রবিবার, ২৫ মার্চ, ২০১২

ভূ-রাজনীতির কল্পকাহিনী

ভূ-রাজনীতি ঐতিহ্যগতভাবেই মুলতঃ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তিসমুহের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ককে ঘিরে আবর্তিত। ইংল্যান্ডের হ্যালফোর্ড ম্যাককিন্ডার এর কাজ ও ১৯০৪ সালে তার হার্টল্যান্ড থিওরি প্রকাশের পর ভূ-রাজনীতির ধারণাটি ব্যাপক আলোচনায় আসে এবং এ ধারণাটি পরবর্তীতে সমুদ্রপথে বৃটিশ সাম্রাজ্যের আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ  ভুমিকা রেখেছে।

রাজনীতি যেখানে ক্ষমতার প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা করে সেখানে ভূ-রাজনীতি ক্ষমতার আলোচনা করে এর সাথে ভৌগোলিক অবস্থান এবং সম্পদের সম্পকের্র প্রেক্ষাপট থেকে। বিগত তিন শতাব্দী ধরে পশ্চিমা বিশ্ব রাজনৈতিক দৃশ্যপটে আধিপত্য বিস্তার করেছে এবং সম্পদ নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধেও অবতীর্ণ হয়েছে। সমুদ্রপথে আধিপত্য বিস্তার ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে পরাশক্তির মর্যাদা এনে দেয়। নৌবিজ্ঞানের উপর্যপুরি উৎকর্ষ সাধন ব্রিটিশদেরকে সমুদ্রে বাণিজ্যিক পথ অনুসন্ধানে ব্যাপক সাফল্য অর্জন ও মহাসাগরসমূহে আধিপত্য বিস্তারের পথকে সুগম করেছিল। নেপোলিয়ান যদিও বৃটিশ আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল কিন্তু ১৮১৫ সালের ওয়াটারলু যুদ্ধে পরাজয় নেপোলিয়ান বরণ করে।

ঊনিশ শতকের শেষের দিকে জার্মানী ডুবোজাহাজ ও রেলওয়ের উন্নয়ন সাধন করে প্রথম মহাযুদ্ধের মাধ্যমে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে চ্যালেঞ্জ করে এবং বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক দৃশ্যপটে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করে। যুদ্ধে বিজয়ী যৌথ শক্তি বৃটেন ও ফ্রান্স ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের নতুন হাতিয়ার-তৈলসহ বিজিত অঞ্চল ও অন্যান্য সম্পদ তাদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়। মাত্র ২৫ বছরের মধ্যে জার্মানী বৃহদাকার, শক্তিশালী ও অত্যাধুনিক রকেট প্রযুক্তির উদ্ভাবন করে যা মিসাইল চালনা এবং উড়োজাহাজ ও যুদ্ধবিমানের প্রভূত উন্নয়ন সাধন এবং বৈশ্বিক ক্ষমতার ভারসাম্য নির্ধারণী দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের জন্ম দেয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুপার পাওয়ার হিসেবে আর্বিভূত হয় এবং এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা, পারমাণবিক ও জ্বালানী শক্তির উৎকর্ষতার যুগের সূচনা হয়। প্রযুক্তির উনয়নের মাধ্যমে সম্পদ আহরণের দ্বারা মার্কিনীরা পুরোমাত্রায় আধিপত্য বিস্তার করে ও একধরণের অপ্রতিরোধ্য প্রতিমুর্তি গড়ে তোলে।

একচ্ছত্র আধিপত্যের একটি অলীক চিত্র তুলে ধরবার জন্য পশ্চিমা পুজিঁবাদীরা প্রপাগান্ডার আশ্রয় নেয় এবং তাদের আভ্যন্তরীণ দুর্বলতা ও সমস্যাসমূহকে আড়াল করবার জন্য অসংখ্য কল্পকাহিনী ও আখ্যানের জন্ম দেয়। এর একটি দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি হল, বিশ্বের অনেক লোক পশ্চিম ও পুঁজিবাদের আরোপিত আধিপত্যের মোহে প্রবঞ্চিত হয়ে পড়ে। এ কারণে অনেকেই পশ্চিমের কৃত্রিম প্রহেলিকা যা তাকে সাময়িক সস্থিরতা দিয়েছে তা ভেদ করে কিছুই দেখতে পায় না যদিও এর অবসানের জন্য একটু শক্তিশালী বাতায়নই যথেষ্ট।

আর এসব কারণেই এই প্রবন্ধটি লিখা হয়েছে। মুসলিম উম্মাহ ও ইসলামের একজন অভিভাবক হিসেবে বিশ্ব পরিস্থিতি জানবার জন্যই কেবল এ প্রয়াস নয়, বরং এর মাধ্যমে পশ্চিমা পুজিঁবাদীদের দুর্বলতাও গোচরীভূত হয়।

আর ভূ-রাজনীতি এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ যে, সম্পদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অনেক যুদ্ধ হয়েছে। এ ব্যাপারে ১৯১৯ সালে প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন বলেন, “এমন কোন পুরুষ, নারী বা শিশু কি আছে যে জানে না বর্তমান আধুনিক বিশ্বে যুদ্ধের বীজ মুলতঃ বাণিজ্যিক এবং শিল্প সংশ্লিষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বীতার মধ্যেই নিহিত রয়েছে?”

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন