শনিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১২

রিয্‌ক ও জীবনকাল একমাত্র আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে

রিয্‌ক-এর আভিধানিক অর্থ এমন বস্তু যা কোনো প্রাণী খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করেযা দ্বারা সে দৈহিক শক্তি সঞ্চয়প্রবৃদ্ধি সাধন ও জীবন রক্ষা করে থাকে। রিয্‌কের জন্য মালিকানা-স্বত্ব শর্ত নয়। সকল জীবজন্তুই রিয্‌ক ভোগ করে থাকেকিন্তু তারা এর মালিক হয় না। কারণ মালিক হওয়ার যোগ্যতাই তাদের নেই। অনুরূপভাবে ছোট শিশুরাও মালিক নয়কিন্তু ওদের রিয্‌ক অব্যাহতভাবে তাদের কাছে পৌঁছতে থাকে। কুরআনের বহু আয়াত থেকে একথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ হয় যেরিয্‌ক একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে। যেমন:

- নিশ্চয়ই আল্লাহই আমার রিয্‌কদাতা, অসীম শক্তিধর। [সূরা যারিয়াত: ৫৮]

- আর জমিনে বিচরণশীল প্রাণীর জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর। [সূরা হুদ: ৬]

- আল্লাহ ছাড়া তোমরা যাদের উপাসনা করছ, নিঃসন্দেহে তারা তোমাদেরকে রিয্‌ক দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না। সুতরাং তোমরা আল্লাহর কাছেই রিয্‌ক প্রার্থনা কর। [সূরা আনকাবুত: ১৭]

- আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পর্যাপ্ত রিয্‌ক প্রদান করেন, আর যাকে ইচ্ছা কমিয়ে দেন। [সূরা রাদ:২৬]

- আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অগণিত রিয্‌ক দান করেন। [সূরা আলে-ইমরান: ৩৭]

মুসনাদে আহমদ, ইবনে মাজাহ ও দারিমীতে আবু যার (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেছেন, কুরআনের এমন একটি আয়াত আমি জানি, যদি লোকেরা ওই আয়াতের উপর আমল করত, তবে সেটাই তাদের জন্য যথেষ্ট হতো: 'যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে চলে তিনি তার মুক্তির রাস্তা তৈরি করে দেন এবং তাকে এমন জায়গা থেকে রিয্‌ক দেন, যা সে ধারণাও করতে পারে না।' [সূরা তালাক: ২]

অপর হাদীসে আছে, বান্দার রিয্‌ক তাকে এভাবে খুঁজে বেড়ায় যেমন তার মৃত্যুকাল তাকে খোঁজ করে। [মিশকাত]

বুখারী ও মুসলিম শরীফে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) একখানি দীর্ঘ হাদিস বর্ণনা করেন যার সারমর্ম হল - মানুষ তার জন্মের পূর্বে বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করে আসে। মাতৃগর্ভে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠিত হওয়ার পর আল্লাহ তা'লার নির্দেশ মুতাবিক একজন ফেরেশতা তার সম্পর্কে চারটি বিষয় লিপিবদ্ধ করেন। প্রথম, ভালো-মন্দ তার যাবতীয় কার্যকলাপ, যা সে জীবনভর করবে। দ্বিতীয়, তার আয়ুষ্কালের বর্ষ, মাস, দিন, ঘণ্টা, মিনিট ও শ্বাস-প্রশ্বাস। তৃতীয়, কোথায় তার মৃত্যু হবে এবং কোথায় সমাধিস্থ হবে। চতুর্থ, তার রিয্‌ক কী পরিমাণ হবে এবং কোন্‌ পথে তার কাছে পৌঁছবে।

কোনো কোনো রেওয়াতে আছে যে, হযরত মুসা (আ) আগুনের খোঁজে তূর পাহাড়ে পৌঁছে আগুনের পরিবর্তে যখন সেখানে আল্লাহর নূরের তাজাল্লী দেখতে পেলেন, নবুয়ত ও রিসালাত লাভ করলেন এবং ফিরাউন ও তার কওমকে হিদায়তের জন্য মিশর গমনের নির্দেশ প্রাপ্ত হলেন, তখন তাঁর মনের কোণে উদয় হল যে, আমি স্বীয় স্ত্রীকে জনহীন-মরুপ্রান্তরে একাকিনী রেখে এসেছি, তার দায়িত্ব কে গ্রহণ করবে? তখন আল্লাহ পাক হযরত মুসা (আ)-এর সন্দেহ নিরসনের জন্য আদেশ করলেন যে, "তোমার সম্মুখে পতিত প্রস্তরখানির উপর লাঠি দ্বারা আঘাত হান।" তিনি আঘাত করলেন। তখন উক্ত প্রস্তরখানি বিদীর্ণ হয়ে তার মধ্য হতে আরেকখানি পাথর বের হল। দ্বিতীয় পাথরখানির উপর আঘাত করার জন্য পুনরায় আদেশ হল। হযরত মুসা (আ) আদেশ পালন করলেন। তখন তা ফেটে গিয়ে আরেকখানি প্রস্তর বের হল। তৃতীয় পাথরখানি উপর আঘাত হানার জন্য আবার নির্দেশ দেওয়া হল। তিনি আঘাত করলেন। তা বিদীর্ণ হল এবং এর অভ্যন্তর হতে একটি জীবিত কীট বেরিয়ে এল, যার মুখে ছিল একটি তরু-তাজা তৃণ। আল্লাহতা'লার অসীম কুদরতের বিশ্বাস হযরত মুসা (আ)-র পূর্বেও ছিল। তবে বাস্তব দৃষ্টান্ত প্রত্যক্ষ করার প্রতিক্রিয়া স্বতন্ত্র হয়ে থাকে। তাই এ দৃশ্য দেখার পর হযরত মুসা (আ) সরাসরি মিশরের দিকে রওয়ানা হলেন। সহধর্মীকে এটা বলা প্রয়োজন মনে করেননি যে, মিশর যাওয়ার জন্য আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। [তাফসীরে মা'রেফুল কোরআন]

এগুলোসহ কুরআনের আরো বহু আয়াত ও বহু হাদীস দ্বারা একথাই প্রমাণিত হয় যে, রিয্‌কের নিয়ন্ত্রণ কেবল আল্লাহর হাতে। অবশ্য আল্লাহ তাঁর বান্দাকে রিয্‌ক উপার্জন করার কাজ করার আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু বান্দার ওই 'কাজ' তার রিয্‌কের 'কারণ' নয়। বরং এটা রিয্‌কের মাধ্যম মাত্র। এই মাধ্যম হালাল বা হারাম দুই রকমের হতে পারে। রিয্‌ক উপার্জনের মাধ্যম হালাল বা হারাম যা-ই হোক না কেন, রিয্‌কটি আসে আল্লাহর পক্ষ থেকেই। তবে ইসলাম মানুষকে রিয্‌ক অর্জনের হালাল পথগুলো দেখিয়ে দিয়েছে এবং হারাম পথগুলোও চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। একজন মুমিন রিয্‌ক অর্জনের জন্য কেবল হালাল পন্থাগুলোই ব্যবহার করবে। অবশ্য কেউ হারাম পথ অবলম্বন করলেও সে-ই রিয্‌ক আল্লাহই প্রদান করেন। যখন কোনো ব্যক্তি অবৈধভাবে অন্যের মাল হস্তগত ও উপভোগ করে, তখন উক্ত বস্তু তার রিয্‌ক হওয়া সাব্যস্ত হয়, তবে অবৈধ পন্থা অবলম্বন করার কারণে তা তার জন্য হারাম হয়েছে। যদি সে লোভের বশবর্তী হয়ে অবৈধ পন্থা অবলম্বন না করত; তাহলে তার জন্য নির্ধারিত রিয্‌ক বৈধ পন্থায়ই তার নিকট পৌঁছে যেত।

জীবনকাল

পবিত্র কুরআনের বহু আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, জীবনকাল (আজল)-এর পরিসমাপ্তিই মৃত্যুর কারণ এবং একমাত্র আল্লাহই মৃত্যু ঘটান।

- আর আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কারো মৃত্যু হতে পারে না, যেহেতু প্রত্যেকের মেয়াদ নির্ধারিত। [সূরা আলে ইমরান: ১৪৫]

- আল্লাহই জীবের প্রাণসমূহ তাদের মৃত্যুর সময় হরণ করে থাকেন। [সূরা যুমার: ৪২]

- রব তিনি যিনি জীবন ও মৃত্যু প্রদান করেন। [সূরা বাকারা: ২৫৮]

- আল্লাহই বাঁচান ও মারেন। [সূরা আলে ইমরান: ১৫৬]

- তোমরা যেখানেই থাক না কেন, মৃত্যু তোমাদের অবধারিত, যদি তোমরা সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান কর তবুও। [সূরা নিসা: ৭৮]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন