সময়ের সাথে দুরন্তর গতিতে
ছুটে চলা রাজনীতির পাঠটা যেন না নিলেই নয়। মহাকাশের পথে পাড়ি দেওয়া গতিশীল রকেটের চেয়েও দ্রুত গতিতে পরিবর্তন
হচ্ছে এর পটভূমি। রাজনীতি বিষয়টিই
হল এমন, সর্বদা গতিশীল। সাম্প্রতিক
সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো যেন মানুষের চিন্তার জগতকে নতুন করে সাজাতে শুরু করেছে। ছাই পাশ দিয়ে
ঢেকে রাখা সেই উজ্জ্বল জীবন প্রদীপ যেন চিৎকার করে বলছে – ইসলাম, ইসলাম এবং
শুধুই ইসলাম। সাহিত্যের
ভাষায় বর্ণনা করে যাওয়া কথাগুলো আসলে আজ বর্তমানে বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চেরই এক
প্রতিচ্ছবি। গত কয়েক দশক
ধরে বৈশ্বিক এই মঞ্চে একচ্ছত্রভাবে নায়কের ভূমিকা পালন করে যাওয়া আমেরিকা আজ
চারিদিক হতে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। অর্থনৈতিক মন্দা যার ফলশ্রুতিতে আভ্যন্তরীণ সমস্যা, রাশিয়ার পুনঃ আবির্ভাব, ইউরোপের ক্রমাগত উন্নতি এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক
ব্যবস্থা হিসেবে ইসলামের উত্থান তাকে এমন এক গোলক ধাঁধায় ফেলে দিয়েছে যা হতে
পালানোর কোন পথই আজ খোলা নেই। তাই আজ সে মৃত্যুর কঠিন প্রহর গুনে চলেছে।
সৃষ্টির সূচনা থেকেই হক ও
বাতিলের মাঝে এক আপোষহীন লড়াই চলে এসেছে এবং এটি সেই সময় পর্যন্ত থাকবে যতক্ষণ
না আমরা সকলে পরম করুণাময়ের আদেশে উথিত হয়। আমরা দেখেছি ইসলামের সূচনা কুফরের ভীত
নাড়িয়ে দিয়েছিলো। কাঁপিয়ে ছিল
কাফের কুরাইশদের অন্তরাত্মা। ঠিক তেমনি ভাবে আজ সমগ্র বিশ্বজুড়ে ইসলামের উত্থান কাফের সাম্রাজ্যবাদীদের
চিন্তার একমাত্র কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে সকল শাসকেরা এক সময় আজ্ঞাবহ দাসের ন্যায় তাদের হুকুম পালন করে চলেছিল, আজ তাদের মধ্যে কতেক হয়েছে ইতিহাসের
আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত আর কতেক গুনে চলেছে তাদের মৃত্যুর প্রহর। দশকের পর দশক
ধরে ইহুদীবাদের মদদপুষ্ট সাম্রাজ্যবাদীদের বেতনভুক্ত এই দালালেরা আজ ক্ষমতাচ্যুত। আরব বিশ্বের
বাস্তবতায় যে বিষয়টি কল্পনারও অতীত ছিল মুসলিম উম্মাহ তা আজ করে দেখিয়েছে। দীর্ঘ কয়েক
যুগ ধরে করে চলা অত্যাচার ও অমানবিক নির্যাতন তাদেরকে রাজপথে নামতে বাধ্য করেছে। এত কিছুর পরেও
এই সব নেকড়ে হায়েনার দল মুসলিম উম্মাহর ইচ্ছা এবং আকাঙ্খাকে ধূলি ধুসর করার নেশা
বাদ দেয় নি। দেওয়ার
প্রশ্নই আসে না। কারণ তা তার
অস্তিত্বের সাথে জড়িত।
পাকিস্তানের নাম শুনলে
আমাদের দেশের কিছু সংখ্যক মানুষের রয়েছে যাদের মাঝে জাতীয়তাবাদী চেতনা লাফ দিয়ে
উঠে। বাস্তবে এই
চেতনা খুবই সাময়িক এবং যুক্তির খাতিরে চাঙ্গা হয় আর কি? ব্যাপার হল ৯০ এর দশকে পাকিস্তান আর ১১ এর
পাকিস্তান এর মাঝে বিশাল এক ফারাক খুঁজে পাওয়া। বর্তমান পাকিস্তান বলতে আমরা যা দেখি তা
ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে থাকা একটি রাষ্ট্র ছাড়া আর কিছু নয়। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হল কেন আজ বিশ্বের
একমাত্র পারমাণবিক অস্ত্রধারী মুসলিম দেশটির এই অবস্থা? কেনই বা প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই দেশটি
দুর্দশায় জর্জরিত? কিভাবে হল এই
দুর্দশা? আমাদের সমাজের
তথাকথিত সুশীল (!) লোকেরা চিৎকার
করে বলে ইসলামী চিন্তা ধারায় বেড়ে উঠা এই গোঁড়া লোকগুলোই তাদের ধ্বংসের জন্য
দায়ী। তাই তারা
তড়িঘড়ি করে উঠে পড়ে লাগে বাংলাদেশ যাতে আবার এদের মত হয়ে না পড়ে। সাম্রাজ্যবাদের
আয়নায় আজ মানুষকে মারার জন্য অস্ত্রের প্রয়োজন পড়ে না, যে চিন্তা দিয়ে মানুষ পরিচালিত হয় তাকে
নশৃংসভাবে খুন করে ফেললেই হয়। তাই তারা আজ এই খুন করার কাজে ব্যস্ত। ৯০ এর দিক থেকে
পাকিস্তানের তরুণ সমাজকে দেওয়া হয় স্মার্টনেসের সেই ধারণা যা আজ বাংলাদেশের
তরুণদের মাঝে দেওয়া হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে সে স্মার্ট হতে যখন শুরু করে তখন তার মাঝে দেখা যায় বিভিন্ন
ধরণের পরিবর্তন। এই পরিবর্তনের ছোঁয়ায় সে এতটায় মোহাচ্ছন্ন যে তার দেশ নিয়ে ঘটে চলা
ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সে বেমালুম। ঠিক সেই ভাবে মার্কিন বাহিনীর সাথে যৌথ সামরিক মহড়া হতে থাকে, যেমনটা আজকের বাংলাদেশের টাইগার-শার্ক অনুষ্ঠিত হয়। হোক না, সমস্যা কোথায়? এটা তো বন্ধুত্ব। তো এভাবেই চলতে থাকে তাদের মাঝে বন্ধুত্ব। একটা কথা
প্রচলিত রয়েছে যে, আমেরিকা যার
বন্ধু তার আর শত্রুর প্রয়োজন নেই। তো স্বাভাবিকভাবে তার আর শত্রুর প্রয়োজন হয় নি। আমেরিকা একাই
একশ। এই বন্ধুত্বের
নমুনা আজ এই ভঙ্গুর পাকিস্তান। এবার এই ভঙ্গুরতা থেকে পরিত্রাণের পথ যখন সে আল্লাহ এবং তার রাসুলের কাছে
ফিরিয়ে দিয়েছে তখনই সে শিকার হল সেই দ্বন্দের যা ১৪০০ শত বছর ধরে চলে আসছে। তাদের সমাজের
তথাকথিত সুশীলেরা আঘাত করা শুরু করল সেই ইসলামকে যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা
মানবজাতির জন্য একমাত্র জীবন ব্যবস্থা হিসেবে মনোনীত করেছেন। ফলে ইসলামের
শত্রুরা পেয়ে যায় কিছু স্বঘোষিত দালাল এবং আজো অবধি তারা ক্ষতবিক্ষত করে যাচ্ছে
মুহাম্মদ বিন কাশিমের আগমণস্থলকে। তার সাথে আমেরিকার ষড়যন্ত্রতো রয়েছেই।
আজ অনেকেই ভয় দেখায়
বাংলাদেশকে পাকিস্তান হওয়া থেকে রুখতে হবে। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি তাদের কারো মাঝেই এ সম্পর্কে আন্তরিকতার লেশ
মাত্রই নেই। পাকিস্তানের দালাল শাসকগুলোর ন্যায় আমাদেরও পশ্চিমা হুকুমের দাস শাসকেরা ঐ
সব নীতি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে যা অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির
সম্মুখীন করবে। ভারতের করায়ত্ত করাতে চাই যাতে আমরা কখনো মাথা উঁচু করে দাড়াতে না পারি। সবচেয়ে বড়কথা
হল সেই বন্ধুর সাথে বন্ধুত্ব করতে বাধ্য করছে যার জন্য শত্রুর দরকার নেই। তো আমাদের
সতর্ক হওয়া প্রয়োজন যাতে আমরা শুরুতেই এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে পারি। সমগ্র মুসলিম
বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও যখন রাজনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে ইসলামের উত্থান ঘটছে তখনই
একশ্রেণীর তথাকথিত বুদ্ধিজীবিরা (!) ইসলামের
বিরুদ্ধে প্রপাগন্ডা চালানো শুরু করেছে। নিজের খায়েশ মেটানোর জন্য তারা বিরোধিতা করে যাচ্ছে। এমনকি তাদের
মাঝে কেউ কেউ আল্লাহর রাসুল (সা) কে জীবনীও লিখবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে
নৌকার মাঝিকে যদি বিমানের পাইলট এর জায়গায় বসিয়ে দেয় তাহলে চিন্তা করুন তো
ব্যাপারটা কেমন হবে? তবে এই উদ্যেগ
থেকে কিছু জিনিস মাথার মাঝে জমজম কুপের পানির মত পরিষ্কার হয়ে গেল। এই সমাজের
তথাকথিত কিছু সুশীলদের মাঝে এই উত্থান যে দুশ্চিন্তার এক সিডর বয়ে দিচ্ছে তাতে আজ
কোন সন্দেহ নেই। তাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য হল মানুষের চিন্তাকে কলুষিত করা। বিভ্রান্ত করা
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নিয়ামত হতে। তবে ইতিহাস তো
স্বাক্ষী, ব্যাপারগুলো সব
সময় এমনই ঘটেছে যে আল্লাহর দ্বীনকে যারা পরিবর্তন করতে চাই তারাই মূলত পরিবর্তন
হয়ে যায়।
আমাদের দেশের মত তৃতীয়
বিশ্বের দেশগুলোতে একটা বিষয়ের খুব চলন দেখা যায়, তা হল সাম্রাজ্যবাদীরা আমেরিকা
ব্রিটেন যাই বলে তাই আমাদের মত আম জনতা তো বটেই, কিছু পরগাছা টাইপের বুদ্ধিজীবিরা
অকপটে শেখানো বুলির ন্যায় আওড়ানো শুরু করে দেয়। এই যেমনঃ জঙ্গিবাদ কিংবা
সন্ত্রাসবাদ। ৮০ এর দশকের সূচনালগ্নে আমেরিকা ও বৃটিশ গোয়েন্দা সংস্থা
সন্ত্রাসবাদকে পরিবর্তন করে দেয় এক নতুন সংজ্ঞায়। তা হল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য
হাসিলের জন্য জনগণের স্বার্থবিরোধী যেকোন সহিংস পদ্ধতি অবলম্বন করা। রাজনৈতিক
পরিমণ্ডল থেকে যখন সমাজতন্ত্র বিলুপ্ত তাই অতি স্বাভাবিকভাবে ইসলামই হল তাদের
আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু। তাই তারা মুসলিমদের জীবনে ইসলামী জীবনব্যবস্থা ফিরিয়ে
নিয়ে আসার প্রত্যেকটি আন্দোলনকে তারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের আওতায় নিয়ে আসে।
যার ফলে তারা প্রতিনিয়ত সে সকল সচেতন, সাহসী ব্যাক্তিদের জেল জুলুম ও অমানবিক
নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে যারা তাদের প্রভুর প্রতি দেওয়া ওয়াদা পূরণে আন্তরিক।
ইরাক, আফগানিস্তান আজ তাদের এই সন্ত্রাসবাদের শিকার। ফিলিস্তিনের সেই ছোট্ট শিশুটি
হল দুনিয়ার সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী যে এখনো ভালো করে হাঁটতে শেখেনি। বসনিয়া,
চেচনিয়া, স্রেবেনিকার গণহত্যা, ইরাক আফগানিস্তানের মা বোনদের ধর্ষণ করা কোন
সন্ত্রাসী কর্মকান্ড নয়, গাজার আগ্রাসন যেন নিতান্তই ছেলে খেলা। তো মানুষের বুঝতে
বাকি নেই যে সন্ত্রাসবাদ বলতে কি বোঝানো হচ্ছে। জঙ্গিবাদ শব্দটি তো আর মজার বিষয়
যা আফগানিস্তান আক্রমণের পর থেকে শুনে আসছি আমরা। আর এক্ষেত্রে আমাদের লেজকাটা
বৈতনিক দালালেরা তাদের প্রভুদের চেয়েও এক ধাপ এগিয়ে। জঙ্গিবাদকে নিয়ে তাদের
রয়েছে অন্যরকম প্রচারণা। শয়নে স্বপনে যেন তাদের একটাই ধ্যান তা হল জঙ্গিবাদ,
সম্প্রতি একজন গডফাদার মেয়র নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন এবং তিনি আশঙ্কা করছেন জঙ্গি
হামলার। পশ্চিমাদের দেওয়া ট্যাবলেটের প্রতিক্রিয়া যেন তাদের ছাড়েই না। জঙ্গি
জঙ্গি বলে তারা এমন রব তোলায় ব্যস্ত যাতে মানুষের মাঝে বদ্ধমূল ধারণা হয়ে যায়
আসলে জঙ্গি বলতে ভীতিকর কিছু একটা রয়েছে। এই রব হল এমন এক পটভূমির প্রস্তুতি যা
আমরা বৈশ্বিক রাজনীতির দিকে তাকালেই এর উত্তর খুঁজে পাব। আমাদেরকে দেয়া হচ্ছে এক
অজানা নাশকতার আভাস। যে নাশকতা এদেশে সাম্রাজ্যবাদী হায়েনা আমেরিকা ও আধিপত্যবাদী
খুনি ভারতের পদচিহ্নকে শক্তিশালী করবে, যেমনটা আজকের ইরাক, আফগানিস্তান এবং
পাকিস্তান। হয়ত অদূর ভবিষ্যতে পাকিস্তানের ব্ল্যাকওয়াটার এর ন্যায়
ভাড়া করা গুণ্ডা ও খুনী বাহিনী দিয়ে বোমা হামলা ঘটিয়ে লাগিয়ে দিবে জঙ্গিবাদের
সহজ লেভেল। এরই মাধ্যমে তারা মানুষের মাঝে ভীতি চড়াতে চাই যাতে তারা ইসলামের দিকে
ফিরে না আসে, সেই শক্তিশালী ব্যবস্থার আশা পোষণ করা যেন ছেড়ে দেই যা ১৪০০ শত বছর
পুরো বিশ্বকে যোগ্যতার সাথে নেতৃত্ব্য দিয়েছিল। কিন্তু আল্লাহু আকবর, আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ পরিকল্পনাকারী। ইতিহাস স্বাক্ষী এই
অঞ্চলের মানুষ ইসলামকে একসময় বেছে নিয়েছিল তার উপর ঘটে চলা নির্যাতন, নিপীড়ন
তথা মুক্তির একমাত্র পথ হিসেবে। সেই সাহসী উত্তরসুরীদের পথ ধরে আজ মুহাম্মদ (সা)
এর সম্মানিত উম্মতেরা পুনরায় জাগরিত হওয়ার অপেক্ষায়। জালিম শাসকদের চোখ
রাঙ্গানী তার কাছে এখন তুচ্ছ জ্ঞান। তারা প্রতীক্ষা করছে তাদের বহুদিনের আরাধ্য
মর্যাদাপুর্ণ খিলাফতের। তাই আজ আমাদের সতর্কতার সাথে প্রত্যেকটি বিষয় পর্যালোচনা
করে এগিয়ে যেতে হবে এবং মোকাবেলা করতে হবে সেই সকল দুষিত ধ্যান-ধারণার যা কুফফার
আমাদের মাঝে চাপিয়ে দিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে চাই। সর্বোপরি আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে দুআ করি “ হে আল্লাহ তুমি আমাদের
অন্তরে তোমার ভয় আর তোমার জাহান্নামের ভয় ছাড়া আর কোন ভয় রেখো না, আমাদেরকে
সেই খিলাফত দান কর যা তুমি আমাদের পুর্ববর্তীদের দান করেছো এবং সমগ্র মুসলিম
উম্মাহকে বিজয় দান কর।“ “আমিন”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন