(নিচের প্রবন্ধটি বৈরুত, লেবানন থেকে প্রকাশিত ‘মিন মুকাওয়্যামাতিন নাফসিয়্যাতিল ইসলামিয়্যাহ’ বইটির খসড়া অনুবাদের একাংশ হতে গৃহীত)
আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
وَسَارِعُوا
إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالأرْضُ
أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ
‘তোমরা ছুটে যাও তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ হতে ক্ষমার দিকে এবং সেই
জান্নাতের দিকে যার প্রশস্ততা হচ্ছে আসমান ও যমীন, যা প্রস্তুত করা হয়েছে মুত্তাকীদের জন্য।’ [আলে ইমরান: ১৩৩]
তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা) বলেন,
إِنَّمَا
كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِينَ إِذَا دُعُوا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ
بَيْنَهُمْ أَنْ يَقُولُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
~ وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَخْشَ اللَّهَ وَيَتَّقْهِ فَأُولَئِكَ هُمُ
الْفَائِزُونَ
‘মুমিনদের বক্তব্য কেবল এ কথাই যখন তাদের মধ্যে ফয়সালা করার জন্যে
আল্লাহ্ ও তার রাসূলের দিকে তাদেরকে আহ্বান করা হয়, তখন তারা বলে: আমরা শুনলাম ও আদেশ মান্য করলাম। তাঁরাই সফলকাম। যারা
আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে আল্লাহ্কে ভয় করে ও তাঁর শাস্তি থেকে বেঁচে
থাকে তারাই কৃতকার্য।’ [আন-নূর:
৫১-৫২]
তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা) বলেন,
وَمَا كَانَ
لِمُؤْمِنٍ وَلا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ
لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ
ضَلَّ ضَلالا مُبِينًا
‘আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও
ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন এখতিয়ার নেই। যে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আদেশ
অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়।’ [আহযাব: ৩৬]
তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা) বলেন,
فَلا
وَرَبِّكَ لا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لا
يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
‘অতএব, তোমার
পালনকর্তার কসম,
সে লোক ঈমানদার
হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের
ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের
মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা হৃষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে।’ [নিসা: ৬৫]
তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা) বলেন,
يَا أَيُّهَا
الَّذِينَ آَمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ
وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا
أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ
‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা
নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই আগুন থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ। তাঁরা অমান্য
করে না আল্লাহ্ যা তাদের আদেশ করা হয়েছে, এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করে।’ [তাহরীম:
৬]
তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা) বলেন,
فَإِمَّا
يَأْتِيَنَّكُم مِّنِّي هُدًى فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلَا يَضِلُّ وَلَا
يَشْقَىٰ ~ وَمَنْ أَعْرَضَ عَن ذِكْرِي
فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَىٰ ~ قَالَ
رَبِّ لِمَ حَشَرْتَنِي أَعْمَىٰ وَقَدْ كُنتُ بَصِيرًا ~ قَالَ كَذَٰلِكَ
أَتَتْكَ آيَاتُنَا فَنَسِيتَهَا وَكَذَٰلِكَ الْيَوْمَ تُنسَىٰ
‘এরপর যদি আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে হেদায়েত আসে, তখন যে আমার বর্ণিত পথ অনুসরণ করবে, সে পথভ্রষ্ট হবে না এবং কষ্টে পতিত হবে
না। এবং যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায়
উত্থিত করব। সে বলবে: হে আমার প্রতিপালক, আমাকে কেন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করলেন ? আমি তো চক্ষুষ্মান ছিলাম। আল্লাহ্ বলবেন: এমনিভাবে তোমার কাছে আমার
আয়াতসমূহ এসেছিল,
অতঃপর তুমি
সেগুলো ভুলে গিয়েছিলে। তেমনিভাবে আজ তোমাকে ভুলে যাব।’ [তোয়া-হা: ১২৩-১২৬]
রাসূল (সা) বলেছেন:
بَادِرُوا
بِالْأَعْمَالِ فِتَنًا كَقِطَعِ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ يُصْبِحُ الرَّجُلُ
مُؤْمِنًا وَيُمْسِي كَافِرًا أَوْ يُمْسِي مُؤْمِنًا وَيُصْبِحُ كَافِرًا يَبِيعُ
دِينَهُ بِعَرَضٍ مِنْ الدُّنْيَ
অন্ধকার রাতের ন্যায় ফিতনা আসার আগেই
দ্রুত সৎকর্ম সেরে ফেল। সেসময় একজন ব্যক্তি সকালে মুসলিম ও সন্ধ্যায় কাফের বা
সন্ধ্যায় মুমিন ও সকালে কাফের হয়ে যাবে এবং দুনিয়ার সামগ্রীর জন্য সে তার দ্বীনকে
বিক্রি করে দেবে। [মুসলিম, কিতাবুল
ঈমান, ২১৩]
নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর ক্ষমা ও
জান্নাতের দিকে ছুটে যেতেন এবং সৎকর্মের দিকে ধাবিত হতেন তারা আল্লাহর রাসূল ও তার
পরবর্তী যুগে বিদ্যমান ছিলেন। উম্মাহ এখনো তাদের মতো অগ্রগামী মানুষ তৈরি করে যারা
তাদের রবের আহ্বানে সাড়া দিয়েছিল এবং নিজেদের (সত্ত্বাকে) বিক্রি করেছিল আল্লাহ
(সুবহানাহু ওয়া তা'আলা)র
সন্তুষ্টির প্রত্যাশায়। যেমন:
মুত্তাফাকুন আলাইহি হাদীসে এসেছে এবং
জাবির (রা) বর্ণিত যে:
قَالَ رَجُلٌ
لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ أُحُدٍ أَرَأَيْتَ إِنْ
قُتِلْتُ فَأَيْنَ أَنَا قَالَ فِي الْجَنَّةِ فَأَلْقَى تَمَرَاتٍ فِي يَدِهِ
ثُمَّ قَاتَلَ حَتَّى قُتِلَ
এক ব্যক্তি (উহুদ যুদ্ধের দিন)
রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বললেন, আপনি
কী মনে করেন, আমি যদি শহীদ হয়ে যাই তাহলে আমি কোথায়
অবস্থান করবো? তিনি বললেন, জান্নাতে। তারপর উক্ত ব্যক্তি হাতের
খেজুরগুলো ছুড়ে ফেললেন, এরপর
তিনি লড়াই করলেন। অবশেষে তিনি শহীদ হয়ে গেলেন।
মুসলিম বর্ণিত আনাস (রা) এর হাদীসে
এসেছে:
فَانْطَلَقَ
رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- وَأَصْحَابُهُ حَتَّى سَبَقُوا
الْمُشْرِكِينَ إِلَى بَدْرٍ وَجَاءَ الْمُشْرِكُونَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى
الله عليه وسلم- « لاَ يُقَدِّمَنَّ أَحَدٌ مِنْكُمْ إِلَى شَىْءٍ حَتَّى أَكُونَ
أَنَا دُونَهُ ». فَدَنَا الْمُشْرِكُونَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه
وسلم- « قُومُوا إِلَى جَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَوَاتُ وَالأَرْضُ ». قَالَ
يَقُولُ عُمَيْرُ بْنُ الْحُمَامِ الأَنْصَارِىُّ يَا رَسُولَ اللَّهِ جَنَّةٌ عَرْضُهَا
السَّمَوَاتُ وَالأَرْضُ قَالَ « نَعَمْ ». قَالَ بَخٍ بَخٍ. فَقَالَ رَسُولُ
اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « مَا يَحْمِلُكَ عَلَى قَوْلِكَ بَخٍ بَخٍ ». قَالَ
لاَ وَاللَّهِ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِلاَّ رَجَاءَةَ أَنْ أَكُونَ مِنْ أَهْلِهَا.
قَالَ « فَإِنَّكَ مِنْ أَهْلِهَا ». فَأَخْرَجَ تَمَرَاتٍ مِنْ قَرْنِهِ فَجَعَلَ
يَأْكُلُ مِنْهُنَّ ثُمَّ قَالَ لَئِنْ أَنَا حَيِيتُ حَتَّى آكُلَ تَمَرَاتِى
هَذِهِ إِنَّهَا لَحَيَاةٌ طَوِيلَةٌ - قَالَ - فَرَمَى بِمَا كَانَ مَعَهُ مِنَ
التَّمْرِ. ثُمَّ قَاتَلَهُمْ حَتَّى قُتِلَ
রাসূলুল্লাহ (সা) ও তাঁর সাহাবীগণ
বদরের দিকে রওয়ানা দিলেন এবং (মক্কার) মুশরিকদের আগেই সেখানে পৌছে গেলেন। যখন
মুশরিকরাও সেখানে এসে পৌছল রাসূলুল্লাহ (সা) (মুসলিমদের) বললেন: "আমার আগে
তোমাদের কেউ যেন সামনে অগ্রসর না হয়।" মুশরিকরা (আমাদের দিকে) অগ্রসর হল এবং
রাসূলুল্লাহ (সা) (আমাদের) বললেন: "জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য ওঠো, যার বিস্তৃতি আসমান ও জমীন
পর্যন্ত।" উমাইর ইবনে হাম্মাম আনসারী বলল, হে আল্লাহর রাসূল! জান্নাত কি আসমান ও জমীন পর্যন্ত প্রশস্ত? তিনি বললেন, হ্যাঁ। একথা শুনে সে আনন্দে উৎফুল্ল
হয়ে বলে উঠল: বাহ,
বাহ!
রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, কী
তোমাকে বাহ-বাহ বলতে উদ্ধুদ্ধ করছে? সে
বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আল্লাহর শপথ! আর কিছুই নয়, কেবল এই জিনিস যে, আমিও তার বাসিন্দা হব। তিনি বললেন:
"নিশ্চয়ই তুমি (জান্নাত) এর অধিবাসীদের অন্তুর্ভূক্ত।" অতঃপর সে তার থলি
হতে খেজুর বের করে খেতে লাগল। সে বলতে লাগল, যদি আমি আমার এইসব খেজুর খাওয়া পর্যন্ত জীবিত থাকি তবে তা হবে একটা
দীর্ঘজীবন। (রাবী বলেন, এ
কথা বলে) সে তার সব খেজুর ফেলে দিল এবং কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে করতে শহীদ
হয়ে গেল।
মুত্তাফাকুন আলাইহি হাদীসে এসেছে এবং আনাস
(রা) বর্ণিত যে:
غَابَ عَمِّي
أَنَسُ بْنُ النَّضْرِ عَنْ قِتَالِ بَدْرٍ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ غِبْتُ
عَنْ أَوَّلِ قِتَالٍ قَاتَلْتَ الْمُشْرِكِينَ لَئِنْ اللَّهُ أَشْهَدَنِي
قِتَالَ الْمُشْرِكِينَ لَيَرَيَنَّ اللَّهُ مَا أَصْنَعُ فَلَمَّا كَانَ يَوْمُ
أُحُدٍ وَانْكَشَفَ الْمُسْلِمُونَ قَالَ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعْتَذِرُ إِلَيْكَ
مِمَّا صَنَعَ هَؤُلَاءِ يَعْنِي أَصْحَابَهُ وَأَبْرَأُ إِلَيْكَ مِمَّا صَنَعَ
هَؤُلَاءِ يَعْنِي الْمُشْرِكِينَ ثُمَّ تَقَدَّمَ فَاسْتَقْبَلَهُ سَعْدُ بْنُ
مُعَاذٍ فَقَالَ يَا سَعْدُ بْنَ مُعَاذٍ الْجَنَّةَ وَرَبِّ النَّضْرِ إِنِّي
أَجِدُ رِيحَهَا مِنْ دُونِ أُحُدٍ قَالَ سَعْدٌ فَمَا اسْتَطَعْتُ يَا رَسُولَ
اللَّهِ مَا صَنَعَ قَالَ أَنَسٌ فَوَجَدْنَا بِهِ بِضْعًا وَثَمَانِينَ ضَرْبَةً
بِالسَّيْفِ أَوْ طَعْنَةً بِرُمْحٍ أَوْ رَمْيَةً بِسَهْمٍ وَوَجَدْنَاهُ قَدْ
قُتِلَ وَقَدْ مَثَّلَ بِهِ الْمُشْرِكُونَ فَمَا عَرَفَهُ أَحَدٌ إِلَّا أُخْتُهُ
بِبَنَانِهِ قَالَ أَنَسٌ كُنَّا نُرَى أَوْ نَظُنُّ أَنَّ هَذِهِ الْآيَةَ
نَزَلَتْ فِيهِ وَفِي أَشْبَاهِهِ {مِنْ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا
عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ}
আমার চাচা আনাস ইবনে নযর (রা) বদরের
যুদ্ধের সময় অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, মুশরিকদের
সাথে আপনি প্রথম যে যুদ্ধ করেছেন, আমি
সে সময় অনুপস্থিত ছিলাম। আল্লাহ যদি আমাকে মুশরিকদের বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধে শরীক
হওয়ার সুযোগ দেন,
তাহলে অবশ্যই
আল্লাহ দেখতে পাবেন যে, আমি
কী করি।' তারপর উহুদের যুদ্ধে মুসলিমরা ছত্রভঙ্গ
হয়ে পড়লে আনাস ইবনে নযর (রা) বলেন, হে
আল্লাহ! এরা (অর্থাৎ তার সঙ্গীগণ) যা করেছে, তার ব্যাপারে আপনার কাছে ওজর পেশ করছি এবং তারা অর্থাৎ মুশরিকরা যা
করেছে তা থেকে আমি নিজেকে সম্পর্কহীন বলে ঘোষণা করছি। তারপর তিনি এগিয়ে গেলেন এবং
সাদ ইবনে মু'আয-এর সাথে তার সাক্ষাৎ হলো। তিনি
বললেন, 'জান্নাত', হে সা'দ
ইবনে মু'আয, নযরের রবের কসম, উহুদের
দিক থেকে আমি এর সুগন্ধ পাচ্ছি। সা'দ
(রা) বলেন, আল্লাহর রাসূল, তিনি যা করেছেন, আমি তা করতে পারিনি। আনাস (রা) বলেন, আমরা তাকে এমতবস্থায় পেয়েছি যে, তার দেহে আশিটিরও অধিক তলোয়ার, বর্শা ও তীরের জখম রয়েছে। আমরা তাকে
নিহত অবস্থায় পেলাম। মুশরিকরা তার দেহ বিকৃত করে ফেলেছিল। তার বোন ছাড়া কেউ তাকে
চিনতে পারেনি এবং বোন তার আঙ্গুলের ডগা দেখে চিনতে পেরেছিল। আনাস (রা) বলেন, আমরা অভিমত পোষণ করতাম বা ধারণা করতাম
যে, কুরআনের এই আয়াতটি, (মুমিনদের মধ্যে কিছু পুরুষ আল্লাহর
সাথে তাদের কৃত ওয়াদা র্পূণ করেছে) তার ও তার মত মুমিনদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে।
আবু সারূআহ (রা) হতে বুখারী বর্ণনা
করেন:
صَلَّيْتُ وَرَاءَ
النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْمَدِينَةِ الْعَصْرَ فَسَلَّمَ
ثُمَّ قَامَ مُسْرِعًا فَتَخَطَّى رِقَابَ النَّاسِ إِلَى بَعْضِ حُجَرِ نِسَائِهِ
فَفَزِعَ النَّاسُ مِنْ سُرْعَتِهِ فَخَرَجَ عَلَيْهِمْ فَرَأَى أَنَّهُمْ
عَجِبُوا مِنْ سُرْعَتِهِ فَقَالَ ذَكَرْتُ شَيْئًا مِنْ تِبْرٍ عِنْدَنَا
فَكَرِهْتُ أَنْ يَحْبِسَنِي فَأَمَرْتُ بِقِسْمَتِهِ
আমি মদীনায় নবী (সা)-এর পিছনে আসরের
সালাত আদায় করলাম। সালাম ফিরানোর পর তিনি তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে যান এবং দ্রুত
মুসল্লীগণকে ডিঙিয়ে তাঁর সহর্ধর্মিনীগণের কোন একজনের কক্ষে গেলেন। তাঁর এই
দ্রুততায় মুসল্লিগণ ঘাবড়িয়ে গেলেন। নবী (সা) তাদের কাছে ফিরে এলেন এবং দেখলেন যে, তাঁর দ্রুততার কারণে তাঁরা বিস্মিত হয়ে
পড়েছেন। তাই তিনি বললেন: আমাদের কাছে রক্ষিত কিছু স্বর্ণের কথা মনে পড়ে যায়। তা
আমার প্রতিবন্ধক হোক, সেটা
আমার অপসন্দ হল,
তাই তা বন্টন
করার নির্দেশ দিয়ে দিলাম।
আরেক বর্ণনায় আছে,
كُنْتُ
خَلَّفْتُ فِي الْبَيْتِ تِبْرًا مِنْ الصَّدَقَةِ فَكَرِهْتُ أَنْ أُبَيِّتَهُ
فَقَسَمْتُهُ
ঘরে একখণ্ড স্বর্ণ রেখে এসেছিলাম
কিন্তু রাত পর্যন্ত তা ঘরে থাকা আমার অপসন্দ হল, কাজেই তা বন্টন করে দিয়ে এলাম।
এই ঘটনা দিকনির্দেশনা দেয় যে, মুসলিমদের আল্লাহ কর্তৃক অর্পিত
অবশ্য-পালনীয় কাজসমূহ পালন করার ব্যাপারে দ্রুত অগ্রসর হওয়া উচিত।
আল-বুখারী আল-বাররা’ (রা) হতে বর্ণনা করেন যিনি বলেন,
لَمَّا قَدِمَ
رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ صَلَّى نَحْوَ
بَيْتِ الْمَقْدِسِ سِتَّةَ عَشَرَ أَوْ سَبْعَةَ عَشَرَ شَهْرًا وَكَانَ يُحِبُّ
أَنْ يُوَجَّهَ إِلَى الْكَعْبَةِ فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى
যখন রাসূলুল্লাহ (সা) মদীনায় আগমন করেন, তখন ষোল অথবা সতের মাস বায়তুল মুকাদ্দাসের
দিকে মুখ করে সালাত আদায় করলেন। আর তিনি কা’বার দিকে মুখ করে দাড়াতে খুবই আগ্রহী ছিলেন। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা নাযিল করলেন:
قَدْ نَرَى
تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاءِ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا
নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বার বার আকাশের
দিকে তাকাতে দেখি। অতএব, অবশ্যই
আমি আপনাকে সে কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব যাকে আপনি পছন্দ করেন... [বাকারা: ১৪৪]
فَوُجِّهَ
نَحْوَ الْكَعْبَةِ وَصَلَّى مَعَهُ رَجُلٌ الْعَصْرَ ثُمَّ خَرَجَ فَمَرَّ عَلَى
قَوْمٍ مِنْ الْأَنْصَارِ فَقَالَ هُوَ يَشْهَدُ أَنَّهُ صَلَّى مَعَ النَّبِيِّ
صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنَّهُ قَدْ وُجِّهَ إِلَى الْكَعْبَةِ
فَانْحَرَفُوا وَهُمْ رُكُوعٌ فِي صَلَاةِ الْعَصْرِ
সুতরাং যখন তাকে কা’বার অভিমুখী করে দেয়া হয়, একজন ব্যক্তি তার সাথে আসর সালাত আদায়
করছিল। অতঃপর (সালাত শেষে) সে বেরিয়ে যায় এবং (আসরের সালাতরত) আনসারদের একটি দলের
পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। সে বলল, সে
সাক্ষ্য দিচ্ছে যে সে নবী (সা) এর সাথে সালাত আদায় করেছে এবং তাকে (সালাতে) কা’বার অভিমুখী করা হয়েছে। এবং (এ কথা
শুনে) তারা সকলে আসরের সালাতে কা’বা
অভিমুখী হয়ে গেল রুকুরত অবস্থায়।
আল-বুখারী ইবন আবি আওফা (রা) হতে
বর্ণনা করেন যিনি বলেন:
أَصَابَتْنَا
مَجَاعَةٌ لَيَالِيَ خَيْبَرَ فَلَمَّا كَانَ يَوْمُ خَيْبَرَ وَقَعْنَا فِي
الْحُمُرِ الْأَهْلِيَّةِ فَانْتَحَرْنَاهَا فَلَمَّا غَلَتِ الْقُدُورُ نَادَى
مُنَادِي رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَكْفِئُوا
الْقُدُورَ فَلَا تَطْعَمُوا مِنْ لُحُومِ الْحُمُرِ شَيْئًا قَالَ عَبْدُ اللَّهِ
فَقُلْنَا إِنَّمَا نَهَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
لِأَنَّهَا لَمْ تُخَمَّسْ قَالَ وَقَالَ آخَرُونَ حَرَّمَهَا أَلْبَتَّةَ
وَسَأَلْتُ سَعِيدَ بْنَ جُبَيْرٍ فَقَالَ حَرَّمَهَا أَلْبَتَّةَ
খাইবার যুদ্ধের সময় আমরা ক্ষুদায় কষ্ট
পাচ্ছিলাম। খাইবার বিজয়ের দিন আমরা পালিত গাধার দিকে এগিয়ে গেলাম এবং তা যবেহ
করলাম। যখন তা হাড়িতে বলক আসছিল তখন রাসূলুল্লাহ (সা)-এর ঘোষণা দানকারী ঘোষনা দিল:
তোমরা হাড়িগুলো উপুর করে ফেল। গাধার গোশত থেকে তোমরা কিছুই খাবে না। আবদুল্লাহ
ইবন আবু আওফা (রা) বলেন, আমরা
কেউ কেউ বললাম, রাসূলুল্লাহ (সা) এজন্য নিষেধ করেছেন, যেহেতু তা থেকে খুমুস বের করা হয়নি।
রাবী বলেন, আর অন্যরা বললেন, বরং তিনি এটাকে নিশ্চিতভাবে হারাম
করেছেন। (শায়বানী বলেন) আমি এ ব্যাপারে, সাঈদ ইবন জুবাইর (রা) কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, নিশ্চিতভাবে তিনি তা হারাম করেছেন।
আল-বুখারী আনাস বিন মালিক (রা) হতে
বর্ণনা করেন যিনি বলেন:
كُنْتُ
أَسْقِي أَبَا طَلْحَةَ الْأَنْصَارِيَّ وَأَبَا عُبَيْدَةَ بْنَ الْجَرَّاحِ
وَأُبَيَّ بْنَ كَعْبٍ شَرَابًا مِنْ فَضِيخٍ وَهُوَ تَمْرٌ فَجَاءَهُمْ آتٍ
فَقَالَ إِنَّ الْخَمْرَ قَدْ حُرِّمَتْ فَقَالَ أَبُو طَلْحَةَ يَا أَنَسُ قُمْ
إِلَى هَذِهِ الْجِرَارِ فَاكْسِرْهَا قَالَ أَنَسٌ فَقُمْتُ إِلَى مِهْرَاسٍ
لَنَا فَضَرَبْتُهَا بِأَسْفَلِهِ حَتَّى انْكَسَرَتْ
আমি আবু তালহা আনসারী, আবু উবায়দা ইবন জাররাহ ও উবাই ইবন কা’বকে আধাপাকা খেজুরের তৈরি পানীয় (মদ)
পরিবেশন করছিলাম। তখন তাদের কাছে একজন আগুন্তুক এসে বলল, নিঃসন্দেহে মদ হারাম করে দেওয়া হয়েছে।
আবু তালহা (রা) বলেন, আমি
উঠে গিয়ে আমাদের ঘটি দিয়ে তার তলায় আঘাত করলাম আর তা ভেঙ্গে গেল।
আল-বুখারী আয়েশা (রা) হতে বর্ণনা করেন
যিনি বলেন:
وَبَلَغْنَا
أَنَّهُ لَمَّا أَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى أَنْ يَرُدُّوا إِلَى الْمُشْرِكِينَ
مَا أَنْفَقُوا عَلَى مَنْ هَاجَرَ مِنْ أَزْوَاجِهِمْ وَحَكَمَ عَلَى
الْمُسْلِمِينَ أَنْ لَا يُمَسِّكُوا بِعِصَمِ الْكَوَافِرِ أَنَّ عُمَرَ طَلَّقَ
امْرَأَتَيْنِ
আমাদের বলা হয়েছে যে, যখন আল্লাহ তা’আলা নাযিল করেন, মুসলিমগণ যেন মুশরিক স্বামীদের সেসব
খরচ আদায় করে দেয় যা তারা তাদের হিজরতকারী স্ত্রীদের জন্য ব্যয় করেছে এবং
মুসলিমদের নির্দেশ দেন যেন তারা কাফির স্ত্রীদের আটকিয়ে না রাখে। তখন উমর (রা)
তাঁর দুই স্ত্রী (কুরায়বা বিনতে আবু উমাইয়্যা ও বিনতে জারওয়াল খুজায়ী)কে তালাক
দিয়ে দেন।
আল-বুখারী আয়েশা (রা) হতে বর্ণনা করেন
যিনি বলেন:
يَرْحَمُ
اللَّهُ نِسَاءَ الْمُهَاجِرَاتِ الْأُوَلَ لَمَّا أَنْزَلَ اللَّهُ {
وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ } شَقَّقْنَ مُرُوطَهُنَّ
فَاخْتَمَرْنَ بِهَا
আল্লাহ মুহাজির নারীদের উপর রহম করুন।
যখন আল্লাহ নাযিল করলেন {তারা
যেন তাদের মাথর ওড়না দিয়ে তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ ঢেকে রাখে} তারা তাদের চাদর/শাল ছিড়ে নিজেদেরকে
তার দ্বারা ঢেকে নিয়েছিল।
আবু দাউদ, সাফিয়াহ বিনতে শাইবাহ হতে, যিনি আয়েশা (রা) হতে বর্ণনা করেছেন:
أَنَّهَا
ذَكَرَتْ نِسَاءَ الأَنْصَارِ فَأَثْنَتْ عَلَيْهِنَّ وَقَالَتْ لَهُنَّ
مَعْرُوفًا وَقَالَتْ لَمَّا نَزَلَتْ سُورَةُ النُّورِ عَمَدْنَ إِلَى حُجُورٍ
فَشَقَقْنَهُنَّ فَاتَّخَذْنَهُ خُمُرًا
তিনি (আয়েশা) আনসারী নারীদের কথা স্মরণ
করলেন এবং তাদের প্রশংসা করলেন এবং তাদের ব্যপারে ভালো কথা বললেন। তারপর তিনি
বললেন, যখন (পর্দার আয়াতসহ) সূরা নূর নাযিল হয়, তখন তারা (আনসারী নারীগণ) তাদের পর্দার
কাপড় নিয়ে তা ছিড়ে তা দিয়ে মাথা ঢাকার কাপড় বানিয়ে নেয়।
ইবন ইসহাক বলেন:
... وقَدِمَ على رسول الله - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ - الأشعث بن قيس في وفد كِنْدة. فحدثني الزهري أنه قدم في ثمانين راكباً
من كندة، فدخلوا على رسول الله - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - مسجدَه، قد
رجَّلوا جُمَمَهم (جمع جُمَّة وهي شعر الرأس الكثيف) وتكحَّلوا، عليهم جُبَبُ
الحِبَرَة قد كفَّفوها بالحرير. فلما دَخَلُوا على رسول الله - صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - قال لهم: أَلَمْ تسْلِمُوا؟ قالوا: بلى. قال: فَما بالُ هذا
الحَرِير في أَعْناقِكُم؟ قال: فشَـقُّوه منها فألقَوْه.
রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কাছে কিন্দা
গোত্রের প্রতিনিধির অংশ হিসেবে আল-আশআছ বিন কায়েস এসেছিলেন। আয-যুহরী আমাকে
জানিয়েছেন তিনি কিন্দা থেকে ৮০ জন ঘোড়সওয়ারীসহ এসেছিলেন। তারা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর
মসজিদে প্রবেশ করে তাঁর নিকট যান। তাদের চুল ছিল লম্বা এবং চোখে ছিল কাজল। তারা
রেশমের পাঁড়যুক্ত জুব্বা পড়েছিলেন। যখন তারা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সামনে উপস্থিত
হলেন, তিনি (সা) তাদের বললেন, তোমরা কি ইসলাম কবুল করনি? তারা বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। তিনি (সা) জিজ্ঞেস করলেন, তবে,
তোমাদের গলায়
এইসব রেশম (কাপড়) কী কারণে? তিনি
বলেন, অতঃপর তারা তাদের গলা হতে তা (রেশম
বস্ত্রাদি) ছিড়ে ফেলে ও তা ছুড়ে ফেলে দেয়।
ইবন জারীর আবু বুরাইদা হতে, যিনি তার পিতা হতে বর্ণনা করেন:
بَيْنا نَحْنُ
قُعُود على شَراب لَّنا وَنَحْنُ على رملة وَنَحْنُ ثَلاثَة أَوْ أَرْبَعَة،
وَعِنْدَنا باطية لَّنا وَنَحْنُ نَشْـَرب الخَـمْـر حِـلاًّ إِذ قُـمْـتُ حَتى
آتي رَسُولَ الله - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - فَأسلم عَلَيْهِ إِذ نـزل
تَحْرِيم الخَمْر ]يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ
وَالْمَيْسِرُ [إِلى آخِر الآيتَيْن ]فَهَلْ أَنْتُمْ مُنتَهُونَ [فَجِـئْـتُ إلى
أَصْـحـابي فَقَرَأتُها عَلَيْهِم إلى قَوْلِه ]فَهَلْ أَنْتُمْ مُنتَهُونَ [قال:
وَبَعْضَ القَوْم شَربته في يَدَه قَدْ شرب بَعْضها وَبقي بَعْضَ في الإناء، فَقال
بالإناء تَحْتَ شفته العليا، كَما يفْعَل الحجّام، ثُمَّ صبّوا ما في باطيتهم
فَقالوا: اِنْتَهَيْنا رَبَّنا
একদা আমরা আমাদের পানীয় (পান করা)র
জন্য বসে ছিলাম এবং আমরা সংখ্যায় তিন বা চারজন ছিলাম। আমাদের কাছে একটি জগ ছিল এবং
আমরা মদ হালাল (থাকা অবস্থায় তা) পান করছিলাম। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট
যাই তাকে সালাম জানাই। সে সময় মদকে হারাম ঘোষণা করে কুরআন নাযিল হচ্ছিল: (যাতে বলা
হচ্ছিল) {হে ঈমানদারগণ, নিশ্চয়ই মদ ও জুয়া} থেকে আয়াতদ্বয়ের শেষ পর্যন্ত {তবে কি তোমরা বিরত হবে না} এরপর আমি আমার সঙ্গীদের নিকট এসে তাদের
{তবে কি তোমরা বিরত হবে না} পর্যন্ত তেলাওয়াত করে শোনালাম। তিনি
বলেন: তাদের কিছু লোকের হাতে পানীয় ছিল যার কিছু অংশ সে পান করেছে কিছু পাত্রে
অবশিষ্ট রয়েছে। সে তার পাত্রকে তার উপরের ঠোটের নিচু অংশে উচু করে তুলে ধরল যেভাবে
হাজ্জামরা করে থাকেন। অতঃপর তারা তাদের জগ হতে সব ঢেলে ফেলে দিলেন এবং বলতে
লাগলেন: আমরা বিরত হয়েছি আমাদের পালনকর্তা।
হানজালা বিন আবি আমির (রা) যাকে
ফেরেশতাগণ গোসল করিয়েছিলেন, তিনি
উহুদ যুদ্ধে যাবার আহ্বান শোনার সাথে সাথেই অতিদ্রুত সাড়া দিয়েছিলেন। তিনি উহুদের
দিনে শহীদ হয়েছিলেন। ইবন ইসহাক বলেন, রাসূলুল্লাহ
(সা) বললেন,
إِنَّ
صاحِبَكُم لَتغسلَهُ المَلائِكَة فاسْأَلُوا أَهْلَهُ ما شأنُه؟
তোমাদের সাথীকে ফেরেশতারা গোসল করিয়েছে, তার পরিবারকে জিজ্ঞেস কর তার অবস্থা
সম্পর্কে? তার স্ত্রী ঐ রাতে নববধু ছিল। (তাকে
যখন জিজ্ঞেস করা হলো) সে বলল, তিনি
যখন (যুদ্ধের) আহ্বানে সাড়া দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তিনি অপবিত্র অবস্থায়
ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন,
كَذَلِكَ
غَسَلَتْهُ المَلائِكَة
এ কারণেই ফেরেশতারা তাকে গোসল
করিয়েছিল।
ইমাম আহমদ রাফি’ বিন খাদীজ (রা) হতে বর্ণনা করেন যিনি
বলেন:
حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ
حَدَّثَنَا أَيُّوبُ عَنْ يَعْلَى بْنِ حَكِيمٍ عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ يَسَارٍ
عَنْ رَافِعِ بْنِ خَدِيجٍ قَالَ كُنَّا نُحَاقِلُ بِالْأَرْضِ عَلَى عَهْدِ
رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَنُكْرِيهَا بِالثُّلُثِ
وَالرُّبُعِ وَالطَّعَامِ الْمُسَمَّى فَجَاءَنَا ذَاتَ يَوْمٍ رَجُلٌ مِنْ
عُمُومَتِي فَقَالَ نَهَانَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
عَنْ أَمْرٍ كَانَ لَنَا نَافِعًا وَطَاعَةُ اللَّهِ وَرَسُولِهِ أَنْفَعُ لَنَا
نَهَانَا أَنْ نُحَاقِلَ بِالْأَرْضِ فَنُكْرِيَهَا عَلَى الثُّلُثِ وَالرُّبُعِ
وَالطَّعَامِ الْمُسَمَّى وَأَمَرَ رَبَّ الْأَرْضِ أَنْ يَزْرَعَهَا أَوْ
يُزْرِعَهَا وَكَرِهَ كِرَاءَهَا وَمَا سِوَى ذَلِكَ
রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সময় আমরা জমি আবাদ
করতাম। আমরা এই জমি এক তৃতীয়াংশ, এক
চতুর্থাংশ অথবা একটি নির্দিষ্ট পরিমান শস্যের বিনিময়ে ইজারা দিতাম। একদিন আমার
বাবার দিকের আত্মীয় আমার কাছে এসে বললেন "রাসূলুল্লাহ আমাদের এমন কিছু করতে
নিষেধ করেছেন যা আমাদের জন্য লাভজনক, (কিন্তু
হারাম) বরং আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্যই আমাদের জন্য বেশি লাভজনক। তিনি (সা)
আমাদের এক তৃতীয়াংশ, এক
চতুর্থাংশ অথবা একটি নির্দিষ্ট পরিমান শস্যের বিনিময়ে ইজারা দিতে নিষেধ করেন এবং
তিনি জমির মালিকদের আদেশ দেন তারা যেন নিজেরা জমি চাষ করে অথবা অন্যদের দিয়ে দেয়
যাতে তারা তাদের নিজেদের জন্য তা চাষ করতে পারে। তিনি (সা) ইজারা দেয়া বা এ ধরনের
কাজকে অপছন্দ করতেন।
উৎসঃ