শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

খিলাফতই একমাত্র সমাধান

যে রাষ্ট্রব্যবস্থা আহকামে শরিয়াহ্র প্রয়োগ ও ইসলাম প্রচারের জন্য দায়িত্বশীল তাই হচ্ছে খিলাফত ইসলামী শাসনব্যবস্থাকেই খিলাফত নামে অভিহিত করা হয় এবং এটা অন্য সব শাসনব্যবস্থা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন শুধুমাত্র আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা)’র কিতাব ও রাসূল (সাঃএর সুন্নাহ্র উপর পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত খিলাফত ব্যবস্থা একটা অনন্য ব্যবস্থা যদিও কেউ কেউ এই ব্যবস্থাটাকে ইমামত নামে সংজ্ঞায়িত করেনমূল শাসন ব্যবস্থা একই রাসুল (সাঃএর অনেক সহীহ্ হাদীস এই ব্যবস্থা সম্পর্কে আমাদেরকে অবহিত করে যে নামেই এই ব্যবস্থা সংজ্ঞায়িত হোক না কেন এসব হাদীসের মাধ্যমে জানা যায় যে ইসলামের দাবী হচ্ছে মুসলমানরা সর্বাবস্থায় ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করবে খিলাফত হচ্ছে সারাবিশ্বের মুসলমানদের নেতৃত্বযা শরিয়াহ্ বাস্তবায়ন করে ও ইসলামের আহ্বান পৃথিবীর সব মানুষের কাছে পৌঁছে দেয় ইমামত বলতেও একই ব্যবস্থাকে বোঝায়

দৈনিক দি টাইমস এক সময় এক হিন্দু লেখককে উদ্ধৃত করে লিখেছিল,

তুরষ্ক এখন ইসলামের নেতৃত্বদানকারী বিশ্বশক্তি থেকে একটা
গুরুত্বহীন দুর্বল বলকান রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে

এটা ছিল মার্চ ১৯২৪ সাল, তার কিছু দিন পূর্বে বিশ্বাসঘাতক মুস্তফা কামালের হাতে খিলাফত ব্যবস্থার পতন হয়েছে মাত্র এর ৮০ বছর পর বলকান রাষ্ট্রগুলো যেমন বসনিয়া কসোভোর জনগণ পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরেছে খিলাফতের ধ্বংসের পর কী ভয়ংঙ্কর বিপদ তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল আমরা কিভাবে ভুলব সেখানকার গাছে গাছে ঝুলন্ত মুসলমানদের মৃতদেহগুলোর কথা; আমাদের স্মৃতিতে দুঃস্বপ্ন হয়ে আছে হাজার হাজার মুসলমান মহিলার অপমানের কাহিনী; সেব্রেনিকার মাঠগুলোতে এখনও ছড়িয়ে আছে শত শত গণকবর মানবতার বিরুদ্ধে এই জঘন্য অপরাধ সংঘঠিত হয়েছে বিশ্বাসঘাতক জাতিসংঘের নাকের ডগায় স্থানীয় মুসলমানদেরকে প্রথমে শান্তির নামে ধোঁকাবাজি করে নিরস্ত্র করা হয়েছে এবং তারপর তাদের উপর বর্বর সার্বীয় খ্রিষ্টানদেরকে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে এখন আমাদের প্রশ্ন করা প্রয়োজন কিভাবে এরকম জঘন্য ঘটনা ঘটল যখন সুলতান মুরাদের উত্তরসূরীরা আকাশ পথে মাত্র ১৫ মিনিটের দূরত্বে অবস্থান করছিল? তারা তো সেই সব মুসলমানদেরই উত্তরসূরী যারা ৬০০ বছর পূর্বে বলকান অঞ্চলকে ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে এসেছিল আমরা কত অসহায় বোধকরি যখন আমাদের বিশাল সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে আবদ্ধ রেখে নির্যাতিত মুসলমানদের জন্য শুধুমাত্র বিমানভর্তি কম্বল আর কুরআনের কপি পাঠানো হয়

গত একযুগ ধরে দেড়শকোটি মুসলমানের চোখের সামনে পশ্চিমাদের নির্মম অবরোধের শিকার হয়ে মারা গেছে সাত লক্ষ ইরাকী শিশু আর এখন সমস্ত ইরাক জুড়ে চলছে ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনীর হামলা, খুন, দখল, শোষণ, লুটপাট আর ধ্বংসযজ্ঞসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধেরনামে চলছে বিশ্বব্যাপী মুসলিম নিধন ইহুদীবাদের মদদপুষ্ট সাম্রাজ্যবাদীদের সহযোগী হিসাবে কাজ করছে আরব বিশ্বের স্বৈরাচারী শাসকরা একদিকে এক মার্কিন তেল কোম্পানীর কর্মকর্তার নেতৃত্বে আফগানিস্তানে চলছে তথাকথিতলয়া জিরগারশাসন অন্যদিকে জনগণ প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে মার্কিন বোমারু বিমানের হামলা যুদ্ধবাজ মাফিয়া লর্ডদের জুলুম নির্যাতনে এভাবে আর কতদিন? আজ বিশ্বের সর্বত্র মুসলমানরা বুঝতে পারছে যে কোথাও তারা নিরাপদ নয় ইরাক, ফিলিস্তিন, বসনিয়া, চেচনিয়া, কসোভো, কাশ্মীর, আফগানিস্তান, সোমালিয়া, গুজরাট এই তালিকা প্রতিদিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে

গত সত্তর বছর কিংবা তারও বেশী সময় ধরে মুসলমানরা এই হতাশার গভীরে নিমজ্জিত ব্যর্থতা, বিভেদ, হানাহানি, রক্তপাত, ভীতি আর জুলুম হচ্ছে মুসলিম বিশ্বের বাস্তব চিত্র আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের দেশগুলোর কোনও প্রভাব নেই বললেই চলে বরং আমাদের উপর শত্রুদের প্রভাব এতটাই প্রবল যে পরস্পরের জন্য আমাদের দেশগুলো কিছুই করতে পারছে না এই দুঃখজনক বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে মুসলমানদের উচিত কিছু প্রশ্নের জবাব অনুসন্ধান করা তাদের জিজ্ঞাসা করা উচিত আজকে কেন আমরা এই অর্থহীন রক্তপাতে লিপ্ত? আমাদের দেশগুলোতে রক্ত ঝরছে বছরের পর বছর ধরে সাম্প্রতিক সময়ে আমরা নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করেছি লেবানন, চাদ, পশ্চিম সাহারা, ইয়েমেন, সোমালিয়া, ইরান, ইরাক আর আফগানিস্তানে পাশাপাশি আমাদের উপর চলছে পৃথিবীর সবচেয়ে নির্দয় সরকারগুলোর শাসন প্রতিবাদী জনগণকে বিনা বিচারে আটক রাখা, অত্যাচার করা কিংবা হত্যা করা তাদের কাছে কোনও বিষয়ই নয় তারা সবসময় চেষ্টা করছে তাদের বিরোধীদেরকে দেশে এবং দেশের বাইরে সম্পূর্ণ নির্মূল করতে

আমাদের প্রশ্ন করা উচিত আমাদের দুর্বলতা বিভেদ সর্ম্পকে কেন এত তেল টাকার অধিকারী হয়েও আজকের আরব বিশ্ব ইসরায়েলের উপর কোন চাপ সৃষ্টি করতে পারছেনা? কেন দেড়শকোটি মুসলমান মাত্র পঁয়ত্রিশ লাখ ইহুদী অধ্যুষিত ইসরায়েলকে পরাজিত করতে পারছেনা? কেন ১৫ বছরে . ট্রিলিয়ন অতিরিক্ত তেল রাজস্ব পেয়েও একটা আরব দেশও সাম্প্রতিক সময়ে উঠে আসা কোরিয়া কিংবা সিংগাপুরের মত শিল্পোন্নত দেশে পরিণত হতে পারল না? কেন বিভিন্ন মুসলিম দেশ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরস্পরের সহযোগী এবং পরিপূরক শক্তি হিসাবে কাজ করতে পারছে না? সৌদী আরবের টাকা আর সুদানের জনশক্তি কৃষিসম্পদ মিলে বিশাল কৃষিশিল্প গড়ে উঠতে পারে; উপসাগরীয় দেশগুলোর অর্থ আর মিশরের দক্ষ জনশক্তির সমন্বয়ে বড় মাপের উৎপাদনশীল শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব; কিন্তু এই সরকারগুলো তা করছে না কেন? ধর্ম, ইতিহাস, ভাষা, সংস্কৃতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে এত মিল থাকার পরও কেন আমাদের মধ্যে এত বিভেদ-অনৈক্য?

একসময়ের পরাশক্তি মুসলিম জাতি আজকে কেন এত দুর্বল? আমাদের দুর্বলতা তো কোনও উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বিষয় নয় আর অবশ্যই ইসলামও দুর্বলতার উৎস নয় বস্তুত আমরা দুর্বল কেননা আমরা ইসলামকে পরিত্যাগ করেছি যদিওবা আমরা মুসলমান কিন্তু যে সমাজ পরিবেশে আমরা বাস করি সেটা ইসলামিক নয় আজকের মুসলিম সমাজ ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করেনা আমাদের বর্তমান সমাজের চিন্তা, মূল্যবোধ, চেতনা, আইন-কানুন সবই অনৈসলামিক উৎস থেকে উৎসারিত আমাদের সমাজের প্রতিশ্রুতি আনুগত্য ইসলামের প্রতি নয়, জাহেলিয়াতের প্রতি

তাওহীদ হচ্ছে আমাদের প্রেরণা আর সকল ক্ষমতার উৎস হচ্ছেন আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) এই আক্বিদার বিপরীতে আজকের সমাজে প্রতিষ্ঠিত আছে পুঁজিবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, ব্যাক্তিস্বার্থ, মুনাফা আর আত্মগৌরবের বাতিল আক্বিদা তাই আমাদের হৃদয়ে আর ইসলামিক মূল্যবোধ প্রবেশ করে না আমাদের অন্তর সত্যিকার ইসলামিক চেতনায় আলোকিত নয় আমাদের আক্বিদা আর জীবন পদ্ধতির মধ্যে চলছে সুস্পষ্ট দ্বন্দ্ব

১৯২৪ সালে যখন মোস্তফা কামাল আনুষ্ঠানিকভাবে খিলাফত পদ্ধতির অবসান ঘোষণা করে তখনই মুসলমানদের জীবন ব্যবস্থায় শরিয়াহ্ শাসনের পুরোপুরি অবসান ঘটে মুসলমানরা পশ্চিমা নিয়ম-পদ্ধতি গ্রহণ করে এবং জীবন থেকে ধর্মকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে এক আল্লাহর উপাসনা বাদ দিয়ে মানব রচিত নিয়ম-পদ্ধতি আইন-কানুনের উপাসনা শুরু হয় আর এটাই হচ্ছে আমাদের সকল দুর্বলতা দুর্গতির মূল

খিলাফতের শাসন শেষ হয়ে যাওয়ার পর মুসলিম অধ্যুষিত ভূমিসমুহ ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তি, প্রধানত বৃটেন ফ্রান্সের দখলদারিত্বের শিকার হয় এই দুটো দেশ মুসলিম ভূমিগুলোর অর্থনীতি, শাসন, শিক্ষা এবং রাজনীতিতে সরাসরি পুঁজিবাদী ব্যবস্থা কায়েম করতে শুরু করে ক্রমান্বয়ে আমাদের দেশগুলো সম্পূর্ণভাবে এই ধর্মনিরপেক্ষ নিয়ম-পদ্ধতির অধীনে চলে যায় ঔপনিবেশিক শাসনামলে পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত পশ্চিমা চিন্তা-চেতনায় গড়ে ওঠা অনেক লোক রাষ্ট্রের উচ্চপদগুলোতে অধিষ্ঠিত হয় রাষ্ট্র, সমাজ গণমাধ্যমের উচ্চপদে আসীন এসব লোকের প্রভাবকে ব্যবহার করে মুসলমান সমাজকে পশ্চিমা ধাঁচে গড়ে তোলার প্রক্রিয়া চলতে থাকে

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পুরনো ধাঁচের উপনিবেশবাদ সমস্যার সম্মুখীন হয় যুদ্ধের কারণে ইউরোপীয় শক্তিগুলোর অর্থনীতিতে ধস নামে এবং ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের ব্যাপক প্রচারণা জাতিসংঘের চাপের মুখে ইউরোপীয়রা তাদের উপনিবেশগুলোতে সরাসরি উপস্থিতি প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয় এক সময়  মুসলিম দেশগুলো আপাত দৃষ্টিতে স্বাধীনতা লাভ করে

পুরনো সাম্রাজ্যবাদীদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পশ্চিমা মন-মানসিকতায় গড়ে ওঠা নব্য ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের কাছে এই নতুন রাষ্ট্রগুলোর শাসনভার ছেড়ে দেয়া হয় আর এরা এদের পূর্বতন সাম্রাজ্যবাদী প্রভূদের পদাংক অনুসরণ করতে থাকে নবগঠিত এসব রাষ্ট্রের উন্নয়ন এবং পুনর্জাগরণের জন্য ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রনেতারা ইসলাম ছাড়া অন্যান্য সকল পদ্ধতিই ব্যবহার করে কিন্তু ফল হয় বিপরীত রাজনীতির নামে চলে শুধু মাত্র দুর্নীতি এবং অত্যাচার; শাসকগণ জনগণের মধ্যে শুধু মাত্র বিভক্তি আর দুর্দশাই বাড়াতে সক্ষম হয় অপমানজনকভাবে মুসলিম দেশগুলো ক্রমান্বয়ে তাদের শত্রুদের উপর আরো বেশী নির্ভরশীল হয়ে পড়তে থাকে সংক্ষেপে বলা যায় বস্তুবাদী চিন্তার ধারকরা আমাদের জনগণকে যে মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়েছিল ধর্মনিরপেক্ষ পরিকল্পনা কর্মসূচীর মাধ্যমে সেগুলো তো অর্জন করতে পারেইনি বরং মুসলমানদেরকে পশ্চিমা ঔপনিবেশিক শক্তির দাসত্বের শৃঙ্খলে আরো বেশি করে আবদ্ধ করে ফেলেছে

দেশে দেশে মানুষ যখন মুসলিম জনপদগুলোকে ইউরোপীয়দের কবল থেকে মুক্ত করার জন্য বীরত্বপূর্ণ  লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল তখন ইসলাম ছিল তাদের মূল প্রেরণাশক্তি কিন্তু রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের পর যে সব সৎ মুসলমান জীবন বাজী রেখে এসব সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদেরকে পশ্চিমাদের মদদপুষ্ট ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয় এবং নিজেদের কুফর চিন্তা-চেতনা দ্বারা জনগণকে শাসন করতে শুরু করে তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া, মিসর পাকিস্তান সবগুলো দেশেই ইসলামী আবেগকে দূরে ঠেলে দিয়ে পশ্চিমাদের রেখে যাওয়া আইন-কানুন দিয়েই রাষ্ট্র পরিচালনার কাজ শুরু হয়

কিন্তু এতকিছুর পরও ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা মুসলিম বিশ্বের কোথাও তাদের সংগ্রাম থামিয়ে দেয়নি ধর্মনিরপেক্ষ জীবনব্যবস্থার ব্যর্থতাকে তুলে ধরে তারা সর্বত্রই ইসলামী জীবনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির এই বিরূপ পরিবেশেও এর বিরুদ্ধে তাদের লড়াই অব্যাহত আছে এবং মুসলিম উম্মাহ্ বিরুদ্ধে কাফেরদের ষড়যন্ত্রের মুখোশ খুলে দেয়ার জন্য তারা আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে

যখন দেশে দেশে মানব রচিত জীবনব্যবস্থার স্বরূপ উন্মোচিত হয়ে গেছে তখন জনগণ স্বাভাবিকভাবেই এই জুলুম, দুর্নীতি, পরনির্ভরতা, অপমান, অসহায়ত্ব বিভক্তির একমাত্র সমাধান হিসাবে ইসলামকেই দেখতে পাচ্ছে তাই গত দুই তিন দশক ধরে আমরা দেখতে পাচ্ছি কিভাবে মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র জনগণ ইসলামে ফিরে আসার জন্য জেগে উঠেছে

আজ আরববিশ্ব, আফগানিস্তান, মধ্য এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা, ইরান, ইরাক, কুর্দিস্তান, তুরষ্ক, আলজেরিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ সর্বত্র জনগণ তাদের মধ্যে বিদ্যমান কুফর জীবনব্যবস্থা জাতীয়তাবাদী চিন্তা-চেতনাকে ঝেড়ে ফেলে নিজেদের মৌলিক বিশ্বাসকে বুঝতে শুরু করেছে এবং ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিজেদেরকে নিয়োজিত করছে তাদের দৃঢ় ঈমানী চেতনা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের প্রতি তীব্র আকাঙ্খা অনেক স্বৈরশাসকের ভিত কাঁপিয়ে দিচ্ছে এবং পশ্চিমাদের অনেক হিসেব নিকেশ উল্টে যাচ্ছে ইসলামের এই পুনর্জাগরণ মুসলমান জনগণের  ঘরে ঘরে এই বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে যে, পৃথিবীকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য  আবারও ইসলাম ফিরে আসছে এই মুহূর্তে মুসলমানদের  করণীয় হচ্ছে এই সংগ্রামে পরিপূর্ণ আন্তরিকতা প্রজ্ঞার সাথে অংশগ্রহণ করা কাজের পূর্বশর্ত হিসেবে আমাদেরকে অবশ্যই বিশ্বমুসলিম তথা মানবতার সমস্যাকে গভীরভাবে অধ্যয়ন করতে হবে; কুফরের সাথে ইসলামের সংগ্রামের প্রকৃত রূপ উপলব্ধি করতে হবে এবং ইসলাম যে মানুষের সমস্যার পরিপূর্ণ সঠিক সমাধান দেয় বিষয়ে যথাযথ জ্ঞান অর্জন করতে হবে 

মহান আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) চান যে মানুষ একমাত্রই তাঁরই ইবাদত (দাসত্ব/ আনুগত্য) করবে এর অর্থ হচ্ছে মানুষ তার নিজের ধ্যান-ধারণা, মূল্যবোধ, আইন বিচার ব্যবস্থা কুরআন এবং রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাহ্ মাধ্যমে আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা)’ থেকে গ্রহণ করবে মানুষের উপর কর্তৃত্ব করার জন্য অন্য কোনও কর্তৃপক্ষকে গ্রহণ করার মানে হচ্ছেলা ইলাহা ইল্লালাহ” “আল্লাহ্ ছাড়া আর কোনও ইলাহ্ নেইএই সাক্ষ্যকে উপেক্ষা অস্বীকার করা ইসলাম মুসলমানদেরকে শুধুমাত্র বিশ্বাসই (ঈমান) নয় বরং তার সাথে সাথে জীবনের সব সমস্যার সমাধানের সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিও বলে দিয়েছে জীবনের সমস্যাগুলোর ক্ষেত্রে ইসলামিক সমাধান প্রয়োগ করা মেনে চলাই হচ্ছে মুসলমানদের জন্য ইবাদত যখন মুসলমানরা ঐশী আইন (আহকামে শরিয়াহ্) তাদের জীবনে প্রয়োগ করেছিল এবং তাদের জীবনের সব বিষয় ইসলাম অনুযায়ী পরিচালনা করেছিল আর ইসলামী শাসন ব্যবস্থার অধীনে ছিল তখন আমরা মুসলমানরা ছিলাম পৃথিবীরইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী জাতি উন্নততর সমাজ যা মানবজাতি এর আগে কিংবা পরে কখনো প্রত্যক্ষ করেনি

যখন থেকে আমরা ইসলামকে অনুসরণের ক্ষেত্রে শৈথিল্য প্রদর্শন করা শুরু করেছি ঠিক তখন থেকেই রাষ্ট্র জাতি হিসাবে আমাদের অধঃপতনের শুরু যখন আমরা ইসলাম এর জীবনব্যবস্থাকে পরিপূর্ণভাবে পরিত্যাগ করলাম তখন আমাদের অধঃপতন সম্পূর্ণ হল বিশ্ববাসীর সামনে আমাদের চরম অপমান অক্ষমতা প্রকাশিত হতে শুরু করল শুধুমাত্র ইসলামে প্রত্যাবর্তন করে তথা এই জীবনাদর্শের বিশ্বাস, ব্যবস্থাসমূহ আইনকে আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করেই আমাদের পুনর্জাগরণ সম্ভব যখন দুটো পরস্পর নির্ভরশীল উপাদান (বিশ্বাস ব্যবস্থা) এক সাথে সাবলিলভাবে উম্মাহ্ জীবনে বাস্তবায়িত হবে তখনই মুসলমানরা আবারও উন্নতি আর অগ্রগতি অর্জন করবে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা)’ সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে আমরা আবার আমাদের সত্যিকার অবস্থান তথা মানবজাতির নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত হব কিন্তু যতক্ষণ আমরা  অনৈসলামিক আইন-কানুন জীবনব্যবস্থা আঁকড়ে ধরে থাকব ততক্ষণ পর্যন্ত গভীর হতাশার অন্ধকার থেকে আমাদের মুক্তি নেই; সময় আমরা এমন জাতিসমূহের দ্বারা শোষিত প্রতারিত হতে থাকব যারা এক সময় আমাদের সমকক্ষ হওয়ারও স্বপ্ন দেখত না, আমাদের চেয়ে অগ্রগামী হওয়া তো দূরের কথা

বর্তমানে অনৈসলামিক ব্যবস্থার সরকারগুলো অত্যাচার বলপ্রয়োগের মাধ্যমে আমাদেরকে আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা)’ পছন্দকৃত একমাত্র মনোনীত জীবনব্যবস্থা পালন করা থেকে বিরত রাখছে তাই আমাদের সমাজে যদি ইসলামী জীবনব্যবস্থা চালু করতে হয় তাহলে অবশ্যই বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থাগুলোকে অপসারণ করে একটা ইসলামি সরকারব্যবস্থা তথা খিলাফত রাষ্ট্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা শুধুমাত্র একটা বাস্তব প্রয়োজনীয়তাই নয় বরং একটা ধর্মীয় কর্তব্যও (ফরজ) বটে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন