিকে ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকে দেখতে হবে৷ দেশের অস্তিত্ব বিরোধী এতো বড় একটি ষড়যন্ত্রের পেছনে বাইরের শক্তির সম্পর্ক থাকার সম্ভাবনা খুবই প্রবল৷ সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব সম্প্রতি বিশ্ব রাজনীতির স্পটলাইট মধ্যপ্রাচ্য থেকে সরিয়ে দক্ষিণ এশিয়াতে স্থাপন করেছে৷ এজন্য, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ভারতের কাছে বাংলাদেশের কৌশলগত গুরুত্ব বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে৷ ভারত চীনের মাঝামাঝি অবস্থানের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের কৌশলগত গুরুত্ব অনেক৷ যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গোপসাগরের গভীরে সামরিক ঘাঁটি তৈরী করতে (যাকে তারা এখন বলছে বঙ্গোপসাগরে নৌ-টহল দেয়া) সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ আর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সবসময় একটি তাঁবেদার সরকার বসিয়ে রাখতে চায় যারা তাদের স্বার্থ রক্ষা করবে৷ ভারত যুক্তরাষ্ট্র ইদানীং পরস্পরের মিত্রশক্তিতে পরিণত হলেও দক্ষিণ এশিয়াকে ঘিরে ভারতের আছে নিজস্ব কিছু পরিকল্পনা৷ বস্তুতঃ ভারত এই উপমহাদেশে নিজেকে চালকের আসনে দেখতে চায়, আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে নিজের অবস্থান সুসংহত করতে চায় এবং উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যেই নেপাল, শ্রীলংকা, ভুটান, মিয়ানমার কিংবা বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রগুলোকে ভারতের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করে নেয়ার রয়েছে তার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা৷

আধিপত্যবাদী এই নীতি থেকেই ভারত সবসময় প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে অস্থিতিশীল দেখতে চায়, পরিণত করতে চায় ব্যর্থ রাষ্ট্রে৷ যেন ভুটানের মতো বাংলাদেশ, শ্রীলংকা নেপালও রাষ্ট্র হিসাবে ব্যর্থতার কাঁধে নিয়ে একসময় ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়৷ লক্ষ্যে ভারত সবসময়ই প্রতিবেশী দেশগুলোর রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অশান্ত করতে চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে নানারকম অপতত্পরতা বা অপপ্রচার৷ বিগত বেশ 'বছর যাবত বাংলাদেশকে রাষ্ট্র হিসাবে ব্যর্থ প্রমাণ করতেও চলছে একই রকম অপতত্পরতা৷ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দূর্বল করতে সেনাবাহিনীর ইমেজ নষ্ট করারও চেষ্টা চালানো হয়েছে বিভিন্নভাবে৷ এই প্রসঙ্গে গত ১৯ নভেম্বর ২০০৮ প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয় কার্ল জে সিওভাক্কো কর্তৃক লিখিত Harvard International Review নামক পত্রিকায় প্রকাশিত Stemming the Rise of Islamic Extremism in Bangladesh শীর্ষক নিবন্ধের সারমর্ম উল্লেখ করা যেতে পারে৷ ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ এর নির্বাচনের পূর্বে লিখিত এই নিবন্ধে জয় বলেছেসেনাবাহিনীতে চালাকি করে মাদ্রাসার ছাত্ররা ঢুকে পড়ছে; এটা হচ্ছে মাদ্রাসা পর্যায়ে সেনাবাহিনীর ভর্তি পরীক্ষার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে৷তিনি নিবন্ধে সম্পর্কে অসংখ্য তথ্য (তথাকথিত) উপস্থাপন করেছিলেন যার কোন সূত্র উল্লেখ করা ছিল না৷ সেনাবাহিনীর ইসলামীকরণ ঠেকানোর জন্য তিনি Toward Renewal: A Secular Plan শিরোনামে অনেক কিছুর মাঝে সেনাবাহিনী পূনর্গঠনের পরিকল্পনাও উপস্থাপন করেছিলেন৷ এছাড়াও ভারতের দেশীয় দালালরা বিভিন্ন টকশো বা সভা-সেমিনারে দেশের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ক্রমাগত বিষোদগার করেছে এবং জনগণ সেনাবাহিনীর মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করার চেষ্টা চালানো হয়েছে৷

শক্তিশালী নেতৃত্ব, শাসনব্যবস্থা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশ যদি একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হয়, তবে তা হবে ভারতের আধিপত্যবাদী নীতির জন্য হুমকি স্বরূপ কারণ, তাহলে অন্যান্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর জন্য তা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে এবং তারাও ভারতের প্রভাব বলয় থেকে বের হয়ে আসার আপ্রাণ চেষ্টা করবে পরিণতিতে ভারতেরঅখন্ড ভারতপ্রতিষ্ঠার স্বপ্ন চুরমার হয়ে যাবে ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পরক্ষণেই কংগ্রেস সভাপতি আচার্য কৃপানলি বলেছিলেন Neither the Congress nor the nation has given up its claim of United India' কংগ্রেস কিংবা জাতি অখন্ড ভারতের দাবি পরিত্যাগ করেনি ভারতের তৎকালীন প্রম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেল বলেছিলেন : 'Sooner than later, we shall again be united in common allegiance to our nation.' অর্থাৎ অতি সত্বর আমরা জাতি হিসেবে আবার একীভূত হব ল্যাবি কলিন্স ডমিনিক লেপিয়ার লেখা বই মাউন্ট ব্যাটেন অ্যান্ড দ্য পার্টিশন অব ইন্ডিয়া-য় বলা হয়েছে, স্বাধীন বাংলার তখনকার দাবির বিরুদ্ধে হিন্দু মহাসভার আপত্তি সমর্থন করেছিলেন পন্ডিত জওহর লাল নেহেরু প্রসঙ্গে মাউন্ট ব্যাটেন উল্লেখ করেন: Pundit Neheru has stated that he would not agree to Bengal being independent... In his opinion, East Bengal was likely to be a great embarrassment to Pakistan. Presumably, Pundit Neheru considered East Bengal was bound sooner or later to rejoin India.'

অর্থাৎ পন্ডিত নেহেরু বলেছেন যে তিনি স্বাধীন বাংলা মেনে নেবেন না ... তার মতে পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে পন্ডিত নেহেরু মনে করতেন যে পূর্ব বাংলা এক সময় ভারতের সাথে যোগ দিবে এখানে ইন্ডিয়া ডকট্রিনের প্রতিফলন রয়েছে ইন্ডিয়া ডকট্রিনের সারকথা হচ্ছে - দক্ষিণ এশিয়া হচ্ছে একটা স্ট্র্যাটেজিক ইউনিট, যার নিয়ন্ত্রণ থাকবে ভারতের হাতে; আর ভারতই অঞ্চলের জন্য একটি আঞ্চলিক নীতি প্রণয়নের অধিকার রাখে আমরা শুনেছি গুজরাল ডকট্রিনের কথাও - ভারত তার স্বার্থের প্রতি আঘাত সৃষ্টিকারী যেকোনো দেশের ওপর আক্রমন চালানোর অধিকারও রাখে

সেনা হত্যাকাণ্ডে ভারত কেন দায়ী?

বর্তমান সরকার তাদের ভারতপন্থী বুদ্ধিজীবীরা যুক্তি দিচ্ছেন - ভারত বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করবে না, কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়; যারা বর্তমান সরকারকে হটাতে চায় তারাই এসব করেছে; এসবের পিছনে জঙ্গিরাও থাকতে পারে - তাদের এসব কথার কোন ভিত্তি নেই

প্রথমত: বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল করা ভারতের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ,যা আমরা ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি অতীতেও ভারত এই প্রচেষ্টা চালিয়েছে এর মাধ্যমে ভারতেরঅখন্ড ভারত অপ্রতিদ্বন্দ্বী আঞ্চলিক শক্তির মর্যাদা লাভের পথ সুগমহয়

দ্বিতীয়ত: মুসলিমপ্রধান দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী সবসময়ই ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি বিডিআর বিদ্রোহের মাধ্যমে সবেচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আমাদের সেনাবাহিনী এখানেও লাভবান একমাত্র ভারত যেসব মেধাবী সেনা কর্মকর্তাদেরনৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে তাদের মত সেনা কর্মকর্তা তৈরী করতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন উপরন্তু এই সেনা হত্যাকান্ডের মাধ্যমে বিডিআর সেনাবাহিনীর মধ্যে যে সন্দেহ এবং ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হবে, তার দীর্ঘ মেয়াদী সুবিধাও যাবে ভারতের পকেটে

তৃতীয়ত: দেশের সীমান্ত অরক্ষিত হলে সবচেয়ে সুবিধা হবে ভারতের ভারত সুযোগে অনেক পুশ ইন করবে, যার মধ্যে রয়েছে ফেনসিডিল, ইয়াবা, ভারতীয় মটর সাইকেল এবং কিছু মানুষ, যারা কোন ঘটনা ঘটাবার অপেক্ষায় থাকবে অন্যদিকে বিডিআরের চেইন অবকমান্ড ধ্বংসের মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বিডিআরকে তার পূর্বের শক্তিশালী অবস্থায় ফিরিয়ে আনতেও দীর্ঘ সময় প্রয়োজন

এছাড়া বাংলাদেশের ক্ষমতা কাঠামোর মাঝে ঐতিহাসিকভাবে ভারত বিরোধী মনোভাব রয়েছে৷ এর কারণ প্রধানত তিনটি:

. বাংলাদেশের সেনাবাহনী হল মুসলিম সেনাবাহনী, যা নেহেরু ডকট্রিন তথা অবিভক্ত ভারত প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অন্তরায়৷

. বাংলাদেশের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি ভারত, যা ১৯৭১ সালের পর বাংলাদেশের প্রত্যেক মুসলিম দিনে দিনে টের পাচ্ছে৷ যেমন: আফগানিস্থানে প্রায় ১০ বছর মেয়াদী মার্কিন অন্যায় ক্রুসেডে নিহত মার্কিন সৈন্যের সংখ্যা ১০০০ এর মত৷ অথচ একই সময়ে ২০০১ সালের পর ভারত হত্যা করেছে ১১৭০ জনের বেশি বাংলাদেশী মুসলিম

. সর্বোপরি ভারত কাশ্মীর গুজরাটসহ বিভিন্ন প্রদেশে দশকের পর দশক ধরে হাজার হাজার মুসলিম নিধন, পোড়ানো, ধর্ষণ, লক্ষ লক্ষ মুসলিমদের জেল জুলুমের মাধ্যমে মুসলিমদের বিরুদ্ধে তার ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে৷ কাশ্মীরকে ভারত দক্ষিণ এশিয়ার ফিলিস্তিনে পরিণত করেছে যা এদেশের সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে সাধারণ মুসলিম কখনো মেনে নিতে পারেনি৷

বাংলাদেশের প্রতি ভারতের ঐতিহাসিক আচরণঃ

দেশের বামঘরানা ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতির মানুষেরা কোন এক রহস্যজনক কারণে ভারতের ব্যাপারে অত্যন্ত রক্ষণশীল ভূমিকা পালন করে থাকেন৷ তাই গত ৩৮ বছর যাবত বাংলাদেশের প্রতি ভারতের তীব্র শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব চরম বিমাতাসুলভ আচরণের পরও তারা সকল ক্ষেত্রে ভারতকে ষড়যন্ত্রকারীদের তালিকার বাইরে রাখেন৷ প্রয়োজনে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে হলেও তারা ভারতমাতার স্তুতি গাওয়াকেই অধিক যুক্তিযুক্ত মনে করেন৷ আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশের অনেক বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ ভারত প্রেমিক বুদ্ধিজীবি ভারতমাতার পায়ে জীবন উৎসর্গ করতে চান মেনে নিতে চান ভারতের সকল অন্যায় অযৌক্তিক দাবী-দাওয়া কিংবা, ভারতের আধিপত্যবাদী আগ্রাসনমূলক কার্যকলাপকে দেখেন মাতৃসুলভ স্নেহের দৃষ্টিতে গত ৪০ বছরে বাংলাদেশের সাথে ভারত যে বন্ধুপ্রতিম (?) আচরণ করেছে তার সারসংক্ষেপ নিম্নস্বরূপ:

) প্রায় হাজার কি.মি. দীর্ঘ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অঞ্চলে স্বাধীনতার পর থেকেই ভারতের ভূমিকা আগ্রাসনমূলক বিএসএফ গড়ে প্রতি তিন দিনে একজন করে বাংলাদেশী হত্যা করছে বলে তথ্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এদের বেশীর ভাগই নিরীহ গ্রামবাসী এমনকি ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে নিরীহ গ্রামবাসীদের সম্পদ লুটপাট, হত্যা, ধর্ষণ ইত্যাদি জঘন্য কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে

) আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ভারত সীমান্তে দীর্ঘ কাঁটাতারের বেড়া তৈরী অব্যাহত রেখেছে

) মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ ভারতকে বেরুবাড়ি হস্তান্তর করলেও, বাংলাদেশ এখনো তিন বিঘা করিডোর ফেরত পায়নি উপরন্তু, সব অঞ্চলের মানুষেরা স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়েও গত ৪০ বছর যাবত উম্মুক্ত জেলখানায় বন্দী হিসাবে দিন কাটাচ্ছে

) বাংলাদেশের সীমানায় জেগে উঠা তালপট্টি দ্বীপকে ভারত জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে নীলফামারী, পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন পয়েন্টে এখনো এদেশের হাজার হাজার একর জমি ভারতের দখলে রয়েছে

) আন্তর্জাতিক নিয়ম নীতিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ভারত আমাদেরকে পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করেছে তারা ফারাক্কা বাঁধ, টিপাইমুখী বাঁধসহ উজানে আরও ডজন খানেক বাঁধ দিয়ে এদেশকে পুরোপুরি মরুভূমি করার পক্রিয়া সম্পন্ন করেছে ভারতেরআন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পবাস্তবায়িত হলে তা বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি অর্থনীতিতে ডেকে আনবে চরম বিপর্যয় কমে যাবে নদীর নাব্যতা, মিঠা পানির মাছের উৎপাদন হ্রাস পাবে, আর্সেনিক সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করবে এবং ক্রমশ: বাংলাদেশের বিশাল এলাকা পরিণত হবে ধূ ধূ মরুভূমিতে

) চারাকারবারীদের মাধ্যমে ভারত এদেশে মাদক, জালমুদ্রাসহ ভারতীয় বিভিন্ন নিম্ন মানের সামগ্রী ঠেলে দিচ্ছে আর, অপরদিকে এদেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে তেল সার বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত রির্পোট থেকে জানা যায়, পিলখানা ট্রাজেডির পর সীমান্তে বিডিআরের অনুপস্থিতির সুযোগে এদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেল সার ভারত মিয়ানমারে পাচার হয়ে গেছে আর দেশে প্রবেশ করেছে মাদকসহ বিভিন্ন নিম্নমানের ভারতীয় সামগ্রী

) খোদ ভারতের মাটিতেই ভারতীয় কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় নিখিল বঙ্গ সংঙ্ঘের ব্যানারে চলছে বাংলাদেশকে বিভক্ত করার এক জঘন্য ষড়যন্ত্র সম্প্রতি কলকাতার বঙ্গসেনারা এদেশের ১৯টি জেলা নিয়ে কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গ কেন্দ্রিক একটি প্রবাসী বঙ্গভূমি সরকার গঠনের প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তাদের শ্লোগান ছিল বঙ্গভূমির দখল চাই তারা ভারত সরকারের চোখের সামনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এই হীন অপতৎপরতা চালাচ্ছে

) বাংলাদেশের যুবসমাজকে ধ্বংস করার জন্য ভারত দীর্ঘ এই সীমান্ত অঞ্চলে অসংখ্য ফেনসিডিলের কারখানা তৈরী করেছে এবং অবৈধ উপায়ে তা বাংলাদেশে পাচার করছে ফলে মাদকের মরণনেশায় ধ্বংস হচ্ছে দেশের যুবসমাজ

ঘটনা-পরবর্তী ভারতীয় প্রতিক্রিয়া

বিডিআর হেডকোর্য়াটারে ঘটে যাওয়া নারকীয় হত্যাযজ্ঞের পরপরই ভারতীয় রাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উক্তি থেকে শুরু করে, তাদের সামরিক বাহিনীর ব্যাপক প্রস্তুতি এবং সে দেশের ইলেক্ট্রনিক প্রিন্ট মিডিয়াতে প্রকাশিত খবরগুলো যে কোন ব্যক্তিকে উদ্বিগ্ন করার জন্য যথেষ্ট নির্মম হত্যাযজ্ঞের সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে বিষয়গুলো যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে বিবেচনার দাবি রাখে

ভারত সরকারের প্রতিক্রিয়াঃ

ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্বের মনোভাব বলে দেয় যে তারা এই ঘটনার পরবর্তী পরিস্থিতি সম্পর্কে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেঃ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে পরিস্থিতি মোকাবিলায় যে কোন ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন এবং বিডিআরকে আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব দেন “...এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে সব ধরণের সহায়তা দিতে ভারত প্রস্তুত ... আমি তাদের উদ্দেশ্যে কঠোর সতর্কবাণী পাঠাতে চাই, যারা বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে, তারা যদি একাজ অব্যাহত রাখে, ভারত হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না, প্রয়োজনে সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জী নয়া দিল্লিতে অনুষ্ঠিত কংগ্রেস নেতাদের বৈঠকে একথা বলেন, যা আউট লুক-এর একটি প্রতিবেদনে জানানো হয় শেখ হাসিনার সরকারকে রক্ষা করার প্রয়োজন কেন ভারতের? অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় ২৫ ফেব্রুয়ারীর ঘটনার পর বিডিআর এর যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে তা ভারত শেখ হাসিনার মাধ্যমে করাতে চায় এমনকি সম্ভব হলে তারা নিজেদের স্বার্থের অনুকূলে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সংস্কারও করতে চাইবে

ভারতের সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়াঃ

ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্যাপক প্রস্তুতি দেশবাসীকে উদ্বিগ্ন করেছে এই প্রস্তুতি সম্পর্কে মিডিয়ায় যা প্রকাশিত হয়েছে তা নিম্নরূপ:

ভারতের প্রখ্যাত ইংরেজী দৈনিক হিন্দুস্থান টাইমস গত মার্চ প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিদ্রোহের পরপরই বাংলাদেশে মানবিক হস্তক্ষেপের জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীকে পুরোপুরি প্রস্তুত রাখা হয়েছিলো পত্রিকাটি জানায় যে, বিদ্রোহের দিন ভারতের বিমান বাহিনী (আইএএফ) IL-76 হেভি লিফ্ট এবং An-32 মিডিয়াম লিফ্ট এয়ারক্রাফট নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে পূর্ণ সহায়তা দিতে পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলো আসামের জোরহাটে অবস্থিত ভারতের সবচাইতে বড় বিমান ঘাটিকে এই সহায়তা মিশনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত রাখা হয়েছিল

বিএসএফ এর একজন ডাইরেক্টর জেনারেলের উক্তি থেকেও ভারতের সামরিক প্রস্তুতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়গত মার্চ এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে এই সঙ্কট (শুরু) হবার পর, আমরা ইন্দো-বাংলাদেশ সীমান্তে কর্তব্যরত আমাদের সকল সৈন্যদল অফিসারদের সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দিয়েছি

বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার মাধ্যমে জানা যায় ঘটনার পরপরই সীমান্তে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বেনাপোলসহ বিভিন্ন স্থল বন্দর গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় ভারি অস্ত্রশস্ত্রসহ বিপুল সংখ্যক বিএসএফ সদস্যের পাশাপাশি বিশেষ কমান্ডো বাহিনী ব্ল্যাকক্যাট মোতায়েন করে একই সাথে সমস্ত সীমান্ত জুড়ে রেড এলার্ট জারি করে

ভারতের প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে জানা যায় ভারত সরকার মৈত্রী এক্সপ্রেসের নিরাপত্তার জন্য বিএসএফ কে শান্তিরক্ষী বাহিনী হিসাবে বাংলাদেশে পাঠানোরও প্রস্তাব দিয়েছে

স্বভাবতঃই প্রশ্ন আসে, বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া বিডিআর বাহিনীর অভ্যন্তরীণ এই বিদ্রোহকে ঘিরে ভারতের মতো একটি বিশাল রাষ্ট্রের এতো প্রস্তুতি কেন আর যাই হোক এই বিদ্রোহ কোনভাবেই ভারতের জন্য নিরাপত্তা হুমকি ছিলো না আর তাছাড়া যে বিদ্রোহের গুরুত্ব ভয়াবহতা (প্রধানমন্ত্রীর সংসদে প্রদত্ত ভাষ্য অনুযায়ী) প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন, যে জন্য তারা সেনা অফিসারদের রক্ষায় দ্রুত সামরিক অভিযানে না গিয়ে ৩৬ ঘন্টা যাবত হত্যাকারীদের সাথে একের পর এক বৈঠক করে ধীর স্থিরতার সাথে রাজনৈতিকভাবে সামরিক বিদ্রোহ দমন করলেন, সেই বিদ্রোহের গুরুত্ব বা ভয়াবহতা ভারত সরকারই বা কিভাবে বুঝে ফেললো? এছাড়া দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যকার যে কোন বিদ্রোহ দমনে দেশীয় দক্ষ সেনাবাহিনীই যথেষ্ট, এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই তাহলে, ভারতের মিশন কী? বাংলাদেশের বর্তমান বন্ধু সরকারকে রক্ষা করা? বাংলাদেশের সরকারকে রক্ষা করবে ভারতীয় বাহিনী কেন? আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী নেই? নাকি প্রধানমন্ত্রী তাদের বিশ্বাস করেন না?

ভারতের মিডিয়ার প্রতিক্রিয়াঃ

২৭ ফেব্রুয়ারীর পূর্ব পর্যন্ত এদেশের জনগণও পুরোপুরিভাবে তথাকথিত এই বিদ্রোহের আসল রূপ বুঝতে পারেনি অথচ পুরো সময়ে ভারতীয় মিডিয়া ছিল অত্যন্ত তৎপর:

বিডিআর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ আরও ১১ জন সেনা কর্মকর্তার নিহত হবার সংবাদ ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ন্ত্রিত চ্যানেল এনডিটিভিতেই সর্বপ্রম প্রচার করা হয়েছে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা যেখানে দুই দিনেও শাকিল আহমেদের মৃত্যু নিশ্চিত করতে পারেনি, সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ঘন ঘন বিডিআর হেডকোর্য়াটারে যাতায়াত করে হত্যাকারীদের সাথে দফায় দফায় দেন দরবার করেও যেখানে গণহত্যার খবর পায়নি, সেখানে সুদূর ভারতে বসে ভারতীয় মিডিয়া ১২ জন অফিসারের নিহত হবার বিষয়ে কি করে নিশ্চিত হলো? তাহলে কি তাদের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্টরা বিডিআর হেডকোর্য়াটারের ভেতরে অবস্থান করছিলো?

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাএর সাবেক শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা বি. রমন ২৭ ফেব্রুয়ারী ভারতের বিখ্যাত ম্যাগাজিন আউটলুকে বলেন ভারতের প্রতি বিডিআর সদস্যদের বৈরী মনোভাব বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাধা ঘটনার পরপরই ভারতের প্রিন্ট মিডিয়ায় বিডিআরকে একটি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর বাহিনী হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছে আর আনন্দবাজার, টেলিগ্রাফের মত পত্রিকাগুলো বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে আক্রমণ করে ধারাবাহিকভাবে সংবাদ প্রচার করেছে এমনকি বিডিআর-এর ঘটনায় জঙ্গী কানেকশন ভারতীয় মিডিয়াই প্রথম আবিষ্কার করে পরবর্তীতে একই ধরণের কথা আমরা এদেশের মন্ত্রীদের মুখে শুনতে পাই

আজকের ভারত ও সমকালীন চিন্তাঃ

স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে করা সেই সকল শর্ত যার ভিত্তিতে ভারত আমাদের সাহায্য করেছে বলে শোনা যায় সেই গোপন চুক্তিগুলোর দিকে যদি আমরা নজর দেয় তাহলে বাংলাদেশের প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের কাছে আরো সুক্ষভাবে দৃষ্টিগোচর হবে ১৯৭২ সালে ১৯ শে মার্স বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ২৫ বছর মেয়াদী চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন উল্লেখ্য যে এই চুক্তি ২৫ বছরের গোলামীর চুক্তি হিসেবে খ্যাত এই চুক্তি অনুযায়ী,

1.     (বাংলাদেশে) ভারতীয় সমরবিদদের তত্ত্বাবধানে আধা সামরিক বাহিনী গঠন করা হবে গুরুত্বের দিক থেকে এবং অস্ত্রশস্ত্র সংখ্যায় এটি বাংলাদেশের মুল সামরিক বাহিনী হতে বড় তাৎপর্য্যপুর্ণ হবে

2.     বাংলাদেশকে ভারত হতে সমরোপকরণ ক্রয় করতে হবে এবং ভারতীয় সমরবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী তা করতে হবে
3.     ভারতীয় পরামর্শেই বাংলাদেশের বহিঃবাণিজ্য কর্মসুচি নির্ধারণ করতে হবে

4.     বাংলাদেশের বাৎসরিক এবং পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ হতে হবে

5.     ভারত বাংলাদেশ চুক্তিগুলো ভারতীয় সম্মতি ব্যাতিত বাতিল করা যাবে না

6.     ডিসেম্বর পাক ভারত যুদ্ধের পূর্বে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ভারত যে কোন সময় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারবে এবং বাধাদানকারী ব্যাক্তিকে চুরমার করে অগ্রসর হতে পারবে (সূত্রঃজাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫-১৯৭৫লেখক অলি আহাদ পৃষ্ঠাঃ ৪৫০)

যে কোন আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন কোন জাতিসত্ত্বার জন্য এই চুক্তি যে অত্যন্ত অবমাননাকর দাসত্বমূলক তা বলার অপেক্ষা রাখে না ঘটনা পরবর্তী দৃশ্যপট আজ মানুষকে আরো ক্রুদ্ধ ভীত করে তুলছে শুধুমাত্র এই এই কারণেই যে আধিপত্যবাদী, মুসলিমদের গণহত্যাকারী, দক্ষিণ এশিয়ার চালকের আসনে বসার জন্য মাতাল ভারতের এই ঘৃণ্য চক্রান্ত এখানেই শেষ হয়ে যায় নি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের প্রথম পর্ব শেষ করে এখন সে পরবর্তী পর্বের হোমগ্রাউন্ড প্রস্তুতিতে ব্যস্ত বাংলাদেশের প্রতি তার আগ্রাসী মনোভাব আজ বর্গাকারে পরিবর্তিত হয়েছে তাদের এদেশীয় দোসরদের সহায়তায় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার, গুম, বরখাস্থ এখনো চলছে এখনো তারা আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতি অর্জনকারী এবং বিশ্বের গেরিলা মিশন পরিচালনায় পারদর্শী অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই মুসলিম সেনাবাহিনীকে এমন এক নখদন্তহীন সিংহে পরিণত করায় ব্যস্ত যার গর্জন শুনে মুসলিমদের শত্রুরা সার্কাসের দর্শকদের তালি দিয়ে যাবে রাম রাজত্ব কায়েমের নেশায় ভারত আজ রাবণের ভুমিকায় অবতীর্ণ সর্বোপরি দেশের মানুষের ন্যায্য অধিকারকে তোরায় কেয়ার না করে সে একের পর এক সম্পদ আদায় করে নিচ্ছে সীমান্তে বাংলাদেশের মুসলিমদের হত্যা, নির্যাতন যেন দিনের প্রাতরাশ করে নিয়েছে সেই সাথে ফেনসিডিল দিয়ে তৃষ্ণা নিবারণ তো রয়েছেই পানির অপর নাম জীবনকে বাংলাদেশের মানুষের কাছে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে পানির অপর নাম মরণ ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে সে আগে পানি না দিয়ে মেরেছে এখন টিঁপাইমুখের মাধ্যমে পানি দিয়ে মারার পথ সুবন্দোবস্ত

উম্মাহর বিশ্বাসঘাতক মীর জাফরদের এই দেশীয় বংশধরেরা আজ মার্কিন-ভারতের হস্ত প্রসারণের পথ মসৃণ করছে তাতে কোন সন্দেহ নেই ইরাক, আফগানিস্থান, পাকিস্তানের ন্যায় সম্রাজ্যবাদী কাফেররা এই বাংলাদেশকেও তাদের ঘাঁটি বানাতে চায় যেভাবে তার রাতের আধারে ভারতীয় সিরিয়াল দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে আমাদের মন হৃদয় দখল করে নিয়েছে ঠিক একিই ভাবে তারা দিনের আলোতে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে আমার ভূমি দখল করে নেয়ায় তার একমাত্র উদ্দেশ্য এভাবেই যদি চলতে থাকে তাহলে অদূর ভবিষ্যতে হয়ত নেপাল ভুটানের রাজা প্রজাদের ন্যায় এদেশীয় সরকার প্রধানদের নাতি-নাতনীর বিয়ের পর হানিমুনের জায়গা হিসেবে দিল্লিকে বেছে নেয়ার মাধ্যমে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিব

ভারতীয় আগ্রাসন হতে পরিত্রাণের উপায়ঃ

আমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে রৌমারীর ঘটনা যাতে খুনী বিএসএফ এর এক বিশাল প্লাটুনকে সীমান্তের আপামর জনগণকে সাথে নিয়ে ভাগিয়ে দিয়েছিলো আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) এর ২০-২৫ জন জওয়ান। বিএসএফ এর ৫০ জনেরও অধিক খুনিদের হত্যা এবং তাদের অপূরণীয় ক্ষতির বিনিময়ে বাংলাদেশ বিসর্জন দিয়েছিলো তার দুই সোনার সন্তানকে এই দৃশ্য শুধু ভাগিয়ে দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না এই স্বল্পসংখ্যক হালকা অস্ত্রে সজ্জিত জওয়ানদের হাতে দখল হয়েছিল ভারতের বিএসএফ এর ক্যাম্প থেকে শুরু করে কিছু সংখ্যক ভূমি, যা তৎকালীন বাংলাদেশের মার্কিন বান্ধব সরকার এদেশের জনগণের প্রতি অশ্রদ্ধা জানিয়ে ভারতকে আবার ফিরিয়ে দেয় সে সময় ভারতীয় সামরিক বাহিনীর তরফ থেকে বলা হয়েছিল তারা এটা দেখে নেবে, তাদের দেখে নেয়ার নমুনা যদি ৬২ জন সেনা কর্মকর্তার লাশ হয় তাহলে তাদের দেখে নেওয়ার এখনো অনেক বাকি রয়ে গেছে অতএব তাদের বলতে চায় বাংলাদেশ ছোট রাষ্ট্র নয় অর্থনৈতিক সামরিক দিক থেকে শক্তিশালী রাষ্ট্র হবার মতো অনেক উপাদান বাংলাদেশে বিদ্যমান এদেশে রয়েছেঃ

) ১৫ কোটি মানুষ, যার অধিকাংশ মুসলমান নেতৃত্ব দুর্বল বিভক্ত হলেও বিশ্বাস, ঐতিহ্য সংস্কৃতিতে এই জাতি ঐক্যবদ্ধ
) ভৌগোলিক পরিবেশের (বিশেষত: নদীমাতৃক সবুজ সমতল ভূমি) কারণে কোন বহিঃশক্তি কখনো এই ভূমিকে বেশীদিন নিজের অধীনে রাখতে পারেনি রাশিয়া আক্রমণ করে যেমন হিটলার চরম মাশুল দিয়েছিল, তেমনি এদেশের মাটি দখলে রাখতে যে কোন বিদেশী শক্তির চরম খেসারত দিতে হবে
) বাংলাদেশ দক্ষিণ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত হওয়ার কারণে এই দেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে অর্থাৎ ভারত চীনের মাঝে স্বাধীন মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের গুরুত্ব অনেক আমরা দেখেছি যে এই কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সেনা ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করতে চায়
) অনেকেই ভারতের পেটের ভিতরে বাংলাদেশের অবস্থানকে বাংলাদেশের দুর্বলতা হিসেবে উল্লেখ করেন কারো ঘরের অভ্যন্তরে অবস্থান কৌশলগত দিক থেকে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অন্যতম শক্তির উৎস
) বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনী শৃংখলাবদ্ধ, দক্ষ মেধাবী আর সশস্ত্রবাহিনীর সাথে এদেশের জনগণের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর প্রতিরক্ষা নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি দেশের জন্য অন্যতম পুঁজি

আমাদের করণীয় জাতির এই ভয়াবহ সংকটময় মুহুর্তে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি-

দেশবাসীকে সর্বাবস্থায় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে; আর ইসলামই এদেশে মানুষের ঐক্যবদ্ধ থাকার একমাত্র ভিত্তি
সেনাবাহিনী-বিডিআরকে বিভক্ত দুর্বল করে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়াতে হবে
সেনাবাহিনী, বিডিআরসহ সার্বিকভাবে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে হবে
খিলাফত প্রতিষ্ঠায় দেশবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে একমাত্র খিলাফত সরকারই জাতীয় প্রতিরক্ষার সাথে সংশিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান এবং দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করে ভারত-মার্কিন ব্রিটেনসহ সকল শত্রু রাষ্ট্রসমূহের মোকাবেলা করতে সক্ষম
ভারতকে পুনরায় ইসলামী অনুশাসনের মাঝে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে যাতে তার সমগ্র আগ্রাসনের পরিসমাপ্তি ঘটে
সমাজের সচেতন অংশকে সাহসী ভূমিকা পালন করতে হবে দেশের মানুষের সামনে রাষ্ট্রের শত্রু-মিত্রের ধারণা পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতে হবে
নিষ্ক্রিয়তা রহস্যজনক ভূমিকার জন্য সরকারকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি করতে হবে
এই তথাকথিত বিদ্রোহের সাথে জড়িত ষড়যন্ত্রকারী হত্যাকারীদের বিচারের সম্মুখীন করার ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে
দেশী-বিদেশী তদন্তের নামে সরকার যেন এই ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে না পারে সেদিকে সকলকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন