আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,
أَفَمَنْ
يَعْلَمُ أَنَّمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ الْحَقُّ
كَمَنْ هُوَ أَعْمَى إِنَّمَا
يَتَذَكَّرُ أُولُو الْأَلْبَابِ
‘যে
ব্যক্তি জানে
যে, যা
কিছু আপনার
পালনকর্তার পক্ষ থেকে আপনার প্রতি
অবর্তীর্ণ হয়েছে তা সত্য সে
কি ঐ
ব্যক্তির সমান,
যে অন্ধ?
তারাই বোঝে,
যারা বোধশক্তি
সম্পন্ন।’
[সূরা রাদ:১৯]
طَلَبُ
الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ
নবী
(সা) বলেন,
‘জ্ঞান অন্বেষন
করা প্রত্যেক
মুসলিমের জন্য
ফরয।’
নবী
(সা) বলেন,
''তোমরা এমন
একটি সময়ে
বাস করছ
যখন প্রচুর
ফকীহ (ইসলামী
আইনবিদ) রয়েছে
এবং সামান্য
কয়েকজন বক্তা
রয়েছে, অর্থাৎ
প্রশ্ন করবার
মত লোক
কম এবং
বলবার মত
লোক বেশি। এসময়ে
জ্ঞান অর্জনের
চেয়ে আমল
শ্রেয়।
খুব দ্রুতই
এমন একটি
সময় আসবে
যখন সামান্য
সংখ্যক ফকীহ
ও প্রচুর
বক্তা থাকবে;
অর্থাৎ অনেকে
জানতে চাইবে
এবং সামান্য
জ্ঞান বিতরণকারী
থাকবে।
সে সময়ে
আমলের চেয়ে
জ্ঞান অর্জন
করা শ্রেয়।''
ইসলামের
দাওয়াতের জন্য
জীবন উৎসর্গকারী
দা'ঈদেরকে
অবশ্যই জ্ঞান
আহরণ করার
দিকে যথেষ্ট
গুরুত্ব প্রদান
করতে হবে। কেবলমাত্র
একটি সার্কেলে
বক্তব্য দেয়া
বা একজন
Contact এর সাথে কনসেপ্ট আলোচনা করার
জন্য যতটুকু
জ্ঞান অর্জন
করা জরুরী
ততটুকুর মধ্যে
সীমাবদ্ধ থাকা
সঠিক নয়। বরং
আমাদেরকে সবসময়
দ্বীনের ব্যাপারে
জ্ঞান বৃদ্ধির
জন্য যথেষ্ট
গুরুত্ব আরোপ
করা উচিত। যেসব
কারণে জ্ঞান
অর্জন করা
জরুরী:
১.
আল্লাহ'র
ভয় বৃদ্ধি
করার জন্য
২.
আমাদের আকলিয়া
ও নাফসিয়া
তৈরী করার
জন্য
৩.
কার্যকরভাবে দাওয়াত বহন করার জন্য
৪.
পূণর্জাগরণের উদ্দেশ্যে উম্মাহ'র উপরে
নেতৃত্ব নেয়ার
জন্য
৫.
জ্ঞান অর্জন
করে আল্লাহ'র পুরষ্কার
লাভের উদ্দেশ্যে
যেসব
বিষয়ের জ্ঞান
অন্বেষণ করা
ফরযে আইন
প্রথমত,
কোনরূপ সন্দেহ
ব্যতিরেকে যথাযথভাবে ইসলামের উপর ঈমান
আনা আমাদের
সবার উপর
ফরয এবং
সেকারণে এ
জ্ঞান আমাদের
জানা থাকতে
হবে।
এটি হল
আক্বীদার মৌলিক
বিষয়ের উপর
জ্ঞান।
وَإِنَّ
الظَّنَّ لَا يُغْنِي مِنَ
الْحَقِّ شَيْئًا
‘অথচ
সত্যের ব্যাপারে
অনুমান মোটেই
ফলপ্রসূ নয়।’ [সূরা
নাজম:২৮]
সুতরাং
আবেগতাড়িত ও অনুকরণসর্বস্ব আকীদা আমাদের
জন্য হারাম। আমরা
আমাদের নিজেদের
জন্য জানব,
আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়া তা’আলার অস্তিত্ব,
মুহাম্মদ (সা) তাঁর সর্বশেষ রাসূল,
কুর’আন
আল্লাহ'র
প্রেরিত বাণী
এবং এর
মধ্যে যাই
আছে তাই
সত্য, যেমন:
ফেরেশতা, পূর্ববর্তী
কিতাব, পূর্ববর্তী
নবী, বিচার
দিবস, জান্নাত,
জাহান্নাম ইত্যাদি।
দ্বিতীয়ত,
নিজের জীবন
ও আমল
সর্ম্পকে শরী'আহ হুকুম
জানা আমাদের
জন্য ব্যক্তিগতভাবে
বাধ্যতামূলক বা ফরয।
আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বিভিন্ন
ক্ষেত্রে কুর'আনের বহু
জায়গায় আমাদের
উদ্দেশ্যে বলেন,
يَا
أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ
‘হে
বিশ্বাসীগণ, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের
আনুগত্য কর।’
وَمَا
آَتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ
فَانْتَهُوا
‘রাসূল
তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ
কর এবং
যা নিষেধ
করেন, তা
থেকে বিরত
থাক।’
[সূরা হাশর:৭]
সুতরাং
আমরা আমাদের
কাজের ক্ষেত্রে
কমপক্ষে ফরয
ও মুহাররামাত
বা নিষিদ্ধ
বিষয়ের জ্ঞান
অর্জনে সচেষ্ট
হব, যেমন:
- সালাত
ও রোযার
সাথে সংশ্লিষ্ট
আহকাম বা
হুকুম
- মাতাপিতার
(স্ত্রী, সন্তান
যদি থাকে)
প্রতি দায়িত্বের
ব্যাপারে আহকাম
বা হুকুম
- বিপরীত
লিঙ্গের সাথে
সর্ম্পক স্থাপনের
ক্ষেত্রে আহকাম
বা হুকুম
- ক্রয়ের
আহকাম (বিক্রয়,
ব্যবসা, কর্মে
নিয়োগ-যদি
আমরা সেসব
কাজে নিয়োজিত
থাকি)
- গীবতের
হুকুম
- খিলাফতের
জন্য কাজ
করার আহকাম
ইত্যাদি
মূলত
যে কোন
কাজ সম্পাদন
করার আগে
এর হুকুম
সর্ম্পকে আমাদের
জেনে নিতে
হবে।
উসুলের মধ্যে
একটি মূলনীতি
রয়েছে: ‘প্রতিটি
কাজের জন্য
হুকুম প্রয়োজন’।
সুতরাং
একজন ডাক্তারের
জন্য তার
ক্ষেত্র সর্ম্পকে
জানা ফরয,
যেমন: ময়না
তদন্ত অনুমোদিত
কিনা, বিপরীত
লিঙ্গকে চিকিৎসা
দেয়া অনুমোদিত
কিনা, চিকিৎসার
কারণে নেশাজাতীয়
পদার্থ ব্যবহার
করা যাবে
কিনা, ইত্যাদি।
একজন
মসজিদের ইমামের
জন্য সালাতে
ইমামতি করার
ব্যাপারে আহকামসমূহ,
খুতবার বাধ্যবাধকতা,
মুসলিমদের প্রতি কর্তব্য, মিম্বার থেকে
হক কথা
বলার বাধ্যবাধকতা
ইত্যাদি সর্ম্পকে
জ্ঞান অর্জন
করা ফরয।
একজন
শিক্ষককে জানতে
হবে ইসলামের
সাথে সাংঘর্ষিক
ও কুফর
বিস্তার লাভ
করে এমন
কোন বিষয়
পড়ানো যাবে
কিনা, বিপরীত
লিঙ্গের কাউকে
শিক্ষা দেয়া
যাবে কিনা,
ছাত্রদের শৃংখলাবদ্ধ
করার হুকুম
ইত্যাদি।
স্বামীর
জন্য স্ত্রীর
প্রতি বাধ্যবাধকতা
সর্ম্পকে জানা
ফরয, জানতে
হবে তার
সাথে কোন
কাজসমূহ নিষিদ্ধ,
যদি সে
নির্দেশ অমান্যকারী
হয় তাহলে
তাকে কীভাবে
শৃংখলার মধ্যে
আনা যায়
এবং একইভাবে
স্ত্রীকে জানতে
হবে তার
স্বামী ও
সন্তানের প্রতি
কী কর্তব্য
রয়েছে, সন্তানের
মাতাপিতার প্রতি কী কর্তব্য রয়েছে
ইত্যাদি।
দাওয়াত
বহনকারীর জন্য
দাওয়াত বহন
করবার ব্যাপারে
আহকাম ও
চিন্তা সর্ম্পকে
জানা ফরয।
মুসলিমদের
খলীফাকে তার
দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট
হুকুমের ব্যাপারে
জানতে হবে
ইত্যাদি।
আমাদের
নিশ্চিত করতে
হবে যে,
আমরা প্রবৃত্তি
থেকে উদ্ভূত
কোন হুকুম
নয় বরং
শরী'আহ
মেনে চলছি।
ইসলাম
আমাদের জ্ঞানের
পথ ব্যতিরেকে
অন্য কোন
পথ অনুসরণ
করতে নিষেধ
করেছে:
وَلَا
تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ
بِهِ عِلْمٌ إِنَّ السَّمْعَ
وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَئِكَ كَانَ
عَنْهُ مَسْئُولًا
‘যে
বিষয়ে তোমার
কোন জ্ঞান
নেই, তার
অনুসরণ করো
না।
নিশ্চয় কান,
চক্ষু ও
অন্তকরণ এদের
প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে।’ [সূরা
বনী ইসরাইল:৩৬]
এমন
কি আমরা
যদি কোন
দলীল সর্ম্পকে
সুনিশ্চিত না হই, তাহলে বৈধ
ইজতিহাদের দ্বারা ইসলামী দলীল থেকে
প্রাপ্ত হুকুম
জেনে নিতে
হবে।
فَاسْأَلُوا
أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا
تَعْلَمُونَ
'অতএব
তোমরা যদি
না জান
তবে যারা
জানে তাদেরকে
জিজ্ঞেস কর’। [সূরা
আম্বিয়া:৭]
তিনি
সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদের
মধ্যে যারা
জানে না
তাদেরকে যারা
অধিক জ্ঞানবান
তাদের কাছ
থেকে জেনে
নেয়ার জন্য
নির্দেশ দিচ্ছেন।
মানদুব
বা উৎসাহিত
জ্ঞান
আক্বীদার
মৌলিক বিষয়াবলী
ও জীবনের
সাথে সরাসরি
সম্পর্কিত আহকাম ব্যতিরেকে ইসলামের অন্য
কোন ক্ষেত্রে
জ্ঞান অর্জন
করা মানদুব,
যেমন: তাফসীর,
আরবী ভাষা,
হাদীসের জ্ঞান
ও উসুল
আল ফিকহ।
এসব
জ্ঞান অর্জন
করার জন্য
আমাদেরকে প্রাণান্তকর
প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
জ্ঞান
আহরণকারী ব্যক্তির
মর্যাদা ও
পুরষ্কার
আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,
هَلْ
يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ إِنَّمَا
يَتَذَكَّرُ أُولُو الْأَلْبَابِ
'বলুন,
যারা জানে
এবং যারা
জানে না;
তারা কি
সমান হতে
পারে? নিশ্চয়ই
শিক্ষা গ্রহণ
করে কেবল
তারাই করে,
যারা গভীর
চিন্তাশীল’। [সূরা যুমার:৯]
يَرْفَعِ
اللَّهُ الَّذِينَ آَمَنُوا مِنْكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ
وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
'তোমাদের
মধ্যে যারা
ঈমানদার এবং
যারা জ্ঞানপ্রাপ্ত,
আল্লাহ্ তাদের
মর্যাদা উচ্চ
করে দিবেন। আল্লাহ্
খবর রাখেন
যা কিছু
তোমরা কর'। [সূরা
মুজাদালাহ:১১]
إِنَّمَا
يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ
الْعُلَمَاءُ
বান্দাদের
মধ্যে জ্ঞানীরাই
কেবল আল্লাহকে
(সত্যিকার অর্থে) ভয় করে।
[ফাতির: ২৮]
مَنْ
يُرِدْ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا
يُفَقِّهْهُ فِي الدِّينِ
আল
বুখারী মুয়াবিয়া
বিন আবু
সুফিয়ান থেকে
বর্ণণা করেন
যে, রাসূলুল্লাহ
(সা) বলেন,
'আল্লাহ যার
কল্যান চান,
তাকে দ্বীনের
ফিকহ (গভীর
জ্ঞান) দান
করেন।'
আবদুল্লাহ
বিন মাস’উদ (রা)
বর্ণণা করেন
যে, নবী
(সা) বলেন,
‘দুই ব্যক্তি
ছাড়া আর
কারও মত
হওয়ার চেষ্টা
করো না,
১) প্রথমত
যাকে আল্লাহ
সম্পদ দিয়েছেন
এবং সে
হক পথে
তা ব্যয়
করে এবং
২) দ্বিতীয়ত,
যাকে আল্লাহ
জ্ঞান দিয়েছেন
এবং সে
অনুযায়ী আমল
করে ও
অন্যদের শিক্ষা
দান করে।’ [বুখারী]
النَّاسُ
مَعَادِنُ كَمَعَادِنِ الْفِضَّةِ وَالذَّهَبِ خِيَارُهُمْ فِى الْجَاهِلِيَّةِ خِيَارُهُمْ
فِى الإِسْلاَمِ إِذَا فَقُهُوا
মানুষ
স্বর্ণ ও
রৌপ্যের খনির
মত।
জাহিলিয়্যাতের মধ্যে যারা শ্রেষ্ঠ তারা
ইসলামের মধ্যেও
শ্রেষ্ঠ হবে
যদি তারা
জ্ঞানবান হতে
পারে।
[মুসলিম]
জান্নাতের
পথ
مَنْ
سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا سَهَّلَ
اللَّهُ لَهُ طَرِيقًا إِلَى
الْجَنَّةِ
আবু
হুরাইরা বলেন
যে, নবী
(সা) বলেছেন,
‘যে ব্যক্তি
জ্ঞান অর্জন
করার জন্য
কোন পথে
যাত্রা করল,
তার জন্য
আল্লাহে জান্নাতের
রাস্তা সহজ
করে দিবেন।’
নবী
(সা) বলেন,
'যদি কেউ
জ্ঞান অর্জন
করার জন্য
রাস্তায় বের
হয়, তাহলে
আল্লাহ তাকে
জান্নাতের একটি রাস্তা দিয়ে ভ্রমণ
করাবেন।
যে জ্ঞান
অন্বেষণ করে
তার প্রতি
ফেরেশতাগণ সানন্দ চিত্তে তাদের পাখাসমূহ
নত করে
দেয়।
আলেম ব্যক্তির
জন্য আকাশ
ও পৃথিবীর
অধিবাসীগণ, এমনকি গভীর পানির মাছেরাও
মাগফেরাত কামনা
করে।
একজন ভক্তের
তুলনায় একজন
আলেম ব্যক্তির
শ্রেষ্ঠত্ব রাতের আকাশের পূর্ণাঙ্গ চাঁদের
মত যখন
সে চাঁদের
পাশে সব
তারাগুলো ম্লান
হয়ে থাকে। আলেমগণ
নবীগণের উত্তরসুরী
এবং নবীগণ
এমন কোন
কিছু উত্তরাধিকার
সূত্রে রেখে
যাননি যার
আর্থিক মূল্য
রয়েছে।
তারা কেবলমাত্র
জ্ঞান রেখে
গেছেন এবং
যে তা
গ্রহণ করল
সে যেন
বিশাল অংশ
গ্রহণ করল।’
ইমাম
হাসান আল
বসরী বর্ণনা
করেন যে,
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন,
مَنْ
جَاءَهُ الْمَوْتُ وَهُوَ يَطْلُبُ الْعِلْمَ
لِيُحْيِىَ بِهِ الإِسْلاَمَ فَبَيْنَهُ
وَبَيْنَ النَّبِيِّينَ دَرَجَةٌ وَاحِدَةٌ فِى الْجَنَّةِ
‘যার
মৃত্যু চলে
আসে এই
অবস্থায় যে
সে ইসলামকে
পুনর্জীবিত করার জন্য জ্ঞানার্জন করে
যাচ্ছে, তবে
তার ও
নবীগণের মধ্যে
জান্নাতে মাত্র
এক ধাপের
ব্যবধান থাকবে।’ [সুনান
আত তিরমিযী,
সুনান আদ
দারিমী]
আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়া তা'আলার কাছে
দু’আ
করি যাতে
তিনি আমাদেরকে
সঠিক জ্ঞান
অর্জন ও
তা প্রয়োগ
করবার সামর্থ
দান করেন।