রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১১

আপনি কি আগামীকাল মরতে প্রস্তুত ?

তুই কি জীবনে ফুটবল খেলা দেখছস, না হলে তুই মেসিরে নিয়া এই মন্তব্য করলি কেমনে। আমি গত বছর ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর বার্সার খেলা একটাও মিস দেই নাই জানোস ......... কারণ ঐখানে মেসি খেলে। ............ আরে মেসি মেসি করস কেন রিয়ালের রোনালদো কি কম, আরে বার্সা তো আজকে ফালাইতেছে, রিয়াল যতগুলো ট্রফি জিতছে, বার্সা ততগুলো ম্যাচও খেলে নাই।

দোস্ত তোর কাছে রিসেন্ট কি মুভি আছে আর তোর পেনড্রাইভ তা একটু দিস, আমার জাহানের থেকে বডিগার্ড মুভিটি আনতে হবে। তুই জানোস মুভিটা আমি এখনো দেখি নাই। আরেকটা কথা তো তোকে বলা হয় নি, ১৫ তারিখ বুয়েট ক্যাফেটেরিয়ার সামনে ওপেন কনসার্ট আছে, আর্টসেল আসতাছে। রাতে কিন্তু প্রোগ্রামটার পোস্টারিং করতে হবে মাথায় রাখিস।

শিমু জানিস ...... জনি বলেছে “আজ নাকি আমাকে ঐশ্বরিয়ার মত লেগেছে”, জানি ছেলেরা মেয়েদের সামনে আসলেই একটু ফাঁপড়বাজি করেই, তবে ব্যাপার কি জানিস আমি একটা বিষয় লক্ষ করেছি যে সে আজ আমার থেকে চোখ সরাতেই চাই না। বারবার আমার সাথে চোখাচোখি হয়েছে। এইইইই ......... পরে কথা বলবো জনি ফোন করছে। হ্যালো ............

কাল্পনিকতার ছোঁয়া থাকলেও উপরের টুকরো ঘটনাগুলো সমাজেরই এক গুরুত্বপুর্ণ অংশের কিছু খন্ডচিত্র। বুঝতে পারছেন তো তারা কারা। হ্যাঁ তারা আমাদেরই বর্তমান তরুণ প্রজন্ম। কালের আবর্তে আজ আমাদের বাস্তবতা হল এমন যে আমরা সে সকল বিষয় নিয়ে বিশদভাবে আলাপ আলোচনা করি যা আমাদের মনে আমোদ ফুর্তির রসদ যোগায়, যা আমরা বাস্তবে সংগঠিত হতে দেখি। এজন্যই ফুটবলপ্রেমীরা ব্যস্ত মেসি-রোনালদোকে নিয়ে কিংবা বার্সা রিয়াল নিয়ে, অথবা কোন প্লেয়ার কোন টিমে যাচ্ছে এই সংক্রান্থ খবরগুলো নিয়ে। এই তরুণদের কাছে খবর থাকে লেটেস্ট মুভি, লেটেস্ট গানের। অথবা ব্যস্ত পালসার কিংবা ইয়ামাহা নিয়ে। চিন্তায় শুধু সালমানের ফিগার আর ঋত্বিকের সেই ধুম মাচালে বাইক। সেই সাথে তারা সচেতন প্রেম সংক্রান্থ সকল উপকরণাদির।

আজকের তরুণ সমাজ তার দৈনন্দিন জীবনের এ সকল তুচ্ছ ঘটনাগুলোর পিছনে দুহাত বিলিয়ে সময় নষ্ট করার মাধ্যমে এমন এক অপরিহার্য বিষয় ভূলে থাকতে চাই যা জীবনের সবচেয়ে অবশ্যম্ভাবী এক ঘটনা। মৃত্যু ......... । বর্তমানে তা এমনই এক নিষিদ্ধ বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে যে যখনই এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা তৈরী হয় তখনই অপ্রাসঙ্গিকভাবে প্রসঙ্গটি পরিবর্তন করা হয় বা করতে চেষ্টা করে।

ব্যাপারটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক যে আমরা মৃত্যুর চিন্তাকে এড়িয়ে চলতে চাই। এই মৃত্যুই হল এমনই এক সুনির্দিষ্ট বিষয় যার স্বাদ আমাদের সকলকে গ্রহণ করতে হবে। এই মৃত্যুর রেখা যা কখনোই অতিক্রম করা সম্ভব নয়। আমাদের চারপাশে কত মানুষই না বিদ্যমান ছিল যারা দুনিয়া হতে বিদায় গ্রহণ করেছে। আমাদের পরিবারে, মহল্লায়, বন্ধুমহলে এমনই অনেকেই ছিল যারা আজ স্মৃতির পাতায় ঠাঁই করে নিয়েছে। পশ্চিমা চিন্তার দূষণে আজ আমরা এই মৃত্যু থেকে পালিয়ে বেড়ানোর চেষ্টায় লিপ্ত আছি। তবে এই মৃত্যু হতে পলায়নের পেছনে আমাদের মাঝে যে বিষয়টি প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে তা হল ভয়। অজানার এক ভয়, যা আমাদেরকে গ্রাস করে নেয়। এই ভয় হল দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে যাওয়ার ভয়। সকল আরাম আয়েশ, আমোদ ফুর্তি ছেড়ে যাওয়ার ভয়। জীবন-মৃত্যু হতে পলায়নপর নীতি অবলম্বন করার কারণে স্বাভাবিকভাবে আমরা সেই সকল কাজগুলোতে নিজেকে ব্যস্ত রাখছি যা আমাদের এই ভয়কে দূরে সরিয়ে রাখতে সমধুরভাবে কাজ করছে। এজন্য আমরা মওজ মাস্তি, আমোদ ফুর্তি, হৈ হুল্লোড়ের মাঝে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে চাই।

বাড়ি, গাড়ি এবং নারীর পেছনে ছুটতে ছুটতে আজ আমরা মৃত্যুর এই চরম বাস্তবতা সম্পর্কে উদাসীন। আমরা কি কখনো চিন্তা করে দেখেছি যে, একদিন এই হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাবে যা এতদিন কোন মেয়ের জন্য অস্থির ছিল, সেই মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিবে যা দিয়ে কখনো সৃজনশীল কিংবা কখনো পশ্চিমা অপসংস্কৃতির অনুকরণ করার কাজে ব্যবহার করেছি। আমাদের এই দেহ মিশে যাবে মাটির সাথে যা দিনের পর দিন জিমে গিয়ে, কাজল, মাসকারা লাগিয়ে লালন পালন করেছি। ইচ্ছাই হোক কিংবা অনিচ্ছাই হোক আমাদের প্রত্যেককে মরতে হবেই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন

প্রত্যেকটি প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। সুরা আম্বিয়াঃ৩৫
তোমরা যেখানেই থাকনা কেন মৃত্যু তোমাদের গ্রাস করবেই। সুরা নিসাঃ৭৮

অন্যান্য ব্যবস্থাগুলো তো মৃত্যুকে ভুলে থাকতে শেখায়, কিন্তু মানুষ কি পারবে মৃত্যকে ভুলে থাকতে? না কখনোই না। মুসলিম বলুক কিংবা অমুসলিম সকলকেই এর মুখোমুখি হতে হবে। তবে আমরা স্বাক্ষ্য দিয়েছি আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। আমরা জানি আমাদের সকলকে আবার তারই কাছে ফিরে যেতে হবে। তাই এই মৃত্যুই শেষ নয় সবকিছুর। মৃত্যুই হল সবশেষের শুরু। এটাই হল অন্তহীন জীবনের শুরু। আখিরাত যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বারবার অবহিত করেছেন। কঠিন জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে সেই দিন যখন মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নির্দেশে সবাইকে একত্রিত করা হবে। এবং কর্মফলের প্রতিদান সরূপ জান্নাত অথবা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হতে হবে সবাইকে।

মৃত্যুর চিন্তা মুসলিমদের স্মরণ করিয়ে দেয় আখিরাতের কঠিন বাস্তবতা সম্পর্কে এবং হুঁশিয়ার করে দেয় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার আদেশ নিষেধগুলো। আল্লাহর রাসুল (সা) বলেন “বুদ্ধিমান হল সে যে তার জীবনকে শৃঙ্খলিত করে নিয়েছে ও মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য কাজ করেছে, আর দেউলিয়া তো সেই যে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে অতঃপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে বিফল প্রার্থনা করে।”

যতই কুল কিংবা রাফ অ্যান্ড টাফ চিন্তা আমরা করি না কেন মৃত্যুর সাথে মোলাকাত আমাদের হবেই, আমাদের রবের সামনে আমাদের দাড়াতে হবেই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেনঃ

“তাদেরকে বলঃ যে মৃত্যু থেকে তোমরা পালাচ্ছো সে তো তোমাদের কাছে আসবেই। তখন তোমাদেরকে ঐ আল্লাহর কাছে পেশ করা হবে, যিনি গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছুই জানেন। আর তিনি তোমাদেরকে সব কিছুই জানিয়ে দিবেন যা তোমরা করেছিলে।” [সুরা আল জুমুআঃ৮]

সময়টা তখন খুব দেরী হয়ে যাবে যখন আসলে কিছুই করার থাকবে না। সুযোগ থাকবে না পিছনে ফিরে যাওয়ার। আমরা পারব না আমাদের গুনাহগুলোকে পরিবর্তন করতে। পারবো না আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে ক্ষমা চাইতে। থাকবে না ফেলে আসা সালাতগুলো আদায়ের কোন সুযোগ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেনঃ

“এমন কি যখন তাদের মধ্যে কারো মৃত্যু এসে যাবে তখন সে বলবেঃ “হে আমার রব, আমাকে ঐ দুনিয়ায় ফিরিয়ে দাও যা আমি ছেড়ে এসেছি। আশা করি এখন আমি নেক আমল করবো” কখনোই নয়। এটা একটা কথার কথা মাত্র যা তারা বলেছে। (মরবার পর) তাদের পেছনে একটা সীমারেখা রয়েছে, আবার তাদেরকে উঠাবার দিন পর্যন্ত (সেখানেই থাকবে)। তারপর যখনি শিঙ্গায় ফু দেওয়া হবে, তখন তাদের মধ্যে কোন আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকবে না এবং তারা একে অপরকে জিজ্ঞাসাবাদও করবে না। তখন যার (নেকির) পাল্লা ভারী হবে সে ই সফল হবে। আর যার পাল্লা হালকা হবে, তারা হবে ঐ সব লোক, যারা নিজেরাই নিজেদেরকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। তারা চিরকাল দোযখে থাকবে।”

মৃত্যুর চিন্তা আমাদেরকে শিখায় জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দেয়া বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে এবং হারাম থেকে দূরে থাকতে। সময় এখনো ফুরিয়ে যায় নি। যতক্ষণ এই দেহে প্রাণ আছে ততক্ষণ আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা প্রদত্ত সুযোগ হতে বঞ্চিত নয়। একদা রাবী বিন খাইসাম নামক এক ধার্মিক ব্যাক্তি তার ঘরের ভেতর কবর খুঁড়ে রেখে ছিল। যখনই সে কোন দোষ কিংবা গুনাহ করত তখনই সে কবরের মধ্যে শুয়ে পড়ত এবং সে ততক্ষণ শুয়ে থাকতো যতক্ষণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা চাইতেন ও সে নিজে নিজে বলত “ হে আমার রব আমাকে আবার ফিরিয়ে দিন দুনিয়ায় যাতে আমি সেই কাজগুলো করতে পারি যা আমি আগে অবজ্ঞা করতাম” তখন সে নিজেই বলে উঠত “ ও রাবী যাও, তোমাকে ফিরিয়ে দেওয়া হল এবং কাজ কর ......”

রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ “সেই মৃত্যুর চিন্তা বেশী বেশী কর যা সমস্ত কামনা বাসনার বিনাশকারী” [তিরমিযী]

এবং তিনি আরো বলেছেনঃ “যদি পশুরা জানত যে আদম সন্তানেরা মৃত্যু সম্পর্কে যা জানে, তাহলে তাদের মাঝে তুমি কোন চর্বিই খুঁজে পেতে না। ”(আল বায়হাকী, আল শা’আব)

আমরা জানি মৃত্যুর চিন্তা আমাদের মনে কোন দুর্বল প্রভাব সৃষ্টি করে না, ভালো ভাবেই তা আমাদেরকে নাড়া দেয়। তাই আমরা যখন কাউকে আমাদের সামনে মারা যেতে দেখি তখন আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি কিংবা আমরাও মৃত্যুর সন্নিকটে চলে যায়। তখনই আমরা দৌড়ে ছুটে যায় মসজিদে। নামাজ কালাম পড়া শুরু করে দেয়। কিন্তু যখনই কিছু সময় অতিবাহিত হয়ে যায় তখন আমরা আবার পুর্বের অবস্থায় ফিরে যায়। অথচ এই মৃত্যুর চিন্তা সব সময় আমাদের মনে অগ্রবর্তী হিসেবে কাজ করা উচিত এবং তা স্থায়ীভাবে আমাদের মনে রেখাপাত করা উচিত।

রাসুলুল্লাহ (সা) একদিন আবদুল্লাহ বিন উমর (রা) কে বললেনঃ যদি তুমি সকাল পর্যন্ত বেঁচে থাক তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেঁচে থাকার আশা পোষণ করো না এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত বেঁচে থাকলে সকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকার আশা পোষণ করো না, জীবন থেকে মৃত্যুর জন্য কিছু নিয়ে যাও এবং সুস্থতা থেকে রোগাক্রান্ত অবস্থার জন্য। ওহে আবদুল্লাহ তুমি হয়তো জানো না, হতে পারে আগামীকাল তোমারই দিন। (বুখারী)

মুসলিমদের কখনোই উচিত নয় যে, সে সাময়িকভাবে ইসলামের পিছনে ছুটবে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে অনুতপ্ত হবে, আবার গুনাহের দিকে ফিরে যাবে। তাহলে আমরা কেমনে আশা করতে পারি যে তিনি আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা জালিমদের পথ প্রদর্শন করেন না।

“আর তাদের জন্য তওবা করার কোন অবকাশই নেই, যারা (আজীবন) শুধু গুনাহের কাজ করতে থাকে এবং এভাবেই (গুনাহের কাজ করতে করতে) যখন একদিন তাদের কাছে মৃত্যু এসে হাজির হয়, তখন সে বলে, (হে আল্লাহ) আমি এখন তওবা করলাম, এমনি ভাবে তাদের জন্যও নয় যারা কাফের হিসেবে মৃত্যু বরণ করল। এরা হচ্ছে সে সব লোক যাদের জন্য আমি যন্ত্রণাদায়ক আযাবের ব্যবস্থা করে রেখেছি।” সুরাঃ আন নিসা-১৮

মৃত্যুর ভাবনাই আমাদের জীবন সম্পর্কে সচেতন হতে ও এই জীবনকে একটি ক্ষণস্থায়ী আবাসভূমি হিসেবে বিবেচনা করতে সহায়তা করে। এই দুনিয়া তো একটি পরীক্ষাক্ষেত্র যেখানে ক্ষণে ক্ষণে পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়। এই পরীক্ষার পরিসমাপ্তিই হল মৃত্যু। অতএব দুনিয়ার প্রতি মোহাবিষ্ট হয়ে কিভাবে আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সীমালঙ্ঘন করতে পারি। এটি এমন একটি বাধা হিসেবে কাজ করে যা সকল প্রকার সীমালঙ্ঘন হতে আমাদের রক্ষা করে। এবং দুনিয়ার ধোঁকা হতে আমাদের হেফাজত করে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেনঃ

“ভাল করে জেনে রেখো যে, এই দুনিয়ার জীবনটা খেল তামাশা, মন-ভোলানোর (উপকরণ), সাজ সজ্জার, তোমাদের একে অপরের উপর গর্ব এবং ধনে জনে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই নই।” [সুরা হাদীদঃ ২০]

ইবন উমর (রা) বলেছেনঃ আমি একবার রাসুলুল্লাহ (সা) গিয়েছিলাম এবং আমি ছিলাম দশ জন ব্যাক্তির মাঝে দশম জন। তখন আনসারদের মধ্য হতে একজন প্রশ্ন করল “ ইয়া আল্লাহর রাসুল (সা) মানুষের মধ্যে কে বেশী বুদ্ধিমান এবং কে বেশী সম্মানিত? তিনি (সা) বলেনঃ তারাই যারা মৃত্যুর কথা বেশী বেশী স্মরণ করে এবং তার জন্য কঠোর পরিশ্রম ও প্রস্তুতি গ্রহণ করে। তারাই হল সম্মানিত এবং আখিরাতের জন্য মর্যাদা লাভ করেছে”

উসমান বিন আফফান (রা) তার জীবনের শেষ খুতবায় বলেনঃ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তোমাদেরকে এই দুনিয়া দিয়েছেন যাতে তোমরা আখিরাতের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পার, একে নিয়ে পড়ে থাকার জন্য নয়, এই দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী কিন্তু আখিরাত চিরস্থায়ী। অতএব এমন কিছু কর না যা অবশেষে তোমাকে অবহেলিত করবে, এমন কিছুতে নিজেকে ব্যস্ত রেখো না যা ক্ষণস্থায়ী। তাই সেই পথের সন্ধান কর যা চিরস্থায়ী। অবশ্যই আমাদের দুনিয়া হতে বিদায় নিতে হবে এবং আমাদের আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সাথে মিলিত হতে হবে। মৃত্যু আমাদের আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, এর চেয়ে ভালো স্মরণ আর কি আছে?

রাসুলুল্লাহ (সা) আমাদের এমন অনেক কাজেই উৎসাহ দান করেছেন যা মৃত্যুর চিন্তা করতে আমাদের বাধ্য করে। যেমনঃ আবু যর (রা) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেনঃ তোমরা কবর জিয়ারত কর, এটা তোমাদের আখিরাতের স্মরণ করিয়ে দিবে এবং মৃত ব্যাক্তিকে গোসল করিয়ে দাও, এটা একটি উল্লেখযোগ্য সতর্ক সংকেত এবং জানাজার নামাজ আদায় করবে হয়তো তা তোমাদের বিষণ্ণ করবে, এই বিষণ্ণতার জন্য সে আল্লাহর রহমতের ছায়ায় আছে। (ইবন আবি আল দুনিয়া, আল হাকিম)

ইবন আবি মুলাইকাহ হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেনঃ তোমরা মৃতদের দর্শন করবে এবং তাদের শান্তির জন্য দুআ করবে, এতে তোমাদের জন্য রয়েছে এক সতর্কবাণী।(ইবন আবি আল দুনিয়া)

এবং আল দাহিক হতে বর্ণিতঃ একবার এক লোক জিজ্ঞেস করল “ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা) মানুষের মধ্যে সবচেয়ে সংযমী কে? তিনি (সা) বলেনঃ সেই ব্যাক্তি যে কখনো কবরের চিন্তা হতে বিস্মৃত নন এবং দুনিয়ার ঐশ্বর্যকে বিদায় জানিয়েছে, যে চিরস্থায়ী পথের সন্ধানে রয়েছে, যে কখনো আগামীকালের বিবেচনা করে না এবং সবসময় নিজেকে কবরবাসীদেরই একজন বলে মনে করে।”

এটা অনেক সহজ আমাদের মন হতে মৃত্যুর চিন্তা দূরে ফেলে দেওয়া, বিশ্বাস করতে শুরু করা যে আমি আরো অনেকদিন বেঁচে থাকবো, কিন্তু মৃত্যুর ফেরেশতা আজরাইল কি আমাকে ছেড়ে দিবে? কখনোই না। তরুণ হোক কিংবা বৃদ্ধ সময় হলে কারো নিস্তার নেই।

যাই হোক মৃত্যুর চিন্তা মানে এই নয় যে আমরা কান্নাকাটি কিংবা বিলাপ করে পার করে দেব। অথবা কারো সামনে মৃত্যু চলে এলে তাকে তিরস্কার করব। অথবা শুধুই কবর জিয়ারত কিংবা জানাজার নামাজে উপস্থিত হব। মূলত মুমিনরা যখন অনুধাবন করে যেকোনো সময় তাকে তার রবের সাথে মিলিত হতে হবে, তার পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে এবং তওবা করার পথ বন্ধ হয়ে যাবে তখনই সে সতর্ক হয়ে যায়, সে আরো সতর্কতার সাথে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার আদেশ পালন করতে থাকে। তার প্রত্যেকটা সেকেন্ড আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার স্মরণে লিপ্ত থাকে।

তাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে আমরা প্রার্থনা করি “হে আল্লাহ ক্ষমা করে দাও মুসলিম উম্মাহকে, হেদায়েত দান কর পথহারাদের, খিলাফতের মধ্যেই আমাদের মৃত্যু দান কর, আমাদেরকে সেই মৃত্যু দান কর যা তুমি মুসাইব, জাফর, হানজালা (রা) দেরকে দিয়েছো, সেই মৃত্যু নয় যা আবু জাহল, আবু লাহাব, সাদ্দাম, গাদ্দাফীর জন্য নির্ধারিত ছিল। নিশ্চয় তুমি ক্ষমাশীল ও শ্রবণকারী।”

বলুনঃ নিশ্চয়ই আমার নামায, আমার কাজকর্ম, আমার জীবন, আমার মরণ, সব কিছুই সৃষ্টিকুলের মালিক আল্লাহ তায়ালার জন্য। সুরা আল আন’আম- ১৬২

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন