মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

খিলাফত সরকার কিভাবে বাজারে মজুতদারি, ওজনে কম দেওয়া অথবা হটকারীতা প্রতিরোধ করবে?

বর্তমান সরকার ব্যবস্থায়  ধরনের সমস্যার সমাধান করা হয় শুধুমাত্র আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এবং মনে করা হয় আইনের কঠোর প্রয়োগেই  সকল দুর্নীতি দূর করতে পারে ফলস্বরূপআমরা দেখছি আমদের রাষ্ট্রগুলো পুলিশি রাষ্ট্রে পরি হয়েছে এভাবে দুর্নীতি তো দূর হচ্ছেই না বরং দিন দিন তা বৃদ্ধি পাচ্ছে

সকল সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য আমাদের প্রথমে এর কারনগুলো খুঁজে বের করতে হবে:

মূল্যবোধ:

পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় মানুষের মধ্য বস্তুগত মূল্যবোধ ব্যতীত অন্যান্য মূল্যবোধগুলো তেমন গুরুত্ব পায়না। ফলে, মুনাফা যেখানে প্রধান বিবেচ্য বিষয় সেখানে মানুষকে ঠকানো  অন্য সকল কাজের মত সাধারণ একটি কাজে পরিনিত হয় কারনে মজুতদারি, ওজনে কম দেওয়া অন্যান্য সকল অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে

আইনের প্রয়োগ:

মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিবর্তন না করে বরং বর্তমান ব্যবস্থায় শুধুমাত্র কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের কথা চিন্তা করা হয় যা এককথায় অসম্ভব কারণ পুঁজিবাদ এক দিকে মানুষকে শিখায় জীবনের উদ্দেশ্য হল মুনাফা অর্জন , আবার অন্যদিকে তাকে লোক ঠকিয়ে অধিক মুনাফা অর্জনে বাধা দেয় যা hypocracy ছাড়া আর কিবা হতে পারে আর শুধুমাত্র আইনের কঠোর প্রয়োগ অপরাধ  দূর করে না যা আমরা পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো থেকে দেখতে পাই

উপরে উল্লেখিত দুটি কারন অত্যন্ত মৌলিক এবং আমরা সকল সমস্যাগুলোর গভীরে গিয়ে চিন্তা করলে দেখব সবকিছুই থেকে উদ্ভূত

আসুন আমরা দেখি ইসলাম কিভাবে এর সমাধান দেয়:

ইসলামী রাষ্ট্র কোন পুলিশি রাষ্ট্র নয় এখানে অপরাধ দমনের জন্য নজর দেওয়া হয় জনগণের তাকওয়ার বা আল্লাহ ভীতির উপর এবং জীবন সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ফলস্বরূপ, তার বিশ্বাসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় আমরা খুব সহজেই মানুষের আচরন পরিবর্তন করতে পারব

মুসলিমদের উৎসাহিত করা হবে আমর বিল মারূফ নাহি আনিল মুনকারের (সৎ কাজে আদেশ অসৎ কাজে নিষেধ) বিষয়ে যে ফরজটি মুসলিমরা প্রায় ভুলতে বসেছে

আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে, যার উদ্দেশ্য মুসলিমদের সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যাতে অন্য কেউ এই ধরনের অপরাধ আর না করে

এখন আমরা দেখব বাজার নিয়ন্ত্রনের জন্য খিলাফত সরকারের গৃহীত বাস্তব পদক্ষেপসমূহ কি হতে পারে:

মুসলিমদের এই বিষয়ে ইসলামের হুকুম আহকামগুলো শিক্ষা দেওয়া যাতে করে তারা তাকওয়াবান হতে পারেযে মুসলিমরা বর্তমানে যাকাত প্রদান না করার আইনী সুযোগ থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র আল্লাহ ভীতি বা তাকওয়ার কারনে যাকাত দেয় সে মুসলিমরা ইসলামী রাষ্ট্রে স্বাবাভিকভাবেই এই সকল অপরাধ হতে অনেক দূরে থাকবে

আমর বিল মারূফ নাহি আনিল মুনকার এর প্রচলন থাকার করনে মুসলিমেরা যেই ধরনের অপরাধ দেখবে সেই তাৎক্ষনিকভাবে তা বাধা দিবে

সকল অপরাধের শাস্তি হিসাবে কঠোর ব্যাবস্থা নেওয়া হবে

বিশেষভাবে বাজার নিয়ন্ত্রনের জন্য খিলাফতের নির্দিষ্ট বিচার বিভাগ রয়েছে যা হল কাজী উল মুহতাসিব নিম্নে খিলাফত সরকারে বিচার বিভাগের মৌলিক কাঠামো কাজী উল মুহতাহিবের কার্যপ্রনালী ব্যাখ্যা করা হলঃ

ইসলামী শারীআহ্ বিচারকদের তিন ভাগে ভাগ করে:

একজন হলেন , কাজী-উল-খুশুমাত - যিনি হুদুদ এবং লেনদেনের ক্ষেত্রে জনগনের মধ্যকার বিবাদ নিরসন করবেন

দ্বিতীয় জন হলেন , কাজী-উল-মুহতাসিব  -  যিনি কোন আইন ভঙ্গের কারণে জনগণের স্বার্থ এবং তাদের সম্পদের জন্য ক্ষতিকারক কর্মকান্ড প্রতিরোধ করবেন

এবং তৃতীয়জন হলেন , কাজী-উল-মাজালিম - যিনি রাষ্ট্র এবং জনগণের মধ্যকার বিরোধ নিরসনের দায়িত্বে ন্যস্ত থাকেন

মুহতাসিব

হুদুদ (পেনাল কোড) এবং ক্রিমিনাল আইন (কেসাস) এর অন্তর্ভুক্ত নয়, এমনসব মামলা যেগুলো সর্বসাধারণের অধিকারের সাথে সম্পর্কযুক্ত ফরিয়াদীবিহীন সব মামলা যে বিচারকের আওতাধীন তাকেই মুহতাসিবের  বিচারক বলা হয়

এটা হল হিসবার বিচারকের সংজ্ঞা-যা রাসূলুল্লাহ  (সা:) এর খাবারের স্তূপের হাদীস থেকে নেয়া হয়েছে তিনি  (সা:) খাবারের মধ্যে আর্দ্রতা পেলেন এবং ভেজা খাবার উপরে রাখতে বললেন যাতে করে লোকেরা দেখতে পায়  রাসূলুল্লাহ (সা:) এক্ষেত্রে জনগনের স্বার্থ সংরক্ষণ করেছেন এবং ভেজা খাবারগুলোকে উপরে রাখার নির্দেশ দিয়ে প্রতারণা প্রতিরোধ করেছেন ধরনের জনস্বার্থ বিরোধী যে কোন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে একইরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে এটা হুদুদ বা ক্রিমিনাল আইনের মত কিছু নয় যেখানে লোকজনের মধ্যকার বিবাদ নিরসন করা হয়

মুহতাসিবের আবশ্যিক ক্ষমতা

মুহতাসিব কোন অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথেই বিলম্ব না করে সংঘটনস্থলে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন এবং এর জন্য নির্দিষ্ট কোন স্থানের প্রয়োজন নেই; অর্থাৎ মুহতাসিবের মামলাসমূহ দেখার জন্য কোন বিচারিক আদালতের প্রয়োজন নেই তিনি অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথেই বিচারিক রায় দিতে পারেন আর এটা যেকোন সময় যে কোন স্থানে বিচারকার্য পরিচালনা করতে পারেন, হতে পারে সেটি বাজারে, বাড়িতে, গাড়িতে চলাকালীন অবস্থায়, দিনে বা রাতেতার অধীনে কিছু পুলিশ সদস্য থাকবে যারা তৎক্ষণাৎ তার রায় বাস্তবায়ন করবে

মুহতাসিবের তার নিজের জন্য ডেপুটি পছন্দ করবার অধিকার রয়েছে তাকে অবশ্যই মুহতাসিবের যোগ্যতাসম্পন্ন হতে হবে এবং মুহতাসিব বিভিন্ন জায়গায় ডেপুটিদের নিয়োগ দিতে পারবেন এসব ডেপুটিগণ যে স্থানে কর্মরত হবেন বা যে ধরণের মামলার জন্য প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরিত হবেন শুধু সেক্ষেত্রে  হিসবার দায়িত্ব পালন করবেন যদি মুহতাসিবকে নিয়োগ দেযার সময় এমন কোন অনুচ্ছেদ অন্তর্ভুক্ত হয় যে, তিনি তার পক্ষে ডেপুটি বা প্রতিনিধি নিয়োগ দিতে পারবেন তাহলেই  এটা সম্ভব অন্যথায় তার ধরনের কোন ক্ষমতা থাকবে না

পরিশেষে আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি যেন আমাদের খিলাফত দান করেন যার প্রতিশ্রুতি তিনি আমাদের দিয়েছেন যাতে করে আমরা ইসলামী বিচার ব্যাবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে  সকল মুনকারগুলোকে বিলুপ্ত করতে পারি সকল মারূফাতগুলো প্রতিষ্ঠা করতে পারি

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন