রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

ইমাম মাহদির আগমন ও খিলাফত প্রতিষ্ঠা

বর্তমান সময়ে প্রায়শই একটা কথা আমরা শুনি আর তা হল, “ভাই হাদীসএ তো আছে মুসলিমদের অবস্থা দিন দিন খারাপ হবে আর এরপর ইমাম মাহদী এসে এই উম্মাহকে রক্ষা করবে। তাই আমাদেরতো কিছু করার নেই যা করার ইমাম মাহদী এসে করবেন

এখন বলুনতো একথা শুনে আমাদের কি রকম প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য এ ধরনের বক্তব্য আমরা কিছু মানুষের মুখে শুনতে পাই। যখন আপনি তাকে বুঝানোর চেষ্টা করবেন শাসকদের জুলুমের বিরুদ্ধে কথা বলা ফরয কিংবা বর্তমান এই কুফর শাসন ব্যাবস্থাকে পরিবর্তনের জন্য কাজ করুন তখনই তারা অজুহাত হিসাবে ইমাম মাহদিকে টেনে আনেন। বস্তুত এই পরাজিত মানসিকতার লোকেরা তিন ধরনের উদ্দেশ্যে এ ধরনের কথা বলেনঃ

১। এক ধরনের লোক যারা নিজেরাতো সমাজ পরিবর্তনের জন্য কাজ করবেই না বরং চাইবে আপনাকেও পথভ্রষ্ঠ করতে; এরা অনেকে এই কাজটি করে ইচ্ছাকৃতভাবে বা না জেনে।

২। এক ধরনের লোক যারা ইসলামের জন্য কাজ না করার পিছনে নিজের জন্য যুক্তি হিসাবে এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে থাকেন এবং সারা জীবন এক ধরনের মিথ্যা সন্তুষ্টিতে ভোগেন।

৩। আরেক ধরনের ব্যাক্তি পাওয়া যায় যারা তাদের ভুল স্বীকার করার পরেও কখন ইমাম মাহদি আসবেন তার আশায় বসে থাকাকে শ্রেয় মনে করেন মূলত এরা কাপুরুষ।

এখানে একটা কথা বলে নিতে চাই, ইমাম মাহদির আগমনের সাথে ইসলামের জন্য কাজ করা বিষয়টি জড়িত নয়। বরং আমাদের উপর সকল ফরযগুলোর বিষয়ে আমাদের প্রত্যেককে জবাব দিতে হবে। চিন্তা করুন কোন ব্যক্তিকে কিয়ামতের ময়দানে যখন জিজ্ঞেস করা হবে তুমি খিলাফত প্রতিষ্ঠা জন্য কাজ কর নি কেন? তখন তার উত্তরে সে যদি বলে ইমাম মাহদি করবেন তাই আমি করিনি তবে ভাবুনতো কথাটা কেমন হাস্যকর শুনাবে।

এই ধরনের ব্যাক্তিদের আমরা বলতে চাই রাসুল (সা) এর সাহাবাগন কি ইমাম মাহাদি সম্পর্কে জানতেন না। তারা কি ইমাম মাহাদির আগমনের অপেক্ষায় ইসলামের দাওয়াহ পরিত্যাগ করেছিলেন। আমরা জানি আবু বকর (রা) এর খিলাফতকালে যখন ভন্ড নবীর উত্তান হয় ও কিছু মানুষ যাকাত দিতে অস্বীকার করে, তখন তিনি তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করেন। ওমর (রা) অর্ধ বিশ্ব জুড়ে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তীতে খলিফারা এরই ধারাবাহিকতা রক্ষা করেন। তারা কি ইমাম মাহাদি সম্পর্কে জানতেন না?

অনেকে বলতে চান ইমাম মাহদি এসে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করবেন। সেক্ষেত্রে আমরা বলতে চাই, আপনার ধারনা যদি সঠিকও হয় তারপরও খিলাফতের জন্য কাজ করা আপনার উপর ফরয। কিন্তু বাস্তবতা হল, ইমাম মাহদি এসে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করবেন এই ধারনাটি সম্পূর্ন ভুল। বরং হাদীসের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি খিলাফত প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর এবং একজন খলিফার মৃত্যুর পর ইমাম মাহদির আগমন ঘটবে এবং তিনি সকল ফিতনাকে দূরীভুত করবেন ও ইসলামকে বিজয়ী করবেন।

উম্মুল মুমীনিন উম্মে সালামাহ (রা), কর্তৃক বর্নিত রাসূল(সা) বলেন ,

একজন খলিফার মৃত্যুর পর লোকদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিবে তখন মদীনা থেকে এক ব্যাক্তি বের হয়ে মক্কার দিকে ছুটে পালাবে। এ সময় মক্কাবাসীগন তার নিকট এসে তাকে জোরপূর্বক বের করে আনবে। কিন্তু সে তা পছন্দ করবে না। অতঃপর হাযারে আসওয়াদ ও মাকামে ইবরাহীমের মধ্যবর্তী স্থানে লোকেরা তার কাছে বায়াত গ্রহন করবে। এরপর সিরিয়া থেকে একটি সেনাবাহীনি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য পাঠানো হবে। কিন্তু মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী বাইদা নামক স্থানে তাদেরকে ভূগর্ভে পুঁতে ফেলা হবে। তারপর যখন চারদিকে এই খবর ছড়িয়ে পরবে এবং লোকেরা চাক্ষুষভাবে এই অবস্থা দেখবে তখন শামের আবদাল গন এবং ইরাকের এক বিরাট দল তার কাছে আসবে ও তার কাছে বায়াত গ্রহন করবে। এরপর কোরাইশদের এক ব্যাক্তি যার মামা হবে বনু কালব , সেও ইমামের বিরুদ্ধে একদল সৈন্য পাঠাবে। ইমামের সেনাবাহীনি তাদের উপর বিজয়ী হবে। এটাই কালবের উত্থান। ইমাম মানুষের মধ্যে নবীর আদর্শ মোতাবেক কাজ কর্ম পরিচালনা করবেন এবং তার শাসনামলে ইসলাম সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে। তিনি সাত বছর অবস্থান করবেন। তারপর ইন্তেকাল করবেন এবং মুসলমানগন তার জানাযা পড়বে।( আবু দাঊদ)

উপরোক্ত হাদিস হতে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে খিলাফত প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর ইমাম মাহদির আগমন ঘটবে এবং ইমাম মাহদি এসে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করবেন এটা সম্পূর্ন ভুল ধারনা।

রাসুল(সা) বলেন, “ নিশ্চয়ই তোমাদের (সাহাবাদের) পর ধৈর্য্যের দিন আসবে, সে সময় কারো ধৈর্য্য ধরা জ্বলন্ত কয়লা আঁকড়ে ধরার সমতুল্য হবে। আর তার প্রতিদান হবে পঞ্চাশ জনের প্রতিদানের সমান। তখন একজন সাহাবী(রা) প্রশ্ন করলেন, হে রাসূল(সা) তাদের মধ্য হতে পঞ্চাশ জনের সমান? রাসূল(সা) বললেন, না বরং তোমাদের মধ্য থেকে পঞ্চাশ জনের সমান। (তিরমীযি, আবু দাঊদ)

আজ আমরা এমন একটা সময়ে উপস্থিত যখন বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে মুসলিমরা ইসলামকে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আজ তারা তাদের ঈমানের পরীক্ষা দিচ্ছে। জালেমদের জেলগুলোতে দিনের পর দিন মুসলিম তরুণদের অত্যচার করা হচ্ছে যেন তারা খিলাফতের দাওয়া হতে নিজেদের গুটিয়ে নেয়। হ্যাঁ, নিশ্চয়ই আমরা সে সময়ের মধ্যে আছি যখন ধৈর্য্য ধরা জ্বলন্ত কয়লা আঁকড়ে ধরার সমতুল্য এবং আমরা এটাও জানি এইসময়ে যারা ইসলামের জন্য কাজ করবে আল্লাহ তাদের জন্য উত্তম প্রতিদান রেখেছেন। সুতরাং, ইমাম মাহদির জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকাটা কখনো বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে না বরং আসুন আমরা আল্লাহর পুরষ্কারগুলো অর্জনের জন্য এখন থেকে ইসলামের জন্য কাজ করি।

পরিশেষে আল্লাহর কাছে দোয়া করি, আল্লাহ যেন আমাদের হেদায়েত দান করেন, আমাদের কবুল করেন আর আমাদের পথকে সহজ করে দেন। নিশ্চয়ই আল্লহর সাহায্য আসিতেছে ও বিজয় অতি সন্নিকটে। ইনশাল্লাহ.........।

২টি মন্তব্য: