সোমবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১২

আল্লাহর অস্তিত্বের বুদ্ধিবৃত্তিক প্রমাণ


প্রতিটি জিনিসের পেছনে একজন সৃষ্টিকর্তা রয়েছেন - এ সিদ্ধান্ত পৌঁছানোর কারণ হচ্ছে আমাদের অনুধাবনযোগ্য প্রতিটি বিষয়, যেমন: মানুষ, জীবন ও মহাবিশ্ব ইত্যাদি সীমাবদ্ধ, দুর্বল, অসম্পূর্ণ এবং তাদের অস্তিত্বের জন্য তারা অপরের উপর নির্ভরশীল। মানুষ সীমাবদ্ধ, কারণ সকল ক্ষেত্রেই সে একটি সীমার মধ্যে বেড়ে ওঠে এবং কখনোই এ সীমাবদ্ধতার বাইরে যেতে পারে না। জীবন সীমাবদ্ধ, কারণ আমরা অনুভব করতে পারি যে এটি স্বতন্ত্র প্রাণীসত্তার মধ্যেই প্রকাশিত হয় এবং তার মধ্যেই বিলুপ্ত হয়। কাজেই এটিও সীমাবদ্ধ।

মহাবিশ্বও সীমাবদ্ধ, কারণ এটি কতগুলো মহাজাগতিক বস্তুর সমষ্টিমাত্র। প্রতিটি মহাজাগতিক বস্তু সীমাবদ্ধ এবং দৃশ্যতই অনেকগুলো সীমাবদ্ধ বস্তুর সমষ্টিও সীমাবদ্ধ। কাজেই নিশ্চিতভাবেই মানুষ, জীবন ও মহাবিশ্ব সীমাবদ্ধ। যখন আমরা সীমাবদ্ধ বস্তুগুলো নিয়ে চিন্তা করি, তখন আমরা দেখতে পাই, এগুলো কোনোটিই আজালী (চিরন্তন- আদি, অন্তহীন ও অসীম) নয়। নইলে এগুলোর কোনোটিই সীমাবদ্ধ হত না। আর একারণেই অবশ্যই একজন সৃষ্টিকর্তা রয়েছেন যিনি মানুষ, জীবন ও মহাবিশ্বসহ সকল কিছুকে সীমা প্রদান করেছেন, এগুলোকে সৃষ্টি করেছেন।

এই সৃষ্টিকর্তাকে হয় কেউ সৃষ্টি করেছে, অথবা তিনি নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করেছেন, অথবা তিনি চিরন্তন, আদি অন্তহীন (আজালী) এবং যার অস্তিত্ব অপরিহার্য। তাকে কেউ সৃষ্টি করেছে এ ধারণাটি চরম মিথ্যা, কারণ তাহলে তিনি সীমাবদ্ধ হয়ে যান। আর কেউ যদি বলেন, তিনি নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করেছেন, তবে এ যুক্তিটিও সম্পূর্ণ অসার, কারণ স্বাভাবিক যুক্তির বিচারে তখন তাকে সৃষ্টিকর্তা হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। এধরনের যুক্তির অন্তর্নিহিত অর্থ হচ্ছে, তিনি সৃষ্টি হবার সময় নিজেকেই সৃষ্টি করছিলেন! এরূপ ধারণা অসম্ভব ও অলীক কল্পনামাত্র। কাজেই সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই আজালী (চিরন্তন- আদি, অন্তহীন ও অসীম)। তিনিই মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা।

ন্যূনতম চিন্তা-ভাবনার অধিকারী যে কেউ তার পারিপার্শ্বিকতা থেকে অনুধাবন করতে পারেন যে, সবকিছুর পিছনে একজন সৃষ্টিকর্তা রয়েছেন। কারণ সবকিছু থেকে যে সত্যটি বের হয়ে আসে তা হচ্ছে এগুলোর প্রত্যেকটিই অসম্পূর্ণ, দুর্বল ও নির্ভরশীল। কাজেই তারা অবশ্যই সৃষ্ট। বস্তুত মানুষ, জীবন বা মহাবিশ্বের যে কোনো বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দিলেই কোনো ব্যক্তি সহজে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন যে, এগুলোর পিছনে একজন সৃষ্টিকর্তা ও একজন সংগঠক রয়েছেন। মহাবিশ্বের যে কোনো বস্তুর প্রতি লক্ষ্য করলে, জীবনের যে কোনো দিকের প্রতি গভীর মনোযোগ দিলে, কিংবা মানুষের যে কোনো বিষয় অনুধাবন করলে প্রতিটি বিষয়ই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালার অস্তিত্ব সম্পর্কে সুনিশ্চিত নিদর্শন বহন করে। মহাগ্রন্থ কুরআনে এ বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়েছে এবং মানুষকে তার পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছতে বলা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় মানুষ লক্ষ্য করে কীভাবে একটি বস্তু অপর বস্তুর উপর নির্ভরশীল এবং সুনিশ্চিত সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, নিশ্চয়ই আল্লাহর অস্তিত্ব সত্য - যিনি সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা। কুরআনে বহু আয়াতে এ ধরনের অসংখ্য উদাহরণ লক্ষ্য করা যায়। সুরা আলি ইমরানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা বলেছেন,

"নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিবা-রাত্রির পরিবর্তনে নিদর্শন রয়েছে চিন্তাশীল ব্যক্তিদের জন্য।" (সুরা আলি ইমরান: ১৯০)

এবং তিনি সুরা আর-রুম-এ বলেছেন,

"এবং তার নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি, এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। নিশ্চয়ই এ সমস্ত কিছুর মধ্যে জ্ঞানী ব্যক্তিদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।" (সুরা আর-রুম, আয়াত ২২)

তিনি সুরা আল-গাশিয়াহতে বলেছেন,

"তবে কি তারা উটের প্রতি লক্ষ করে না যে, কীভাবে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে? এবং আকাশের প্রতি যে, কীভাবে তাকে ঊর্ধ্বে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে এবং পর্বতমালার প্রতি যে কীভাবে তাকে স্থাপন করা হয়েছে? এবং ভূ-পৃষ্ঠের প্রতি, কীভাবে তাকে বিস্তৃত করা হয়েছে? (সুরা আল-গাশিয়াহ, আয়াত ১৭-২০)

এবং সুরা আত-ত্বরিকে বলেছেন,

"সুতরাং মানুষ লক্ষ্য করুক তাকে কি হতে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি থেকে যা নির্গত হয় মেরুদণ্ড ও পাঁজরের মধ্য থেকে।" (সুরা আত-ত্বরিক, আয়াত ৫-৭)

এবং সুরা আল-বাকারাহতে বলেছেন,

"নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের পরিবর্তনে, যা মানুষের কল্যাণ করে তা-সহ সমুদ্রে বিচরণশীল নৌযানসমূহে, আল্লাহ আকাশ থেকে যে বারিবর্ষণে ধরিত্রীকে পুনর্জীবিত করেন তাতে এবং তার মধ্যে যাবতীয় জীবজন্তুর বিস্তারণে, বায়ুর দিক পরিবর্তনে, আকশে ও পৃথিবীর মধ্যে নিয়ন্ত্রিত মেঘমালাতে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে।" (সুরা আল-বাকারাহ, আয়াত ১৬৪)

এরূপ আরও অসংখ্য আয়াত রয়েছে যেখানে মানুষকে তার পারিপার্শ্বিকতার বিভিন্ন বস্তু ও তাদের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার আহবান জানানো হয়েছে এবং স্রষ্টার অস্তিত্ব সম্পর্কে বুদ্ধিবৃত্তিক সিদ্ধান্তে উপনীত হবার কথা বলা হয়েছে। এভাবেই সুনির্দিষ্ট বিচার-বিবেচনা ও স্পষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে আল্লাহর উপর সুদৃঢ় বিশ্বাস স্থাপিত হয়।

মূলঃ ইসলামের ফিরে আসা

তফসীর - সূরা বাকারাহ: আয়াত ১৫১


فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُوا لِي وَلَا تَكْفُرُونِ
  
সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ রাখবো এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; অকৃতজ্ঞ হয়ো না। [বাকারাহ: ১৫১]
  
فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে হাসান আল-বসরী বলেন, অর্থাৎ আমি তোমাদের উপর যা ফরজ করেছি তা পালনের মাধ্যমে আমাকে স্মরণ কর, এর ফলে তোমাদের জন্য আমার উপর যা ওয়াজিব হয় তা পূরণের মাধ্যমে আমি তোমাদের স্মরণ করব। অন্য বর্ণনায় আছে, আমার রহমতের মাধ্যমে স্মরণ করব।

فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ এর ব্যখ্যা প্রসঙ্গে ইবনু আব্বাস (রা) বলেন, তোমাদের তাকে স্মরণ করা তাকে তোমাদের স্মরণ করা হতে শ্রেয়।

সহীহ হাদীসে আছে, আল্লাহ তাআলা বলেন, আমাকে যে মনে মনে স্মরণ করে, আমিও তাকে মনে মনে স্মরণ করি। তেমনি আমাকে যে পরিপূর্ণভাবে স্মরণ করে, আমি তাকে তার চাইতেও অধিক পরিপূর্ণভাবে স্মরণ করি।

ইমাম আহমদ বলেন, আমাকে আবদুর রাজ্জাক, তাকে মুআম্মার কাতাদাহ হতে ও তিনি আনাস হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূল (সা) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আদম সন্তান! আমাকে যদি তুমি মনে মনে স্মরণ কর, আমিও তোমাকে মনে মনে স্মরণ করব। আর আমাকে যদি তুমি পরিপূর্ণভাবে স্মরণ কর, তাহলে আমি তোমাকে ফেরেশতা হতেও পরিপূর্ণভাবে স্মরণ করব। অথবা তিনি বলেন, তোমার চাইতে উত্তমভাবে স্মরন করব। যদি তুমি আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হও, তাহলে আমি তোমার দিকে এক হাত অগ্রসর হব। যদি তুমি আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হও তবে আমি তোমার দিকে এক গজ অগ্রসর হব। আর যদি তুমি আমার দিকে হেটে আস, আমি তোমার দিকে দৌড়িয়ে যাব।
   
হাদীসটির সনদ সহীহ। বুখারী শরীফে এটি কাতাদার সনদে উদ্ধৃত হয়েছে। ইমাম বুখারীকে কাতাদাহ বলেন- আল্লাহ অত্যন্ত মেহেরবান। তার পাক কালামে- وَاشْكُرُوا لِي وَلَا تَكْفُرُونِ অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তার কৃতজ্ঞতা আদায়ের নির্দেশ দিলেন এবং কৃতজ্ঞতার বিনিময়ে অধিক কল্যাণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন। যেমন, আল্লাহ বলেন:
     
وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ
      
যখন তোমাদের পালনকর্তা ঘোষণা করলেন যেযদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতবে তোমাদেরকে আরও দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর। [ইবরাহীম:৭]

শাইখ আতা আবু রিশতা (রহ) বলেন, (এই আয়াতে) আল্লাহ তার বান্দাদের আদেশ দিচ্ছেন জিহ্বা, হৃদয় ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা প্রত্যেক প্রকার স্মরণের মাধ্যমে (তাদের রব) সুবহানাহু (ওয়া তাআলা)কে স্মরণ করতে।

আবু জাফর ইবন জারীর আত-তাবারী (রহ) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, “অতপর আমাকে স্মরণ কর তোমাদের আমার আনুগত্যের মাধ্যমে আমি যা তোমাদের আদেশ করেছি ও যা নিষেধ করেছি তা হতে

ইমাম বাগাবী তার তাফসীরে বলেন, সাঈদ বিন জুবাইর (রহ) বলেছেন, আমাকে নিয়ামত ও প্রাচুর্যে স্মরণ কর, আমি তোমাদের কাঠিন্য ও পরীক্ষায় স্মরণ করব। এর ব্যখায় (নিম্নোক্ত আয়াতটি তুলে ধরেন):

فَلَوْلَا أَنَّهُ كَانَ مِنَ الْمُسَبِّحِينَ
لَلَبِثَ فِي بَطْنِهِ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ

যদি তিনি ইতিপূর্বে আল্লাহর তসবীহ পাঠকারীদের অন্তর্ভুক্ত না হতেন, তবে তাঁকে কেয়ামত দিবস পর্যন্ত মাছের পেটেই থাকতে হত। [সাফফাত: ১৪৩-১৪৪]


তথ্যসূত্র:

তাফসীর ইবন কাছীর
তাফসীর তাবারী, আবু জাফর ইবন জারীর আত-তাবারী
তাইসীর উল-উসূল ইলাত তাফসীর, শাইখ আতা আবু রিশতা
তাফসীর উল-বাগাবী, আবু মুহাম্মদ আল-হুসাইন ইবন মাসউদ আল-বাগাবী

মুক্তবাজারের কারণেই কি এশিয়ান টাইগারদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে?

(নিম্নোক্ত প্রবন্ধটি আদনান খান রচিত “Geopolitical Myths” বইটির বাংলা অনুবাদের একাংশ হতে গৃহীত)

১৯৬০ এবং ১৯৭০ এর দশকে দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গারপুর, হংকং এরং তাইওয়ানের ব্যাপক ও দ্রুত শিল্পায়নকে বুঝানোর জন্য 'টাইগার' অর্থনীতি শব্দটি ব্যবহার করা হয়। এই চার টাইগার অন্যান্য এশীয় অর্থনীতি-চীন এবং জাপানের সাথে অনেকক্ষেত্রে সাদৃশ্যপূর্ণ। যারা এশীয় ধাচের রপ্তানীমুখী অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথিকৃৎ। এই দেশসমূহ পশ্চিমা শিল্পোন্নত দেশগুলোকে লক্ষ্য করে পণ্য উৎপাদন শুরু করে এবং সরকারী নীতি গ্রহণের মাধ্যমে আভ্যন্তরীণ ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করে।

এ জাতিগুলোর দিকে ভালভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, তাদের উন্নয়ন ছিল সম্পূর্ণ কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত, সরকারী ভতুর্কি এবং রক্ষণশীল নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত।
 
১৯৬৫ সালে স্বাধীনতা লাভের পর সিঙ্গাপুর ছোট আভ্যন্তরীণ বাজার ও সম্পদের অপ্রতুলতা অনুভব করে। ফলশ্রুতিতে ১৯৬৮ সালে সিঙ্গাপুর ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট বোর্ড গঠন করে। এর দায়িত্ব ছিল সিঙ্গাপুরের উৎপাদিত পণ্যকে উৎসাহিত করবার জন্য অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়ন। সিঙ্গাপুরের প্রশাসন বেকারত্বকে কমিয়ে নিয়ে আসে, জীবনমান উন্নয়নের জন্য গণগৃহায়ন প্রকল্প চালু করে। সাথে সাথে ব্যবসাবান্ধব, বিদেশী বিনিয়োগ নির্ভর, রপ্তানীমুখী ব্যবসায়ী নীতি প্রণয়ন ও জাতীয় করপোরেশনগুলোতে সরাসরি সরকারী বিনিয়োগ করা হয়। সরকারী হস্তক্ষেপের কারণে সিঙ্গাপুরের অর্থনীতি অনেক উন্নত হয়, বিশেষত: ইলেকট্রনিক্স, কেমিক্যাল এবং সেবাশিল্পে। সিঙ্গাপুর সরকার তার অর্থনীতিকে তেমাসে-লিংকড্‌ কোম্পানীর (টি.এল.সি) দিকে পরিচালিত করতে থাকে। এই কোম্পানীসমূহের রয়েছে সার্বভৌম সম্পদের তহবিল। টি.এল.সি গুলো বিশেষত উৎপাদনখাতে কাজ করে এবং এরা বাণিজ্যিক সত্ত্বা হিসেবে পরিগণিত হয়। জিডিপির শতকরা ৬০ ভাগের অবদান ছিল এ কোম্পানীসমূহের।

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর তাইওয়ানের প্রথম নেতা কমিটঙের শাসনামলে ক্ষুদ্র দ্বীপ দেশটির উন্নয়ন শুরু হয়। তখন কিছু অর্থনৈতিক নীতি ও পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়। নতুন মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা প্রচুর অর্থনৈতিক সাহায্য উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করে। সরকার প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্থনীতিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে। কৃষিখাতের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদকে কাজে লাগানো হত শিল্পখাতে। শিল্পখাতকে উন্নয়ন করবার জন্য শস্য রপ্তানীর মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করা হত কলকারখানার মেশিনারী ক্রয়ের জন্য। সরকার আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে দেয়, বিদেশের সাথে ব্যবসাকে নিয়ন্ত্রন করে এবং দেশীয় শিল্পকে রক্ষার জন্য আমদানিকে নিরুৎসাহিত করে। ১৯৬০ এর মধ্যে তাইওয়ানের শিল্পসমূহ অনুধাবন করতে পারল ইতোমধ্যে আভ্যন্তরীণ বাজার সম্পৃক্ত হয়ে গেছে। তখন দেশটি অর্থনৈতিক নীতির মাধ্যমে রপ্তানি বাড়ানোর দিকে মনোনিবেশ করে। চিয়াং চিং কুয়ু'র ১০ টি প্রধান অবকাঠামোগত প্রকল্প এবং বিশ্বের সর্বপ্রথম রপ্তানী প্রক্রিয়াকরন অঞ্চলের মাধ্যমে তাইওয়ানে ব্যাপক শিল্পায়নের ভিত্তি রচিত হয়।

দক্ষিণ কোরিয়াও কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে একইভাবে এগিয়ে যায়। ১৯৬১ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমে অনেকগুলো পঞ্চবার্ষিকী নীতির প্রথমটি প্রণীত হয়। আর এর মাধ্যমে অতি স্বল্প সময়ে যে উন্নয়ন হয়েছে তা মুক্তবাজার ব্যবস্থার মাধ্যমে করা নিতান্তই অসম্ভব ছিল। অর্থনীতিতে আধিপত্য করত কিছু ব্যক্তিমালিকানাধীন বহুজাতিক কোম্পানী যেগুলো চায়েবল নামে পরিচিত ছিল। এছাড়াও লৌহ, ইস্পাত, শক্তি, যোগাযোগ ব্যবস্থা, সার, কেমিক্যাল এবং অন্যান্য ভারী শিল্পের কিছু সরকারী কোম্পানী ছিল। সরকার ঋণের সুবিধা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ব্যক্তিখাতের শিল্পসমূহকে রপ্তানী লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিত, পরোক্ষভাবে চাপ প্রয়োগ করত এবং গতানুগতিক মুদ্রানীতি ও আর্থিক কৌশল প্রণয়ন করত।

১৯৬৫ সালে সরকার ব্যাংকসমূহকে জাতীয়করণের মাধ্যমে আরও নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করে এবং কৃষিভিত্তিক সমবায়কে কৃষি ব্যাংকের সাথে সমন্বিত করে ফেলে। সকল ঋণপ্রদানকারী সংস্থাসমূহের উপর নিয়ন্ত্রন আরোপের মাধ্যমে অন্যান্য ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের উপরও সরকার কতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়। ১৯৬১ সালে একজন ডেপুটি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ইকোনমিক প্ল্যানিং বোর্ড গঠিত হয়-যা সম্পদ বন্টন, ঋণের প্রবাহকে সুনিশ্চিতকরণ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সব ধরণের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিকল্পনা প্রণয়ন করে।
 
এশিয়ান টাইগারদের উন্নয়ন ব্যাপকভাবে সরকারী হস্তক্ষেপের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছিল। আর এটাই ছিল তাদের উন্নয়নের মেরুদন্ড। তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর, হংকং একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছে। আর তাদের বর্তমান অবস্থার জন্য কেন্দ্রীয় বা সরকারী হস্তক্ষেপ ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছে-এর জন্য কোনক্রমেই গতানুগতিক ধারার পুঁজিবাদী মুক্তবাজার ব্যবস্থা অনুসৃত হয়নি। এই টাইগারদের অর্থনীতি মূলত ভোক্তাদের অর্থনীতি যেখানে রপ্তানী হল মূল চালিকাশক্তি।

রবিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১২

খিলাফত প্রতিষ্ঠায় মুসলিম সেনাবাহিনীর ভূমিকা পর্ব-২


খিলাফাহ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ

তারপর রসুল (সা) আরও উদ্যমে হজ্বের সময় মক্কার বাহিরে বিভিন্ন গোত্র প্রধানদের সাথে সাক্ষাৎ করেন তৎকালীন আরব সমাজের এসব গোত্র প্রধানরা মূলত বর্তমান সময়ের বিভিন্ন সরকার প্রধান ও সামরিক নেতৃত্বের দায়িত্বে অবস্থান করা ব্যাক্তিদের সমতুল্য

ইবনে ইসহাক থেকে বর্ণিত সিরাতে ইবনে হিশামে রসুল (সা.) এর বিভিন্ন গোত্র প্রধানদের কাছে যাওয়া এবং তাদের কাছ থেকে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য নুসরাহ্ প্রার্থনা করার বিশদ বর্ণনা রয়েছে ইবনে ইসহাক বলেন, ‘তায়েফ হতে ফিরে এসে রসুল (সা.) একনিষ্ঠভাবে নুসরাহ্র বিষয়টি প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিদের নিকট উপস্থাপন করতে লাগলেন এ ব্যাপারে হজ্বের সময়টি রসুল (সা.) পুরোদমে কাজ করার জন্য ব্যবহার করেন তিনি আরবের বিভিন্ন গোত্র প্রধানদের কাছে ইসলাম এবং এর পরিপূর্ণ ব্যবস্থা উপস্থাপন করতে শুরু করেন তৎকালীন আরব সমাজে এমন একজন ব্যাক্তিও নেই যে, তিনি হজ্বের সময় এসেছেন এবং নিজস্ব গোত্রে তার সামান্যতম প্রভাব আছে অথচ রসুল (সা.) তার সাথে সাক্ষাৎ করেননি

সিরাতে ইবনে হিশামে ইবনে ইসহাক থেকে বর্ণিত যে রসুল (সা.) ক্বালব গোত্রের কাছে গিয়েছিলেন, যারা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিল তিনি গিয়েছিলেন আল ইয়ামামাহর হানিফা গোত্রের কাছে, যারা রসুল (সা) এর সাথে এমন খারাপ আচরণ করেছিল যা ইতপূর্বে কেউ করেনি রসুল (সা.) বনী আমের ইবনে সাসা গোত্রের কাছে যান যারা রসুল (সা) এর উপর তাদের জন্য কর্তৃত্বের দাবীর শর্ত জুড়ে দিয়ে রসুল (সা.) এর বাণীকে গ্রহণ করতে রাজী হন রসুল (সা.) তাদের এমন শর্ত সাপেক্ষে ইসলাম গ্রহণকে নিজেই প্রত্যাখ্যান করেন অতঃপর রসুল (সা.) ইয়েমেন থেকে আগত বনী কিন্দাহার কাছে যান এবং ইসলাম গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন ও এর নিরাপত্তা বিধানের জন্য সমর্থন চান তারাও সাসা গোত্রের মত রসুল (সা) এর উপর তাদের জন্য কর্তৃত্বের দাবীর শর্ত জুড়ে দিয়ে ইসলাম গ্রহণে সম্মত হন রসুল (সা) এবারেও তা প্রত্যাখ্যান করেন তিনি বকর বিন ওয়াইল এর নিকট যান এবং তারা রসুল (সা.)কে প্রত্যাখ্যান করেন এই কারণে যে, তাদের অবস্থান তৎকালীন সুপার পাওয়ার পারস্যের নিকটবর্তী ছিল রসুল (সা.) বনী রাবীয়াহ্ গোত্রের কাছে যান এবং তারা নবীজির কথার কোন উত্তর দেননি রসুল (সা) তারপর বনু সাইবান গোত্রের কাছে যান এবং তারা রসুল (সা.)-কে গ্রহণ করে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে রাজী হন, তবে ইসলামী রাষ্ট্রের নিরাপত্তার ব্যাপারে তারা রসুল (সা.)-কে বলেন যে, তারা আরবের বিরুদ্ধে ইসলাম ও রসুল (সা.)-কে নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত কিন্তু পারস্যের বিরুদ্ধে নয় রসুল (সা) তাদেরকে বলেন, ‘তোমাদের সত্যকে গ্রহণ করার ধরণ তাকে প্রত্যাখ্যান করার সমতুল্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার এই ইসলামের ব্যাপারে কারও প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করা হবে না যতক্ষণ না পর্যন্ত সে ইসলামের সব কিছুকে গ্রহণ ও একে নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত থাকে

রসুল (সা.) এরপর নুসরাহ্ পাবার জন্য তাঁর প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন এটা এমন ছিল যে, তিনি একটি নিরবিচ্ছিন্ন মিশনের সফলতার দিকে এগিয়ে যাবার দায়িত্ব পালন করছিলেন এতগুলো প্রত্যাখ্যান তাঁর দৃঢ়তার ব্যত্যয় ঘটাতে পারেনি না তিনি এই পদ্ধতি সম্পর্কে এতটুকু পর্যন্ত সন্দেহ পোষণ করেছেন তিনি হতাশও হননি, না তিনি পথ পরিবর্তন করেছেন

আল ওয়াতাদিতে যাদ আল মাদ বর্ণনা করেন যে, ‘রসুল (সা.) যে সব গোত্রের কাছে ইসলাম গ্রহণ, প্রতিষ্ঠা ও এর নিরাপত্তার জন্য সাহায্য চেয়েছেন তার মাঝে রয়েছে বনী আমের ইবনে সাসা, মুহারিব ইবনে হাফসা, ফাজারাহ, গাসসান, মুরাহ, হানিফাহ, সুলাঈম, আবস বনু নজর, বনু বিকা, বনু কিন্দাহ, বনু কালব, হারিতা ইবনে কাব, উজরাহ, হাজরামিচ এরা কেউই রসুল (সা.)কে সমর্থন করেননি

এত কিছুর পরও যখন আল্লাহর রসুল (সা) থেমে যান নি তখনই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তার এই দ্বীনকে (জীবন বিধানকে) সাহায্য করতে শুরু করেন সিরাতে ইবনে হিসামে ইবনে ইসহাক থেকে বর্ণিত যে, যখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তার প্রেরিত ইসলামের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছা করলেন এবং রসুল (সা.)কে তাঁর দায়িত্ব পূরণের জন্য অনুগ্রহ করলেন তখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হজ্বের সময় রসুল (সা.)-এর সাথে মদিনার আনসারদের পরিচয় করিয়ে দেন তিনি আল আক্বাবায় খাজরাজ গোত্রের সাথে সাক্ষাৎ করেন, যাদেরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সম্মানিত করার ইচ্ছে পোষণ করেন তাদের সামনে রসুল (সা) ইসলামের ব্যবস্থা উপস্থাপন করেন তারা আল্লাহর রসুল (সা) এর আহবানকে গ্রহণ করেন এবং তাদের সাথে আউস গোত্রের দীর্ঘদিনের শত্রুতা সমাধানের জন্য মদিনায় প্রত্যাবর্তন করেন পরবর্তী বছর হজ্বের সময় তারা ১২ জনকে নিয়ে ফেরত আসেন এবং রসুল (সা.) এর সাথে সাক্ষাৎ করেন তারা রাসুল (সা.)-কে মান্য করা এবং ইসলামের বাস্তবায়নে রসুল (সা.)কে সাহায্য করার অঙ্গীকার করেন এটা ইতিহাসে আক্বাবার প্রথম শপথ হিসেবে পরিচিত তারপর তারা মদিনাতে ফিরে যান এবং রসুল (সা) মুসায়েব ইবনে উমার (রা)কে তাদের কাছে প্রেরণ করেন যাতে করে মদিনার সমাজকে ইসলামের জন্য তৈরি করা হয় এরই মধ্যে মদিনার অনেক গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ রসুল (সা) এর সাথে সাক্ষাৎ করে ইসলাম ও মুহাম্মদ (সা)কে রক্ষা ও নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন

মদিনায় ইসলাম দ্রুত প্রসারিত হতে লাগল মুসায়েব (রা.) মাত্র এক বছরের মাঝে মদিনায় ইসলামের ভীতকে শক্ত ও শক্তিশালী করার ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেন এরই মাঝে পরবর্তী বছর ৬২২ সালে নব্যুয়তের ১২ তম বছরে ৭৩ জন পুরুষ ও ২ জন মহিলাসহ মোট ৭৫ জন মুসলিম মদিনা থেকে আবার রসুল (সা.) এর সাথে সাক্ষাৎ করতে আসেন রসুল (সা.) তাদের সাথে গোপনে সাক্ষাৎ করে ইসলামের প্রতি তাদের আনুগত্য এবং আন্তরিকতার ব্যাপারে পর্যবেক্ষণ করেন তারা রসুল (সা.) এর সাথে তাশরিকের দিনগুলোতে রাতের শেষভাগে আল আক্বাবায় সাক্ষাৎ করার প্রতিশ্রুতি দেন রসুল (সা.) তাদের বলেন, ‘কাউকে জাগাবেনা, এবং কারও জন্য অপেক্ষা করবে না তারা রাতের শেষভাগে আল আক্বাবায় অপেক্ষা করতে থাকেন যতক্ষণনা পর্যন্ত রসুল (সা) তার চাচা ইবনে আব্বাস সহ সেখানে হাজির হলেন প্রথমে ইবনে আব্বাস বললেন, ‘হে খাজরাজের লোকেরা! আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে, মুহাম্মদের অবস্থান আমাদের মাঝে কেমন? আমরা মুহাম্মদের নিরাপত্তা দিয়েছি তিনি তার লোকদের মাঝে সম্মান ও নিরাপত্তার সাথে অবস্থান করছেন কিন্তু তিনি আপনাদের সাথে যেতে চাচ্ছেন আপনারা যদি মনে করেন যে আপনারা যে প্রতিশ্রুতি তাকে দিয়েছেন এবং তার প্রতিপক্ষদের নিকট থেকে তাকে রক্ষা করতে পারবেন তবে আমাকে আপনাদের দায়িত্বের ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন যে তিনি আপনাদের সাথে যাবার পর তার সাথে প্রতারণা করবেন এবং তাকে শত্রুর সামনে ত্যাগ করবেন তবে তাকে এখনই ত্যাগ করুন তারা বলল, “হে ইবনে আব্বাস আমরা আপনার কথা শুনেছি হে আল্লাহর রসুল (সা) এখন আপনার মুখ থেকে কথা শুনতে চাই আপনি আপনার ও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার জন্য যা ভাল তা গ্রহণ করুন রসুল (সা.) দাঁড়ালেন এবং পবিত্র কুরআনের থেকে তার বক্তব্য শুরু করলেন সিরাতে ইবনে হিশামে ইবনে ইসহাক থেকে বর্ণনা করেন যে, রসুল (সা.) তাদের কাছে এ মর্মে শপথ গ্রহণ করেন যে, “আমি আপনাদের এই মর্মে ইসলামের আনুগত্য করার জন্য আহবান জানাচ্ছি যে, আপনারা ইসলাম গ্রহণ করবেন এবং আমাকে নিরাপত্তা দেবেন যেভাবে আপনারা আপনাদের মহিলা ও সন্তানদের নিরাপত্তা দিয়ে থাকেন আল বারা ইবনে মার রসুল (সা.)-এর হাত ধরেন এবং বলেন, “নিশ্চয়ই যিনি আপনাকে এই সত্যসহ রসুল হিসেবে প্রেরণ করেছেন তাঁর শপথ, আমরা আপনাকে রক্ষা করব যেমনিভাবে আমরা আমাদের সন্তানদের রক্ষা করে থাকি হে আল্লাহর রসুল! আমাদের প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করুন আল্লাহর কসম আমরা যুদ্ধের সন্তান এবং যুদ্ধের অস্ত্রসমূহ আমাদের জন্য খেলনা এটাই আমাদের ও আমাদের পূর্ব পুরুষদের ঐতিহ্য আল বারার এই বক্তব্যের মাঝেই আবু আল হাইতাম ইবনে তাইহান বলেন, হে আল্লাহ্র রসুল (সা.), আমাদের সাথে মদিনার অন্যান্য গোত্রের (ইহুদী) সম্পর্ক আছে আর আমরা যদি তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করি তবে আল্লাহ্ যখন আপনাকে বিজয় দেবেন তখন আপনি যদি আমাদের ছেড়ে আপনার লোকদের মাঝে ফিরে আসেন? রসুল (সা) হাসলেন এবং বললেন, ‘না তোমাদের রক্তই আমার রক্ত তোমাদের নিকট যা পবিত্র তা আমার নিকট পবিত্র আমি তোমাদের থেকে আর তোমরা আমার থেকে আমি তাদের সাথে যুদ্ধ করব যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করবে, আর আমি তাদের সাথে শান্তি স্থাপন করব যারা তোমাদের সাথে শান্তি কামনা করে

আব্বাস ইবনে উবাদা তখন দাঁড়িয়ে বলেন যে, ‘হে মদিনার লোকেরা! তোমরা কি বুঝতে পারছ যে, তোমরা এই ব্যাক্তিকে আনুগত্য করার ব্যাপারে কি ধরণের দায়িত্ব গ্রহণ করেছ? এটার অর্থ হল সমস্ত আরবের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়া যদি তোমরা মনে কর যে, এর মাধ্যমে তোমরা তোমাদের সম্পদ হারাবে, তোমাদের সম্মানিত ব্যাক্তিরা নিহত হবে এবং তোমরা এই দায়িত্ব হতে অব্যাহতি চাইবে তবে তা এখনই কর আর যদি তোমরা তা পরে কর, তবে তা তোমাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের লজ্জার কারণ হবে যদি তোমরা মনে কর যে তোমরা এ দায়িত্বের প্রতি আস্থাশীল থাকবে যদিওবা এর মাধ্যমে তোমরা তোমাদের সম্পদ হারাবে তোমাদের সম্মানিত ব্যাক্তিরা নিহত হবে, তবে তাকে গ্রহণ কর নিশ্চয়ই এর মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদেরকে দুনিয়ায় ও পরকালে লাভবান করবেন তারা বলল, “হে আল্লাহর রসুল (সা) আমরা আপনাকে গ্রহণ করব, তবে হে আল্লাহর রাসুল (সা)! আপনার প্রতি আমাদের এই আনুগত্যের বিনিময় কি? রাসুল (সা) দৃঢ়তার সাথে বললেন, “জান্নাত তারপর তারা আল্লাহর রাসুল (সা) এর হাতে হাত রাখলেন এবং তাদের আনুগত্য প্রকাশ করলেন এই বলে যে, “আমরা আপনাকে বিপর্যয় ও ভাল সময়ে, কঠিন ও সহজ সময়ে মানার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি আমরা সর্বদা সত্য কথা বলব এবং প্রতিরোধে ভীত হবনা তাদের আনুগত্যের শপথ শেষে রসুল (সা.) বললেন, “তোমাদের মাঝে খাজরাজ হতে ৯ জন ও আউস হতে ৩ জন নেতা আমার কাছে নিয়ে আস এই ১২ জনকে রসুল (সা.) বললেন, তোমরা তোমাদের লোকদের অভিভাবক, যেমনিভাবে ঈসা ইবনে মারিয়ামের ১২ জন অনুসারী নেতা ছিল, আর আমি আমার জনগণের জন্য দায়িত্বশীল আর এভাবেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তার প্রতিশ্রুতিকে বাস্তবায়ন করেন এবং ইসলামকে রাষ্ট্র মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেন

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার হুকুম অনুযায়ী রসুল (সা.) নুসরাহ্ (সমর্থন) আদায়ের অবিরাম প্রচেষ্টা এবং এ কাজের প্রতি তার নিষ্ঠা ও দৃঢ়তা, যদিও নানাবিধ হতাশা এবং নিপীড়ন তাকে অভিষ্ঠ লক্ষ্য হতে একচুলও নড়াতে পারেনি, এটাই প্রমাণ করে যে নুসরাহ্ (সমর্থন) আদায়ের কাজটি সুনির্দিষ্ট এবং তা ফরজ এটাই হচ্ছে খিলাফত প্রতিষ্ঠা ও ইসলামী জীবন ব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত করার একমাত্র পথ এবং এ পথ থেকে এক চুলও বিচ্যুত হওয়া জায়েজ নয় বর্তমান সময়ে যেদল ইসলামী জীবনব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত ও খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন করছে তাদের অবশ্যই রসুল (সা.) এর দেখানো পথ অনুযায়ী সমাজের প্রভাবশালী গোষ্ঠির (বর্তমান সময়ে মুসলিম বিশ্বের সেনাবাহিনী) নিকট নুসরাহ্ (সমর্থন) আদায়ের জন্য কাজ চালিয়ে যেতে হবে ইসলামী জীবনব্যবস্থাকে পুনরুজীবিত করার জন্য নুসরাহ (সমর্থন) আদায় একটি রাজনৈতিক কাজ ইসলামী চিন্তার ভিত্তিতে যখন সমাজে জনমত গঠিত হয় ও এই চিন্তার সমর্থনকারী একটি গোষ্ঠি গঠিত হলেই এই নুসরাহ্র কাজ শুরু করতে হয় এই নুসরাহ্ (সমর্থন) একমাত্র সেনাবাহিনী থেকেই আসা সম্ভব এবং মুসলিম বিশ্বের যে সেনাবাহিনী একাজটি করবে তাদের পুরষ্কার হবে দুনিয়া ও আখেরাতের সর্বশ্রেষ্ঠ পুরষ্কার, আর জান্নাতের চেয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ পুরষ্কার আর কী হতে পারে!

চলবে ...

শুক্রবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১২

ইসলামী রাষ্ট্র - ইসলামী রাষ্ট্রের ধারাবাহিকতা

[নিম্নোক্ত প্রবন্ধটি প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষক শাইখ তাকী উদ্দীন আন-নাবহানি (রাহিমাহুল্লাহ) কর্তৃক লিখিত ‘আদ-দাওলাতুল ইসলামীয়্যাহ’ (ইসলামী রাষ্ট্র) বইটির খসড়া অনুবাদ-এর একাংশ হতে নেয়া হয়েছে]

আল্লাহর রাসুল (সা.)এর ইন্তেকালের পর সাহাবাগণ সর্বসম্মতিক্রমে রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে রাসুল (সা.)এর স্থলে একজন খলিফা নিয়োগ করে তাকে বাইয়াত দেবার সিদ্ধান্ত নেন। এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেমুসলিমরা ১৩৪২ হিজরী বা ১৯২৪ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে খলিফা নিয়োগ করে। তবেতারা নিযুক্ত খলিফাকে আমির আল-মুমিনীন (মুমিনদের নেতা) কিংবা সাধারন ভাবে ইমাম বলেও সম্বোধন করত।

ইসলামের ইতিহাসে বাইয়াত গ্রহন ছাড়া কখনো কেউ খলিফা হয়নি। ইসলামী রাষ্ট্র এই নিয়মের ধারাবাহিকতা তার অস্তিত্ব টিকে থাকার শেষ দিন পর্যন্ত রক্ষা করেছে। তবে, বাইয়াতের প্রয়োগ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে খলিফাকে সরাসরি বাইয়াত দেয়া হয়েছে। কোন সময় খলিফাগণ তাদের আত্মীয়-স্বজনের বাইরে অন্য কাউকে খলিফা হিসাবে মনোনীত করেছেন। কেউ কেউ আবার স্বীয় পুত্র বা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মনোনীত করেছেন। আর, অন্যরা তাদের পরিবারের মধ্য হতে একাধিক সদস্যকে খলিফা হিসাবে মনোনয়ন দিয়ে গেছেন। কিন্তু, এই মনোনয়ন কখনোই খলিফা হবার জন্য যথেষ্ট ছিল না। বরঞ্চ, খলিফার দায়িত্ব বুঝে নেবার আগে তাকে অবশ্যই মুসলিমদের পক্ষ হতে বাইয়াত গ্রহন করতে হয়েছে। বাইয়াত ছাড়া কোন খলিফাকেই কখনো এ পদের দায়িত্ব দেয়া হয় নাই। বাইয়াত গ্রহনের পদ্ধতিও সবসময় একরকম ছিল না। কখনো আহল্ আল-হাল ওয়াল আকদ্ (সমাজের সম্মানিত ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ) এর কাছ থেকে বাইয়াত গ্রহন করা হয়েছে। কখনো আবার জনসাধারনের কাছ থেকেও বাইয়াত নেয়া হয়েছে। আবার, কোন কোন ক্ষেত্রে শাইখ আল-ইসলাম (প্রসিদ্ধ আলিম) এর কাছ থেকে বাইয়াত গ্রহন করা হয়েছে। তবে, কিছু নির্দিষ্ট সময়ে বাইয়াত গ্রহন পদ্ধতির অপব্যবহার হয়েছে। কিন্তু, তারপরেও এই বাইয়াত গ্রহন পদ্ধতি সবসময়ই কার্যকর ছিল এবং বাইয়াত ব্যতীত কেউ কখনো উত্তরাধিকার সূত্রে খিলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রধান বা খলিফা হিসাবে দায়িত্ব গ্রহন করেনি।

প্রত্যেক খলিফাই তার সাহায্যকারী হিসাবে একাধিক সহকারী নিযুক্ত করেছেন, যাদের ইতিহাসে কিছু সময় পর্যন্ত ওয়াজির (সহকারী) বলা হত। এছাড়া, খলিফাগণ বিভিন্ন প্রদেশের গর্ভনর, প্রধান বিচারপতি, সেনাবাহিনী প্রধান এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানকে নিযুক্ত করতেন। ইসলামী রাষ্ট্রের কাঠামো সবসময়ই এই রকমই ছিল। সাম্রাজ্যবাদী কাফিররা উসমানী খিলাফত ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ইসলামী রাষ্ট্রকে ভেঙ্গে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে পরিণত করার পূর্ব পর্যন্ত এ রাষ্ট্রের কাঠামো কখনো পরিবর্তিতও হয়নি।

ইতিহাসের পুরোটা সময় জুড়েই ইসলামী রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে নানারকম ঘটনার অবতারণা হয়েছিল। তবে, বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই এ ঘটনাগুলো বাইরের শক্তি বা কারণ দিয়ে নিয়ন্ত্রিত ছিল না। বস্তুতঃ এ ঘটনাগুলো ছিল তৎকালীন পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ইসলামের ব্যাখ্যা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির ফলাফল। পরবর্তী সময়ে যারা এ ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করেছে তারা তাদের নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা অনুযায়ী এ প্রেক্ষাপটকে ভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছে। মূলতঃ ইসলামের ব্যাখ্যা নিয়ে যাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে, তাদের প্রত্যেকে ইসলামের আলোকেই তৎকালীন পরিস্থিতিকে নিজস্ব মতামত অনুযায়ী ব্যাখ্যা করেছে। কিন্তু, তারপরও তাদের এ বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা ছিল ইসলামিক।

এই মতভেদগুলো আসলে একজন ব্যক্তি হিসাবে খলিফার সাথে সম্পর্কিত ছিল, খলিফার পদ বা দায়িত্বের সাথে সম্পর্কিত ছিল না। উদাহরন স্বরুপ বলা যায়, মতপার্থক্য ছিল কে খলিফা হবে সে বিষয়ে, কিন্তু শাসন-ব্যবস্থার কাঠামো নিয়ে কোন মতপার্থক্য ছিল না। মতপার্থক্য সবসময়ই সীমাবদ্ধ ছিল কিছু ক্ষুদ্র বিষয়ের মধ্যে। ফলে, শাসন-ব্যবস্থার ভিত্তি বা মূলনীতির সাথে এর কোন সম্পর্ক ছিল না। কোরআন ও সুন্নাহ যে শাসন-ব্যবস্থার মূলভিত্তি হবে, এ বিষয়ে মুসলিমদের মধ্যে কখনো মতভেদ হয়নি। মতপার্থক্য হয়েছিল কোরআন ও সুন্নাহর ব্যাখ্যায়। একই ভাবে, একজন খলিফাকে যে মুসলিম উম্মাহ্র নেতা হিসাবে নিযুক্ত করতে হবে, এ বিষয়েও মুসলিমদের মধ্যে কখনো মতভেদ হয়নি। কিন্তু, কে খলিফা হিসাবে নিযুক্ত হবে তা নিয়ে মতভেদ হয়েছিল। এছাড়া, মুসলিমরা সবসময়ই এ ব্যাপারে একমত ছিল যে, দ্বীন-ইসলামকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ ভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে এবং ইসলামের আলোকিত আহবানকে সমস্ত পৃথিবী ব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হবে। আল্লাহর হুকুম-আহকামকে বাস্তবায়িত করতে হবে এবং মানুষকে দ্বীন-ইসলামের দিকে আহবান করতে হবে, এ ভিত্তির উপরই সকল খলিফা শাসনকার্য পরিচালনা করতো । এদের মধ্যে কেউ কেউ অবশ্য ইসলামকে ভুল ভাবে বোঝার কারণে ইসলামের আইন-কানুনের ভুল প্রয়োগ করেছিল। আর কেউ কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবেই এসব আইন-কানুনের অপব্যবহার করেছিল। কিন্তু, সবকিছুর পরেও তারা সকলেই শুধু ইসলামকেই বাস্তবায়ন করেছিল। তাদের সকলেই ইসলামের ভিত্তিতে এবং ইসলামের আহবান সমস্ত পৃথিবীতে বিস্তৃত করার উদ্দেশ্যেই অন্যান্য দেশ, জাতি ও মানুষের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখেছিল।

এজন্যই, বিভিন্ন বিষয়ে মুসলিমদের মধ্যে এই আভ্যন্তরীন মতপার্থক্য কখনো ইসলামের জয়যাত্রাকে স্তব্ধ করতে পারেনি, কিংবা পারেনি ইসলামের বিস্তার রোধে কার্যকরী কোন ভূমিকা রাখতে। বরঞ্চ, প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকে ১১শ হিজরী (১৭শ খ্রীষ্টাব্দ) পর্যন্ত ইসলামী রাষ্ট্র কোরআনের আলোকিত আহবানকে পৃথিবীব্যাপী বিস্তৃত করতে একের পর এক অঞ্চল জয় করেছে। ইসলামের পতাকাতলে এসেছে পারস্য, ভারতবর্ষ ও ককেশিয়া (রাশিয়ার একটি অংশ)। পূর্বে ইসলামী রাষ্ট্রের সীমানা চীন, রাশিয়া এবং কাস্পিয়ান সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এছাড়া, ইসলামী রাষ্ট্রের অধীনে এসেছে পশ্চিমে মিশর, উত্তর আফ্রিকা, আন্দালুস (স্পেন) এবং উত্তরে শামের সমগ্র অঞ্চল। একই সাথে আনাদউল (তুরস্ক), বলকান, দক্ষিন ও পূর্ব ইউরোপ জয় করে এ রাষ্ট্রের সীমানা পৌঁছে গেছে ব্ল্যাক সী পর্যন্ত। ইসলামী রাষ্ট্র আরও জয় করেছে আল-ক্বারাম (ক্রাইমিন উপদ্বীপ) এবং ইউক্রেনের দক্ষিনাঞ্চল। বিস্তীর্ণ ভূমিতে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করবার পর এ রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী পৌঁছেছে একেবারে ভিয়েনার দরজা পর্যন্ত। বস্তুতঃ মানসিক দূর্বলতা উম্মাহর ভেতর শেকড় গেঁড়ে না বসা পর্যন্ত এবং ইসলামের অপব্যাখ্যা তীব্র আকারে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত, শক্তিশালী মুসলিম বাহিনী না কোনদিন দেশ জয় করা বন্ধ করেছে, আর না ইসলামের আহবানকে বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত করা থেকে বিরত থেকেছে। এরপর, ইসলামী রাষ্ট্র দ্রুত অধঃপতনের দিকে চলে যায়। এমনকি ইসলাম বর্হিভূত জীবনব্যবস্থা থেকে প্রাপ্ত আইন-কানুনকেও শরীয়াহ্ আইনের সাথে সাংঘর্ষিক নয় ভেবে স্বীকৃতি দেয় এবং শেষপর্যন্ত ধ্বংস হয়ে যায়।

আসলে, ইসলামী রাষ্ট্রের উন্নতি ও সমৃদ্ধির রহস্য নিহিত ছিল এ রাষ্ট্রের বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তিসামর্থ্য, এর সৃজনশীলতা এবং ইজতিহাদ ও কিয়াস (যৌক্তিক তুলনামূলক ব্যাখ্যার মাধ্যমে ইসলামী শরীয়াহর মূল উৎস থেকে হুকুম বের করা) করার ক্ষমতার উপর। হিজরী প্রথম শতাব্দীতে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জয় করার পর ইসলামী রাষ্ট্র যখন ব্যাপক ভাবে বিস্তৃত হল, তখন অধিকৃত এলাকাগুলোতে উদ্ভুত নতুন নতুন সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে ইজতিহাদ এক নতুন মাত্রা লাভ করেছিল। নতুন নতুন বিষয়ে শরীয়াহ্ আইনের বাস্তবায়ন মূলতঃ পারস্য, ইরাক, আল-শাম, মিশর, স্পেন, ভারতবর্ষ এবং অন্যান্য দেশের অধিবাসীদের ইসলামে গ্রহনে উদ্বুদ্ধ করেছিল। আর, তৎকালীন এই পরিস্থিতি মুসলিমদের কৃত ইজতিহাদের গ্রহনযোগ্যতা ও নতুন সমস্যা সমাধানে তাদের সৃজনশীলতাকেও নিশ্চিত করেছিল। হিজরী পঞ্চম শতাব্দী পর্যন্ত এ অবস্থা বিরাজমান থাকে। তারপর, কাঠামোগত ভাবে যখন ইসলামী রাষ্ট্র দূর্বল হতে থাকে, সেইসাথে মুসলিমদের সৃজনশীলতা ও ইজতিহাদ করার ক্ষমতাও ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়।

এর মধ্যে আবার সংঘটিত হয় ক্রুসেড এবং বিজয়ী শক্তি হিসাবে পূণরায় আবির্ভূত না হওয়া পর্যন্ত এ ক্রুসেড মুসলিমদের মনমগজ আচ্ছন্ন করে রাখে। এরপরে আসে মামলুকদের রাজত্বকাল। তারা ইসলামী রাষ্ট্রের চালকের আসনে বসে ঠিকই, কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তিক বিষয়গুলো খুবই কম গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে। ফলে, মুসলিমদের বুদ্ধিবৃত্তিক অন্ধত্ব আরও বিস্তৃত হয় এবং রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা অসারতার পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এরপর, তাতারদের ধ্বংসাত্মক আগ্রাসনের ফলে মুসলিমরা জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তাতার বাহিনী কর্তৃক বিপুল সংখ্যক বই-পুস্তক টাইগ্রীস নদীতে নিক্ষিপ্ত হওয়া এবং তাদের হাতে উত্তরাধিকার সূত্রে অর্জিত বিশাল জ্ঞানভান্ডার ধ্বংস প্রাপ্ত হওয়ার ঘটনা বুদ্ধিবৃত্তিক শূণ্যতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। আর, এ সমস্ত কারণ থেকে উৎসরিত গভীর বুদ্ধিবৃত্তিক শূণ্যতাই মূলতঃ ইজতিহাদের পথকে অবরুদ্ধ করে। ফলে, নতুন পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে যখন সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয়, তখন ইজতিহাদের পরিবর্তে শুধু ফতোয়া জারি করা কিংবা কোরআন ও সুন্নাহর বিকৃত ও অপব্যাখ্যার মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ থাকে।

এ সমস্ত ঘটনার ফলশ্রুতিতে, রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে ইসলামী রাষ্ট্র পতনোম্মুখ অবস্থার সম্মুখীন হয়। এ পর্যায়ে আসে উসমানী খিলাফতের যুগ। ক্ষমতায় আরোহন করার পর তারা সামরিক বাহিনীর শক্তিসামর্থ্য বৃদ্ধির দিকে মনোযোগী হয় এবং ইস্তাম্বুল (কন্সট্যান্টিনোপল) ও বলকান অঞ্চল জয় করে নেয়। ইসলামী রাষ্ট্রকে আবারও নেতৃত্বের আসনে বসিয়ে তারা দর্শনীয় ভাবে ইউরোপ তছছ করে দেয়। কিন্তু, এ সব কোনকিছুই মুসলিমদের বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে পূণঃজাগরিত করতে পারে না। আসলে, উসমানী খিলাফতের সময়ে মুসলিমদের সামরিক বাহিনীর শক্তিসামর্থ্য বৃদ্ধি হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তা বুদ্ধিবৃত্তিক পূণঃজাগরনের ভিত্তিতে হয়নি। ফলে, ইসলামী রাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর এই দূর্দান্ত প্রতাপ সময়ের সাথে বুদবুদের মতো মিলিয়ে যেতে থাকে এবং একসময় সম্পূর্ন ভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। কিন্তু, এ সকল সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও উসমানী খিলাফত সাফল্যের সাথে দ্বীন ইসলামকে বিস্তৃত করেছিল। আর, বিভিন্ন অঞ্চলে বহন করেছিল ইসলামের আলোকিত আহবান। বিজিত এ সব অঞ্চলের অধিবাসীরা একসময় ইসলামও গ্রহন করেছিল। এ অঞ্চলে বর্তমানে লক্ষ লক্ষ মুসলিমের উপস্থিতির কৃতিত্ব অনেকটাই উসমানী খলিফাদের।

নিম্নলিখিত কারণ দুটি কিছু খলিফা ও গর্ভনরকে এমন ভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে সহায়তা করেছে, যা ইসলামী রাষ্ট্রের ঐক্যবদ্ধ শক্তি ও প্রভাব-প্রতিপত্তিকে ক্রমশ দূর্বল করেছে।

১. ইসলামী রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ধরনের মতামতের উপস্থিতি বিরাজ করা। (শরীয়াহ্ প্রদত্ত হুকুমের ব্যাপারে)

২. রাজনৈতিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে, খলিফাগণ কর্তৃক নির্দিষ্ট কিছু হুকুম-আহকামকে গ্রহন করার ক্ষেত্রে গাফিলতি করা, যদিও অন্যান্য ক্ষেত্রে, যেমন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু হুকুম-আহকামকে গ্রহন করা হয়েছিল।

কিন্তু, এ সকল কারণও আসলে এ রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে বিপন্ন করার জন্য যথেষ্ট ছিল না। উদাহরন স্বরূপ বলা যায়, গর্ভণরদের সাধারন ভাবে কিছু শাসন-ক্ষমতা ছিল এবং এই ক্ষমতা ছিল ব্যাপক। এ ক্ষমতাবলেই তারা খলিফার প্রতিনিধি বা সহকারী হিসাবে বিভিন্ন বিষয়ে স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারতো। ব্যাপক এ শাসন-ক্ষমতার অধিকারী হয়ে কিছু কিছু গর্ভণর একসময় নিজেদের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ভাবতে শুরু করে এবং স্বাধীন ও স্বায়ত্বশাসিত ভূ-খন্ডের শাসকের মতো আচরন করতে থাকে। খলিফার প্রতি তাদের আনুগত্য শুধু খলিফাকে বাইআত প্রদান করা, জুমার নামাজে তার জন্য দোয়া করা, মুদ্রাতে তার নাম ব্যবহার করা সহ অন্যান্য ছোটখাট বিষয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু, তাদের অধীনস্ত অঞ্চলের শাসন-কর্তৃত্ব পুরোপুরি ভাবেই তাদের কাছে চলে যায়। ফলে, ইসলামী রাষ্ট্রের এই প্রদেশগুলো কার্যত স্বায়ত্বশাসিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে পরিণত হয়। উদাহরন স্বরূপ, হামদানিইন, সালযুক এবং অন্যান্য শাসনামলের কথা বলা যায়। কিন্তু, ওয়ালী বা গর্ভণরদের এই ব্যাপক ক্ষমতার কারণেও আসলে ইসলামের বিশাল রাষ্ট্র খন্ড খন্ড হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্র তৈরী হয়নি।

যেমন, মিশরের গর্ভণর হিসাবে নিযুক্ত আমর ইবন আল-আসও ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। একই ভাবে, মুয়াবিয়া ইবন আবু সুফিয়ানও শামের বিশাল অঞ্চলের গর্ভণর ছিলেন। কিন্তু, তা সত্ত্বেও, এই গর্ভণররা কখনোই নিজেদের খিলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন করেননি। কিন্তু, পরবর্তী সময়ে যখন রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে খলিফাদের দূর্বলতা প্রকাশ হতে থাকে, তখন গর্ভণরদের ভেতর প্রদেশগুলোকে স্বাধীন ও স্বায়ত্বশাসিত রাষ্ট্র হিসাবে শাসন করার এই ধারা ধীরে ধীরে শেঁকড় গড়ে বসে। ফলে, উলাইয়াহ্ বা প্রদেশগুলো বিশাল ইসলামী রাষ্ট্রের অংশ হিসাবে একক সরকার-ব্যবস্থার অধীনে থাকা সত্ত্বেও ক্ষুদ্র স্বাধীন রাষ্ট্রের মতো আচরণ করতে থাকে।

কিন্তু, এ সবকিছু সত্ত্বেও ইসলামী রাষ্ট্র অবিভক্ত ছিল। একক রাষ্ট্র হিসাবে এর ঐক্য ছিল অটুট, যেখানে খলিফাগণ সবসময়ই ওয়ালী বা গর্ভণরকে নিযুক্ত করতেন কিংবা পদচ্যুত করতেন। আর, গর্ভণররা যতো ক্ষমতার অধিকারীই হোক না কেন, তারাও কখনো নিজেদের খলিফার শাসন-কর্তৃত্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করার দুঃসাহস দেখায়নি। বাস্তবতা হলো, ইসলামী রাষ্ট্র ইতিহাসের কোন সময়েই বিভিন্ন প্রদেশের সমন্বয়ে গঠিত কনফেডারেশন ছিল না, এমনকি যখন গর্ভণররা শাসন-কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে চুড়ান্ত স্বাধীনতা উপভোগ করেছে তখনো না। এটা সবসময়ই ছিল একটি একক রাষ্ট্র, যার প্রধান ছিলেন একজন খলিফা। সমস্ত রাষ্ট্রের উপর তারই ছিল সর্বময় ক্ষমতা। এমনকি, রাষ্ট্রের অভ্যন্তরস্থ ছোট ছোট গ্রামেও খলিফার কর্তৃত্বই বিরাজমান ছিল।

এছাড়া, স্পেনে খিলাফত রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা এবং মিশরে ফাতিমিদ রাষ্ট্র জন্মের বিষয়গুলো ছিল অন্য ধরনের সমস্যা। এগুলো ঠিক স্বায়িত্বশাসিত গর্ভণরদের তৈরী করা সমস্যার মতো ছিল না। স্পেনের গর্ভণররা তাদের অধীনস্ত প্রদেশের (উলাইয়াহ্) উপর সর্বময় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছিল, আর সেই সাথে তাদের শাসিত প্রদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষনাও দিয়েছিল। কিন্তু, এই গর্ভণরদেরকে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ কখনো খলিফা হিসাবে বাইআত দেয়নি। পরবর্তী সময়ে, এই গর্ভণররা নিজেদের উক্ত প্রদেশে বসবাসকারী মুসলিমদের খলিফা হিসাবে ঘোষনাও দিয়েছিল। কিন্তু, সমগ্র মুসলিম উম্মাহর খলিফা হিসাবে স্বীকৃতি তারা কখনোই পায়নি। বস্তুতঃ তখনো, সমগ্র মুসলিম উম্মাহ খলিফা একজনই ছিল। আর, শাসন-কর্তৃত্বও ছিল তার হাতেই। স্পেনের উলাইয়াহকেও (প্রদেশ) সেই সময় আলাদা একটি উলাইয়াহ্ বা প্রদেশ হিসাবেই স্বীকৃতি দেয়া হতো, শুধু এই প্রদেশটি খিলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থা বা খলিফার অধীনে ছিল না। উসমানী শাসনামলে ইরানের ক্ষেত্রে একই ব্যাপার ঘটেছিল। ইরানে কোন খলিফা ছিল না, কিন্তু, উলাইয়াহ্ বা প্রদেশ হিসাবে ইরান আবার খলিফার কর্তৃত্বের অধীনেও ছিল না। আর, ফাতিমিদদের রাষ্ট্র গঠিত হয়েছিল ইসমাইলীদের দ্বারা, যারা প্রকৃত অর্থে ছিল ইসলাম বহির্ভূত সম্প্রদায়।

সুতরাং, ইসলামের দৃষ্টিতে ফাতিমিদদের কর্মকান্ডের কোন আইনগত বৈধতা নেই এবং তাদের প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রও ইসলামী রাষ্ট্র হিসাবে বিবেচিত হবার পক্ষে কোন যুক্তি নেই। আব্বাসীয় খিলাফতের পাশাপাশি তাদের প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রকে তাই কোনভাবেই একের অধিক খিলাফত রাষ্ট্র হিসাবে বিবেচনা করা যুক্তিযুক্ত নয়। কারণ, ফাতিমিদরা পথভ্রষ্ট সম্প্রদায় হওয়ায় শরীয়াহ্ আইনের দৃষ্টিতে তাদের প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের বৈধতা ছিল না। আসলে, এই সম্প্রদায়টি গোপন সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্রকে এমন ভাবে পরিবর্তন করতে চেয়েছিল, যেন তাদের ভ্রান্ত মতাদর্শ দ্বারাই ইসলামী রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত হয়। কিন্তু, তাদের সে চেষ্টা সফল হয়নি। এরপরেও ইসলামী রাষ্ট্র অবিভক্ত থেকে এর একতা বজায় রেখেছে। যদিও বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন মতালম্বী সম্প্রদায় তাদের ভ্রান্ত ধ্যান-ধারণার ভিত্তিতে এর শাসন-কর্তৃত্ব ছিনিয়ে নেবার চেষ্টা করেছে, কিন্তু কার্যত, এই সব অপচেষ্টা ইসলামী রাষ্ট্রকে কখনো খন্ড-বিখন্ড করে বহুসংখ্যক রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারেনি।

এভাবেই ভিন্ন মতালম্বীদের সকল প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে ইতিহাসে ইসলামী রাষ্ট্র অবিভক্ত থাকে। যদিও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব ধ্যান-ধারণার ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চেয়েছিলো এবং মূলতঃ এ অভিলাষ থেকেই তারা ক্ষমতা দখলের প্রয়াস চালিয়েছিল, কিন্তু, শেষ পর্যন্ত এ সমস্ত প্রতিকুল পরিস্থিতির মোকাবিলা করে ইসলামী রাষ্ট্র একটি অবিভক্ত একক রাষ্ট্র হিসাবেই টিকে ছিলো। ইসলামী রাষ্ট্রের অবিভক্ততা এবং একটি একক অভিন্ন রাষ্ট্র হিসাবে টিকে থাকার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো, বিভিন্ন উলাইয়াহতে বিভিন্ন ধরনের শাসন অবস্থা বিরাজ করা সত্ত্বেও যে কোন মুসলিম কোন রকম বাঁধা বিপত্তি বা প্রশ্ন ছাড়াই পূর্ব থেকে পশ্চিমে অবিভক্ত ইসলামী রাষ্ট্রের এক স্থান থেকে আরেক স্থানে ভ্রমন করতে পারতো। সমস্ত সাম্রাজ্যের কোথাও তাদের পরিচয় সম্পর্কে কোনরকম প্রশ্ন করা হতো না।

এভাবেই ইসলামী রাষ্ট্র সমস্ত মুসলিম উম্মাহকে একটি মাত্র অভিন্ন ব্যবস্থার নীচে ঐক্যবদ্ধ রেখেছিলো এবং ইতিহাসে এর ধারাবাহিকতাও বজায় ছিলো। পশ্চিমা কাফির সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ১৯২৪ সালে তাদের এজেন্ট মুস্তফা কামালের হাতে এ রাষ্ট্র ধ্বংস করে দেবার পূর্ব পর্যন্ত এ রাষ্ট্র ছিলো শক্তিশালী ও সমৃদ্ধশালী।