মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

আমেরিকা ও চীনের দ্বন্দ

প্রশ্নঃ চীন খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে এবং আমেরিকার জন্য হুমকি হিসাবে প্রতীয়মান হচ্ছে।যদিও ভারত এবং চীন উভয়েরই অর্থনৈতিক উন্নতি দ্রুত হচ্ছে। কিন্তু আমেরিকা চীনকে যেরূপ হুমকি হিসাবে গন্য করে সেভাবে ভারতকে সেভাবে করে না। এর কারন যদি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক উন্নতি হয়ে থাকে তবে জাপানেরও শক্তিশালী অর্থনীতি থাকা সত্ত্বেও আমেরিকা তাকে হুমকি মনে করে না কেন? কেন তারা শুধু চীনকে ফোকাস করে? এটা কি চীন একটী আদর্শিক শক্তি (ideological power)এ কারনে? তাদের কি আদৌ কোন জীবনাদর্শ (ideology) আছে? যদি তাদের তা না থাকে তবে কিভাবে তারা এতো দ্রুত উন্নতি করছে?


উত্তরঃ

১। চীন প্রশাসনিকভাবে একটি কমিউনিস্ট রাষ্ট্র। মাও সে তুং এর সময় যখন চীন কমিউনিজমকে রাষ্ট্রীয়ভাবে গ্রহন করে তখন থেকে সে শক্তিশালী রাষ্ট্র ছিল যদিওবা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ছিল। সে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য ছিল এবং তার সেনাবাহিনী ছিল শক্তিশালী। সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের পর আমেরিকা চীনের দিকে নজর দেয়। পরবর্তীতে চীনের অর্থনৈতিক উন্নতি কারনে তা আমেরিকার কাছে আরো বেশি চিন্তার কারন হয়ে দাঁড়ায় ও আলোচিত হয়।

২। চীনকে ঘিরে আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে আমাদের বুঝতে হবে পৃথিবীর প্রত্যেক রাষ্ট্রের প্রতি আমেরিকার একটি নীতি রয়েছে এবং চীনও এর বাহিরে নয়। এ নীতিগুলো সে নির্ধারন করে হয় ভৌগলিকভাবে কৌশলগত কারনে অথবা ঔপনিবেশিক কারনে। সুতরাং, চীনকে নিয়ে অবশ্যই আমেরিকার সুনির্দিষ্ট নীতি আছে যা কারন শুধুমাত্র চীনের অর্থনৈতিক শক্তি নয়। দিনদিন চীনের শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই আমেরিকা তাকে দুর্বল করতে চায়। আমেরিকা চীনকে একটি সাধারন রাষ্ট্রে পরিনত করতে চায় এবং যে সকল বিষয় তাকে শক্তিশালী করে তুলতে পারে তা ধ্বংস করতে চায়।

মূলত এর কারন চীনের উপর আমেরিকার খুব একটা প্রভাব নেই। চীন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে আমেরিকার ধার ধারে না এবং অনেক ক্ষেত্রে আমেরিকার বিরূদ্ধচারন করে। তার রয়েছে শক্তিশালী সেনাবাহিনী এবং পারমানবিক শক্তি। তার অর্থনীতি দিনদিন বড় হচ্ছে। সে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য। চীনের কিছু আঞ্চলিক উচ্চাকাংখা ও ইচ্ছাও রয়েছে যা আমেরিকার স্বার্থবিরোধী। পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে আমেরিকা তার স্বার্থেই চায় না চীন ওখানে আঞ্চলিক শক্তি হিসাবে প্রকাশিত হোক। যদিওবা আমরা দেখছি এই অঞ্চলে চীন তার প্রভাব বৃদ্ধি করছে। ফলস্বরূপ, ঠান্ডা যুদ্ধ (cold war) পরবর্তী সময়ে চীনকে দুর্বল করা আমেরিকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন হয়ে দাঁডায় যাতে পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে
আমেরিকার প্রভাব ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।

৩। ভবিষ্যতে পরাশক্তি হিসাবে চীনের উত্তান হবে কিনা এই বিষয়ে আমরা বলতে পারি আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি সবসময় একইরকম থাকে না বরং পরিবর্তন আসতে পারে। বর্তমানে চীন একটি আঞ্চলিক শক্তি কিন্তু সে পরাশক্তি হওয়ার পথে রয়েছে এমনটা ভাবার কোন কারন নেই। এর কারন হিসাবে আমরা দেখছি চীনাদের মনোভাব। ঐতিহাসিকভাবে চীনারা শুধুমাত্র এশিয়া অঞ্চলেই প্রভাব বিস্তারের দিকে মনযোগী ছিল এবং যা ছিল তার আত্মরক্ষামূলক মনোভাবের বহিপ্রকাশ। কুনফুসিয়াসের সময়কাল হতে শুরু করে ইতিহাসের পুরো সময় জুড়ে তারা নিজেরদের আত্মরক্ষার প্রতিই বেশি মনযোগী ছিল এবং এর মানচিত্রও ছিল প্রায় একই রকম যার অন্যতম বাস্তব প্রমান হল চীনের প্রাচীর (the great wall of china) কোন জাতি যারা নিজেদের প্রচার ও প্রসারের আকাংখা রাখে তারা কখনই এ প্রাচীর তৈরি করবে না।

যদিওবা সে আন্তর্জাতিকভাবে শক্তিশালী এরপরেও সে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তার প্রভাবশালী অবস্থান নেই। বরং তার সকল কার্যক্রম আঞ্চলিক শক্তি হওয়ার নিয়ে কেন্দ্রীভূত। পৃথীবিতে কমিউনিজমের প্রচার ঘটানোর উপর ভিত্তি করে চীনের নীতিগুলো নির্ধারিত হয় না। এবং পরাশক্তি হওয়ার জন্য যে পথে আগানো উচিত চীনে সে ভাবে আগাচ্ছে না।

৪। অন্যদিকে জাপান ও ভারতের ক্ষেত্রে বলা যায় আমেরিকা তাদের ভয় পায় না কারন তাদের উপর আমেরিকার যথেষ্ঠ প্রভাব রয়েছে। ২য় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর আমেরিকা জাপানকে বিভিন্ন চুক্তির মাধ্যমে তার আজ্ঞাবহ দাসে পরিনত করেছে। তাই জাপান আমেরিকার জন্য হুমকি না।

ভারতের ক্ষেত্রে বলা যায়, ভারতের শক্তি এখনো চীনের পর্যায়ে পৌছায়নি। দ্বিতীয়ত, ভারতে আমেরিকার তাঁবেদার এজেন্ট রয়েছে বিশেষত বি.জে.পি.। তৃতীয়ত, চীনের বিরূদ্ধে আমেরিকা ভারতকে বন্ধু হিসাবে চায় এবং এক দিক দিয়ে সে সফল। তবে কখনো যদি ভারত তার আধিপত্য মানতে না চায় তবে আমেরিকার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবে এবং এটা তার জন্য খুব একটা কঠিন নয়।

এদিকে চীনের ভেতরে আমেরিকা তার কোন এজেন্ট তৈরী করতে ব্যর্থ হয়েছে অথবা তার সাথে কূটনৈতিক বন্ধুত্ব স্থাপন করা সম্ভব হয়নি কারন চীনাদের কাছে এর কোন প্রয়োজনীয়তা নাই। অন্যদিকে জাতিসংঘে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যপদের জন্য, পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য ভারত আমেরিকার সাহায্যের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। সর্বোপরি বৃটেনপন্থি কংগ্রেসও আমেরিকাকে মেনে চলে কারন আমেরিকা ও বৃটেন কৌশলগতভাবে বন্ধু।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন