সোমবার, ১৯ মার্চ, ২০১২

খিলাফত রাষ্ট্রের মুদ্রানীতি

পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় সরকারের মুদ্রা নীতি
চলমান ব্যবস্থায় সরকারের হাতে টাকা ছাপানোর অসীম ক্ষমতা রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা সরবরাহের পরিমাণ নির্ধারণ করে তা ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে থাকে। মুদ্রা সরবরাহ নির্ধারণে তাত্ত্বিকভাবে কিছু ফর্মুলা বা নিয়ম অনুসরণ করার কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে ক্ষমতাসীন সরকারের মনোভাব আর আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর চাপ অনুযায়ী সরকার মুদ্রা সরবরাহের মাত্রা নির্ধারণ করে।

সামগ্রিকভাবে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির পিছনে মুদ্রা সরবরাহের ভূমিকা একটি উদাহরণ দিলে পরিষ্কার হয়ে যাবে। মনে করুন বাজারে  শুধুমাত্র দশ কেজি চাল পাওয়া যায় আর সরকার বাজারে ১০০ টাকা সরবরাহ করেছে। তাহলে প্রতি কেজি চালের দাম নির্ধারিত হবে দশ টাকা। সরকার যদি মুদ্রা সরবরাহ বাড়িয়ে ২০০ টাকা করে, তবে প্রতি কেজি চালের দাম হবে ২০ টাকা। এখানে মনে রাখা প্রয়োজন যে যত দ্রুত মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা যায়, বাজারে তত দ্রুত জিনিসপত্রের যোগান দেয়া সম্ভব নয়। সুতরাং সরকারের অনুসৃত মুদ্রা নীতি প্রাথমিকভাবে বাজারের মুল্য বৃদ্ধি বা  মুদ্রাস্ফীতির জন্য দায়ী। আর নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের বেতনও সরকার তাৎক্ষণিকভাবে বৃদ্ধি করে না বলে জনগণের প্রকৃত আয় কমে যায়। সরকারের এই সিদ্ধান্তগুলো সম্পর্কে জনগণকে অন্ধকারে রাখা হয় এবং এভাবে প্রকৃতপক্ষে গরীব জনগণকে বোকা বানানো হয় আরো গরীব করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, "Bangladesh Bank is pursuing monetary policy that supports high economic growth along price stability.Ó অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক এমন মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে যা অধিকতর প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে, সাথে সাথে জিনিসপত্রের দাম স্থিতিশীল থাকবে। এটা স্পষ্ট যে সরকারের প্রাথমিক উদ্দেশ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি; বাজারে জিনিসপত্রের দামের স্থিতিশীলতা সরকারের দ্বিতীয় উদ্দেশ্য। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির টার্গেট অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রা সরবরাহ সমপ্রসারণ করে অথবা সংকোচন করে। নিচের টেবিল থেকে বোঝা যায় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকও স্বীকার করে যে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করলে দেশে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে:

বছর
০১-০২
০২-০৩
০৩-০৪
০৪-০৫
০৫-০৬
০৬-০৭
০৭-০৮
মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি (%)
১৩
১৫.
১৩.
১৬.
১৯.
১৭
১৮
মুদ্রাস্ফীতি (%)
.
.
.
.
.
.
১০

এটা সবারই জানা যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পুরো সুবিধা পান সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণী। আর মূল্যস্ফীতির যাঁতাকলে পিষ্ট হয় দেশের গরীব জনগণ। যেহেতু পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় সরকার নিজের ইচ্ছামত মুদ্রা সরবরাহ করতে পারে, তাই মৌলিকভাবে এই মুদ্রাব্যবস্থা অস্থিতিশীল।

খিলাফত রাষ্ট্রের মুদ্রানীতি
ইসলাম খিলাফত সরকারকে ইচ্ছামত টাকা ছাপানোর অনুমোদন দেয়না। ফলে সরকারের হাতে মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ তথা ইচ্ছামত সংকোচন সম্প্রসারণের নীতি অনুসরণের কোন হাতিয়ার নেই। ইসলাম টাকা ছাপানোর সুনির্দিষ্ট অপরিবর্তনীয় নিয়ম প্রদান করেছে আর তা হলো স্বর্ণ রৌপ্যভিত্তিক মুদ্রা ব্যবস্থা। স্বর্ণ রূপার উভয়ই নিজস্ব মূল্য রয়েছে, যা বর্তমানে প্রচলিত মুদ্রার নেই। যেহেতু স্বর্ণ রৌপ্যভিত্তিক মুদ্রা ব্যবস্থায় সরকার নিজের ইচ্ছামত মুদ্রা সরবরাহ করতে পারেনা, তাই মৌলিকভাবে এই মুদ্রা ব্যবস্থা স্থিতিশীল। এটি শুধু তত্ত্বকথা নয়, ইতিহাসের বাস্তবতা থেকে এর উদাহরণ দেয়া যেতে পারে:

বছর
১৫০৭
১৫৮৯
বৃদ্ধি (শতকরা হারে)
এক স্বর্ণমুদ্রা =
৫৮ রৌপ্যমুদ্রা
৬২ রৌপ্যমুদ্রা

অর্থাৎ যেখানে প্রতি বছর আমাদের দেশে -১০ শতাংশ করে মূল্যস্ফীতি ঘটছে, সেখানে উসমানী খিলাফতের একটি সুদীর্ঘ সময়, আশি বছরেরও অধিক সময়ের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ঘটেছে মাত্র শতাংশ।

অন্যদিকে আমরা দেখেছি যে ২০০১ সালে কারো কাছে ৫০০ টাকা থাকলে সে কিনতে পারতো ৩৭ কেজি চাল আর আজকে একই ৫০০ টাকা দিয়ে কেনা যায় ১৮ কেজি চাল। বিষয়টিকে এভাবে বলা যায় যে জিনিসপত্রের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। এই বিষয়টিকে আরেকভাবে ব্যাখা করা যায় যে টাকার ক্রয়ক্ষমতা অর্ধেক হয়ে গেছে। কিন্তু ইসলামী রাষ্ট্রে সরকার মুদ্রার মান অর্থাৎ টাকার ক্রয়ক্ষমতা এভাবে কমাতে পারবে না। এবার দেখি ২০০১ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত স্বর্ণের দাম কিরূপ ছিল:

বছর
২০০১
২০০৭
২০০৯
দাম বৃদ্ধি (শতকরা হারে)
স্বর্ণের দাম (টাকা/প্রতি তোলা)
,৪৬৮
১৬,৪৪৫
২২,৮৮৭
৩১৯

অর্থাৎ গত আট বছরে প্রচলিত টাকার বিপরীতে স্বর্ণের দাম বেড়েছে প্রায় চার গুণ। এই সময়ে যদি স্বর্ণভিত্তিক মূদ্রা ব্যবস্থা থাকতো, তবে জিনিসপত্রের দাম অর্ধেক হত, দ্বিগুণ হতো না; অথচ গোটা সময়ে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের আয় স্থির থাকতো। বিষয়টিকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যায় যে এক তোলা স্বর্ণ© দিয়ে ২০০১ সালে চারশত কেজি মোটা চাল কেনা যেত আর ২০০৯ সালে এক তোলা স্বর্ণ© দিয়ে আটশত কেজি চাল কেনা সম্ভব। এভাবে সরকার কর্তৃক মূদ্রাস্ফীতির মাধ্যমে গরীবের সম্পদ লুট করার প্রক্রিয়া ইসলাম বন্ধ করে দেয়। এখানে উল্লেখ্য যে খিলাফত সরকারের সময় স্বর্ণ বা রূপার মূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কোন কারণ নেই। ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে বিশ্বে স্বর্ণের সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে বার্ষিক দুই শতাংশ করে, যে সরবরাহ চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আর পৃথিবীতে যে পরিমাণ স্বর্ণ© রূপা ব্যক্তি বা রাষ্ট্রের অধীনে রয়েছে তার সামগ্রিক বর্তমান বাজার দর এতো বেশী যে স্বর্ণ© বা রূপার মজুতদারী করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়।

1 টি মন্তব্য:

  1. আসালামু আলাইকুম,

    ভাই,"ইসলামে অর্থনৈতিক নীতিমালা" নামক পোস্টটি পড়তে চাচ্ছিলাম, কিন্তু এস্কেস হচ্ছে না।
    কখন পড়তে পারব?

    উত্তরমুছুন