জামায়াত
শিবিরের রাজনীতি নিয়ে লেখার ইচ্ছা ছিলো না। লিখতে বসলেই কলমের ডগা দিয়ে খালি
নেগেটিভ কথা বের হয়। পরে যখন পড়ি নিজেরই ভালো লাগে না। প্রবন্ধ যদি লিখে থাকি
তাহলে তাতে থাকবে বিশ্লেষণধর্মী সমালোচনা যেখানে যার সম্পর্কে লেখা হচ্ছে তার
পজেটিভ দিক ও তার অবস্থানের পক্ষে যুক্তি গুলো কম বেশী জায়গা পাবে। কারো সম্পর্কে
বলতে গেলে যদি শুধুই নেতিবাচক তথ্য ও মত হাজির করা হয় তা আর সমালোচনা কিংবা
নিবন্ধনের পর্যায়ে পড়ে না তখন তা হয়ে পড়ে রাজনৈতিক প্রচারপত্র।
তারপরও জামায়াত
নিয়ে লেখতে হচ্ছে কেননা এই মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনীতি ও ভবিষ্যৎ গন্তব্যের
আলোচনার একটা বড় জায়গা জুড়ে আছে জামায়াত। বিশেষ করে দলের আমীর নিজামী ও
অন্যান্য নায়েবে আমীর মহোদয়দের গ্রেফাতার পত্র পত্রিকাতে যেমন হেডিংএ যে রসনা
যুগিয়েছে তেমনি রাজনীতির ঘটনা প্রবাহে যোগ করেছে বড় মাত্রা। নিজামীর গ্রেফতার
চারদলীয় জোটকে চাঙ্গা করার মতলব কিনা জানিনা তবে এর পরবর্তী ঘটনা প্রবাহে
জামায়াতী রাজনীতির কয়েকটা দিক আবারো সামনে চলে আসছে।
প্রথমতঃ এটা
পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, গত ৫ বছরের
তথাকথিত “হেকমতের” রাজনীতি দ্বারা
তারা খুব একটা লাভবান হয়নি (তাদের অর্থনৈতিক লাভের কথা বলা হচ্ছে না, রাজনৈতিক শক্তি
বৃদ্ধি কথা বলা হচ্ছে)। যদি লাভবান হতই তাহলে তারা নিজামী গ্রেফতারের
প্রতিক্রিয়ায় আগে নিজেরা শক্ত অবস্থান নিত; তারপর কার সাথে জোট বাধবে তা চিন্তা করত। কিন্তু বাস্তবে
দেখা গেল তথাকথিত “গন রোজা” কর্মসুচী ছাড়া
দলীয়ভাবে তারা আর কোন কর্মসূচী দিতে পারেনি। বরং তড়িৎ বেগে ডুবন্ত বিএনপির আচলের
তলায় মুখ লুকিয়েছে। ফলে জনমনে তাদের অবস্থানের জায়গাটি আরেক দফা দুর্বল হয়েছে।
এটি যে জনমনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে তা নয় বরং জামাতের শত-সহস্র কর্মীর মনেও
পরনির্ভরতার দুষ্টপ্রবণতাকে আরো শক্তিশালী করবে।
নিজামী
গ্রেফতারের পর আরেকটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে তা হলো জামায়াতের মার্কিন নির্ভরতা।
নেতার গ্রেফতারের পর পরই তারা ছুটে গেছেন মুসলিম রক্ত পিপাসু হায়েনা মার্কিনীদের
কাছে। সেখানে তারা দফায় দফায় তাদের নেতার মুক্তির জন্য চেষ্টা চালিয়েছেন। এই
ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায় যে, জামায়াত তার
রাজনৈতিক সামর্থ্যের ব্যাপারে সন্দিহান তাই সে আন্দোলনের ব্যাপারে না গিয়ে কোন
শক্তিশালী মহলের অনুকম্পার মাধ্যমে নিজের ফায়দা লুটতে চাইছে; এই কাজটি করতে
গিয়ে জামাতের রাজনীতির শিকড় যেমন পুনঃ উন্মোচিত হয়েছে তেমনি বাংলাদেশের
অভ্যন্তরীন রাজনীতিতে মার্কিনীদের মোড়লীপনার দুয়ারটি আরো উন্মোচিত হয়েছে ।
মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রে সফরে তাদের আরেক নেতা কামরুজ্জামান সাহেব আরো দুইটি গুরুত্বপূর্ণ
মন্তব্য করেছেন।
প্রথমত, তিনি বলেছেন
মুজিব জিয়া মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের রাজনীতির স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন।
দ্বিতীয়, সিমলা চুক্তির
মাধ্যমে যুদ্ধপরাধীদের বিষয়টি ফয়সালা হয়ে গেছে।
তাদের এই
বক্তব্য দুটি নতুন কিছু নয়। তবে জামায়াত যে নিজের গায়ের ময়লা পরিষ্কার করতে
ব্যস্ত তা ভালই বুঝা যাচ্ছে। জামায়াতের মত বড় একটি রাজনৈতিক দল যখন তার রাজনীতির
স্বীকৃতির জন্য প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক দলের মরহুম নেতাদের সার্টিফিকেটের উপর নির্ভর
করে তখন তার রাজনৈতিক দলের দেওয়ালিয়াত্ব কোথায় গিয়ে পৌছেছে তা বুঝতে কারো কষ্ট
হবার কথা নয়।
নিজামী
গ্রেফতারের পর জামাতের রাজনীতির আরেকটি বিষয় আমাদের চোখে পরে তা হলো নেতৃত্ব
সংকট। তারা যতই চিৎকার করে বলুক না কেন তারা নেতৃত্ব তৈরির কারখানা খুলেছে, বাস্তবে সেই
পাকিস্তান আমলের নেতারাই এখন পর্যন্ত ভরসা। তাদের ছাত্র সংগঠন শিবিরের প্রকাশ্য
রাজনীতি চলছে প্রায় ৩০ বছর ধরে, আশির দশকে সেই রাজনীতির আবেগ উত্তেজনা ও আদর্শের বুলি কম
ছিল না, কিন্তু সেই
ছাত্র নেতারা কোথায়? আশির দশকে
স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র রাজনীতি হিসেবে আওয়ামী লীগ যেমন মাহমুদুর রহমান মান্না, ওবায়দুল কাদের
পেয়েছে, বিএনপি যেমন
আমান, খোকন পেয়েছে, বামপন্থীরা যেমন
পেয়েছে ফজলে হোসেন বাদশাহ কে, জামায়াত কাকে
পেয়েছে? নিজামী
গ্রেফতারের পর তাই দলকে ধারন করার জন্য ইউসুফ, মুজাহিদদের মত মুক্তিযুদ্ধা কালীন নেতারাই (!)
ভরসা। মাঝে মাঝে আবার শোরগোল শোনা যাচ্ছিলও অবসর প্রাপ্ত গোলাম আজম সাহেবের কথা।
এদের সবাইতো একাত্তরের গনহত্যার বিষয়টি সুরাহা করতেই গলদঘর্ম; জামাত কেনও
আওয়ামী বিএনপির সাথে তাল মিলানোর মত নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে পারেনি, তার অনুসন্ধান
আরেকদিন যাওয়া যাবে। তবে উৎসাহী পাঠকদের জন্য এটুকু বলা যায় যে বিষয়টি কৌশলগত
নয় বরং আদর্শিক ভ্রান্তি অর্থাৎ আদর্শের রাজনীতি ছেড়ে, সেকুলার দলের
আনুগত্য করা আর নানান দোহাই দিয়ে ক্ষমতার মাখন খাওয়ার চেষ্টা তাদের জন্য কাল
হয়েছে।
তাইতো মুজাহিদ
বলেছেন,
“নিজামী আল্লাহ্র
ওলী...দরবেশ মানুষ”
একজন রাজনৈতিক
নেতাকে অরাজনৈতিক টাইটেল দেওয়াটা কতটা রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় বহন করে? আর মুজাহিদ
সাহেব কি মনে করেন দেশের মানুষ এরপর নিজামী সাহেবকে একেবারে সাদা মনের নির্জঞ্জাট
মহান সুফী হিসেবে সম্মান করতে শুরু করবে? হায়রে জামায়াত ???
এইবার শেষ
প্রসঙ্গে আসি। নিজামী গ্রেফতারের পর এবং যুদ্ধ অপরাধের বিচার কার্যক্রম শুরু
হওয়ার পর হঠাৎ করে জামায়াত জাতীয় রাজনীতিতে সরব হয়েছে। সরকারের কর্মকান্ডের
করা সমালোচনা শুরু হয়েছে। আন্দোলন ও করা হচ্ছে। সরকারের বৈধতা ও এখতিয়ার নিয়ে
জামায়াতের পক্ষ থেকে নিত্য নতুন প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। এতদিন জামায়াত এসব বিষয়ে
চুপ ছিলো কেন? নাকি সরকার তখন
পর্যন্ত কিছুই করে নি? এতদিন সরকার দেশ
ও জাতিকে নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করেছে কিন্তু জামায়াতকে ছোঁয়া হয়নি তাই তারা টুঁ
শব্দটি করেনি। তাহলে বোঝা গেলো যে দেশ ও জনগনের স্বার্থে তারা কথা বলে না, কিন্তু চিৎকার
করে উঠে যখন নিজেদের গায়ে আঘাত লাগে। এ ধরনের আচরন একটি আদর্শের দাবীদার রাজনৈতিক
দলের জন্য কতটা শোভন সে প্রশ্ন যদি কেউ করে তাহলে তার কি উত্তর দেবেন দলটির
নেতা-কর্মীরা ???
ইসলামী আন্দোলন সমালোচনার আন্দোলন নয়। ধর্যের আন্দোলন । এখানে আমাদের আর এক ভাই ভূল পথে থাকলে আমাদের নিরাশ হলে চলবে না। দাওয়াত,কৌশল ও ধৈর্যের সাহায্য নিতে হবে। দুভাগ্যের বিষয় আমাদের দেশে আজ পর্যন্ত নিজেদের বিভেদ মিটাতে কেউ এগিয়ে আশে নাই। এক টেবিলে আলোচনা করে,পরামর্শ করে সমাধানের সময় এখনো আশে নাই। অথচ একে অন্যকে দোষারোপ করে আমরা পার পেতে চাচ্ছি। কিন্তু আল্লাহ কি এই সমাজ চেয়েছিল যে সমাজে এক জন ভাই তার ভূলের জন্য তিরস্কার পাবে সহযোগিতা ছাড়া? আল্লাহ আমাদের সত্য ও সঠিক বুঝার জ্ঞান দান করুন। আমিন।
উত্তরমুছুননিশ্চয়ই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের একে অপরকে সত্যের ব্যাপারে সতর্ক করতে আদেশ করেছেন, তিনি সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, ‘আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা আহবান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম।’ (সূরা আল ইমরান: ১০৪)
উত্তরমুছুনআরও বলেন, ‘অত:পর যখন তারা সেসব বিষয় ভুলে গেল, যা তাদেরকে বুঝানো হয়েছিল, তখন আমি সেসব লোককে মুক্তি দান করলাম যারা মন্দ কাজ থেকে বারণ করত। আর পাকড়াও করলাম, গোনাহগারদেরকে নিকৃষ্ট আযাবের মাধ্যমে তাদের না-ফরমানীর দরুন।’ (সূরা আ’রাফ: ১৬৫)
"জামায়াত শিবিরের রাজনীতি নিয়ে লেখার ইচ্ছা ছিলো না। লিখতে বসলেই কলমের ডগা দিয়ে খালি নেগেটিভ কথা বের হয়। পরে যখন পড়ি নিজেরই ভালো লাগে না।" এই ভাবে আলোচনার সূত্রপাত হলে জামাত-শিবিরের ভায়েরা শুরুতেই নিরাশ হবে। সেক্ষেত্রে গঠনমূলক সমালোচনা ব্যাহত হবার সম্ভাবনাই বেশী।
উত্তরমুছুনলেখক যে বাস্তবতা চিন্তা না করেই মনে যা এসেছে তাই লিখেছেন এটা বুঝাই যাচ্ছে। আজ ২০১৩ সালে এসে তিনি কি তার এই লেখার কোন যৌক্তিকতা খুজে পাবেন?
উত্তরমুছুন