সোমবার, ১৪ মে, ২০১২

আপনি কি দূষিত চিন্তাযুক্ত সমাজের অংশ ???


( নিমোক্ত আর্টিকেলটি লেখক মুক্তির পথিক হতে সংগৃহীত )


সময়ের পরিক্রমায় আমরা আজ এমন একটা পথ অতিক্রম করছি , যখন জাতি হিসেবে আমরা একটা অধপতিত সমাজ ব্যবস্থার অংশ। এমন একটা সমাজে আমরা বাস করছি, যেখানে আমরা আমাদের তরুণদের জন্য একটা নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারিনি, পারিনি জনগণের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে, পারিনি আমাদের বোনদের ইজ্জতের নিরাপত্তা দিতে, পারিনি জাতি হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াতে।

আমাদের চোখের সামনে যখন হাজারো আর্তনাদের প্রতিধ্বনি, হাজারো অসহায়ার প্রতিচ্ছবি, তখন আমরা দিব্যি ব্যস্ত মেয়েদের ফোন নাম্বার কালেকশনে, আমরা ব্যস্ত প্রেয়সীর সাথে নির্ঘুম রাত কাটানোয়, আমরা ব্যস্ত কোলাভেরিকে নিয়ে।

সমাজের হাজারো কান্না যেন আমাদেরকে জাগাতে না পারে, সে জন্য আমরা সাইনবোর্ড লিখে ঘুরে বেড়াই, “Don’t Wake Me Up”. বিশ্বাস ভঙ্গকারী প্রেয়সীর কথায় দুঃখ পাওয়া মনকে আমরা আশ্বস্ত করি এই বলে, “Good Girls Are Found in Every Corner Of The Earth, But Unfortunately The earth is Round”. শিলাদের যৌবনে মত্ত হয়ে, আমরা যখন দেখি, আমাদের শিলারা হয়ে পড়েছে পাওলি দাম’, তখন, “Mom says, No Girls!”, “No Girl, No Money, No Tension, No Honey” টাইপ শ্লোগান হয় আমাদের উপজীব্য।

উটপাখির জীবন থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান আজ যারা দিচ্ছে, তারাই যে আমাদেরকে উটপাখি বানিয়েছে, তা কি ভেবে দেখেছি একবারও? পাশ্চাত্যের অনুকরণে এমন একটা সমাজের স্বপ্ন তারাই আমাদেরকে দিয়েছিল যার অবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে আজ ইভটিজিং, গ্যাং রেপ, মূল্যবোধের অবক্ষয় আমাদেরকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। হাজারো ক্ষুধার্তের অনুচ্চ কণ্ঠস্বর থেকে মুখ ফিরিয়ে অবলীলায় কে এফ সির উপাদেয় খাবারে কামড় বসানোর মন্ত্র তো তারাই শিখিয়েছিল। বন্ধুত্বএর দোহাই দিয়ে প্রবাসী বন্ধুর স্ত্রীর সাথে পরকীয়ার বীজ তারাই তো বপন করেছিল আমাদের মনে। মাদকের অবাধ সহজলভ্যতার জন্য রাষ্ট্রকে জবাবদিহি না করে মাদকাসক্ত ব্যান্ড তারকাদের দিয়ে বাঁদর নাচ নাচিয়েছে আমাদেরকে দিয়েই। কত বোকা আমরা! মাদক নির্মূলের গান গাইল মাদকাসক্ত তারকারাই! মুনাফা ভরেছে তারা নিজের পকেটে, অথচ আমরা একবারও ভেবে দেখিনি!! সারা বিশ্বকে লুণ্ঠন করে সম্পদশালী হওয়া পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ আমদেরকে কালো অধ্যায় ছাড়া আর কিছুই দিতে পারিনি, একটা আলোকিত সমাজের স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম, অথচ অন্ধ অনুকরণ আমাদেরকে নিয়ে গেছে বিপর্যয়ের শেষ সীমানায়।

আমরা কি তাহলে এ দূষিত চিন্তাযুক্ত সমাজের অংশ? হাজারো ভাসমান শিশুর করুণ মুখ আমাদেরকে কাঁদায় না। আমরা কি এখনও এই নোংরা সমাজব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর? আমাদের বোনদের ইজ্জতকে উলঙ্গ করা এ সমাজব্যবস্থাকে আমরা কি কখনও প্রশ্ন করেছি? আমরা কি কখনও এই সমাজের নীতিগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছি? না, বরং আমরা অন্ধভাবে মেনে নিয়েছি। আমরা মেনে নিয়েছি অন্ধত্বকে, বরণ করেছি পঙ্গুত্বকে। আমরা এ দূষিত চিন্তাযুক্ত সমাজের বৃত্তে বন্দী ।

এমন একটা সমাজব্যবস্থাকে আমরা প্রশ্রয় দিয়েছি, যা আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আমাদের স্রষ্টার কর্তৃত্বকে আমাদের জীবন থেকে বাদ দিয়েছে। স্রষ্টাকে বাদ দিয়ে দুর্বল এবং সীমাবদ্ধ কিছু মানুষের কর্তৃত্বকে আমাদের উপরে স্থান দিয়েছে। আজকে তারাই হয়ে পড়েছে আমাদের জীবনব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকারী, আমরা পরিণত হয়েছি তাদের চিন্তার দাসএ। আমরা স্রষ্টার দাসত্ব বাদ দিয়ে দাসত্ব করছি এইসব পরজীবী চিন্তাবিদদের। আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা এইরুপ অন্ধ অনুকরণকারীদেরকে বলেছেন,

“......তাদের বোঝার মত অন্তর আছে, কিন্তু তারা চিন্তা করেনা, তাদের চোখ থাকলেও তারা তা দিয়ে দেখেনা, তাদের কান আছে, কিন্তু (সত্য) শোনেনা, এরা হচ্ছে জন্তু জানওয়ারের মত , বরং তাদের চাইতেও অধম! এসব লোকেরাই উদাসীন।’’
(সূরা আল আরাফঃ ১৭৯)

আল্লাহ তাআলা চিন্তাশূন্য এবং অন্ধ অনুসরণকারীকে পশুর সাথে তুলনা করেছেন, কারণ পশু চিন্তা করেনা সে শুধু প্রবৃত্তির ডাকে সাড়া দেয়। অথচ চিন্তা করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আমারা চিন্তা করিনা। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,

“......আসলে চোখ তো অন্ধ নয়, অন্ধ হয় অন্তর......” (সূরা আল হাজ্জঃ ৪৬)

মানুষ হয়ে অন্য মানুষের দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙ্গে ফেলা অতীতের Stranger দের মত আমরাও হতে চাই এ শতাব্দীর Stranger. আপনি কি প্রস্তুত, সাড়া দিতে ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন