আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং জীবন পরিচালনা করার জন্য
সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন। পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ তিনি সৃষ্টি করে তা
মানুষের ব্যবহারের জন্য অর্পণ করেছেন। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা পবিত্র কুরআনে বলেন,
"তিনিই সে সত্তা যিনি
সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য যা কিছু জমিনে রয়েছে সেই সমস্ত।" [সূরা বাকারা :
২৯]
"এবং আয়ত্ত্বাধীন করে
দিয়েছে তোমাদের, যা আছে নভোমন্ডলে ও
যা আছে ভূমন্ডলে; তার পক্ষ থেকে।"
[সূরা আল জাসিয়া : ১৩]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আরো বলেছেন,
"যেন সম্পদ তোমাদের
বিত্তশালীদের মধ্যে আবর্তিত না হয়" [সূরা হাশর: ৭]
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থা বাদ দিলে তার পরিণতি কি হবে সে
সম্পর্কেও তিনি সমগ্র মানব জাতিকে সতর্ক করে দিয়েছেন,
"যে আমার বাণী (কুরআন)
প্রত্যাখ্যান করবে, তার জীবনসামগ্রী
সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে পুনরুত্থান দিবসে অন্ধভাবে তুলব।" [সূরা তোয়াহা :
১২৪]
উন্নততর জীবনের পথ প্রদর্শনের
লক্ষ্যে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা সমগ্র মানবজাতির
জন্য কুরআন প্রেরণ করেছেন। তিনি পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমস্যাসহ মানব
জীবনের সকল সমস্যার বিস্তারিত সমাধান তুলে ধরেছেন। ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত্তি তথা
খিলাফত রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ভিত্তি হচ্ছে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার আদেশ ও নিষেধ। এই ব্যবস্থা মানবরচিত পুঁজিবাদী
ব্যবস্থার সকল ভ্রান্তি আর পক্ষপাতদুষ্টতা থেকে মুক্ত। আর একমাত্র খিলাফত সরকারই
অত্যন্ত দ্রুত ও কার্যকরভাবে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির সমস্যা সমাধান করার সাথে
সাথে গণমানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি নিশ্চিত করতে পরে।
ইসলাম মানুষের চাহিদাগুলোকে
সামষ্টিকভাবে না দেখে প্রত্যেক ব্যক্তির চাহিদাগুলোকে স্বতন্ত্রভাবে বিচার করে।
স্বতন্ত্রভাবে প্রত্যেক ব্যক্তির মৌলিক চাহিদা পূরণ না করে সামগ্রিকভাবে পুরো
সমাজের জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধি করা তথা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ইসলামিক
রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য নয়। ইসলাম প্রত্যেক ব্যক্তির মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত না করে
সবাইকে সমাজ থেকে যেনতেনভাবে তা অর্জন করার জন্য বিচ্ছিন্নবভাবে ছেড়ে দেয়না।
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা খিলাফত রাষ্ট্রের
উপর জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকটি নাগরিকের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা - এইসব মৌলিক
চাহিদা পূরণকে ফরয বা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। রাসূল (সাঃ) বলেন, "বাস করার জন্য একটি গৃহ, আব্রু রক্ষার জন্য এক টুকরা কাপড়, আর খাওয়ার জন্য এক টুকরা রুটি ও একটু পানি এসবের চেয়ে
অধিকতর জরুরী কোন অধিকার আদম সন্তানের থাকতে পারে না।" (তিরমিযী)
রাষ্ট্রের নাগরিকের এই মৌলিক
চাহিদা পূরণে খলীফা বাধ্য। যদি খলীফা এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন, তবে তার জন্যে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন রাসূলুল্লাহ
(সাঃ)। রাসূল (সাঃ) বলেছেন: "সাবধান! তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং
প্রত্যেককেই তার দায়িত্ব সম্বন্ধে জবাবদিহি করতে হবে।" ইমাম (তথা খলীফা যিনি
সর্বসাধারণের উপর শাসক হিসেবে নিয়োজিত তিনি)ও দায়িত্বশীল, তাকেও তার দায়িত্ব সম্বন্ধে জবাবদিহি করতে হবে।
মা'কিল (রা) থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) বলেন, "এমন আমীর যার উপর
মুসলিমদের শাসনভার অর্পিত হয় অথচ এরপর সে তাদের কল্যাণ সাধনে চেষ্টা না করে বা
তাদের মঙ্গল কামনা না করে; আল্লাহ্ তাকে তাদের
সাথে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না।" (মুসলিম)
সুতরাং খিলাফত রাষ্ট্রে
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ বা স্থিতিশীল রাখা কোন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বিষয় নয়। এটি
প্রত্যেক খলীফার সার্বক্ষণিক দায়িত্ব। তিনি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে জনগণের এইসব
মৌলিক চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করবেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন