শুক্রবার, ১১ নভেম্বর, ২০১১

ইরান আক্রমণের হুমকি নাকি ইসরাইলের আজাইড়া ফাঁপড়

শুনলাম ইসরাইল নাকি আমেরিকার সাহায্য নিয়ে ইরান আক্রম করবে। চিন্তার বিষয়!!!!। যাইহোক আপনাদের অবগতির জন্য সংবাদপত্র হতে সংবাদটির একাংশ নিম্নে দিলামঃ

“ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে আগামী দুই মাসের মধ্যে ইসরায়েল হামলা চালাবে বলে আশঙ্কা করছেন ব্রিটেনের উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা। ব্রিটিশ পত্রিকা ডেইলি মেইল গতকাল বৃহস্পতিবার কয়েকটি সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে জানায়, ওপরের মহল ধারণা করছে, যুক্তরাষ্ট্রের কারিগরি সহযোগিতা নিয়ে ইসরাল ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোকে ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা চালাবে।

তবে ইরান বলেছে, তাদের ওপর কোনো হামলা হলে তা সর্বশক্তি দিয়ে মোকাবিলা করা হবে। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি গতকাল বৃহস্পতিবার এ কথা বলেন।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ডেইলি মেইল জানায়, ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি থেকে দূরে রাখতে হামলা চালাতে পারে ইসরায়েল। সেই 'সময়ও খুব দ্রুত' আসবে বলে মনে করেন ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, 'আমরা মনে করি, বড়দিনের আগেই হয়তো একটা কিছু ঘটে যাবে। আর নয়তো নতুন বছরে (হামলা) হতে পা্রে”।'( দৈনিক কালের কন্ঠ, ১১/১১/১১)

কয়েকদিন পর পর ঘুরেফিরে একই সংবাদ আমরা পাই আর তা হল ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরী করছে। এজন্য মাতব্বর আমেরিকা আর তার জারজ সন্তান ইসরাইলের মাথা খারাপ। তারা এই চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করছে ২০০৩ সাল থেকে যখন International Atomic Energy Agency (IAEA) এর প্রধান আল বারাদি ইরান নিয়া একটি রিপোর্ট দেয়।

ইরানকে নিয়ে আমেরিকা কয়েকদিন পর পর উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে থাকে। এমন আচর করে যেন খুব শীঘ্রই যুদ্ধ হবে। যদিও ইরান সবসময় বলে আসছে তারা পারমাবিক শক্তিকে শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহার করতে চায় কিন্তু আমেরিকা বার বার ইরানকে একটি আতংক হিসাবে তুলে ধরছে এবং এর মাধ্যমে উপসাগরীয় অঞ্চলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করছে। উপসসাগরীয় অঞ্চলে দেশগুলো যেকারণে নিজেদের নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে এবং আমেরিকার সাথে নিরাপত্তা চুক্তি করছে যা মূলত এই অঞ্চলে আমেরিকার অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করছে।

যাই হোক ইসরাল ইরান আক্রমণের যে হুমকি দিয়েছে তা পুরোই অমূলক ও অসম্ভব। তার কারগুলো নিম্নে দেওয়া হলঃ

১। ইরানকে আক্রম করতে হলে তা অবশ্যই বিরাট এলাকা জুড়ে আকস্মিকভাবে করতে হবে।

২। আমেরিকা যখন ইরাকে তার সেনাবাহিনীকে ফিরিয়ে আনতে চাইছে , আক্রম হলে ইরান সেখানে ভয়ংকর সমস্যা তৈরি করতে পারে। কার এই অঞ্চলে শিয়া প্রধান দলগুলোর উপর ইরানের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।

৩। এই অঞ্চলে আমেরিকা তার ঘাঁটিগুলোকে কখনো ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে না কার ইরান তার ব্যালাস্টিক মিসাইলের মাধ্যমে ঐ অঞ্চলে আমেরিকার ও ইসরালের সকল স্থাপনাগুলোকে অল্প সময়ে ধ্বংস করতে সক্ষম।

৪। পারস্য উপসাগর ও হরমুজ প্রণালীর উপর ইরানের নিয়ন্ত্র বেশি। সুতরাং ইরান যদি এই অঞ্চলে সকল জাহাজ চলাচল বা বাণিজ্য বন্ধ করে দেয় তবে তা সরাসরি যুদ্ধের চাইতেও মারাত্বক হবে। কার এতে করে পৃথিবীর ৪০% তেল রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে এবং ভয়াবহ অর্থনৈতিক ধ্বস তৈরী করবে।

৫। এছাড়াও আমেরিকা ও ইরানের মধ্যে কিছু আঞ্চলিক স্বার্থের বন্ধন রয়েছে। যেমন- ইরাক ও আফগানিস্থান পুনর্গঠনে ইরান আমেরিকাকে সাহায্য করছে।

৬। ভূ-রাজনীতিক দিক থেকে আমরা দেখছি রাশিয়া পুনরায় শক্তি অর্জন করছে। এই অঞ্চলে এমনিতেই রাশিয়ার প্রভাব রয়েছে। এই অঞ্চলে পুরোনো প্রভাব ফিরিয়ে আনার জন্য রাশিয়া অবশ্যই ইরানের সাথে সুসম্পর্ক চায়, ফলে কখনোই আমেরিকার সাথে একমত হবে না। শুধু তাই না আমেরিকা যদি ইরান আক্রম করে তবে তা রাশিয়ার জন্য প্রভাব অর্জনের একটি সু্যোগও তৈরি করবে ।

৭। এছাড়াও আমেরিকা যেখানে দীর্ঘ দশ বছরেও আফগানিস্তানে জয়ী হতে পারছে না সেখানে ইরান আক্রম করে সে তার সম্মানের ঝুঁকি নিবে কি? অর্থনৈতিক মন্দায় যেখানে ইউরোপের দেশগুলো কাতর তখন নতুন আরেকটা যুদ্ধ শুরু করার ক্ষমতা তার আছে কি?

তাই ইসরাল এই মুহুর্তে আমেরিকার সাহায্য নিয়ে ইরান আক্রম করবে তা সম্ভব না। বরং এই ধরণের হুমকির পেছনে উদ্দেশ্য হল আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করা। ইরানকে একটি আতংক হিসাবে উপস্থাপন করার মাধ্যমে উপসাগরীয় অঞ্চলে ইরান বিদ্বেষ তৈরি করা ও এই অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলোকে আরো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসা।

একটা প্রবাদ শুনেছিলাম, পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তবেতাই আমি বলব এই হুমকি গুলো হলো আজাইড়া ফাপড়। আমেরিকা আজকে কাগজের বাঘে পরিত হয়েছে , মৃত্যুর প্রহর গুনা ছাড়া তার আর কিছুই করার নেই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন