মঙ্গলবার, ৬ মার্চ, ২০১২

ইসলাম প্রতিষ্ঠায় জনমত পরিবর্তন এবং গণআন্দোলন সৃষ্টির গুরুত্ব

সমাজ পরিবর্তন করতে হলে সমাজের প্রত্যেককেই পরিবর্তন করতে হবে এমন কোনও আবশ্যকতা নেই। যা আবশ্যক তা হল সম্মিলিত মতামত বা জনমতের পরিবর্তন সাধন। কোন সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা বা শাসক টিকে থাকে ঐ ব্যবস্থা বা শাসকের প্রতি জনগণের সক্রিয় বা নীরব সমর্থনের মাধ্যমে। যদি এই সমর্থনকে বিদ্বেষে পরিত করা যায় এবং অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেয়া যায় তাহলে ঐ ব্যবস্থা বা শাসকের ভিত্তি নড়ে যায় এবং এর পতন ঘটানো সম্ভব হয়। এ ব্যাপারটিই হলো জনমত পরিবর্তন আর একটি সমাজকে ভেঙ্গে আরেকটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে জনমতের এই পরিবর্তন ঘটানো অপরিহার্য একটি বিষয়।

যেহেতু জনমত একটি সমাজে শাসন কর্তৃত্বের ভিত্তি কাজেই বর্তমান সমাজকে ইসলামী সমাজে পরিবর্তন করতে হলে এ সমাজে ইসলামের ভিত্তিতে সব কিছু পরিচালনা করার ব্যাপারটিকে একটি জনমতে পরিণত করতে হবে; আর এর উপায় হচ্ছে সমাজের সর্বত্র সম্ভাব্য সব ধরণের উপায়ে প্রচলিত সমাজ ও রাষ্ট্রের ত্রুটি ও অব্যবস্থাপনাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া এবং জনগণের প্রতি বিদ্যমান শাসকগোষ্ঠীর জুলুম-বঞ্চনাকে তুলে ধরা। কীভাবে এ সকল শাসকরা জনগণের অর্থ-সম্পদ লুটপাট করছে, দিনের পর দিন জনগণকে মৌলিক অধিকার বঞ্চিত করছে, তাদের সাম্রাজ্যবাদী বিদেশী প্রভূদের পদলেহন করছে এবং দেশের সম্পদ ও নিরাপত্তা তাদের হাতে তুলে দিচ্ছে এসব কিছু পরিষ্কারভাবে উম্মোচন করে দিয়ে জনগণের সামনে তাদের স্বরূপ প্রকাশ করে দিতে হবে এবং জনগণকে সাথে নিয়ে সম্ভাব্য সকল রাজনৈতিক উপায়ে তাদের এসব কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাতে হবে এবং প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ক্রমাগতভাবে এসব কর্মসূচীর মাধ্যমে এসব শাসকদের পুরোপুরি জনবিচ্ছিন্ন এবং জনগণের ঘৃণার পাত্রে পরিণত করতে হবে।

এর পাশাপাশি সামাজিক অঙ্গন, রাজনৈতিক অঙ্গন সর্বত্র ইসলামী ব্যবস্থার কার্যকারিতা ও শ্রেষ্ঠত্বকে জোরেশোরে উপস্থাপন করতে হবে। ধারাবাহিক ও ব্যাপকভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমেই কেবল জনমত তৈরী করা যায়। যারা সমাজ পরিবর্তন করতে চায় তাদেরকে অবশ্যই সমাজের জনসাধারণের সাথে মিশতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় জনবিচ্ছিন্নতার কোনও স্থান নেই। একটা দীর্ঘ ও কষ্টকর বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক সংগ্রামের ভেতর দিয়ে সমাজকে অবশ্যই ইসলামী মতামতে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে। তাই ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের কর্মীরা সব ক্ষেত্রে জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তাদের সাথী হবে, উম্মাহ্র স্বার্থকে সংরক্ষণ করবে এবং উম্মাহকে তার উপর চাপিয়ে দেওয়া অন্যায়, অত্যাচার ও জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য উৎসাহিত করবে। এভাবে ইসলামী রাষ্ট্রের দাবী জনমতে পরিণত হবে।

কিন্তু ইসলাম প্রতিষ্ঠা করাকে একটি জনমতে পরিণত করাই লক্ষ্য অর্জনের একমাত্র ধাপ নয়; কেননা কোন একটি বাস্তব কাজের দিকে এই জনমতকে পরিচালিত না করলে জনমত কোন কাজে আসবেনা আর রাষ্ট্রব্যবস্থা হাতে না থাকা অবস্থায় জনমতকে দীর্ঘ সময় একটা বিষয়ে এমনি এমনি ধরে রাখাও কঠিন কাজ। রাষ্ট্র তার প্রচার যন্ত্র ও নানা কর্মকান্ডের মাধ্যেমে জনমতকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে পারে। অতএব, ইসলামী রাষ্ট্রের ব্যাপারে জনমত তৈরী হওয়ার পর জরুরী হচ্ছে জনগণকে সংগঠিত করে একটি গণআন্দোলন তৈরী করা। এই গণআন্দোলন হচ্ছে একটি বাস্তব কর্মসূচী যার মাধ্যমে জনমতকে একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে পরিচালিত করা হবে এবং এই গণআন্দোলনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে বিদ্যমান সরকার ব্যবস্থার পতন এবং তদস্থলে ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা। অতএব, গণআন্দোলন হচ্ছে জনমত বা গণজাগরণের ঠিক পরবর্তী ধাপ।

আমরা যদি রাসূলুলাহ্ (সাঃ) এর পদ্ধতির দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো যে, তাঁর ইসলাম প্রতিষ্ঠার পথে এই ধাপগুলো ছিলো। তিনি মক্কায় ইসলামকে একটি জনমতে পরিণত করার লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচারনা চালিয়েছেন। মক্কায় যেখানেই জনসমাগম হতো সেখানেই রাসূলুলাহ্ (সাঃ) চলে যেতেন এবং ইসলামকে তুলে ধরতেন আর কাফেরদের বিশ্বাস ও রীতি-নীতির কঠোর সমালোচনা করতেন। তিনি মক্কার তৎকালীন কাফের নেতৃত্বর স্বরূপ জনগণের সামনে উন্মোচন করে দিতেন। আবু লাহাবের হস্তদ্বয় ধ্বংস হোক বা আপনি কি ঐ লোকটিকে দেখেছেন যে কিয়ামতকে অস্বীকার করে এবং এতীমদের তাড়িয়ে দেয়- কুরআনের এসব আয়াতের মাধ্যমে তিনি আবু লাহাব, আবু জাহেল এসব সমাজপতি বা শাসকদের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করেছিলেন এবং এদের বিরুদ্ধে মানুষকে সংগঠিত করে ইসলামী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এভাবে একসময় ইসলাম মক্কার সর্বত্র একটি আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়। অনুরূপে, তিনি মদীনা থেকে ইসলাম গ্রহণে আগত প্রতিনিধিদলের সাথে মুসআব বিন উমায়ের (রাঃ) কে পাঠিয়ে ছিলেন, যিনি মদীনার ঘরে ঘরে ইসলামকে পৌছে দিয়ে মদীনার সমাজে ইসলামকে একটি জনমতে পরিণত করেছিলেন এবং মদীনার বিদ্যমান সরকার ব্যবস্থার পতন এবং তদস্থলে ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন।

আমাদেরকেও বর্তমান সমাজের পুঁজিবাদী শাসনব্যবস্থা ও শাসকগোষ্ঠী বিরুদ্ধে জনমত তৈরী করতে হবে এবং পরিশেষে এই জেগে উঠা জনগণকে পরিচালিত করতে হবে একটি গণআন্দোলনের দিকে যার মাধ্যমে আমরা প্রচলিত শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন করে ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পারবো।

সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামের অপরিহার্যতা
ইসলামের জন্মলগ্ন থেকেই ঈমান ও কুফরের মধ্যে আপোষহীন দ্বন্দ ও সংগ্রাম চলে আসছে। আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে ইসলাম ও কুফরের দ্বন্দের বিষয়টি সুস্পষ্টরূপে প্রকাশ করে দিয়েছেন এবং মুসলমানদেরকে এ মর্মে সতর্ক করে দিয়েছেন যে তারা যেন কখনই কাফের শক্তিকে নিজেদের বন্ধু বা মিত্র হিসাবে না নেয়। আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) বলেন,

হে ইমানদারগণ, তোমরা নিজেদেরকে ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করোনা। তারা তোমাদের সাথে শত্রুতা করতে বিন্দুমাত্র ত্রুটি করেনা; তারা শুধুমাত্র তোমাদের ধ্বংসই কামনা করে। বাস্তবে শত্রুতা তাদের মুখ হতে প্রকাশ হয়ে পড়েছে আর তাদের অন্তরে যা আছে তা আরও ভয়াবহ।” [সুরা আল ইমরান: ১১৮]

খিলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকারীদের এটা সুস্পষ্টরূপে বুঝে নেয়া প্রয়োজন যে, বর্তমান পৃথিবীতে ইসলাম ও মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী কাফের রাষ্ট্রসমূহ। এরাই সংঘবদ্ধ হয়ে মুসলামানদেরকে বিভক্ত করার জন্য, তাদের ভূমিতে নিজেদের দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য এবং পৃথিবীতে ইসলামের নেতৃত্ব মাথা তুলে না দাঁড়াতে দেয়ার জন্য ১৯২৪ সালে খিলাফত ব্যবস্থার পতন ঘটিয়েছে। এদেরই পূর্বপূরুষরা শতকের পর শতক ইসলাম ও মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য ক্রুসেড পরিচালনা করেছে। ইসলামের আবির্ভাবকালে ইসলামবিরোধী যে শক্তিগুলো ছিলো, যথা মক্কার কাফের নেতৃত্ব এবং তৎকালীন পরাশক্তি রোম ও পারস্য বর্তমান যুগে সাম্রাজ্যবাদী কাফের রাষ্ট্রসমূহ হচ্ছে তাদেরই আরো শক্তিশালী ও সংঘবদ্ধ প্রতিরূপ। এসব কাফের শক্তি ও রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে প্রধান হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিও ইউনিয়ন, ভারত, ইসরাইল, রাশিয়া এবং ফ্রান্স।

এই সাম্রাজ্যবাদীরা বিশেষতঃ তাদের মোড়ল আমেরিকা ব্যাপক প্রচারাভিযান চালিয়ে যাচ্ছে যাতে শুধুমাত্র পুঁজিবাদকেই মুসলিম ভূমিসমূহের উপর চাপিয়ে দিতে পারে। তারা মুসলিম উম্মাহর পুনর্জাগরণ এবং খিলাফত রাষ্ট্রের অধীনে অন্যান্য জাতি থেকে স্বতন্ত্র্য একটি একক ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে বিশ্বমঞ্চে মুসলিমদের পুনরাবির্ভাবের ভয়ে ভীত। সাম্রাজ্যবাদীরা এই ভেবে আতংকিত যে বিশ্বের নেতৃত্বে মুসলিমরা হয়তো আবারো ফিরে আসবে এবং শুধু মুসলিম ভূমিগুলোতেই নয় বরং পুরো বিশ্বের উপরই তাদের বর্তমান প্রভাব ও স্বার্থের অবসান ঘটাবে। এই সত্যটি বুঝতে পেরে আমেরিকাসহ বাকী সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো মুসলিম উম্মাহকে সুস্পষ্ট লক্ষ্য বানিয়ে পুঁজিবাদকে মুসলিম ভূমিগুলোতে প্রতিষ্ঠিত করার মিশনে নেমেছে। এর পাশাপাশি এই মিশনের আরো যা উদ্দেশ্য তা হলো, প্রাকৃতিক ও বিবিধ সম্পদে সমৃদ্ধ মুসলিম ভূমিগুলোর সম্পদ লাভে আমেরিকা ও অন্যান্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলোর অন্তহীন লোভ ও উচ্চাভিলাষ, মুসলিম ভূমিগুলোর ভৌগোলিক অবস্থান ও কৌশলগত সুবিধাকে করায়ত্ত করা, মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলোর বিশাল মার্কেটে পরিণত করা এবং নিজেদের শিল্পকারখানা পরিচালনার জন্য মুসলিমদের বিশাল তেল সম্পদ ও অন্যান্য কাঁচামাল হস্ত গত করা।

এসব সাম্রাজ্যবাদী কাফের রাষ্ট্রগুলো নিজেরা সরাসরি অথবা বিভিনড়ব আন্তর্জাতিক জোট, অর্থনৈতিক ও সামরিক সংস্থাকে ব্যবহার করে সম্ভাব্য সকল উপায়ে পৃথিবীতে মুসলমানদের ক্রমাগত শক্তিহীন করার চেষ্টা করছে। একের পর এক তাদের ভূমিগুলোতে হানা দিচ্ছে, রক্তের বন্যা বইয়ে দিচ্ছে, তাদের সম্পদ লুটে নিয়ে যাচ্ছে। আর তাদের এ সকল কাজে তাদেরকে সাহায্য করে যাচ্ছে বর্তমান মুসলিম ভূমিগুলোতে তাদেরই বসানো তাঁবেদার শাসকবর্গ।

এসব জালেম শাসকগোষ্ঠী এবং তাদের বংশধরেরা যুগ যুগ ধরে যেমন সাম্রাজ্যবাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তাদের ক্রীড়ানক হয়ে কাজ করছে অন্যদিকে তারা নিজেদের মুসলিম জনগণকে সব ধরণের অধিকার বঞ্চিত করছে। মুসলিমদের সম্পদ বিদেশী দখলদারদের হাতে তুলে দিয়ে তাদের উপর শোষণ নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। তারা সাম্রাজ্যবাদীদের ক্রীড়ানক হিসেবে মুসলিমদেরকে তাদের দ্বীন থেকে সরিয়ে পুঁজিবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে; মুসলিমদের উপর কাফেরদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য বিশ্ব জুড়ে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে কাফেরদের অনুকূলে একের পর এক দাসত্বের চুক্তিতে আবদ্ধ করছে, মুসলিম উম্মাহকে দূর্বল ও ধ্বংস করার জন্য কাফেরদের সব চক্রান্ত বাস্তবায়ন করছে, এবং জনগণের মধ্যে মুখ বুঝে সয়ে নেয়া বা মেনে নেয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করে যাচ্ছে যাতে করে কেউ মুখ খুলে সত্য উচ্চারণের সাহস না করে। এতসব বৈরী আচরণের একটাই উদ্দেশ্য আর তা হলো উম্মাহকে কুফর ও কাফেরদের কাছে মাথা নত করতে বাধ্য করা।

অতএব, খিলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকারীদের জন্য সাম্রাজ্যবাদী কাফেরদের এবং তাদের তাঁবেদার শাসকদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংগ্রাম করা অপরিহার্য যেন এর মাধ্যমে মুসলিম দেশগুলো থেকে সাম্রাজ্যবাদী কাফেরদের চিন্তাগত, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামরিক ভিতগুলোর মূলোৎপাটন করা সম্ভব হয়। এই আন্দোলনের নেতা ও কর্মীদেরকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এবং তাদের দেশীয় রাষ্ট্রদূত বা কূটনৈতিক কর্তৃক সংলাপকে উৎসাহিত করা, রাজনৈতিক সংস্কার সাধন, সুশাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ইত্যাদির নামে মুসলিম দেশগুলোর আভ্যন্তরী রাজনীতিতে যেকোন ধরণের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। একই সাথে ভারত-মার্কিন-ইইউ ইসরাইল তথা কোন শত্রু রাষ্ট্রের সাথে যখন কোন অযৌক্তিক বা মুসলমানদের স্বার্থবিরোধী চুক্তি সম্পাদিত হয় সেগুলো বাতিল করার জন্য রাজনৈতিক সংগ্রাম চালাতে হবে। ভারত-মার্কিন-ইইউ-ইসরাইল তথা কোন শত্ররাষ্ট্রের সাথে কোন ধরনের সামরিক চুক্তি কিংবা ট্রানজিট ইত্যাদির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। কেননা এসব হস্তক্ষেপ, চুক্তি বা সমঝোতার একটা মাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদে দেশের উপর সাম্রাজ্যবাদী কাফেরদের প্রভাবকে প্রতিষ্ঠা করা এবং তা চালিয়ে যাওয়া অথচ আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) স্পষ্টতই মুসলমানদেরকে এটা অনুমোদন করতে নিষেধ করেছেন এই বলে যে,

ল্লাহ্ কখনোই মুমিনদের বিরুদ্ধে কাফেরদের জন্য কোন পথ রাখবেন না। [সূরা নিসা: ১৪১]

আন্দোলনকারীদেরকে এই সংগ্রামে দেশীয় অর্থনীতির উপর সম্রাজ্যবাদী কাফেরদের অর্থনৈতিক হস্তক্ষেপকে প্রত্যাখ্যানের জোরালো আহ্বান জানাতে হবে। তাদের মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে মুসলিমদের উপর। মুক্তবাজার অর্থনীতি আমাদের নিজস্ব অর্থনীতিকে উৎপাদনমুখী অর্থনীতিতে পরিণত হতে বাধা দেয় বৃহৎ শিল্প স্থাপনে বাধা সৃষ্টি করে যার পরিপ্রেক্ষিতে সাম্রাজ্যবাদী ধনী রাষ্ট্রগুলো আমাদের দেশের উপর তাদের অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক আধিপত্য বজায় রাখে, আমাদেরকে তাদের পণ্যের বাজারে পরিত করে এবং পরিণামে মুসলিম জনগণ ও তাদের ভূমির উপর কাফেরদের নিয়ন্ত্রপ্রতিষ্ঠিত হয়।

মুসলমানদের অর্থনীতিতে সাম্রাজ্যবাদী প্রতিষ্ঠানসমূহের (যেমন আই.এম.এফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, এ.ডি.বি. ইত্যাদি) যে কোন ধরণের খবরদারী সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার জন্য শাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও চাপ সৃষ্টি করতে হবে। সকল প্রকার অসম বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক চুক্তি বাতিল করার জন্য শাসকদের বিরুদ্ধে জনগণকে সংগঠিত করে আন্দোলনে নামাতে হবে। একইভাবে মুসলমানদের জ্বালানী সম্পদ তেল-গ্যাস-কয়লা-ইউরেনিয়াম ও অন্যান্য খনিজ সম্পদ কখনোই বিদেশী কোম্পানীর হাতে তুলে দেয়া যাবেনা। রাসূলুল্লাহহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, তিনটি জিনিষের মাঝে সকল মানুষ শরীক। এগুলো হচ্ছে পানি, চারণ ভূমি এবং আগুন।সুতরাং, জ্বালানী হচ্ছে গণমালিকানাধীন একটি সম্পদ এবং এ সম্পদ বিদেশীদের হাতে তুলে দেয়ার সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে। মোটকথা, আন্দোলনকে এমনভাবে সুসংগঠিত করতে হবে যেন সাম্রাজ্যবাদী এসব কোম্পানীকে এদেশ থেকে চিরতরে বের করে দেয়া যায় এবং আমাদের নিজেদের সম্পদের উপর নিজেদের পূর্ণ প্রতিষ্ঠিত হয়

এভাবে খিলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের অন্যতম কর্মসূচী হতে হবে জনগণকে সাম্রাজ্যবাদী কাফের শক্তির বিরুদ্ধে সচেতন করা ও তাদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলা এবং তাদের দেশীয় তাঁবেদার শাসকদের বিরুদ্ধে জনগণকে সংগঠিত করে গণআন্দোলন ও গণপ্রতিরোধের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে তাদেরকে অপসারণ করা। সেমিনার, লিফলেট, পোস্টার, বক্তৃতা, সমাবেশ, মিছিল, ইত্যাদি সম্ভাব্য সকল উপায়ে নিজ দেশের অভ্যন্তরে সাম্রাজ্যবাদীদের সব নতুন নতুন পরিকল্পনা ও চুক্তির মুখোশ উম্মোচন করে তা তুলে ধরতে হবে জনগণের সামনে, দেখিয়ে দিতে হবে কীভাবে অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে তারা, কীভাবে তাদের ঈমান ও ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে, কীভাবে তাদের উপর সাম্রাজ্যবাদীদের থাবা বিস্তার করছে ক্রমান্বয়ে। একই সাথে জনগণকে আহ্বান করতে হবে এসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার, নিজেদের ভূমিতে তাঁবেদার শাসকদের প্রত্যাখ্যান করার, তাদের যে কোন দেশবিরোধী-গণবিরোধী-ইসলামবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার।

যখন সাম্রাজ্যবাদীদের সকল ষড়যন্ত্র ও তাদের বসানো তাঁবেদার শাসকদেরকে জনগণ নিজেদের ও ইসলামের চরম শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করতে পারবে এবং এদের বিরুদ্ধে বিক্ষুদ্ধ ও সংগঠিত হয়ে এদের কাছ থেকে মুক্তির পথ খুঁজবে তখনই সেই জনগণকে নিয়ে একটি গণ-আন্দোলন পরিচালনা করে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে তাদের নিয়ে যেতে হবে। এই খিলাফত তাদেরকে জালেম শাসকদের হাত থেকে মুক্ত করবে, তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেবে এবং একই সাথে ঐ শক্তিশালী খিলাফত রাষ্ট্র পৃথিবীতে ইসলাম ও মুসলমানদের চিরশত্রু সাম্রাজ্যবাদী কাফের রাষ্ট্র ও শক্তিগুলোর বিদায় ঘন্টা বাজাবে যাতে করে পৃথিবীতে ইসলামই একমাত্র বিজয়ী জীবনব্যবস্থা হিসেবে কতৃত্ব করতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন