বুধবার, ২১ নভেম্বর, ২০১২

এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধির বিশ্লেষণ

তাহরীর ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি বিশ্লেষণ

প্রশ্ন: ১লা জুন, ২০১২ তারিখে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লিওন পেনেট্টা সিঙ্গাপুরে একটি নিরাপত্তা সম্মেলনে ঘোষণা করে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এশিয়া/প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তার ৬ টি এয়ারক্রাফট  ক্যারিয়ার রাখবে এবং ২০২০ সালের মধ্যে সামনের বছরগুলোতে যুদ্ধ জাহাজসমূহের ৬০ ভাগ এ অঞ্চলে সরিয়ে নিয়ে আসবে। সে ব্যাখ্যা করে যে, নতুন মার্কিন কৌশলগত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এশিয়া/প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি করতে ফ্লিটগুলো স্থানান্তর করা হচ্ছে। সুতরাং এশিয়া/প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন নৌবাহিনীর অধিকাংশ যুদ্ধ জাহাজ স্থানান্তরের কারণ কি? আমেরিকা কি বর্তমান বা ভবিষ্যত চীনকে ভয় পাচ্ছে? এবং কখন চীন এ অঞ্চলে তার আধিপত্য বিস্তার করার জন্য চেষ্টা করবে?

উত্তর: এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে আমাদের নিচের বিষয়গুলোর উপর আলোকপাত করা দরকার:

১. এশিয়া/প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিভিন্ন রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট  বিষয়ে বিরোধ রয়েছে:

ক. যেমন: জাপান, চীন, তাইওয়ান, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া। এ রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে পূর্ব চীন সাগরের সার্বভৌমত্ব, কিছু দ্বীপের মালিকানা, নৌ চলাচল ও মৎস শিকারের স্বাধীনতা  নিয়ে রয়েছে বিরোধ।

খ. একই রকম হল: ফিলিপিনস, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, ব্রুনাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং ইন্দোনেশিয়া। এ রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে দক্ষিণ চীন সাগরের সার্বভৌমত্ব, কিছু দ্বীপের মালিকানা ও মালাক্কা প্রণালী নিয়ে পারস্পরিক সমস্যা, নৌ চলাচল ও মৎস শিকারের স্বাধীনতা নিয়ে রয়েছে বিরোধ।

গ. এবং এশিয়া/প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ভারত মহাসাগরের বর্ধিত অংশ, যার উপকূলে রয়েছে উত্তর বার্মা, বাংলাদেশ, ভারত, এবং পাকিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত যা আরব সাগরের নিকটবর্তী (যা ভারত মহাসাগরের বর্ধিত একটি অংশ) এবং অতঃপর ওমান উপসাগর থেকে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চল, এডেন উপসাগর ও বাব আল মানদিব প্রণালী হয়ে লোহিত সাগর (যা ভূমধ্যসাগরে যাওয়ার একটি রাস্তা) পর্যন্ত বিস্তৃত।

ঘ. এছাড়াও এশিয়া/প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলসহ ভারত মহাসাগরের উত্তর উপকূল পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এবং যাদের অধিকাংশই মুসলিম। এ অঞ্চলে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক এবং মোট মুসলিম উম্মাহ্র অর্ধেকের বসবাস।

২. সমুদ্র পথসমূহকে স্থলপথের চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয়, কেননা এসব পথ দিয়ে জাহাজের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হয়। এতে খরচ কম হয় এবং কোন নির্দিষ্ট দেশের নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানে থাকা প্রণালী বা সমুদ্রপথ দিয়ে যাওয়া ব্যাতিরেকে জাহাজগুলো বিভিন্ন দেশের সীমান্ত পাড়ি দেয়ার সময় তল্লাশি এড়িয়ে চলে যেতে পারে। স্থলপথের ব্যাপক উন্নয়ন ও বিশালাকারের লরি উৎপাদিত হওয়া এবং আকাশপথের প্রভূত উৎকর্ষ সাধিত হওয়া সত্ত্বেও আজকের দিনে ৯০ ভাগেরও বেশী পণ্য জলপথে জাহাজের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়। কেননা স্থল ও আকাশপথে পণ্য পরিবহন ব্যায়বহুল ও জলপথের মত এত বেশী পণ্য পরিবহন করাও সম্ভব নয়। পাইপলাইনের উন্নতি সাধনের পরও জলপথে জাহাজের মাধ্যমে মোট তেলের শতকরা ৬৫ ভাগ পরিবহন করা হয়। সুতরাং ভারত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এ কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্য দিয়েই উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে এ অঞ্চলের দেশগুলোতে মোট তেল ও গ্যাসের শতকরা ৭০ ভাগ পরিবহন করা হয়। তাছাড়া এ অঞ্চলে আগামী দশকের মধ্যে তেলের চাহিদা দ্বিগুণ হয়ে যাবে, বিশেষ করে চীন ও ভারতে। দু মহাসাগরের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ যাতায়াতের পথ হলো মালাক্কা প্রণালী যা মালয়েশিয়া উপদ্বীপ ও ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের মধ্যে প্রায় ৮০০ কিঃমিঃ অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত। পৃথিবীর মোট পণ্যের ৪০ ভাগ এবং তেল ও গ্যসের প্রায় অর্ধেক এই পথ দিয়ে পরিবহন করা হয়। এটি চীন ও ভারত এবং পূর্ব থেকে পশ্চিমে পণ্য পরিবহনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং সমুদ্রপথের বিবেচনায় এ অঞ্চলের গুরুত্ব অত্যাধিক।

৩. তাছাড়া কৌশলগত কারণেও এ অঞ্চল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীন এ অঞ্চলে নিয়ন্ত্রন ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজ করছে। কেননা ঐতিহাসিক ও ভৌগলিক কারণে এটিকে সে তার অঞ্চল মনে করে। এছাড়া এ অঞ্চলে রয়েছে তার অর্থনৈতিক স্বার্থ©| এ অঞ্চলে চীন একটি প্রধান রাষ্ট্র এবং এ অঞ্চলে প্রভাবশালী হওয়ার জন্য সে কাজ করছে। কিন্তু এখনও সে এটি করতে সমর্থ্য হয়নি। মার্কিন আধিপত্য এ অঞ্চলে খুব প্রভাবশালী। ঠান্ডা যুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের হুমকির কারণে এ অঞ্চলের ব্যাপারে আগ্রহী ছিল। কেননা রাশিয়ার রয়েছে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল জুড়ে নিজস্ব উপকূলীয় সীমারেখা। আমেরিকা সে সময় এ অঞ্চলে ৬০০ যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছিল। যখন ঠান্ডা যুদ্ধ শেষ হয়ে গেল, সমাজতান্ত্রিক শাসনের পতন ঘটল ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঁঙ্গে গেল এবং আমেরিকার জন্য হুমকি হ্রাস পেল তখন যুদ্ধজাহাজের সংখ্যা অর্ধেকেরও বেশী হ্রাস করা হল, যার সংখ্যা ২৭৯। ২০০৮ এ যুদ্ধজাহাজের সংখ্যা ছিল ২৮৫। এ অঞ্চলে তার কোন প্রতিদ্বন্দী বা হুমকির অস্তিত্ব না থাকায় এ সংখ্যায় আমেরিকা সন্তুষ্ট ছিল।

তাছাড়া জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাঘাটিতে আমেরিকার স্থায়ী সেনা উপস্থিতি রয়েছে-উভয়টিই পূর্ব চীন সাগরে অবস্থিত। এছাড়াও ফিলিপাইনে সেনাঘাটি রয়েছে যা দক্ষিণ চীন সাগরে অবস্থিত। এখানে তার অর্ধমিলিয়ন সৈন্য রয়েছে। বিগত শতকের পঞ্চাশের দশক থেকে এ অঞ্চলে তার অব্যাহত সামরিক উপস্থিতি রয়েছে।

৪. ইরাক ও আফগানিন্তানে মুসলিমদের হাতে পরাজয় বরণ ও ২০০৮ এ তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের পর আমেরিকার অবস্থান নড়বড়ে হয়ে যাওয়ার পর চীন উদ্ভূত পরিস্থিতিকে কাজে লাগানোর জন্য এ অঞ্চলে তার প্রভাব বৃদ্ধির লক্ষ্যকে সামনে রেখে শক্তি বাড়ানোর জন্য কাজ শুরু করেছে। হয়ত আমেরিকার পুরোপুরি পতন হতে পারে, অথবা ইতোমধ্যে যেরকম প্রকম্পন শুরু হয়েছে হয়তো তার চেয়ে আরও ভয়াবহভাবে প্রকম্পিত হওয়ার কারণে এ অঞ্চলে তার প্রভাব বজায় নাও থাকতে পারে অথবা মুসলিমগণ এ অঞ্চল থেকে আমেরিকাকে বিতাড়িত করতে পারে এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না...

যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উপলব্ধি করে যে, চীন বৃহৎ বিশ্বশক্তির অন্তর্ভূক্ত নয় এবং এটি নেতৃস্থানীয় রাষ্ট্র হিসেবে আমেরিকার অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য কাজ করছে না, তবে চীন এশিয়া/প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি প্রধান আঞ্চলিক দেশ। সেকারণে চীন অর্থনৈতিক ও কৌশলগত কারণে এটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। পূর্ব চীন সাগরে চীন সার্বভৌম হওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এবং এতে যদি সে সফল হয় তাহলে সে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে তার করায়ত্ত্বে আনতে পারবে এবং উত্তর কোরিয়াকেও, যেখানে ইতোমধ্যে চীনা প্রভাব বিদ্যমান রয়েছে। চীন, দক্ষিণ চীন সাগরের উপরও তার সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে এবং এর মাধ্যমে ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাউস, ব্রুনাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং ইন্দোনেশিয়াকে তার প্রভাব বলয়ের মধ্যে নিয়ে এসে মালাক্কা প্রণালীকে নিয়ন্ত্রন করা যাবে, যা তার জন্য জীবনসম একটি পথ। যদি চীন এ অঞ্চলকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে অথবা তার প্রভাব ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারে, তাহলে সে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে এবং মার্কিন প্রভাবকে দারুণভাবে হুমকির সম্মুখীন করতে পারবে। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ইস্যু এবং যে কোন মূল্যে কখনওই সে এটিকে হতে দিবে না।

৫. আমেরিকা দুদিক থেকে তার ভূমিকে সুরক্ষা দেয়াকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে, অর্থাৎ তাকে ঘিরে থাকা আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগর দিয়ে। আটলান্টিক মহাসাগর দিয়ে বর্তমান আমেরিকার জন্য কোন হুমকি নেই। কারণ ইউরোপীয় রাষ্ট্রসমূহ আটলান্টিকে বা পশ্চিম আটলান্টিকের পরের দক্ষিণ আমেরিকায় এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ কোন কিছুই করছে না। আমেরিকা আটলান্টিক বা তার পরের অংশে ইউরোপ থেকে অনতিদূর ভবিষ্যতে কোন হুমকি আশা করে না। সুতরাং আমেরিকা অন্যান্য অংশে বেশী গুরুত্ব প্রদান করছে, যেমন: প্রশান্ত মহাসাগর, ভারত মহাসাগর এবং আরব সাগর, উপসাগর ও বাব আল মানদিব প্রণালী। একারণে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শক্তি বৃদ্ধির জন্য সে আটলান্টিকে শক্তি হ্রাস করেছে। প্যানেট্টা এ ব্যাপারে বিস্তারিতভাবে বলে যে, ২০২০ সালের মধ্যে ৬টি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার, অধিকাংশ আমেরিকান ক্রুজার, ডেসট্রয়ার, কম্ব্যাট  শীপ ও সাবমেরিনসহ নৌ শক্তির ৬০ ভাগ এশিয়া/প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মোতায়েন করা হবে। সে চীন ও এ অঞ্চলের দেশসমূহের মধ্যে বিরোধের ব্যাপারে উল্লেখ করে এবং বলে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এখন পরিষ্কার। আমরা সংযম অবলম্বন  করা ও কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান করছি এবং যে কোন ধরণের উসকানিমূলক আচরণ ও শক্তি প্রয়োগের বিরোধী।” সে দাবি করে যে, তার দেশ একটি দেশের স্বার্থে  অন্য একটি দেশের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করে না। (ইউএস ইউপিআই এজেন্সি, ২রা জুন ২০১২) ইউপিআই উল্লেখ করে যে, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা নভেম্বরে  বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এশিয়া/প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল সর্বাধিক প্রাধান্যযোগ্য।”এবং ইউপিআই আরও উল্লেখ করে যে, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন এক সময়ে এ অঞ্চলে দৃষ্টিপাত করেছে যখন ভারত ও চীন বিশ্ব অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হতে যাচ্ছে এবং ইরাক থেকে আমেরিকার সৈন্য প্রত্যাহার ও আফগানিস্তান থেকে আসন্ন আমেরিকান সৈন্য প্রত্যাহার করা হচ্ছে।”তাছাড়া এশিয়া/প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান মার্কিন সৈন্যের উপস্থিতি তাকে এ অঞ্চলে আগামী বছরগুলোতে মহড়ার সংখ্যা বাড়াতে এবং সাথে সাথে ভারত মহাসাগরসহ প্রশান্ত মহাসাগরের ব্যাপক অঞ্চল জুড়ে তার নৌশক্তি বৃদ্ধির পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করতে সাহায্য করবে। প্যানেট্টা উল্লেখ করে যে, “গতবছর মার্কিন সেনাবাহিনী এ অঞ্চলের ২৪টি দেশে ১৭২ টি প্রশিক্ষণমূলক মহড়ায় অংশ গ্রহণ করেছে।”(বিবিসি ২রা জুন, ২০১২)

৬. মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত এশিয়া/প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন সামরিক কৌশল ১লা জুন, ২০১২ তারিখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা কর্তৃক ঘোষিত নতুন আমেরিকান সামরিক কৌশলের অন্তর্গত, যা তিনটি প্রধান আলোচ্য বিষয়কে কেন্দ্রে রেখে প্রস্তুত করা হয়েছে; প্রমতঃ ইউরোপে সামরিক উপস্থিতি হ্রাস করা, দ্বিতীয়তঃ গুণগত মান বজায় রেখে সামরিক ব্যয় হ্রাস করা, তৃতীয়তঃ চীনের ক্রমবর্ধমান  শক্তিকে খর্ব করার জন্য প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে কেন্দ্র করা, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়াকে গুরুত্ব প্রদান করা। যেহেতু ইউরোপ থেকে আমেরিকার জন্য কোন বিপদ বা হুমকি নেই, সেহেতু সেখানে ব্যাপক মার্কিন সৈন্যের উপস্থিতির কোন কারণ নেই। এটি সামরিক ব্যয় হ্রাস পরিকল্পনার অংশ। কেননা আমেরিকা এখনও অর্থনৈতিক মন্দায় জর্জরিত এবং তা থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি। সে কারণে সে আগামী ১০ বছরে প্রায় ১.২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার সামরিক ব্যয় হ্রাস করার এবং এশিয়া/প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শক্তি বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সুতরাং এশিয়া/প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নৌ শক্তি বৃদ্ধির প্রধান লক্ষ্য হল চীন এবং এ অঞ্চলে মার্কিন আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রত্যাশিত হুমকি।

৭. কিন্তু আমেরিকান নৌবাহিনী মোতায়েন ও মালাক্কা প্রণালী হয়ে প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ভারত মহাসাগর, আরব সাগর, পারস্য উপসাগর, লোহিত সাগর পর্যন্ত তার ঘাঁটি বিস্তৃত করার পেছনে আরও কোন কারণ রয়েছে...। এই সৈন্য মোতায়েন কেবলমাত্র চীনের উপকূল ও এর সাগরসমূহে নয়...। আমেরিকা এ অঞ্চলে ইসলামিক শক্তি, “খিলাফত”- এর প্রত্যাশিত উত্থানের ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে। আমেরিকা সে কারণে চীন ও আসন্ন ইসলামিক রাষ্ট্রের প্রত্যাশিত ক্ষমতাকে বিবেচনায় এনে সে তার ঘাঁটি বিস্তৃতকরছে ও ইসলামিক অঞ্চলসমূহের উপকূল জুড়ে সৈন্য মোতায়েন করছে... সে আগামী বছরগুলোতে ও দশকে পরিবর্তনের সম্ভাবনার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে, অর্থাৎ মুসলিম বিশ্বে ইসলামিক পরাশক্তির উত্থানকে, বিশেষ করে যখন মুসলিম জনসংখ্যার অর্ধেক এশিয়া/প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও ভারত মহাসাগরের উত্তর উপকূল জুড়ে বসবাস করে, যা পারস্য উপসাগর, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার মুসলিম জনগোষ্ঠির একটি বর্ধিত অংশ। আল্লাহর ইচ্ছায় ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এটি প্রধান কৌশলগত অঞ্চল হয়ে দাঁড়াবে। এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, পূর্বে ইসলামিক রাষ্ট্র তার সূচনালগ্নে এসব ভূমির দ্বারপ্রান্তে কল্যাণ ছড়িয়ে দিতে এসব অঞ্চলে প্রবেশের জন্য কাজ করেছে। তিন শতাব্দী আগে পূর্বদিক থেকে মুসলিমদের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেয়ার উদ্দেশ্যে উপনিবেশ স্থাপন ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য পশ্চিমা উপনিবেশবাদীরা এ অঞ্চলে অকল্যাণের বীজ বপন শুরু করার আগে এটি প্রায় একটি সম্পূর্ণ মুসলিম ভূমিতে পরিণত হয়েছিল। এই একই সময়ে তারা মুসলিমদের রাষ্ট্র খিলাফতকে ধ্বংস করে ফেলা ও এর ইসলামিক ব্যবস্থাকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য পশ্চিম অংশেও উপনিবেশবাদী যুদ্ধ ও ষড়যন্ত্র করছিল... এবং এতে তারা সফলও হয়েছিল। এখন তারা এর প্রত্যাবর্তনকে ভয় পাচ্ছে... এবং আল্লাহর ইচ্ছায় এটি ফিরে আসা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন