নিম্নোক্ত প্রবন্ধটি শেখ
ওমর রাসেল অনুদিত "এটাই আমার পথ" এর একাংশ হতে গৃহীত।
‘হিকমত’ শব্দটি
আরবি ‘হাকামা’ শব্দ থেকে উদ্ভূত,
যার অর্থ হলো শাসন করা বা রায় দেয়া। এই শব্দটি কুরআনে বিশবার
ব্যবহার হয়েছে। বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে শব্দটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমনঃ
নবুয়্যত, কুরআন, সুন্নাহ,
বাস্তবজ্ঞান এবং বাস্তবজ্ঞানের আলোকে কাজ করা।
বিভিন্ন আয়াতে ‘হিকমত’
শব্দের কিছু প্রয়োগ নিম্নরূপঃ
رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيهِمْ رَسُولاً
مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ
وَيُزَكِّيهِمْ إِنَّكَ أَنتَ العَزِيزُ الحَكِيمُ
হে রব, তাদের
মধ্য থেকেই তাদের কাছে একজন রাসূল প্রেরণ করুন যিনি তাদের কাছে আপনার আয়াতসমূহ
তিলাওয়াত করবেন, তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেবেন এবং
তাদের পবিত্র করবেন। নিশ্চয়ই আপনি পরাক্রমশালী, মহাজ্ঞানী।
[সূরা বাকারাঃ ১২৯]
এই আয়াতে ‘হিকমত’
শব্দের অর্থ হলো ওহীর তিলাওয়াত ও সুন্নাহ দ্বারা রাসূল (সা)
কর্তৃক প্রদত্ত ওহীর ব্যাখ্যা।
يُؤتِي الْحِكْمَةَ مَن يَشَاء وَمَن
يُؤْتَ الْحِكْمَةَ فَقَدْ أُوتِيَ خَيْرًا كَثِيرًا وَمَا يَذَّكَّرُ إِلاَّ
أُوْلُواْ الأَلْبَابِ
তিনি যাকে ইচ্ছা হিকমত দান
করেন এবং যাকে হিকমত দান করা হয়, সে প্রভূত কল্যাণকর বস্তু প্রাপ্ত
হয়। কিন্তু উপদেশ শুধু তারাই গ্রহণ করে, যারা জ্ঞানবান।
[সূরা বাকারাঃ ২৬৯]
এই আয়াতে ‘হিকমত’
শব্দের অর্থ হলো কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞান ও বোধগম্যতা এবং বিশুদ্ধ ও
সঠিক পদ্ধতিতে কথা ও কাজ করার সক্ষমতা। ইবনে আব্বাসের মতে, এই আয়াতে হিকমত শব্দের অর্থ কোরআনের জ্ঞান। [তাফসীরে ইবনে কাসীর]
لَقَدْ مَنَّ اللّهُ
عَلَى الْمُؤمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولاً مِّنْ أَنفُسِهِمْ يَتْلُو
عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ
وَإِن كَانُواْ مِن قَبْلُ لَفِي ضَلالٍ مُّبِينٍ
আল্লাহ ঈমানদারদের ওপর
অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মধ্যে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়েছেন।
তিনি তাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ [কুরআন] পাঠ করেন। তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং
তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন। বস্তুত তারা ছিল পূর্ব থেকেই পথভ্রষ্ট।
[আলে-ইমরানঃ ১৬৪]
এই আয়াতে ‘হিকমত’
শব্দের অর্থ হলো সুন্নাহ।
রাজনীতি বা দাওয়ার
ক্ষেত্রে ‘হিকমত’ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে যে আয়াতে
সেখানে নির্দেশ হলোঃ
ادْعُ إِلِى سَبِيلِ رَبِّكَ
بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ
আপনার পালনকর্তার পথের
দিকে আহবান করুন হিকমত সহকারে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে এবং তাদের সঙ্গে বিতর্ক
করুন পছন্দনীয় পন্থায়। [সূরা নাহলঃ ১২৫]
এই আয়াতে হিকমতের অর্থ
কোনো কোনো তাফসিরবিদ কুরআন, কেউ কেউ কুরআন-সুন্নাহ এবং কেউ কেউ অকাট্য
যুক্তি-প্রমাণ স্থির করেছেন। [তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন, ৫ম
খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪১২]
রুহুল মা’আনিতে
আল্লামা আলুসী (রহ) আল-বাহরুল মুহীতের সূত্রে বলেছেনঃ
أَنَهَا الْكَلام الصواب الواقع مِن
النفس أجمع موقع
এমন বিশুদ্ধ বাক্যকে হিকমত
বলা হয় যা মানুষের মনে আসন করে নেয়।
সুতরাং দেখা যায়, পবিত্র
কুরআনে ‘হিকমত’ শব্দটি বহুবিধ
অর্থে ব্যবহৃত হলেও প্রতিটি অর্থই কুরআন ও সুন্নাহর সঙ্গে দৃঢ়ভাবে সংশ্লিষ্ট।
উপরিউক্ত কোনো একটি আয়াতেও ‘হিকমত’ শব্দটি কুরআন-সুন্নাহর বিপরীত কাজের লাইসেন্স অর্থে ব্যবহৃত হয়নি। বরং
যেসব কাজের পক্ষে কুরআন-সুন্নাহতে অকাট্য প্রমাণ আছে, সেসব
কাজ করার মধ্যেই হিকমত নিহিত। আর যেসব কাজ হারাম হওয়ার পক্ষে কুরআন-সুন্নাহতে
অকাট্য প্রমাণ রয়েছে, সেসব কাজ বর্জন করার মধ্যে হিকমত
নিহিত। তাই কুরআন-সুন্নাহতে অকাট্যভাবে হারাম প্রমাণিত কোনো কাজ বা মতবাদ গ্রহণ
করার মধ্যে হিকমত থাকার প্রশ্নই ওঠে না। যারা ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র বা জাতীয়তাবাদের মতো কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা অকাট্যভাবে হারাম
প্রমাণিত মতবাদের মধ্যে হিকমত খোঁজেন কিংবা যারা ধর্মনিরপেক্ষ বা জাতীয়তাবাদী শক্তি
বা নারী নেতৃত্বের সাথে জোট করার জন্য হিকমতের দোহাই দেন, তারা সুসস্পষ্টভাবে ভুল পথে আছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন