শুক্রবার, ২০ এপ্রিল, ২০১২

খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা ফরয


যে রাষ্ট্রব্যবস্থা আহকামে শারিআহ্র প্রয়োগ ও ইসলাম প্রচারের জন্য দায়িত্বশীল তাই হচ্ছে খিলাফত। ইসলামী শাসনব্যবস্থাকেই খিলাফত নামে অভিহিত করা হয়। সারাবিশ্বের মুসলমানদের উপর খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা একটি অবশ্যই পালনীয় কর্তব্য। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার আদেশকৃত অন্যান্য ফরয কাজের মত খিলাফত প্রতিষ্ঠার ফরয কাজটাও অবশ্যই আমাদেরকে পালন করতে হবে। এ ব্যাপারে কোনও পছন্দ-অপছন্দ, ইচ্ছা-অনিচ্ছার সুযোগ নেই। এই দায়িত্বের প্রতি উদাসীন থাকা কিংবা একে উপেক্ষা করা একটি কবিরা গুনাহ যার জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা শাস্তি দেবেন। এই বিষয়টি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কিতাব, রাসুল (সা) এর সুন্নাহ ও সাহাবা (রা) দের ইজমা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এবং শ্রেষ্ঠতম আলেমদের বক্তব্যে সুস্পষ্ট।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কিতাব থেকে প্রমাণঃ
আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) রাসূল (সাঃ) কে মুসলমানদের পারস্পরিক বিষয়সমূহ তিনি যা নাজিল করেছেন সে অনুযায়ী সম্পন্ন করতে বলেছেন; অত্যন্ত সুষ্পষ্টভাবে তিনি (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) তাঁকে (সাঃ) এই আদেশ দিয়েছেন।

আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) রাসূল (সাঃ) কে বলেন,

فَاحْكُم بَيْنَهُم بِمَا أَنزَلَ اللّهُ وَلاَ تَتَّبِعْ أَهْوَاءهُمْ عَمَّا جَاءكَ مِنَ الْحَقِّ

অতএব, আপনি তাদের পারস্পরিক ব্যাপারাদিগকে আল্লাহ্ যা অবতীর্ণ করিয়াছেন তদানুযায়ী ফয়সালা করুন এবং আপনার কাছে যে সৎপথ আসিয়াছে, তাহা পরিত্যাগ করিয়া তাহাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করিবেন না ......।” [সূরা আল-মায়িদাহ্: ৪৮]

وَأَنِ احْكُم بَيْنَهُم بِمَآ أَنزَلَ اللّهُ وَلاَ تَتَّبِعْ أَهْوَاءهُمْ وَاحْذَرْهُمْ أَن يَفْتِنُوكَ عَن بَعْضِ مَا أَنزَلَ اللّهُ إِلَيْكَ

আর আমি আদেশ দিতেছি যে, আপনি ইহাদের পারস্পরিক ব্যাপারে এই প্রেরিত কিতাব অনুযায়ী মীমাংসা করিবেন এবং তাহাদের প্রবৃত্তি অনুযায়ী কাজ করিবেন না এবং তাহাদিগ হইতে অর্থাৎ এ বিষয়ে সতর্ক থাকিবেন যেন তাহারা আপনাকে আল্লাহর প্রেরিত কোনও নির্দেশ হইতে বিভ্রান্ত করিতে না পারে।” [সূরা আল-মায়িদাহ্: ৪৯]

রাসূল (সাঃ) এর প্রতি আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা)র আদেশ তাঁর (সাঃ) উম্মাহ্র প্রতিও সমভাবে প্রযোজ্য যতক্ষণ না সেখানে কোনও স্পষ্ট প্রমাণ থাকে যে উক্ত উক্তি শুধু তাঁর (সাঃ) প্রতি সীমাবদ্ধ। এক্ষেত্রে আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা)র উপরোক্ত উক্তিগুলোতে এমন প্রমাণ নেই যে এগুলো শুধু রাসূল (সাঃ) এর প্রতি সীমাবদ্ধ। এভাবে উক্ত আয়াতগুলোতে মুসলমানদেরকে আল্লাহর আইন বাস্তবায়নের আদেশ দেয়া হয়েছে। আর একজন খলিফার নিয়োগ আসলে আল্লাহর আইন ও ইসলামিক ক্ষমতার বাস্তবায়নকেই বোঝায়। আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) মুসলমানদেরকে ক্ষমতার বাহক শাসকদেরকে মেনে চলতেও বাধ্য করেছেন আর শাসককে মেনে চলার জন্য শাসকের (খলিফা) বর্তমান থাকা আবশ্যক।

আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ أَطِيعُواْ اللّهَ وَأَطِيعُواْ الرَّسُولَ وَأُوْلِي الأَمْرِ مِنكُمْ فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللّهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلاً

হে ঈমানদারগণ; আল্লাহ্র নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা কর্তৃত্বশীল তাদের; অনন্তর যদি তোমরা কোনও বিষয়ে পরষ্পর দ্বিমত হও, তবে ঐ বিষয়কে আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলের উপর ছাড়িয়া দাও, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি এবং কিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান রাখ।’’ [সূরা আল-নিসা: ৫৯]

যে বাস্তবে অস্তিত্বশীল নয় আল্লাহ তার আনুগত্যের আদেশ দেন না। সুতরাং একজন শাসকের বর্তমান থাকা বাধ্যতামূলক এবং যারা ক্ষমতায় আছে তাদের আদেশ মানার আদেশ সেই ক্ষমতাশীলদের প্রতিষ্ঠা করার আদেশেরই নামান্তর। শরিয়াহ্ আইনের বাস্তবায়ন একজন ক্ষমতাশীলের উপস্থিতির উপর নির্ভরশীল এবং সেই শাসকের অনুপস্থিতির ফলস্বরূপ শরিয়াহ্ আইন অবাস্তবায়িত থাকে। যেহেতু একজন শাসকের অনুপস্থিতি শরিয়াহ্ আইনকে অবাস্তবায়িত রাখে (যা গুনাহ্) সুতরাং সেই শাসকের উপস্থিতি একটা ফরজ বিষয়।

সুন্নাহ্ ভিত্তিক দলিল-প্রমাণঃ
আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে বলতে শুনেছি, ‘যে আনুগত্যের শপথ (বায়াত) থেকে তার হাত ফিরিয়ে নেয়, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার সাথে এমনভাবে সাক্ষাত করবেন যে ঐ ব্যক্তির পক্ষে কোনও দলিল থাকবে না, এবং যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে যে তার কাঁধে কোনও আনুগত্যের শপথ নেই তবে তার মৃত্যু হচ্ছে জাহেলী যুগের মৃত্যু।’”  [মুসলিম]

এভাবে রাসূল (সাঃ) প্রত্যেক মুসলমানের উপর আনুগত্যের শপথ (বায়াত) থাকাকে ফরজ বলে নির্দেশ করে গিয়েছেন। যে বায়াত (আনুগত্যের শপথ) ছাড়া মৃত্যু বরণ করে তিনি (সাঃ) তার মৃত্যুকে ইসলামপূর্ব অজ্ঞানতার (জাহেলিয়াতের) যুগের মৃত্যু হিসাবে বর্ণনা করেছেন। আর এটাও স্পষ্ট যে আনুগত্যের শপথ দেওয়ার জন্য একজন খলিফা (ইমাম) থাকা জরুরী।

যদিও রাসূল (সাঃ) উল্লেখ করেননি যে প্রত্যেক মুসলমানের জন্যই খলিফার হাতে আনুগত্যের শপথ করা একটা ফরজ কাজ তথাপি তিনি (সাঃ) সব মুসলমানের কাঁধের উপর আনুগত্যের শপথ থাকাকে অবশ্য কর্তব্য করে দিয়েছেন। অন্য কথায় প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের উপর একটা আনুগতযে র শপথ (বায়াত) থাকা ফরজ। এটা মুসলমানদের মধ্যে এমন একজন খলিফা থাকাকে অবশ্য প্রয়োজনীয় করে তোলে যার কাছে আনুগত্যের শপথ করা যায়। সমভাবে খলিফার উপস্থিতিই প্রত্যেক মুসলমানের কাঁধের  উপর আনুগত্যের শপথকে (বায়াত) সম্ভব করে।

হিশাম বিন উরওয়া আবি সালেহ্ থেকে, আবি সালেহ্ আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘আমার পরে যে নেতারা ক্ষমতা গ্রহণ করবে তাদের ভেতর ধর্মপরায়নরা তোমাদেরকে তাদের ধার্মিকতা দিয়ে পরিচালিত করবে এবং অধার্মিকরা তাদের অধার্মিকতা দিয়ে। অতএব তাদের কথা শোনো ও তাদেরকে মান্য কর এমন সব ক্ষেত্রে যেখানে তারা সত্যের অনুগামী হয়। যদি তারা সঠিকভাবে কাজ করে তবে তা তোমাদের পক্ষে যাবে, এবং যদি তারা ভুলভাবে কাজ করে তবে তা তোমাদের পক্ষে ও তাদের বিরুদ্ধে হিসাব করা হবে।”  [আল-মাওয়ার্দি]

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে আল-আরাজ ও সেই সূত্রে ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “নিশ্চয়ই, ইমাম হচ্ছেন ঢাল স্বরূপ যার পেছনে থেকে জনগণ যুদ্ধ করে এবং যার মাধ্যমে জনগণ নিজেদেরকে রক্ষা করে।” [মুসলিম]

আবু হাজিমের বরাত দিয়ে ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন, আমি আবু হুরায়রার সাথে পাঁচ বছর অতিবাহিত করেছি এবং তাকে বলতে শুনেছি, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “বনী ইসরাঈলকে শাসন করতেন নবীগণ। যখন এক নবী মৃত্যুবরণ করতেন তখন তার স্থলে অন্য নবী আসতেন, কিন্তু আমার পর আর কোনও নবী নেই। শীঘ্রই অনেক সংখ্যক খলিফা আসবেন। তাঁরা (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন তখন আপনি আমাদের কী করতে আদেশ করেন? তিনি (সাঃ) বললেন, তোমরা একজনের পর একজনের বায়াত পূর্ণ করবে, তাদের হক আদায় করবে। অবশ্যই আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) তাদেরকে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্বের ব্যাপারে প্রশ্ন করবেন।” [বুখারী ও মুসলিম]

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘যদি কেউ তার আমিরের মধ্যে এমন কিছু দেখে যা তার পছন্দ নয় সে যেন ধৈর্যধারণ করে। সাবধান! এজন্য যদি কেউ নিজেকে সুলতান (ইসলামিক নেতৃত্ব) থেকে এক বিঘাত পরিমানও আলাদা করে নেয় অতঃপর সে অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে তবে তার মৃত্যু হবে জাহেলীয়াতে।” [বুখারী ও মুসলিম]

এসব হাদীসে রাসূল (সাঃ) আমাদের জানিয়েছেন যে ইমাম বা খলিফারা (নেতারা) আমাদের রাজনীতি কায়েম রাখবেন এবং সেই সাথে ইমাম বা খলিফাকে বর্ণনা করেছেন মুসলমানদের ঢাল হিসাবে যিনি মুসলমানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। ইমামকে ঢালের সাথে তুলনা করা একজন ইমামের উপস্থিতির তীব্র প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে তাই মুসলমানদের উপর একজন ইমাম থাকা একটা দৃঢ় আদেশ। এটা এজন্য যে যখন আল্লাহ ও তার রাসূল (সাঃ) আমাদেরকে এমন কিছু সম্পর্কে বলেন যার সাথে তিরস্কার উল্লেখিত হয় তবে সেটা একটা বিরত থাকার আদেশ হিসাবে গৃহীত হয়। অন্য কথায় সেই বিষয় থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয় । বিপরীত ভাবে কুরআনের কোনও আয়াত বা রাসূলের (সাঃ) কোনও হাদীসে যদি কোনও বিষয়ের  প্রশংসা উল্লেখিত হয় তবে সে কাজটা আসলে করতে বলা হয়। যদি কোনও একটা ওয়াজিব পালন করার জন্য অন্য কোনও কিছু অবশ্য প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে তবে সেটাও ওয়াজিব এবং যদি এমন হয় যে কোনও কিছুর অনুপস্থিতিতে শরিয়তের কোনও আদেশ পালন অসম্ভব হয়ে পড়ে তাহলে তা বর্তমান থাকা ওয়াজিব।

এসব হাদীসের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে যারা মুসলমানদেরকে দেখাশোনা করবেন তারা হচ্ছেন খলিফা সুতরাং খলিফা নিয়োগ করা একটা ফরজ কাজ। হাদীস থেকে আমরা আরো জানছি যে ইসলামিক নেতৃত্ব (শাসনকর্তৃত্ব) থেকে মুসলমানদের আলাদা হওয়া নিষেধ (হারাম) এবং তাই এর সাথে থাকার প্রয়োজনেই ইসলামিক নেতৃত্ব (শাসনকর্তৃত্ব) স্থাপন করা মুসলমানদের উপর ফরজ। তাছাড়া রাসূল (সাঃ) মুসলমানদেরকে খলিফার আদেশ মানার নির্দেশ দিয়েছেন এবং যে বা যারা খলিফার সাথে ক্ষমতা নিয়ে  বিরোধ করবে তাদের সাথে যুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন, যা বস্তুতপক্ষে একজন খলিফা নিয়োগ ও তার খিলাফতকে এমনকি যুদ্ধের মাধ্যমে হলেও রক্ষা করারই একটা আদেশ।

আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আল আস (রাঃ) হতে ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন,রাসূল (সাঃ) বলেন,‘যখন একজন ইমামের হাতে বায়াত গ্রহণ সম্পূর্ণ হয়ে যায় তখন তাকে যথাসাধ্য মান্য করবে, এমতাবস্থায় যদি কেউ তার সাথে বিরোধ করতে আসে (বায়াত দাবী করে) তবে দ্বিতীয় জনকে হত্যা করবে।’ ” [মুসলিম]

অতএব, ইমামের আনুগত্যের আদেশ প্রকৃত পক্ষে একজন ইমাম নিয়োগেরই আদেশ এবং যারা তার সাথে বিরোধ করবে তাদের সাথে যুদ্ধ করার নির্দেশ থেকেও এটা প্রমাণিত হয় যে একজন মাত্র খলিফা বর্তমান থাকাটা একান্তই আবশ্যক।

ইজমা আস্-সাহাবা বা সাহাবা (রাঃ) দের ঐকমত্য
রাসূল (সাঃ) এর মৃত্যুর পর তাঁর সাহাবীরা (রাঃ) তাঁর (সাঃ) একজন উত্তরাধিকারী (খলিফা) নিয়োগের প্রয়োজনীয়তার উপর ঐকমত্যে পৌঁছেছিলেন। তারা সবাই আবু বকর (রাঃ) কে তার (সাঃ) উত্তরাধিকারী এবং আবু বকর (রাঃ) এর মৃত্যুর পরে ওমর (রাঃ) এবং এভাবে ওসমান ও আলী (রাঃ) কে খলিফা নিয়োগ করেছিলেন। একজন খলিফা নিয়োগের ব্যাপারে সাহাবা (রাঃ) দের ঐকমত্য রাসূল (সাঃ) এর মৃত্যুর পরপরই খুব জোরালোভাবে প্রকাশ পেয়েছিল। তখন সাহাবা (রাঃ) গণ রাসূল (সাঃ) এর দাফন কার্যকে বিলম্বিত করে তাঁর (সাঃ) প্রতিনিধিত্বকারী একজন খলিফা নিয়োগের মত গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিজেদেরকে নিয়োজিত করেছিলেন। এটা সবারই জানা ছিল যে কোনও ব্যক্তির দাফন একটা ফরজ কাজ এবং যারা এটা করবে তারা দাফন কার্যের পূর্বে তারচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ কোনও কাজে নিজেদেরকে নিযুক্ত করবে এটা হারাম। কিন্তু আমরা দেখতে পাই যে রাসূল (সাঃ) এর কিছু সাহাবা (রাঃ) নিজেদেরকে একজন খলিফা নিয়োগের ব্যাপারে ব্যস্ত রেখেছিলেন যদিও রাসূল (সাঃ) এর দাফন কার্যও তাদের উপর ফরজ ছিল। অন্যান্য সাহাবারা (রাঃ) এ ব্যাপারে নীরব ছিলেন এবং রাসূল (সাঃ) এর দাফন কার্য বিলম্বিত করার বিপরীতে প্রতিবাদ করার সামর্থ্য থাকা সত্বেও তারা রাসূলের (সাঃ) মৃতদেহ দাফনের ব্যাপারে দুরাত বিলম্ব করার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছিলেন।

মৃতকে দাফনের চেয়েও একজন খলিফার নিয়োগ অধিক গুরুত্বপূর্ণ উপরোক্ত ঘটনার মাধ্যমে সাহাবারা এ ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছিলেন। কেননা এরূপ করা কখনো বৈধ হতনা যদিনা মৃতদেহ দাফনের ফরজের চেয়ে খলিফা নিয়োগ আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হত। সাহাবারা (রাঃ) তাদের সারা জীবন খলিফা নিয়োগ যে ফরজ এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছিলেন। যদিও কখনো কখনো কাকে খলিফা নিয়োগ করতে হবে এ ব্যাপারে তাঁরা মতপার্থক্য করেছিলেন, কিন্তু একজন খলিফা যে নিয়োগ করতে হবে এ ব্যাপারে তাঁদের ছিল পূর্ণ ঐকমত্য। খলিফা নিয়োগের ব্যাপারে সাহাবাদের ঐকমত্য (ইজমা আস্-সাহাবা) একটা সুস্পষ্ট ও দৃঢ় প্রমাণ যে খলিফা নিয়োগ করা ফরজ।

শরিয়াহ্ মূলনীতিঃ
এটা চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত যে আমাদের জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠা ও শরিয়াহ্ আইনের বাস্তবায়ন করা ফরজ। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত না একজন শাসক থাকছেন অথবা তার হাতে ক্ষমতা না থাকছে ততক্ষণ আমাদের জীবনে ইসলাম প্রতিষ্ঠা ও শরিয়াহ্ আইন বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।

আর শরিয়াহ্র মূলনীতি হচ্ছে

ওয়াজিব পালনের জন্য যা প্রয়োজন তা নিজেই ওয়াজিব।

এক্ষেত্রে এই শরিয়াহ্ মূলনীতি অনুযায়ী একজন খলিফার উপস্থিতি ওয়াজিব। বিভিন্ন দলিল-প্রমাণ থেকে এটা সুস্পষ্ট যে মুসলমানদের উপর শরিয়াহ্ আইন ও ক্ষমতা বাস্তবায়ন এবং একজন খলিফা থাকা যিনি আইন প্রয়োগের ও শরিয়াহ্ বাস্তবায়নের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন, একটা অবশ্য কর্তব্য। উপরন্তু শুধুমাত্র আইন প্রয়োগ ও ক্ষমতার খাতিরেই নয় বরং অভিভাবক ও নেতা হিসেবেও উম্মাহর একজন খলিফা থাকাটা ফরজ। এটা নিম্নোক্ত হাদিসের মাধ্যমে জানা যায়।

আউফ বিন মালিক আল আশআবী বলেন যে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের ইমামদের (নেতা) মধ্যে শ্রেষ্ঠ হচ্ছে তারা যারা তোমাদেরকে ভালবাসে এবং তোমরা তাদেরকে ভালবাস, এবং যারা তোমাদের জন্য প্রার্থনা করে এবং তোমরা যাদের জন্য প্রার্থনা কর; এবং তোমাদের ইমামদের (নেতা) মধ্যে নিকৃষ্ট হচ্ছে তারা যাদেরকে তোমরা ঘৃণা কর আর তারা তোমাদেরকে ঘৃণা করে ও তোমরা তাদেরকে অভিশাপ দাও আর তারা তোমাদেরকে অভিশাপ করে।আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমরা কি তখন তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করব না?’ তিনি বললেন, ‘না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তোমাদের ভেতর সালাত (ইবাদত) প্রতিষ্ঠা করে ।’’ [মুসলিম]

এই হাদীস স্পষ্ট ভাবে আমাদেরকে ভাল ও খারাপ নেতাদের সর্ম্পকে জানায় এবং যতক্ষণ পর্যন্ত তারা ইবাদত প্রতিষ্ঠিত রাখে ততক্ষণ তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা থেকে বিরত থাকার আদেশ করে। ইবাদত প্রতিষ্ঠামানে হচ্ছে ইসলামকে উচ্চে তুলে ধরা ও শরিয়াহ্ বাস্তবায়ন করা। ইসলামিক আইনের উৎস সমূহের মধ্যে মুসলমানদের উপর একজন খলিফা নিয়োগের দায়িত্ব যিনি ইসলামের আইন বাস্তবায়ন করবেন এবং ইসলামের আহ্বানকে (দাওয়াত) সারা বিশ্বের কাছে পৌঁছে দেবেন এমন গুরুত্বের সাথে বর্ণিত হয়েছে যে এটা সন্দেহাতীত ভাবে একটা ফরজ দায়িত্ব। অবশ্য এটা একটা সম্মিলিত দায়িত্ব (ফরজে কিফায়া)। যদি কিছু লোক এই কার্য সমাধা করে তবে সবার পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে এবং অবশিষ্ট উম্মাহ্ দায়িত্ব থেকে মুক্তি পাবে। কিন্তু উম্মাহ্র একাংশ যদি এই দায়িত্ব পালনের জন্য কাজ করেও তা সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়, তবে পুরো মুসলিম জাতির উপর এই দায়িত্ব পালন করার দায় থেকে যায়। মুসলমানরা যতদিন খলিফা (ইসলামিক শাসক) ছাড়া থাকবে ততদিন মুসলিম উম্মাহ্র কেউই এ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাবে না।

1 টি মন্তব্য: