মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

পুনঃরায় খিলাফত প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবেঃ ১। পুর্বে যে সকল বিষয়ে বিচার কার্যকর হয়েছে? ২। পুর্বের যেকোন লেনদেন ৩। বর্তমানের যেকোন চুক্তিগুলো কি করা হবে? তা হতে পারে ব্যাক্তি পর্যায়ে বা সরকার পর্যায়ে।

খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হবার পূর্বেকার চুক্তি, লেনদেন বিচারিত রায় যা নিষ্পন্ন হয়েছে এবং কার্যকর করা হয়ে গেছে তা খিলাফতের আগের সময়ে বৈধ খিলাফতের বিচারব্যবস্থা ব্যাপারে কোন হস্তক্ষেপ করবে না বা মামলা পুনরায় শুরুও করবে না এদের ব্যাপারে খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হবার পর নতুন কোন মামলা গৃহীত হবে না 

তবে দুটি বিষয় এর বাইরে থাকবে:

খিলাফতের পূর্বে যে মামলাটি নিষ্পন্ন হয়েছে এবং কার্যকরী হয়েছে যদি  এর ধারাবাহিকতা খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হবার পরও রয়ে  যায় এবং তা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক  হয়

যদি মামলাটি এমন কারও বিরুদ্ধে হয়ে থাকে যার কারণে মুসলিমগন ইসলাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়

উপরোক্ত দুটি বিষয় এর বাইরে বাকি সব চুক্তি, লেনদেন বিচারিত রায় যা নিষ্পন্ন হয়েছে এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হবার পূর্বেই কার্যকর করা হয়ে গেছে, এগুলো খিলাফত প্রতিষ্ঠার পর পুনরায় শুরু না করার ব্যাপারে দলিল হল রাসূলুল্লাহ (সা:) মক্কা বিজয়ের পর যে বাড়ি থেকে হিজরত করেছিলেন সে বাড়িতে ফেরত যাননি

যে সব মুসলিম ইসলাম গ্রহণ করেছে হিজরত করেছে তাদের ঘরবাড়ি কুরাইশদের নিয়ম অনুসারে তাদের আত্মীয়রা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে যায় একই ভাবে রাসূলুল্লাহ (সা:) এর ঘরবাড়ি তার আত্মীয় উকাইল ইবনে আবু তালিব উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে যায় উকাইল রাসূলুল্লাহ (সা:) এর বাড়িগুলো গ্রহণ করে এবং বিক্রি করে মক্কা বিজয়ের পর সেসময় রাসূলুল্লাহ (সা:) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘আপনি কোন বাড়িতে থাকতে চাচ্ছেন?’ তিনি  (সা:) বললেন, ‘উকাইল কি আমাদের কোন বাড়ি ছেড়ে দিয়েছে?’

অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, ‘উকাইল কি আমাদের কোন বাড়ি ছেড়ে দিয়েছে?’ উকাইল রাসূলুল্লাহ  (সা:) বাড়ি বিক্রয় করে দিয়েছে এবং তিনি (সা:) এসব চুক্তি বাতিল ঘোষণা করেন নি

উসামা বিন জায়েদ থেকে আল বুখারী বর্ণনা করেন, ‘মক্কা বিজয়ের দিন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে  রাসূলুল্লাহ  (সা:), আগামী কাল আপনি কোথায় থাকতে চান?’ নবী  (সা:) বললেন, ‘উকাইল কি আমাদের কোন বাড়ি ছেড়ে দিয়েছে?’

ব্যাপারে আরও বর্ণিত আছে যে, আবু আল আস ইবনে আল রাবী ইসলাম গ্রহণ করেন মদিনায় হিজরত করেন তবে তার আগে তার স্ত্রী ইসলাম গ্রহণ করে এবং বদরের পর মদিনায় হিজরত করে এবং তখনও আল রাবী মক্কায় মুশরিক ছিলেন মুসলিম হবার পর রাসূলুল্লাহ  (সা:) আল রাবীর স্ত্রীকে বিবাহ চুক্তি নবায়ন না করেই তার কাছে ফেরত যেতে অনুমতি দেন এটা ছিল জাহেলিয়াতের সময়কার বিবাহ  চুক্তির স্বীকৃতি প্রদান

ইবনে আব্বাস (রা) এর বরাত দিয়ে ইবনে মাজাহ বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা:) তার কন্যা জায়নাবকে দুবছরের পর আবু আল আস ইবনে আল রাবী কাছে ফেরত পাঠান, প্রথম বিবাহ চুক্তির ভিত্তিতে’  

সুতরাং,

. খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হবার পর পূর্বেকার যেসব  লেনদেন   মামলার ধারাবাহিকতা  রয়ে যায় যা  ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক  সেসব সম্পর্কে দলিল হল, লোকদের উপর ইবনে আব্বাসের ঋণের যে সুদ ছিল তা ইসলামী রাষ্ট্রে রাসূলুল্লাহ (সা:) মওকুফ করে দিয়েছিলেন এবং তারা কেবলমাত্র আসল পরিশোধ করেছিল অর্থাৎ দারুল ইসলামে পূর্বেকার প্রাপ্য সুদ বাতিল বলে গণ্য হবে

সুলায়মান ইবনে আমরুর মাধ্যমে তার পিতা হতে আবু দাউদ বর্ণনা করেন, ‘আমি বিদায় হজ্বের ভাষণে রসূলকে (সা:) বলতে শুনেছি, ‘লক্ষ্য কর! আজ থেকে জাহেলিয়াতের সময়কার যে কোন ধরনের সুদ বাজেয়াপ্ত তোমরা কেবলমাত্র আসল পাবার দাবী রাখ এবং ব্যাপারে কারও প্রতি অন্যায় কর না এবং অন্যায়ের শিকারও না

এছাড়াও জাহেলিয়াতের সময় যাদের চারের অধিক স্ত্রী ছিল তাদেরকে চারজন রেখে বাকীদের ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল আবদুল্লাহ ইবনে উমর থেকে তিরমিযী বর্ণনা করেন যে, ঘাইলাম ইবনে সালামা ইবনে থাফাকী যখন ইসলাম গ্রহণ করেন তখন তার দশজন স্ত্রী ছিল যারাও তার সাথে ইসলাম গ্রহণ করে

রাসূলুল্লাহ (সা:) তাকে স্ত্রীগনের মধ্য হতে চারজনকে পছন্দ করবার নির্দেশ দেন

সুতরাং, পূর্বেকার যেসব চুক্তির ধারাবাহিকতা রয়েছে যা ইসলামের সাথে দ্বান্দিক, খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হবার পর সেগুলো বাতিল করতে হবে এবং এটা ফরয

উদাহরণস্বরূপ, যদি কোন মুসলিম নারী খিলাফতের পূর্বে কোন খ্রিস্টান পুরুষকে বিয়ে করে থাকে, তাহলে খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হবার সাথে সাথে শরীয়াহ নিয়ম অনুসারে সে বিয়ে বাতিল বলে গণ্য হবে 

. যেসব ব্যক্তিবর্গ ইসলাম মুসলিমদের ক্ষতি করেছে তাদের বিরুদ্ধে খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হবার পর মামলা করা অনুমোদিত কেননা রাসূলুল্লাহ (সা:) মক্কা বিজয়ের পর কিছু কিছু কাফেরের রক্তপাতের ক্ষমার ঘোষণা দেন যেহেতু তারা জাহেলিয়াতের সময় মুসলমান ইসলামদের ক্ষতিসাধন করেছিল তিনি বলেছেন, তারা যদি কাবার পর্দা ধরে ঝুলেও থাকে তবুও তাদের হত্যা করা হবে

অথচ তিনি তার আগে বিপরীত ঘোষণা দিয়েছিলেন,  ‘ইসলাম তার পূর্বের যা এসেছে তাকে অপসারণ করেছে’- যা আমরু ইবনে আল আস থেকে আহমদ তাবারাণী বর্ণনা করেন এর অর্থ হল এই হাদিস মুসলমান ইসলামের যারা ক্ষতিসাধন করেছিল তারা এর অন্তর্ভুক্ত নয় অর্থাৎ তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা যাবে  অন্যদিকে  যেহেতু রাসূলুল্লাহ  (সা:) তাদের অনেককে আবার ক্ষমা করে দিয়েছিলেন (যেমন: ইকরামা বিন আবি জাহেল) সেহেতু এর অর্থ হলো যারা মুসলমানদের উপর অত্যাচার করেছে এবং ইসলামের ব্যাপারে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে খলিফা ইচ্ছে করলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করতে পারেন বা ক্ষমাও করে দিতে পারেন

উপরোক্ত দুটি বিষয় বাদে বাকী সব ক্ষেত্রে যেমন, বিভিন্ন চুক্তি, লেনদেন মামলা যা খিলাফতের আগে সম্পন্ন কার্যকরী হয়ে গেছে সেসবের ব্যাপারে পুনরায় মামলা হবে না বা বাতিল হবে না

যেমন, একজন লোক কোন স্কুলের দরজা ভাঙ্গার দায়ে দু বছরের কারা দণ্ডাদেশ ভোগ করে এবং দু বছর খিলাফত প্রতিষ্ঠার আগেই শেষ হয়ে যায় নিজেকে নির্দোষ মনে করে খিলাফত আসার পর যদি সে ব্যক্তি তার নামে অভিযোগকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করতে চায় তবে সে মামলা গৃহীত হবে না কেননা এই ঘটনা, এর বিচার প্রক্রিয়া প্রয়োগ খিলাফতের  আগেই সুসম্পন্ন হয়েছে বিষয়টি ব্যক্তিকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া  তাআলার ওয়া  তাআলার কাছে পুরষ্কার  পাবার আশায় পেশ করতে হবে। কিন্তু যদি এরকম হয় যে, ব্যক্তিকে দশ বছরের দণ্ডাদেশ প্রদান করা হয় এবং শাস্তিভোগের দুবছরের মাথায় খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে খলিফা এই মামলাকে পুনর্বিবেচনা করতে পারেন এতে হয়ত মামলাটি গোঁড়া থেকেই বাতিল হতে পারে তাকে কারাগার থেকে মুক্ত করে দিয়ে অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দিতে পারে অথবা যে শাস্তি হয়েছে তা পর্যাপ্ত মনে করেও মুক্তি দিতে পারে

একইভাবে, বর্তমানে আমদের দেশে তাবেদার সরকারগুলো অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে যে সকল চুক্তি করছে যেমন- ভারতের সাথে করা ফ্রেম ওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট , খনিজ সম্পদকে ব্যাক্তিমালিকানায় প্রদান অথব আমেরিকার সাথে সেনাবাহিনী বিষয়ক চুক্তি যা মুসলিমদের স্বার্থ বিরোধী তা পুনরায় খিলাফত প্রতিষ্ঠা হলে অবশ্যই বাতিল করা হবে শুধুমাত্র সে সকল চুক্তি যা ইসলামী শরীয়ার সাথে সাংঘর্ষিক নয় তা বহাল রাখা যেতে পারে

1 টি মন্তব্য:

  1. An excellent post.
    Keep publishing new post. It will certainly help us for DAWA .
    May ALLAH help us for victory here and hereafter.
    May the future kHILAFAH start from Bangladesh and may there will be a significant contribution of this blog.

    Salam.

    উত্তরমুছুন