সোমবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১২

তফসীর - সূরা বাকারাহ: আয়াত ১৫১


فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُوا لِي وَلَا تَكْفُرُونِ
  
সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ রাখবো এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; অকৃতজ্ঞ হয়ো না। [বাকারাহ: ১৫১]
  
فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে হাসান আল-বসরী বলেন, অর্থাৎ আমি তোমাদের উপর যা ফরজ করেছি তা পালনের মাধ্যমে আমাকে স্মরণ কর, এর ফলে তোমাদের জন্য আমার উপর যা ওয়াজিব হয় তা পূরণের মাধ্যমে আমি তোমাদের স্মরণ করব। অন্য বর্ণনায় আছে, আমার রহমতের মাধ্যমে স্মরণ করব।

فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ এর ব্যখ্যা প্রসঙ্গে ইবনু আব্বাস (রা) বলেন, তোমাদের তাকে স্মরণ করা তাকে তোমাদের স্মরণ করা হতে শ্রেয়।

সহীহ হাদীসে আছে, আল্লাহ তাআলা বলেন, আমাকে যে মনে মনে স্মরণ করে, আমিও তাকে মনে মনে স্মরণ করি। তেমনি আমাকে যে পরিপূর্ণভাবে স্মরণ করে, আমি তাকে তার চাইতেও অধিক পরিপূর্ণভাবে স্মরণ করি।

ইমাম আহমদ বলেন, আমাকে আবদুর রাজ্জাক, তাকে মুআম্মার কাতাদাহ হতে ও তিনি আনাস হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূল (সা) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আদম সন্তান! আমাকে যদি তুমি মনে মনে স্মরণ কর, আমিও তোমাকে মনে মনে স্মরণ করব। আর আমাকে যদি তুমি পরিপূর্ণভাবে স্মরণ কর, তাহলে আমি তোমাকে ফেরেশতা হতেও পরিপূর্ণভাবে স্মরণ করব। অথবা তিনি বলেন, তোমার চাইতে উত্তমভাবে স্মরন করব। যদি তুমি আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হও, তাহলে আমি তোমার দিকে এক হাত অগ্রসর হব। যদি তুমি আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হও তবে আমি তোমার দিকে এক গজ অগ্রসর হব। আর যদি তুমি আমার দিকে হেটে আস, আমি তোমার দিকে দৌড়িয়ে যাব।
   
হাদীসটির সনদ সহীহ। বুখারী শরীফে এটি কাতাদার সনদে উদ্ধৃত হয়েছে। ইমাম বুখারীকে কাতাদাহ বলেন- আল্লাহ অত্যন্ত মেহেরবান। তার পাক কালামে- وَاشْكُرُوا لِي وَلَا تَكْفُرُونِ অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তার কৃতজ্ঞতা আদায়ের নির্দেশ দিলেন এবং কৃতজ্ঞতার বিনিময়ে অধিক কল্যাণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন। যেমন, আল্লাহ বলেন:
     
وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ
      
যখন তোমাদের পালনকর্তা ঘোষণা করলেন যেযদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতবে তোমাদেরকে আরও দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর। [ইবরাহীম:৭]

শাইখ আতা আবু রিশতা (রহ) বলেন, (এই আয়াতে) আল্লাহ তার বান্দাদের আদেশ দিচ্ছেন জিহ্বা, হৃদয় ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা প্রত্যেক প্রকার স্মরণের মাধ্যমে (তাদের রব) সুবহানাহু (ওয়া তাআলা)কে স্মরণ করতে।

আবু জাফর ইবন জারীর আত-তাবারী (রহ) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, “অতপর আমাকে স্মরণ কর তোমাদের আমার আনুগত্যের মাধ্যমে আমি যা তোমাদের আদেশ করেছি ও যা নিষেধ করেছি তা হতে

ইমাম বাগাবী তার তাফসীরে বলেন, সাঈদ বিন জুবাইর (রহ) বলেছেন, আমাকে নিয়ামত ও প্রাচুর্যে স্মরণ কর, আমি তোমাদের কাঠিন্য ও পরীক্ষায় স্মরণ করব। এর ব্যখায় (নিম্নোক্ত আয়াতটি তুলে ধরেন):

فَلَوْلَا أَنَّهُ كَانَ مِنَ الْمُسَبِّحِينَ
لَلَبِثَ فِي بَطْنِهِ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ

যদি তিনি ইতিপূর্বে আল্লাহর তসবীহ পাঠকারীদের অন্তর্ভুক্ত না হতেন, তবে তাঁকে কেয়ামত দিবস পর্যন্ত মাছের পেটেই থাকতে হত। [সাফফাত: ১৪৩-১৪৪]


তথ্যসূত্র:

তাফসীর ইবন কাছীর
তাফসীর তাবারী, আবু জাফর ইবন জারীর আত-তাবারী
তাইসীর উল-উসূল ইলাত তাফসীর, শাইখ আতা আবু রিশতা
তাফসীর উল-বাগাবী, আবু মুহাম্মদ আল-হুসাইন ইবন মাসউদ আল-বাগাবী

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন