শনিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১২

আশুরাঃ অনৈসলামী শাসকের বিরুদ্ধে এক জলন্ত প্রতিবাদ


আশুরার কিছু ঘটনাবলীঃ

আশারা শব্দের অর্থ হচ্ছে দশ। তাই মুহররম মাসের দশ তারিখকে বলা হয় আশুরা। মুসলিম বিশ্বে আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। প্রাচীনকাল থেকেই মুসলিম বিশ্বে আশুরা পালিত হয়ে আসছে। হযরত মুসা (আঃ) বনী ইসরাঈলকে আশুরার দিনে ফেরাউনের বন্দী অবস্থা থেকে মুক্ত করে ছিলেন এবং ঐ দিন ফেরাউন তার বাহিনীসহ কুলজুম নামক স্থানে ডুবে মরেছিল। প্রাচীনকালে আরবরা আশুরার দিনে রোজা রাখতো এবং ঐ দিন কাবা শরিফ সাধারণ দর্শকদের জন্য খুলে দেয়া হতো। আবার পবিত্র আশুরার দিনে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। এ সকল কিছুকে ছাপিয়ে ৬১ হিজরীর ১০ মুহররম, ৬৮০ খ্রীস্টাব্দে ১৯ অক্টোবর মুসলিম বিশ্বে আশুরার দিনে সবচেয়ে হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটে, তা হচ্ছে হযরত ইমাম হুসাইন(রা) এর শাহাদাত বরন।

কারবালার প্রেক্ষাপট ও সংক্ষিপ্ত বিবরনঃ

আমীর মুয়াবিয়া(রা) মৃত্যুর পর তার পুত্র ইয়াযীদ মদীনা, কুফা ও সিরিয়ার শাসনভার গ্রহণ করে। ইয়াযীদ ছিল একজন ইসলামবিরোধী জুলুমবাজ, স্বৈরাচারী শাসক। ইয়াযীদ তার শাসন ক্ষমতার প্রতি হযরত হুসাইন(রা) এর আনুগত্য আদায়ের চেষ্টা করে। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর প্রিয় দৌহিত্র, সাচ্চা ঈমানদার বান্দা বেশ বুঝতে পেরেছিলেন যে এর ফলে খিলাফত ব্যবস্থার পরিবর্তে স্বৈরাচারী ও বংশের শাসনের গোরাপত্তন হতে যাচ্ছে। ফলে তিনি ইসলাম বিরোধী, জুলুমবাজ স্বৈর শাসককে আনুগত্য করতে রাজী হলেন না। মূলতঃ এটাই ছিল কারবালা ট্রাজেডির মূল কারণ।

এ সময় হযরত হুসাইন(রা) মদীনায় থাকতেন। ইয়াযীদ মদীনার গভর্নরকে হযরত হুসাইন(রা)-এর আনুগত্য আদায়ের জন্য চাপ প্রয়োগ বলে। ফলে মদীনার গভর্নরের অনুরোধ ক্রমেই হুসাইন (রাঃ) মক্কায় নিরাপদ স্থানে হিযরত করেন। কিন্তু কুফাবাসীরা হযরত হুসাইন(রা) কে সর্বাত্মক সাহায্য সহযোগিতা করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বার বার পত্র লিখতে থাকেন। তিনি কুফাবাসীদের পক্ষ থেকে এভাবে দেড়শত আমন্ত্রন পত্র গ্রহণ করেন। ফলে তিনি কুফাকে নিরাপদ স্থান মনে  করে তাদের আমন্ত্রনে সাড়া দিয়ে স্বপরিবারে কুফার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। মুহররম মাসের ৮ তারিখে ইমাম পরিবার কারবালায় পৌঁছেন। কিন্তু ইতোমধ্যেই ধুর্ত ইয়াযীদ কুফার শাসনকর্তা পরিবর্তন করে উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদকে নতুন শাসনকর্তা হিসেবে প্রেরণ কর। উবায়দুল্লাহ ছিল অতিশয় হিংস্র এবং নির্মম। কুফার শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করেই সে ৪০০০ সৈন্যের বিশাল এক সেনাবাহিনী হুসাইন (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে প্রেরণ করে। তারা কারবালায় ইমাম হুসাইন(রাঃ)-এর গতিরোধ করে এবং ফোরাত নদীর তীর অবরোধ করে পানি বন্ধ করে দেয়। ইয়াযীদ বাহিনী কর্তৃক বাঁধা প্রাপ্ত হয়ে হুসাইন (রাঃ) কারবালা প্রান্তরে তাবু ফেলতে বাধ্য হন। ইয়াযীদ সৈন্যরা ঘোষনা করে দেয় যে, হয় ইয়াযীদের আনুগত্য করতে হবে অর্থাৎ ইয়াযীদকে শাসনকর্তা হিসেবে মেনে নিতে হবে, অন্যথায় যুদ্ধে অবর্তীর্ন হতে হবে। অন্যায় শাসককে মেনে নেয়া ছাড়া যুদ্ধ এড়ানোর কোন বিকল্প পথ তার সামনে খোলা থাকলো না। হুসাইন(রাঃ) তখন অনৈসলামিক জুলুমবাজ ও স্বৈর শাসকে মেনে না নিয়ে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অবর্তীর্ন হওয়াকেই শ্রেয় মনে করলেন। ১০ মহররম ক্ষুধা আর পিপাসায় কাতর ইমাম বাহিনী শাহাদাতের জন্যই তৈরি হলেন। মাত্র ৩২ জন ঘোড় সওয়ার আর ৪০ জন পদাতিক নিয়ে গঠিত হলো তার ক্ষুদ্র বাহিনী। ডান দিকে যুহাইর বিন কাইন আর বাম দিকে হাবীব বিন মুযাইর দু’জনকে দু দলের অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হলো। পতাকা দেয়া হলো ছোট ভাই আব্বাসের হাতে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেও হুসাইন(রাঃ) যুদ্ধ এড়ানোর জন্য শত্রু বাহিনীর উদ্দেশ্যে এক মর্মস্পর্শী ভাষন দিলেন। কিন্তু তাতে শত্রুদের মন গললো না। রক্ত পিপাসু স্বৈরাচারী ইয়াযীদ বাহিনী তখন শক্তি প্রদর্শনের জন্য ব্যাকুল। ফলে যুদ্ধ হয়ে উঠলো অনিবার্য। সেনাপতি সাদ প্রথম ইমাম হুসাইন(রাঃ)-এর প্রতি তীর নিক্ষেপ করল। কিছুক্ষন মল্ল যুদ্ধ হলো, তারপর সর্বব্যাপি যুদ্ধ শুরু হলো। ইমাম বাহিনীর পক্ষে মুসলিম বিন আওসাজা সর্বপ্রথম শাহাদাতের নজরানা পেশ করলেন। ইমাম হুসাইন(রাঃ) মুসলিম বিন আওসাজার নিথর দেহের কাছে দাড়িয়ে বললেন “আল্লাহ তোমার উপর রহমত নাজিল করুন”। তারপর তিনি সুরা আহযাব থেকে তিলাওয়াত করলেন, নিষ্ঠাবান মুমিনদের কেউ কেউ শাহাদাত বরন করেছে, আর অন্যরা অপেক্ষায় আছে, কখন আল্লাহর পথে নজরানা পেশ করবে। তারা তাদের বিশ্বাসে কোন পরিবর্তন আনেনি। ইমামের ক্ষুদ্র বাহিনী বিশাল ইয়াযীদ বাহিনীর বিপক্ষে বীরত্বের সাথে লড়াই করে একে একে শাহাদাত বরন করতে লাগলো। হযরত হুসাইন অত্যন্ত বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করলেন। আর বলছিলেন “ওহে কুফাবাসী, তোমরা কি আমাকে হত্যা করার ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেলে? আল্লাহর কসম আমার হত্যায় আল্লাহ যত অসন্তুষ্ট হবেন, আমার পর আর কোন বান্দার হত্যায় তত অসন্তুষ্ট হবেন না। সর্বশেষে সীমার বাহিনী চারিদিক থেকে ইমাম হুসাইন(রাঃ) কে ঘিরে ফেলল। যারয়া বিন শারীক তামিমী তলোয়ার চালিয়ে হুসাইন(রাঃ)’র বাহু বিচ্ছিন্ন করে ফেলল। তার কপালে তলোয়ার মারলো। সিনান বিন আনাস আশজায়ী তাকে বর্শা দিয়ে আঘাত করে ধরাশায়ী করে ফেলল। সীমার তার মাথা কেটে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করল। মধ্যাকাশে সেদিন সূর্য অস্ত গেল। মুসলিম ইতিহাসের সবচেয়ে নির্মম মর্মভেদী শাহাদাতের ঘটনা সংঘটিত হলো। সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য একটি চরম আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত বিশ্ববাসীর সামনে প্রতিষ্ঠিত হলো।

হুসাইন(রাঃ) কেন স্বপরিবারে জীবন দিলেনঃ

·         তিনি বুঝতে পেরে ছিলেন যে খিলাফত ব্যাবস্থার ধারাবাহিকতা বিপন্ন করে যে স্বৈরাচারী শাসনের সুচনা হলো তা কোন ভাবে মেনে নেয়া যায় না। খিলাফত ব্যবস্থার ধারাবাহিকতা বিপন্ন হচ্ছে, তার প্রতিবাদ করাই ছিল ইমাম হুসাইন(রাঃ) শাহাদাত বরন করার প্রধান কারণ। তিনি স্পষ্ট বুঝতে পেরে ছিলেন যে ইয়াযীদের সিংহাসন অরোহনের ফলে যে স্বৈরতন্ত্র সূচনা হবে তা ইসলামী খিলাফতের উদ্দেশ্য ও প্রকৃতির পরিবর্তন করে দিতে পারে। মূলত এর ফলে আল্লাহর একচ্ছত্র আধিপত্বের ধারণা কেবলমাত্র মৌখিক স্বীকৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পরল। তাই তিনি খিলাফত ব্যবস্থাকে সমুন্নত রাখার জন্য প্রয়োজনে  স্বপরিবারে জীবন বিসর্জনে অটুট থাকলেন।

·         খিলাফত রাষ্ট্রের আওতায় একজন শাসক প্রজাপালনের ব্যাপারে নিজেকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহী মনে করত। কিন্তু উত্তারাধিকার সুত্রে সিংহাসন দখল করে ইয়াযীদ ইনসাফের পরিবর্তে জুলুম, আল্লাহ ভীতির পরিবর্তে মানুষকে ভীতি প্রদর্শন করা, অন্যায় ভাবে ক্ষমতা ধারণ, উচ্ছৃংখলতা, চরিত্রহীনতা, অপচয় আর বিলাসিতার স্রোত প্রবাহিত করে দিল। শাসকের চরিত্রে ও কাজে হালাল ও হারামের কোন পার্থক্য থাকলো না। মূলত একজন শাসককে অস্বীকার করাই ছিল ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর শাহাদাত বরণ করার আর একটি কারণ।

·         তিনি মুসলিম উম্মাহকে এ শিক্ষাই দিয়ে গেলেন যে জালিম আর মানবতার শত্রু ইসলামের দাবীদার হলেও তাকে মেনে নেয়া যায় না। তাকে উৎখাত করার সংগ্রাম চলতেই থাকবে, হয় জালিম শাসক নিপাত যাবে অথবা মুজাহিদ শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করবে। তিনি এ চেতনায় উজ্জীবিত ছিলেন।

নব্য ইয়াযীদঃ

ইয়াযীদের চরিত্রে যে সকল বৈশিষ্ট্য ছিল আজকের মুসলিম ভূখন্ডে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত অধিকাংশ রাজা বাদশাদের চরিত্রে একই বৈশিষ্ঠ্য বিদ্যমান আছে। ইয়াযীদের মতো মুসলমান নামধারী, মদ্যপ, মাতাল, হালাল-হারমের প্রতি তোয়াক্কা বিহীন, বিলাসী, উচ্ছৃংখল, চরিত্রহীন শাসকরা আজও অধিকাংশ মুসলমি দেশে ক্ষমতায় বসে আছে। যে মদ্যপ, স্বৈরাচারী, অনৈসলামিক ইয়াযীদকে অস্বীকার করার জন্য ইমাম হুসাইন (রাঃ) জীবন দিলেন সে ইয়াযীদের উত্তরশুরীরা আজও স্বমহিমায় বদ্যিমান। ক্ষমতায় থাকার জন্য তারা প্রয়োজনে ইসলামের উপর খড়গ হানছে, ইসলাম বিরোধী নিয়ম-কানুন চালু করছে,  ইসলাম বিরোধী পশ্চিমা কুফর শক্তির সাথে আতাত করে ইসলামী ব্যবস্থা পূনঃপ্রতষ্ঠিার পথ রোধ করে দিচ্ছে। এসকল শাসকরা ক্ষমতায় বসে কেবলমাত্র তাদের প্রভূদের এজেন্ডাকে বাস্তবায়ন করে চলেছে। এ নব্য ইয়াযীদদের চিহ্নিত করতে পারলে আশুরার শিক্ষা এবং করনীয় কি তা পরিস্কার হয়ে যাবে। ইমাম হুসাইন (রাঃ) ভালবাসার কথা বললে তাদের দায়িত্ব হচ্ছে আজকের নব্য ইয়াযিদদের চিহ্নিত করা ও অস্বীকার করা এবং তাদের উৎখাত করার জন্য প্রয়োজনে স্বপরিবারে আত্ম ত্যাগের জন্য তৈরি হওয়া।

বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত কারবালাঃ

যে কারবালায় ইমাম হুসাইন(রাঃ) জীবন দিলেন, আজ সারা পৃথিবীব্যাপী সে কারবালা বিস্তৃত হয়ে পড়েছে। আজ বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের উপর অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে, চারিদিক থেকে তাদের শৃঙ্খলিত করে ফেলা হচ্ছে, নির্বিচারে হত্য করা হচ্ছে, তাদের সম্পদ লুন্ঠিন করা হচ্ছে, ভূমি দখল করে নেয়া হচ্ছে। মুসলমানদের বিরুদ্ধে আগ্রসী তৎপরতা কেবলমাত্র মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং পৃথিবীর সকল মুসলিম ভূখন্ডে বিস্তার লাভ করেছে। ইরাক, আফগানিস্তান, কাশ্মির, প্যালেষ্টাইন, চেচনিয়া, ভলকান, গুজরাট, সুদান, উজবেকিস্তানে মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে, মা বোনদের ইজ্জত লুন্ঠন করা হচ্ছে। পৃথিবীর যেখানে সত্যিকার ভাবে ইসলামী ব্যবস্থা  ফিরে আসার সম্ভাবনা দেখা দেয়, সেখানেই পূঁজিবাদীরা বীনা অজুহাতে খড়গ হাতে হাজির হয়। আজকে মুসলমান ভূখন্ডে অকারণে আক্রমণ তারই সাক্ষ্য বহন করে। আজ অনৈসলামী শক্তির আক্রমন কেবলমাত্র কারবালার মরুভূমিতেই সীমাবদ্ধ নয় তা আজ পৃথিবীব্যাপী সকল মুসলিম ভূখন্ডে বিস্তার লাভ করছে।

আমাদের সমাজে আশুরাঃ

প্রতি বছর আমাদের জীবনে আশুরা আসে, আমরা শোকে বিহ্বল হই। এক শ্রেণীর লোক বুক চাপড়িয়ে রাস্তায় তাজিয়া মিছিল করে। কিন্ত যে আদর্শের জন্য হুসাইন (রাঃ) শাহাদাত বরন করলো তা তারা উপলদ্ধি করার চেষ্টা করেন না। কেবলমাত্র আদর্শ অনুসরণ বিহীন শোক যাত্রায় মহড়া দেয়। ইমামকে সত্যিকার ভাবে ভালবাসলে তার আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণপন লড়াই করতে হবে। অন্যথায় রাস্তায় বুক চাপড়িয়ে লোক দেখানোর মহড়া দিলে, মানুষরা কেবল করুণা করবে। তাতে ইমামকে ভালবাসার দাবী পুরণ হবে না, তার আদর্শও কোন দিন বাস্তবায়ন হবে না।

আর এক শ্রেণীর লোক মুহররম পালনের নামে নানা রকম আলোচনায় সভা, সেমিনার ও ওয়াজ মাহফিলে নিজেদের ব্যাপৃত করে তোলেন। কিন্তু যে আদর্শহীন ভূইফোর অনেসলামী স্বৈর শাসকের বিরুদ্ধে দাড়িয়ে ইমাম জীবন দিলেন, আজকের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সে সকল স্বৈরশাসকদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করেন না, তাদের অন্যায়কে উন্মোচন করেন না, এবং তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে টু শব্দটি পর্যন্ত উচ্চারণ করেন না। বরং এ জাতীয় আলোচকরা নব্য ইয়াযীদদের বাহবা কুড়ানোর জন্যই ব্যস্ত হয়ে থাকেন। আজকের ইয়াযীদদের চিহ্নিত না করতে পারলে এ জাতীয় আলোচনায় মহরমের কোনই তাৎপর্য বহন করে না।

আশুরার শিক্ষা ও আমাদের করণীয়ঃ

মুসলিম ভূখন্ডে শাসকের নামে নব্য ইয়াযিদরা ক্ষমতায় বসে আছে। যাতে ইসলামের আলো সমাজে বা রাষ্ট্রে পৌছতে না পরে, মানুষরা যাতে জীবন-ব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকে গ্রহণ করতে না পারে তার সকল ব্যবস্থা সুসম্পন্ন করে ফেলা হয়েছে। ইমাম হুসাইনের (রা) উত্তরসুরীদের দায়িত্ব হচ্ছে নব্য ইয়াযীদদের অপসারণ করে আবার সত্যিকার ইসলামী আকিদার উপর প্রতিষ্ঠিত নেতৃত্বের আনুগত্য করা। তাতে যদি সর্বোচ্চ ত্যাগেরও প্রয়োজন হলেও তার জন্য প্রস্তত থাকা।

পৃথিবী থেকে আজ সে ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থার সর্বশেষ নিশানাটুকু মুছে গেছে ১৯২৪ সনের ৩ মার্চ। তারপর পশ্চিমা পূঁজিবাদী শাসন-ব্যবস্থা দ্বারা মুসলমানদের আষ্টে-পিষ্ঠে বেঁধে ফেলা হয়েছে, আমাদের ইসলামী আকিদা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হচ্ছে,  যাতে আমরা আবার ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থার ছায়াতলে ফিরে না আসতে পারি তার সকল আয়োজন সম্পন্ন করা হচ্ছে অত্যন্ত সুকৌসলে। যে খিলাফতের ধারাবাহিকতার জন্য ইমাম হুসাইন(রাঃ) জন্য জীবন দিলেন তাহলে তার উত্তরসূরীরা কি করে খিলাফতের অবর্তমানে নিশ্চিন্তে বসে থাকতে পারে? কি করে তারা অনৈসলামিক ব্যবস্থাকে মেনে নিয়ে ইমাম হুসাইন(রাঃ)কে ভালবাসার দাবী করতে পারে? আজ ইমাম হুসাইন(রাঃ) উত্তরসূরীদের দায়িত্ব হচ্ছে পূতিগন্ধময় পশ্চিমা পূজিবাদী শাসন-ব্যবস্থাকে মুসলমানদের জীবন থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করা এবং পৃথিবীতে আবার সে খিলাফত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য ত্যাগের মহিমায়  উজ্জীবিত হওয়া। জীবনের সবটুকু হিম্মত দিয়ে এ ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করা। যতদিন এ খিলাফত ব্যবস্থা ফিরে না আসবে ততদিন প্রত্যেকটি মুমিনকে প্রয়োজনে ইমাম হুসাইন (রাঃ)-এর মতো ত্যাগের জন্য তৈরি হতে হবে। জীবনের সকল সময় আর সঞ্চয় বিলিয়ে বেড়াতে হবে খিলাফতের আগমন তরান্বিত করার জন্য। যারা ইমাম হুসাইন (রাঃ)'কে ভালবাসার দাবী করেন তাদেরকে অবশ্যই এ ত্যাগের পরীক্ষায় উত্তীর্ন হতে হবে। এ ত্যাগ স্বীকারের মধ্যেই নিহিত রয়েছে কারবালার আসল শিক্ষা। আল্লাহতায়ালা আমাদিগকে এ বিষয় থেকে শিক্ষা গ্রহণ  করা এবং সে অনুযায়ী কাজ করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

মোহাম্মদ আজিজুর রহমান খান

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন