রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১১

আপনি কি আগামীকাল মরতে প্রস্তুত ?

তুই কি জীবনে ফুটবল খেলা দেখছস, না হলে তুই মেসিরে নিয়া এই মন্তব্য করলি কেমনে। আমি গত বছর ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর বার্সার খেলা একটাও মিস দেই নাই জানোস ......... কারণ ঐখানে মেসি খেলে। ............ আরে মেসি মেসি করস কেন রিয়ালের রোনালদো কি কম, আরে বার্সা তো আজকে ফালাইতেছে, রিয়াল যতগুলো ট্রফি জিতছে, বার্সা ততগুলো ম্যাচও খেলে নাই।

দোস্ত তোর কাছে রিসেন্ট কি মুভি আছে আর তোর পেনড্রাইভ তা একটু দিস, আমার জাহানের থেকে বডিগার্ড মুভিটি আনতে হবে। তুই জানোস মুভিটা আমি এখনো দেখি নাই। আরেকটা কথা তো তোকে বলা হয় নি, ১৫ তারিখ বুয়েট ক্যাফেটেরিয়ার সামনে ওপেন কনসার্ট আছে, আর্টসেল আসতাছে। রাতে কিন্তু প্রোগ্রামটার পোস্টারিং করতে হবে মাথায় রাখিস।

শিমু জানিস ...... জনি বলেছে “আজ নাকি আমাকে ঐশ্বরিয়ার মত লেগেছে”, জানি ছেলেরা মেয়েদের সামনে আসলেই একটু ফাঁপড়বাজি করেই, তবে ব্যাপার কি জানিস আমি একটা বিষয় লক্ষ করেছি যে সে আজ আমার থেকে চোখ সরাতেই চাই না। বারবার আমার সাথে চোখাচোখি হয়েছে। এইইইই ......... পরে কথা বলবো জনি ফোন করছে। হ্যালো ............

কাল্পনিকতার ছোঁয়া থাকলেও উপরের টুকরো ঘটনাগুলো সমাজেরই এক গুরুত্বপুর্ণ অংশের কিছু খন্ডচিত্র। বুঝতে পারছেন তো তারা কারা। হ্যাঁ তারা আমাদেরই বর্তমান তরুণ প্রজন্ম। কালের আবর্তে আজ আমাদের বাস্তবতা হল এমন যে আমরা সে সকল বিষয় নিয়ে বিশদভাবে আলাপ আলোচনা করি যা আমাদের মনে আমোদ ফুর্তির রসদ যোগায়, যা আমরা বাস্তবে সংগঠিত হতে দেখি। এজন্যই ফুটবলপ্রেমীরা ব্যস্ত মেসি-রোনালদোকে নিয়ে কিংবা বার্সা রিয়াল নিয়ে, অথবা কোন প্লেয়ার কোন টিমে যাচ্ছে এই সংক্রান্থ খবরগুলো নিয়ে। এই তরুণদের কাছে খবর থাকে লেটেস্ট মুভি, লেটেস্ট গানের। অথবা ব্যস্ত পালসার কিংবা ইয়ামাহা নিয়ে। চিন্তায় শুধু সালমানের ফিগার আর ঋত্বিকের সেই ধুম মাচালে বাইক। সেই সাথে তারা সচেতন প্রেম সংক্রান্থ সকল উপকরণাদির।

আজকের তরুণ সমাজ তার দৈনন্দিন জীবনের এ সকল তুচ্ছ ঘটনাগুলোর পিছনে দুহাত বিলিয়ে সময় নষ্ট করার মাধ্যমে এমন এক অপরিহার্য বিষয় ভূলে থাকতে চাই যা জীবনের সবচেয়ে অবশ্যম্ভাবী এক ঘটনা। মৃত্যু ......... । বর্তমানে তা এমনই এক নিষিদ্ধ বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে যে যখনই এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা তৈরী হয় তখনই অপ্রাসঙ্গিকভাবে প্রসঙ্গটি পরিবর্তন করা হয় বা করতে চেষ্টা করে।

ব্যাপারটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক যে আমরা মৃত্যুর চিন্তাকে এড়িয়ে চলতে চাই। এই মৃত্যুই হল এমনই এক সুনির্দিষ্ট বিষয় যার স্বাদ আমাদের সকলকে গ্রহণ করতে হবে। এই মৃত্যুর রেখা যা কখনোই অতিক্রম করা সম্ভব নয়। আমাদের চারপাশে কত মানুষই না বিদ্যমান ছিল যারা দুনিয়া হতে বিদায় গ্রহণ করেছে। আমাদের পরিবারে, মহল্লায়, বন্ধুমহলে এমনই অনেকেই ছিল যারা আজ স্মৃতির পাতায় ঠাঁই করে নিয়েছে। পশ্চিমা চিন্তার দূষণে আজ আমরা এই মৃত্যু থেকে পালিয়ে বেড়ানোর চেষ্টায় লিপ্ত আছি। তবে এই মৃত্যু হতে পলায়নের পেছনে আমাদের মাঝে যে বিষয়টি প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে তা হল ভয়। অজানার এক ভয়, যা আমাদেরকে গ্রাস করে নেয়। এই ভয় হল দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে যাওয়ার ভয়। সকল আরাম আয়েশ, আমোদ ফুর্তি ছেড়ে যাওয়ার ভয়। জীবন-মৃত্যু হতে পলায়নপর নীতি অবলম্বন করার কারণে স্বাভাবিকভাবে আমরা সেই সকল কাজগুলোতে নিজেকে ব্যস্ত রাখছি যা আমাদের এই ভয়কে দূরে সরিয়ে রাখতে সমধুরভাবে কাজ করছে। এজন্য আমরা মওজ মাস্তি, আমোদ ফুর্তি, হৈ হুল্লোড়ের মাঝে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে চাই।

বাড়ি, গাড়ি এবং নারীর পেছনে ছুটতে ছুটতে আজ আমরা মৃত্যুর এই চরম বাস্তবতা সম্পর্কে উদাসীন। আমরা কি কখনো চিন্তা করে দেখেছি যে, একদিন এই হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাবে যা এতদিন কোন মেয়ের জন্য অস্থির ছিল, সেই মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিবে যা দিয়ে কখনো সৃজনশীল কিংবা কখনো পশ্চিমা অপসংস্কৃতির অনুকরণ করার কাজে ব্যবহার করেছি। আমাদের এই দেহ মিশে যাবে মাটির সাথে যা দিনের পর দিন জিমে গিয়ে, কাজল, মাসকারা লাগিয়ে লালন পালন করেছি। ইচ্ছাই হোক কিংবা অনিচ্ছাই হোক আমাদের প্রত্যেককে মরতে হবেই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন

প্রত্যেকটি প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। সুরা আম্বিয়াঃ৩৫
তোমরা যেখানেই থাকনা কেন মৃত্যু তোমাদের গ্রাস করবেই। সুরা নিসাঃ৭৮

অন্যান্য ব্যবস্থাগুলো তো মৃত্যুকে ভুলে থাকতে শেখায়, কিন্তু মানুষ কি পারবে মৃত্যকে ভুলে থাকতে? না কখনোই না। মুসলিম বলুক কিংবা অমুসলিম সকলকেই এর মুখোমুখি হতে হবে। তবে আমরা স্বাক্ষ্য দিয়েছি আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। আমরা জানি আমাদের সকলকে আবার তারই কাছে ফিরে যেতে হবে। তাই এই মৃত্যুই শেষ নয় সবকিছুর। মৃত্যুই হল সবশেষের শুরু। এটাই হল অন্তহীন জীবনের শুরু। আখিরাত যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বারবার অবহিত করেছেন। কঠিন জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে সেই দিন যখন মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নির্দেশে সবাইকে একত্রিত করা হবে। এবং কর্মফলের প্রতিদান সরূপ জান্নাত অথবা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হতে হবে সবাইকে।

মৃত্যুর চিন্তা মুসলিমদের স্মরণ করিয়ে দেয় আখিরাতের কঠিন বাস্তবতা সম্পর্কে এবং হুঁশিয়ার করে দেয় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার আদেশ নিষেধগুলো। আল্লাহর রাসুল (সা) বলেন “বুদ্ধিমান হল সে যে তার জীবনকে শৃঙ্খলিত করে নিয়েছে ও মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য কাজ করেছে, আর দেউলিয়া তো সেই যে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে অতঃপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে বিফল প্রার্থনা করে।”

যতই কুল কিংবা রাফ অ্যান্ড টাফ চিন্তা আমরা করি না কেন মৃত্যুর সাথে মোলাকাত আমাদের হবেই, আমাদের রবের সামনে আমাদের দাড়াতে হবেই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেনঃ

“তাদেরকে বলঃ যে মৃত্যু থেকে তোমরা পালাচ্ছো সে তো তোমাদের কাছে আসবেই। তখন তোমাদেরকে ঐ আল্লাহর কাছে পেশ করা হবে, যিনি গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছুই জানেন। আর তিনি তোমাদেরকে সব কিছুই জানিয়ে দিবেন যা তোমরা করেছিলে।” [সুরা আল জুমুআঃ৮]

সময়টা তখন খুব দেরী হয়ে যাবে যখন আসলে কিছুই করার থাকবে না। সুযোগ থাকবে না পিছনে ফিরে যাওয়ার। আমরা পারব না আমাদের গুনাহগুলোকে পরিবর্তন করতে। পারবো না আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে ক্ষমা চাইতে। থাকবে না ফেলে আসা সালাতগুলো আদায়ের কোন সুযোগ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেনঃ

“এমন কি যখন তাদের মধ্যে কারো মৃত্যু এসে যাবে তখন সে বলবেঃ “হে আমার রব, আমাকে ঐ দুনিয়ায় ফিরিয়ে দাও যা আমি ছেড়ে এসেছি। আশা করি এখন আমি নেক আমল করবো” কখনোই নয়। এটা একটা কথার কথা মাত্র যা তারা বলেছে। (মরবার পর) তাদের পেছনে একটা সীমারেখা রয়েছে, আবার তাদেরকে উঠাবার দিন পর্যন্ত (সেখানেই থাকবে)। তারপর যখনি শিঙ্গায় ফু দেওয়া হবে, তখন তাদের মধ্যে কোন আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকবে না এবং তারা একে অপরকে জিজ্ঞাসাবাদও করবে না। তখন যার (নেকির) পাল্লা ভারী হবে সে ই সফল হবে। আর যার পাল্লা হালকা হবে, তারা হবে ঐ সব লোক, যারা নিজেরাই নিজেদেরকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। তারা চিরকাল দোযখে থাকবে।”

মৃত্যুর চিন্তা আমাদেরকে শিখায় জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দেয়া বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে এবং হারাম থেকে দূরে থাকতে। সময় এখনো ফুরিয়ে যায় নি। যতক্ষণ এই দেহে প্রাণ আছে ততক্ষণ আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা প্রদত্ত সুযোগ হতে বঞ্চিত নয়। একদা রাবী বিন খাইসাম নামক এক ধার্মিক ব্যাক্তি তার ঘরের ভেতর কবর খুঁড়ে রেখে ছিল। যখনই সে কোন দোষ কিংবা গুনাহ করত তখনই সে কবরের মধ্যে শুয়ে পড়ত এবং সে ততক্ষণ শুয়ে থাকতো যতক্ষণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা চাইতেন ও সে নিজে নিজে বলত “ হে আমার রব আমাকে আবার ফিরিয়ে দিন দুনিয়ায় যাতে আমি সেই কাজগুলো করতে পারি যা আমি আগে অবজ্ঞা করতাম” তখন সে নিজেই বলে উঠত “ ও রাবী যাও, তোমাকে ফিরিয়ে দেওয়া হল এবং কাজ কর ......”

রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ “সেই মৃত্যুর চিন্তা বেশী বেশী কর যা সমস্ত কামনা বাসনার বিনাশকারী” [তিরমিযী]

এবং তিনি আরো বলেছেনঃ “যদি পশুরা জানত যে আদম সন্তানেরা মৃত্যু সম্পর্কে যা জানে, তাহলে তাদের মাঝে তুমি কোন চর্বিই খুঁজে পেতে না। ”(আল বায়হাকী, আল শা’আব)

আমরা জানি মৃত্যুর চিন্তা আমাদের মনে কোন দুর্বল প্রভাব সৃষ্টি করে না, ভালো ভাবেই তা আমাদেরকে নাড়া দেয়। তাই আমরা যখন কাউকে আমাদের সামনে মারা যেতে দেখি তখন আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি কিংবা আমরাও মৃত্যুর সন্নিকটে চলে যায়। তখনই আমরা দৌড়ে ছুটে যায় মসজিদে। নামাজ কালাম পড়া শুরু করে দেয়। কিন্তু যখনই কিছু সময় অতিবাহিত হয়ে যায় তখন আমরা আবার পুর্বের অবস্থায় ফিরে যায়। অথচ এই মৃত্যুর চিন্তা সব সময় আমাদের মনে অগ্রবর্তী হিসেবে কাজ করা উচিত এবং তা স্থায়ীভাবে আমাদের মনে রেখাপাত করা উচিত।

রাসুলুল্লাহ (সা) একদিন আবদুল্লাহ বিন উমর (রা) কে বললেনঃ যদি তুমি সকাল পর্যন্ত বেঁচে থাক তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেঁচে থাকার আশা পোষণ করো না এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত বেঁচে থাকলে সকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকার আশা পোষণ করো না, জীবন থেকে মৃত্যুর জন্য কিছু নিয়ে যাও এবং সুস্থতা থেকে রোগাক্রান্ত অবস্থার জন্য। ওহে আবদুল্লাহ তুমি হয়তো জানো না, হতে পারে আগামীকাল তোমারই দিন। (বুখারী)

মুসলিমদের কখনোই উচিত নয় যে, সে সাময়িকভাবে ইসলামের পিছনে ছুটবে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে অনুতপ্ত হবে, আবার গুনাহের দিকে ফিরে যাবে। তাহলে আমরা কেমনে আশা করতে পারি যে তিনি আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা জালিমদের পথ প্রদর্শন করেন না।

“আর তাদের জন্য তওবা করার কোন অবকাশই নেই, যারা (আজীবন) শুধু গুনাহের কাজ করতে থাকে এবং এভাবেই (গুনাহের কাজ করতে করতে) যখন একদিন তাদের কাছে মৃত্যু এসে হাজির হয়, তখন সে বলে, (হে আল্লাহ) আমি এখন তওবা করলাম, এমনি ভাবে তাদের জন্যও নয় যারা কাফের হিসেবে মৃত্যু বরণ করল। এরা হচ্ছে সে সব লোক যাদের জন্য আমি যন্ত্রণাদায়ক আযাবের ব্যবস্থা করে রেখেছি।” সুরাঃ আন নিসা-১৮

মৃত্যুর ভাবনাই আমাদের জীবন সম্পর্কে সচেতন হতে ও এই জীবনকে একটি ক্ষণস্থায়ী আবাসভূমি হিসেবে বিবেচনা করতে সহায়তা করে। এই দুনিয়া তো একটি পরীক্ষাক্ষেত্র যেখানে ক্ষণে ক্ষণে পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়। এই পরীক্ষার পরিসমাপ্তিই হল মৃত্যু। অতএব দুনিয়ার প্রতি মোহাবিষ্ট হয়ে কিভাবে আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সীমালঙ্ঘন করতে পারি। এটি এমন একটি বাধা হিসেবে কাজ করে যা সকল প্রকার সীমালঙ্ঘন হতে আমাদের রক্ষা করে। এবং দুনিয়ার ধোঁকা হতে আমাদের হেফাজত করে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেনঃ

“ভাল করে জেনে রেখো যে, এই দুনিয়ার জীবনটা খেল তামাশা, মন-ভোলানোর (উপকরণ), সাজ সজ্জার, তোমাদের একে অপরের উপর গর্ব এবং ধনে জনে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই নই।” [সুরা হাদীদঃ ২০]

ইবন উমর (রা) বলেছেনঃ আমি একবার রাসুলুল্লাহ (সা) গিয়েছিলাম এবং আমি ছিলাম দশ জন ব্যাক্তির মাঝে দশম জন। তখন আনসারদের মধ্য হতে একজন প্রশ্ন করল “ ইয়া আল্লাহর রাসুল (সা) মানুষের মধ্যে কে বেশী বুদ্ধিমান এবং কে বেশী সম্মানিত? তিনি (সা) বলেনঃ তারাই যারা মৃত্যুর কথা বেশী বেশী স্মরণ করে এবং তার জন্য কঠোর পরিশ্রম ও প্রস্তুতি গ্রহণ করে। তারাই হল সম্মানিত এবং আখিরাতের জন্য মর্যাদা লাভ করেছে”

উসমান বিন আফফান (রা) তার জীবনের শেষ খুতবায় বলেনঃ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তোমাদেরকে এই দুনিয়া দিয়েছেন যাতে তোমরা আখিরাতের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পার, একে নিয়ে পড়ে থাকার জন্য নয়, এই দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী কিন্তু আখিরাত চিরস্থায়ী। অতএব এমন কিছু কর না যা অবশেষে তোমাকে অবহেলিত করবে, এমন কিছুতে নিজেকে ব্যস্ত রেখো না যা ক্ষণস্থায়ী। তাই সেই পথের সন্ধান কর যা চিরস্থায়ী। অবশ্যই আমাদের দুনিয়া হতে বিদায় নিতে হবে এবং আমাদের আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সাথে মিলিত হতে হবে। মৃত্যু আমাদের আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, এর চেয়ে ভালো স্মরণ আর কি আছে?

রাসুলুল্লাহ (সা) আমাদের এমন অনেক কাজেই উৎসাহ দান করেছেন যা মৃত্যুর চিন্তা করতে আমাদের বাধ্য করে। যেমনঃ আবু যর (রা) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেনঃ তোমরা কবর জিয়ারত কর, এটা তোমাদের আখিরাতের স্মরণ করিয়ে দিবে এবং মৃত ব্যাক্তিকে গোসল করিয়ে দাও, এটা একটি উল্লেখযোগ্য সতর্ক সংকেত এবং জানাজার নামাজ আদায় করবে হয়তো তা তোমাদের বিষণ্ণ করবে, এই বিষণ্ণতার জন্য সে আল্লাহর রহমতের ছায়ায় আছে। (ইবন আবি আল দুনিয়া, আল হাকিম)

ইবন আবি মুলাইকাহ হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেনঃ তোমরা মৃতদের দর্শন করবে এবং তাদের শান্তির জন্য দুআ করবে, এতে তোমাদের জন্য রয়েছে এক সতর্কবাণী।(ইবন আবি আল দুনিয়া)

এবং আল দাহিক হতে বর্ণিতঃ একবার এক লোক জিজ্ঞেস করল “ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা) মানুষের মধ্যে সবচেয়ে সংযমী কে? তিনি (সা) বলেনঃ সেই ব্যাক্তি যে কখনো কবরের চিন্তা হতে বিস্মৃত নন এবং দুনিয়ার ঐশ্বর্যকে বিদায় জানিয়েছে, যে চিরস্থায়ী পথের সন্ধানে রয়েছে, যে কখনো আগামীকালের বিবেচনা করে না এবং সবসময় নিজেকে কবরবাসীদেরই একজন বলে মনে করে।”

এটা অনেক সহজ আমাদের মন হতে মৃত্যুর চিন্তা দূরে ফেলে দেওয়া, বিশ্বাস করতে শুরু করা যে আমি আরো অনেকদিন বেঁচে থাকবো, কিন্তু মৃত্যুর ফেরেশতা আজরাইল কি আমাকে ছেড়ে দিবে? কখনোই না। তরুণ হোক কিংবা বৃদ্ধ সময় হলে কারো নিস্তার নেই।

যাই হোক মৃত্যুর চিন্তা মানে এই নয় যে আমরা কান্নাকাটি কিংবা বিলাপ করে পার করে দেব। অথবা কারো সামনে মৃত্যু চলে এলে তাকে তিরস্কার করব। অথবা শুধুই কবর জিয়ারত কিংবা জানাজার নামাজে উপস্থিত হব। মূলত মুমিনরা যখন অনুধাবন করে যেকোনো সময় তাকে তার রবের সাথে মিলিত হতে হবে, তার পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে এবং তওবা করার পথ বন্ধ হয়ে যাবে তখনই সে সতর্ক হয়ে যায়, সে আরো সতর্কতার সাথে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার আদেশ পালন করতে থাকে। তার প্রত্যেকটা সেকেন্ড আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার স্মরণে লিপ্ত থাকে।

তাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে আমরা প্রার্থনা করি “হে আল্লাহ ক্ষমা করে দাও মুসলিম উম্মাহকে, হেদায়েত দান কর পথহারাদের, খিলাফতের মধ্যেই আমাদের মৃত্যু দান কর, আমাদেরকে সেই মৃত্যু দান কর যা তুমি মুসাইব, জাফর, হানজালা (রা) দেরকে দিয়েছো, সেই মৃত্যু নয় যা আবু জাহল, আবু লাহাব, সাদ্দাম, গাদ্দাফীর জন্য নির্ধারিত ছিল। নিশ্চয় তুমি ক্ষমাশীল ও শ্রবণকারী।”

বলুনঃ নিশ্চয়ই আমার নামায, আমার কাজকর্ম, আমার জীবন, আমার মরণ, সব কিছুই সৃষ্টিকুলের মালিক আল্লাহ তায়ালার জন্য। সুরা আল আন’আম- ১৬২

শনিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১১

এবং জঙ্গীবাদ


সময়ের সাথে দুরন্তর গতিতে ছুটে চলা রাজনীতির পাঠটা যেন না নিলেই নয় মহাকাশের পথে পাড়ি দেওয়া গতিশীল রকেটের চেয়েও দ্রুত গতিতে পরিবর্তন হচ্ছে এর পটভূমি রাজনীতি বিষয়টিই হল এমন, সর্বদা গতিশীল সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো যেন মানুষের চিন্তার জগতকে নতুন করে সাজাতে শুরু করেছে ছাই পাশ দিয়ে ঢেকে রাখা সেই উজ্জ্বল জীবন প্রদীপ যেন চিৎকার করে বলছে  ইসলাম, ইসলাম এবং শুধুই ইসলাম সাহিত্যের ভাষায় বর্ণনা করে যাওয়া কথাগুলো আসলে আজ বর্তমানে বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চেরই এক প্রতিচ্ছবি গত কয়েক দশক ধরে বৈশ্বিক এই মঞ্চে একচ্ছত্রভাবে নায়কের ভূমিকা পালন করে যাওয়া আমেরিকা আজ চারিদিক হতে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন অর্থনৈতিক মন্দা যার ফলশ্রুতিতে আভ্যন্তরীণ সমস্যা, রাশিয়ার পুনঃ আবির্ভাব, ইউরোপের ক্রমাগত উন্নতি এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে ইসলামের উত্থান তাকে এমন এক গোলক ধাঁধায় ফেলে দিয়েছে যা হতে পালানোর কোন পথই আজ খোলা নেই তাই আজ সে মৃত্যুর কঠিন প্রহর গুনে চলেছে

সৃষ্টির সূচনা থেকেই হক ও বাতিলের মাঝে এক আপোষহীন লড়াই চলে এসেছে এবং এটি সেই সময় পর্যন্ত থাকবে যতক্ষণ না আমরা সকলে পরম করুণাময়ের আদেশে উথিত হয় আমরা দেখেছি ইসলামের সূচনা কুফরের ভীত নাড়িয়ে দিয়েছিলো কাঁপিয়ে ছিল কাফের কুরাইশদের অন্তরাত্মা ঠিক তেমনি ভাবে আজ সমগ্র বিশ্বজুড়ে ইসলামের উত্থান কাফের সাম্রাজ্যবাদীদের চিন্তার একমাত্র কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে যে সকল শাসকেরা এক সময় আজ্ঞাবহ দাসের ন্যায় তাদের হুকুম পালন করে চলেছিল, আজ তাদের মধ্যে কতেক হয়েছে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত আর কতেক গুনে চলেছে তাদের মৃত্যুর প্রহর দশকের পর দশক ধরে ইহুদীবাদের মদদপুষ্ট সাম্রাজ্যবাদীদের বেতনভুক্ত এই দালালেরা আজ ক্ষমতাচ্যুত আরব বিশ্বের বাস্তবতায় যে বিষয়টি কল্পনারও অতীত ছিল মুসলিম উম্মাহ তা আজ করে দেখিয়েছে দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে করে চলা অত্যাচার ও অমানবিক নির্যাতন তাদেরকে রাজপথে নামতে বাধ্য করেছে এত কিছুর পরেও এই সব নেকড়ে হায়েনার দল মুসলিম উম্মাহর ইচ্ছা এবং আকাঙ্খাকে ধূলি ধুসর করার নেশা বাদ দেয় নি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না কারণ তা তার অস্তিত্বের সাথে জড়িত

পাকিস্তানের নাম শুনলে আমাদের দেশের কিছু সংখ্যক মানুষের রয়েছে যাদের মাঝে জাতীয়তাবাদী চেতনা লাফ দিয়ে উঠে বাস্তবে এই চেতনা খুবই সাময়িক এবং যুক্তির খাতিরে চাঙ্গা হয় আর কি? ব্যাপার হল ৯০ এর দশকে পাকিস্তান আর ১১ এর পাকিস্তান এর মাঝে বিশাল এক ফারাক খুঁজে পাওয়া বর্তমান পাকিস্তান বলতে আমরা যা দেখি তা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে থাকা একটি রাষ্ট্র ছাড়া আর কিছু নয় কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হল কেন আজ বিশ্বের একমাত্র পারমাণবিক অস্ত্রধারী মুসলিম দেশটির এই অবস্থা? কেনই বা প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই দেশটি দুর্দশায় জর্জরিত? কিভাবে হল এই দুর্দশা? আমাদের সমাজের তথাকথিত সুশীল (!) লোকেরা চিৎকার করে বলে ইসলামী চিন্তা ধারায় বেড়ে উঠা এই গোঁড়া লোকগুলোই তাদের ধ্বংসের জন্য দায়ী তাই তারা তড়িঘড়ি করে উঠে পড়ে লাগে বাংলাদেশ যাতে আবার এদের মত হয়ে না পড়ে সাম্রাজ্যবাদের আয়নায় আজ মানুষকে মারার জন্য অস্ত্রের প্রয়োজন পড়ে না, যে চিন্তা দিয়ে মানুষ পরিচালিত হয় তাকে নশৃংসভাবে খুন করে ফেললেই হয় তাই তারা আজ এই খুন করার কাজে ব্যস্ত ৯০ এর দিক থেকে পাকিস্তানের তরুণ সমাজকে দেওয়া হয় স্মার্টনেসের সেই ধারণা যা আজ বাংলাদেশের তরুণদের মাঝে দেওয়া হচ্ছে স্বাভাবিকভাবে সে স্মার্ট হতে যখন শুরু করে তখন তার মাঝে দেখা যায় বিভিন্ন ধরণের পরিবর্তন এই পরিবর্তনের ছোঁয়ায় সে এতটায় মোহাচ্ছন্ন যে তার দেশ নিয়ে ঘটে চলা ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সে বেমালুম ঠিক সেই ভাবে মার্কিন বাহিনীর সাথে যৌথ সামরিক মহড়া হতে থাকে, যেমনটা আজকের বাংলাদেশের টাইগার-শার্ক অনুষ্ঠিত হয় হোক না, সমস্যা কোথায়? এটা তো বন্ধুত্ব তো এভাবেই চলতে থাকে তাদের মাঝে বন্ধুত্ব একটা কথা প্রচলিত রয়েছে যে, আমেরিকা যার বন্ধু তার আর শত্রুর প্রয়োজন নেই তো স্বাভাবিকভাবে তার আর শত্রুর প্রয়োজন হয় নি আমেরিকা একাই একশ এই বন্ধুত্বের নমুনা আজ এই ভঙ্গুর পাকিস্তান এবার এই ভঙ্গুরতা থেকে পরিত্রাণের পথ যখন সে আল্লাহ এবং তার রাসুলের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে তখনই সে শিকার হল সেই দ্বন্দের যা ১৪০০ শত বছর ধরে চলে আসছে তাদের সমাজের তথাকথিত সুশীলেরা আঘাত করা শুরু করল সেই ইসলামকে যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মানবজাতির জন্য একমাত্র জীবন ব্যবস্থা হিসেবে মনোনীত করেছেন ফলে ইসলামের শত্রুরা পেয়ে যায় কিছু স্বঘোষিত দালাল এবং আজো অবধি তারা ক্ষতবিক্ষত করে যাচ্ছে মুহাম্মদ বিন কাশিমের আগমণস্থলকে তার সাথে আমেরিকার ষড়যন্ত্রতো রয়েছেই

আজ অনেকেই ভয় দেখায় বাংলাদেশকে পাকিস্তান হওয়া থেকে রুখতে হবে কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি তাদের কারো মাঝেই এ সম্পর্কে আন্তরিকতার লেশ মাত্রই নেই পাকিস্তানের দালাল শাসকগুলোর ন্যায় আমাদেরও পশ্চিমা হুকুমের দাস শাসকেরা ঐ সব নীতি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে যা অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির সম্মুখীন করবে ভারতের করায়ত্ত করাতে চাই যাতে আমরা কখনো মাথা উঁচু করে দাড়াতে না পারি সবচেয়ে বড়কথা হল সেই বন্ধুর সাথে বন্ধুত্ব করতে বাধ্য করছে যার জন্য শত্রুর দরকার নেই তো আমাদের সতর্ক হওয়া প্রয়োজন যাতে আমরা শুরুতেই এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে পারি সমগ্র মুসলিম বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও যখন রাজনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে ইসলামের উত্থান ঘটছে তখনই একশ্রেণীর তথাকথিত বুদ্ধিজীবিরা (!) ইসলামের বিরুদ্ধে প্রপাগন্ডা চালানো শুরু করেছে নিজের খায়েশ মেটানোর জন্য তারা বিরোধিতা করে যাচ্ছে এমনকি তাদের মাঝে কেউ কেউ আল্লাহর রাসুল (সা) কে জীবনীও লিখবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন স্বাভাবিকভাবে নৌকার মাঝিকে যদি বিমানের পাইলট এর জায়গায় বসিয়ে দেয় তাহলে চিন্তা করুন তো ব্যাপারটা কেমন হবে? তবে এই উদ্যেগ থেকে কিছু জিনিস মাথার মাঝে জমজম কুপের পানির মত পরিষ্কার হয়ে গেল এই সমাজের তথাকথিত কিছু সুশীলদের মাঝে এই উত্থান যে দুশ্চিন্তার এক সিডর বয়ে দিচ্ছে তাতে আজ কোন সন্দেহ নেই তাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য হল মানুষের চিন্তাকে কলুষিত করা বিভ্রান্ত করা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নিয়ামত হতে তবে ইতিহাস তো স্বাক্ষী, ব্যাপারগুলো সব সময় এমনই ঘটেছে যে আল্লাহর দ্বীনকে যারা পরিবর্তন করতে চাই তারাই মূলত পরিবর্তন হয়ে যায়

আমাদের দেশের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে একটা বিষয়ের খুব চলন দেখা যায়, তা হল সাম্রাজ্যবাদীরা আমেরিকা ব্রিটেন যাই বলে তাই আমাদের মত আম জনতা তো বটেই, কিছু পরগাছা টাইপের বুদ্ধিজীবিরা অকপটে শেখানো বুলির ন্যায় আওড়ানো শুরু করে দেয়। এই যেমনঃ জঙ্গিবাদ কিংবা সন্ত্রাসবাদ। ৮০ এর দশকের সূচনালগ্নে আমেরিকা ও বৃটিশ গোয়েন্দা সংস্থা সন্ত্রাসবাদকে পরিবর্তন করে দেয় এক নতুন সংজ্ঞায়। তা হল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য জনগণের স্বার্থবিরোধী যেকোন সহিংস পদ্ধতি অবলম্বন করা। রাজনৈতিক পরিমণ্ডল থেকে যখন সমাজতন্ত্র বিলুপ্ত তাই অতি স্বাভাবিকভাবে ইসলামই হল তাদের আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু। তাই তারা মুসলিমদের জীবনে ইসলামী জীবনব্যবস্থা ফিরিয়ে নিয়ে আসার প্রত্যেকটি আন্দোলনকে তারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের আওতায় নিয়ে আসে। যার ফলে তারা প্রতিনিয়ত সে সকল সচেতন, সাহসী ব্যাক্তিদের জেল জুলুম ও অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে যারা তাদের প্রভুর প্রতি দেওয়া ওয়াদা পূরণে আন্তরিক। ইরাক, আফগানিস্তান আজ তাদের এই সন্ত্রাসবাদের শিকার। ফিলিস্তিনের সেই ছোট্ট শিশুটি হল দুনিয়ার সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী যে এখনো ভালো করে হাঁটতে শেখেনি। বসনিয়া, চেচনিয়া, স্রেবেনিকার গণহত্যা, ইরাক আফগানিস্তানের মা বোনদের ধর্ষণ করা কোন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড নয়, গাজার আগ্রাসন যেন নিতান্তই ছেলে খেলা। তো মানুষের বুঝতে বাকি নেই যে সন্ত্রাসবাদ বলতে কি বোঝানো হচ্ছে। জঙ্গিবাদ শব্দটি তো আর মজার বিষয় যা আফগানিস্তান আক্রমণের পর থেকে শুনে আসছি আমরা। আর এক্ষেত্রে আমাদের লেজকাটা বৈতনিক দালালেরা তাদের প্রভুদের চেয়েও এক ধাপ এগিয়ে। জঙ্গিবাদকে নিয়ে তাদের রয়েছে অন্যরকম প্রচারণা। শয়নে স্বপনে যেন তাদের একটাই ধ্যান তা হল জঙ্গিবাদ, সম্প্রতি একজন গডফাদার মেয়র নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন এবং তিনি আশঙ্কা করছেন জঙ্গি হামলার। পশ্চিমাদের দেওয়া ট্যাবলেটের প্রতিক্রিয়া যেন তাদের ছাড়েই না। জঙ্গি জঙ্গি বলে তারা এমন রব তোলায় ব্যস্ত যাতে মানুষের মাঝে বদ্ধমূল ধারণা হয়ে যায় আসলে জঙ্গি বলতে ভীতিকর কিছু একটা রয়েছে। এই রব হল এমন এক পটভূমির প্রস্তুতি যা আমরা বৈশ্বিক রাজনীতির দিকে তাকালেই এর উত্তর খুঁজে পাব। আমাদেরকে দেয়া হচ্ছে এক অজানা নাশকতার আভাস। যে নাশকতা এদেশে সাম্রাজ্যবাদী হায়েনা আমেরিকা ও আধিপত্যবাদী খুনি ভারতের পদচিহ্নকে শক্তিশালী করবে, যেমনটা আজকের ইরাক, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান। হয়ত অদূর ভবিষ্যতে পাকিস্তানের ব্ল্যাকওয়াটার এর ন্যায় ভাড়া করা গুণ্ডা ও খুনী বাহিনী দিয়ে বোমা হামলা ঘটিয়ে লাগিয়ে দিবে জঙ্গিবাদের সহজ লেভেল। এরই মাধ্যমে তারা মানুষের মাঝে ভীতি চড়াতে চাই যাতে তারা ইসলামের দিকে ফিরে না আসে, সেই শক্তিশালী ব্যবস্থার আশা পোষণ করা যেন ছেড়ে দেই যা ১৪০০ শত বছর পুরো বিশ্বকে যোগ্যতার সাথে নেতৃত্ব্য দিয়েছিল। কিন্তু আল্লাহু আকবর, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ পরিকল্পনাকারী। ইতিহাস স্বাক্ষী এই অঞ্চলের মানুষ ইসলামকে একসময় বেছে নিয়েছিল তার উপর ঘটে চলা নির্যাতন, নিপীড়ন তথা মুক্তির একমাত্র পথ হিসেবে। সেই সাহসী উত্তরসুরীদের পথ ধরে আজ মুহাম্মদ (সা) এর সম্মানিত উম্মতেরা পুনরায় জাগরিত হওয়ার অপেক্ষায়। জালিম শাসকদের চোখ রাঙ্গানী তার কাছে এখন তুচ্ছ জ্ঞান। তারা প্রতীক্ষা করছে তাদের বহুদিনের আরাধ্য মর্যাদাপুর্ণ খিলাফতের। তাই আজ আমাদের সতর্কতার সাথে প্রত্যেকটি বিষয় পর্যালোচনা করে এগিয়ে যেতে হবে এবং মোকাবেলা করতে হবে সেই সকল দুষিত ধ্যান-ধারণার যা কুফফার আমাদের মাঝে চাপিয়ে দিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে চাই। সর্বোপরি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে দুআ করি  হে আল্লাহ তুমি আমাদের অন্তরে তোমার ভয় আর তোমার জাহান্নামের ভয় ছাড়া আর কোন ভয় রেখো না, আমাদেরকে সেই খিলাফত দান কর যা তুমি আমাদের পুর্ববর্তীদের দান করেছো এবং সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে বিজয় দান কর।“ “আমিন”

শুক্রবার, ১১ নভেম্বর, ২০১১

তাগুতকে অস্বীকার করা তাওহীদের অন্যতম প্রধান রুকন

আমরা যারা মুসলিম তাদের সাথে অন্যদের পার্থক্য হচ্ছে আমরা তাওহীদের স্বীকারোক্তি দিয়েছি যা অন্যরা দেয়নি। আবার আমাদের মধ্যে অনেকেই তাওহীদ বলতে শুধুমাত্র বুঝি আল্লাহর একত্ববাদ, কিন্তু এই বিষয়টি আমরা সার্বিক ভাবে জানি না। আমার এই লেখাটিতে আমি তাওহীদের একটি গুরুত্বপুর্ন রুকন নিয়ে আলোচনা করব যা হল তাগুত। তাগুত সম্পর্কে কোন জ্ঞান না থাকার কারণে মুসলিমরা বিবিধ শিরকে লিপ্ত। তাগুত কি তা ভালোভাবে না জানার কারণে তারা শুধু মাজার পুজা, মোমবাতি জ্বালানো এইগুলোকেই শিরক মনে করে। তাই কোরআন ও সুন্নাহ এর আলোকে ইনশাল্লাহ তাগুত কি তা আমরা বুঝার চেষ্টা করব।

তাওহীদের যেমন কিছু শর্ত আছে তেমনি তার কিছু রুকনও আছে

শর্তগুলো হলো ইলম বা জ্ঞান, ইয়াকীন বাঁ দৃঢ় বিশ্বাস, কবুল, ইনকিয়াদ বা সমর্পণ করা, ছিদক বা সত্যতা, ইখলাস বা একনিষ্ঠতা, মুহাব্বাত। নামাজের যেমন কিছু শর্ত আছে তেমনি এগুলো তাওহীদের শর্ত। শর্তগুলো পূরণ হওয়ার সাথে কবুল হওয়া না হওয়া জড়িত।

আর রুকনগুলি পূরণের সাথে শুদ্ধ হওয়া না হওয়ার বিষয়টি জড়িত। তেমনি একটি রুকন হল তাগুতকে অস্বীকার করা।

আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, যে ব্যাক্তি তাগুতকে অস্বীকার করল ও আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলো, সে এমন এক শক্ত রজ্জু ধারণ করল যা কখনো ছিড়ে যাবার নয়(আল বাকারাহঃ২৫৬)

উপরোক্ত আয়াতে শক্ত রজ্জু বলতে কালেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহকেবুঝানো হয়েছে। আর এটাই মূলত তাওহীদের কালেমা। এই আয়াতে স্পষ্টতই বুঝা যাচ্ছে তাগুতকে অস্বীকার করা ঈমানের রুকন।

এখন, প্রশ্ন হল তাগুত কি? আভিধানিকভাবে তাগুত শব্দের অর্থ হল সীমালংঘন করা। কিন্তু শরীয়াতের পরিভাষায় তাগুত হল তাই যেগুলোকে আল্লাহর সাথে শরীক করা হয়। অনেকে তাগুত শব্দের অনুবাদ করেন শয়তান হিসাবে কিন্তু এর সঠিক অর্থ জানার জন্য আমরা দেখব আল্লাহ কোরআনে এই শব্দটিকে কোন অর্থে ব্যবহার করেছেন।

১। যারা তাগুতের দাসত্ব করা থেকে দূরে থাকে এবং আল্লাহ অভিমুখী হয়, তাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ(আল-যুমারঃ১৭)

বুঝা গেলো তাগুত হচ্ছে একটা শক্তি যার দাসত্ব বা আনুগত্য করা হয়। আর যারা তাগুতের আনুগত্যকে বর্জন করবে ও শুধুমাত্র আল্লাহর আনুগত্য করবে তাদের জন্য আল্লাহ সুসংবাদ দিয়েছেন।

২। তুমি তাদের দেখনি যারা কিতাবের কিছু অংশ প্রাপ্ত হয়েছে, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে (মান্য করে) প্রতিমাতাগুতকেএবং কাফেরদের বলে, তারা মুমিনদের তুলনায় অধিকতর সরল-সঠিক পথে রয়েছে। এরা সেসব লোক যাদের উপর লানত করেছেন আল্লাহ তাআলা স্বয়ং। বস্তুত আল্লাহ যার উপর লানত করেছেন তুমি কখনো তার সাহায্যকারী খুঁজে পাবে না(নিসাঃ ৫১)

আলোচ্য আয়াতে ইহুদীদের কথা বলা হচ্ছে যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছিল তাগুতের উপর ও তাকে মান্য করত। সুতরাং, তাগুত এমন এক শক্তি আল্লাহ ব্যতীত যার উপর বিশ্বাস স্থাপন করা হয় ও মান্য করা হয়। যারা এরুপ করে তাদের উপর আল্লাহর লানত।

৩।আপনি তাদের দেখেননি যারা দাবী করে যে, যা আপনার উপর নাযিল হয়েছে তারা সে বিষয়ের উপর ঈমান এনেছে এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে তার প্রতিও বিশ্বাস করে। তারা বিচার ফায়সালাকে তাগুতের কাছে নিয়ে যাতে চায় অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ রয়েছে যাতে করে তারা তাগুতকে অস্বীকার করে(নিসাঃ৬০)

এখানে বুঝা যাচ্ছে তাগুত হল সে যে আল্লাহর আইন ব্যতীত অন্য কিছু দিয়ে বিচার ফায়সালা করে।

৪।যারা ঈমানদার তারা প্রাণান্তকর যুদ্ধ করে আল্লাহর রাহে, পক্ষান্তরে যারা কাফের তারা যুদ্ধ করে তাগুতের পক্ষে(নিসাঃ৭৬)

এখানে বলা হচ্ছে কাফেরেরা তাগুতের পক্ষে যুদ্ধ করত।

৫। যারা কাফের তাদের বন্ধু হল তাগুত এবং ঐ তাগুত তাদেরকে হেদায়েতের আলো থেকে সরিয়ে গোমরাহীর অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়(বাকারাহঃ২৫৭)

৬। বলুন, আমি তোমাদেরকে বলি, কাদের জন্য মন্দ প্রতিফল রয়েছে আল্লাহর কাছে? যাদের প্রতি আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন, যাদের প্রতি তিনি ক্রোধান্বিত হয়েছেন, যাদের কতককে বানর ও শুকরে রুপান্তরিত করেছেন এবং যারা তাগুতের আরাধনা করেছে তারাই মর্যাদার দিক দিয়ে নিকৃষ্টতর এবং সত্যপথ থেকে অনেক দূরে(মায়েদাঃ৬০)

উপরোক্ত আয়াতগুলো থেকে বুঝা যাচ্ছে তাগুত হল তাই আল্লাহ ব্যতীত যার উপর আস্থা রাখা হয়, আনুগত্য করা হয়, দাসত্ব করা হয়, যার বিচার ফায়সালা মানা হয়, কাফেররা যার প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করে। মোদ্দাকথায় আল্লাহর সাথে যাকে শরীক করা হয় তাই তাগুত।

এই তাগুত হতে পারে একটি পাথর যদি আপনি মনে করেন তা সর্বশক্তিমান। হতে পারে আপনার নাফস যদি আপনি নাফসের দাসত্ব করেন। হতে পারে কোন কুফরী মতবাদ বা বিচার ব্যাবস্থা যেমন গণতন্ত্র যেখানে বিচার ফায়সালার মালিক আল্লাহ নন। হতে পারে কোন ব্যাক্তি যাকে অতিরিক্ত মহিমান্বিত করা হয়। যেমনঃ ভন্ড পীর। হতে পারে কিছু লোক বা শক্তি যাদের দাসত্ব করা হয় বা অনুগত্য করা হয়। যেমনঃ আমেরিকা, বুশ, হাসিনা, খালেদা ও অন্য সকল জালেম শাসক। সুতরাং, আল্লাহর কোন গুণাবলীর সাথে আপনি যদি কোন ব্যাক্তিকে, কোন ব্যবস্থাকে অথবা কোন পদার্থকে শরীক করেন তবে তা তাগুত।

ভাইয়েরা চিন্তা করুন, আমরা বলি আমরা তাওহীদের ঘোষনা দিয়েছি কিন্তু আপনি কি তাগুত কে অস্বীকার করেছেন? যেখানে আল্লাহ আমাদের বলেছেন তাগুতকে অস্বীকার কর ও ঈমান আনো সেখানে তাওহীদের এই রুকনটিকে আমরা কতটুকু পালন করছি। আপনি কি এই কুফর ব্যবস্থা বাস্তবায়নকারী তাগুতী সরকার গুলোর বিরুদ্ধে কথা বলেন? আপনি তাগুত আমেরিকার বিপক্ষে কথা বলেন? সমাজে প্রচলিত তাগুতী শিরকগুলোর বিরুদ্ধে আপনি কথা বলেন?

অনেকে বলেন ভাই, আমাদের ঈমান অত্যন্ত দূর্বল। এদের কথা শুনলে মনে হয় ঈমান দূর্বল এই কথাটা বললে মনে অনেক নেকি পাওয়া যায়। তাদেরকে সূরা বাকারাহ এর ২৫৬ নং আয়াত স্মরণ করিয়ে দিতে চায় যেখানে আল্লাহ বলেন, “ যে ব্যাক্তি তাগুতকে অস্বীকার করল ও আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলো, সে এমন এক শক্ত রজ্জু ধারণ করল যা কখনো ছিড়ে যাবার নয়ভাই আগেতো তাওহীদের রুকনটি পূর্ণ করেন, এরপর না হয় ঈমানকে আরো শক্তিশালী কইরেন।

আল্লাহ বলেন, তোমরা আল্লাহ্‌র ইবাদত কর এবং তাগুত থেকে নিরাপদ থাক(সূরা নাহল: ৩৬)

সুতরাং, তাগুতকে অস্বীকার করা ঈমানের দাবী এবং আল্লাহ আমাদেরকে তাগুতকে অস্বীকার করার মত শক্তি দান করুন এবং আমাদের হেদায়াতের পথকে সহজ করে দিন যাতে আমরা আমাদের প্রবৃত্তির দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে পারি।

পরিশেষে আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আমরা একমাত্র আল্লাহকেই ইলাহ হিসেবে মানি। একমাত্র তাকেই ভয় করি এবং পৃথিবীর সকল তাগুতী শক্তিকে অস্বীকার করি। আল্লাহ আমাদেরকে কবুল করুন। আমীন

ইরান আক্রমণের হুমকি নাকি ইসরাইলের আজাইড়া ফাঁপড়

শুনলাম ইসরাইল নাকি আমেরিকার সাহায্য নিয়ে ইরান আক্রম করবে। চিন্তার বিষয়!!!!। যাইহোক আপনাদের অবগতির জন্য সংবাদপত্র হতে সংবাদটির একাংশ নিম্নে দিলামঃ

“ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে আগামী দুই মাসের মধ্যে ইসরায়েল হামলা চালাবে বলে আশঙ্কা করছেন ব্রিটেনের উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা। ব্রিটিশ পত্রিকা ডেইলি মেইল গতকাল বৃহস্পতিবার কয়েকটি সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে জানায়, ওপরের মহল ধারণা করছে, যুক্তরাষ্ট্রের কারিগরি সহযোগিতা নিয়ে ইসরাল ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোকে ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা চালাবে।

তবে ইরান বলেছে, তাদের ওপর কোনো হামলা হলে তা সর্বশক্তি দিয়ে মোকাবিলা করা হবে। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি গতকাল বৃহস্পতিবার এ কথা বলেন।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ডেইলি মেইল জানায়, ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি থেকে দূরে রাখতে হামলা চালাতে পারে ইসরায়েল। সেই 'সময়ও খুব দ্রুত' আসবে বলে মনে করেন ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, 'আমরা মনে করি, বড়দিনের আগেই হয়তো একটা কিছু ঘটে যাবে। আর নয়তো নতুন বছরে (হামলা) হতে পা্রে”।'( দৈনিক কালের কন্ঠ, ১১/১১/১১)

কয়েকদিন পর পর ঘুরেফিরে একই সংবাদ আমরা পাই আর তা হল ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরী করছে। এজন্য মাতব্বর আমেরিকা আর তার জারজ সন্তান ইসরাইলের মাথা খারাপ। তারা এই চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করছে ২০০৩ সাল থেকে যখন International Atomic Energy Agency (IAEA) এর প্রধান আল বারাদি ইরান নিয়া একটি রিপোর্ট দেয়।

ইরানকে নিয়ে আমেরিকা কয়েকদিন পর পর উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে থাকে। এমন আচর করে যেন খুব শীঘ্রই যুদ্ধ হবে। যদিও ইরান সবসময় বলে আসছে তারা পারমাবিক শক্তিকে শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহার করতে চায় কিন্তু আমেরিকা বার বার ইরানকে একটি আতংক হিসাবে তুলে ধরছে এবং এর মাধ্যমে উপসাগরীয় অঞ্চলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করছে। উপসসাগরীয় অঞ্চলে দেশগুলো যেকারণে নিজেদের নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে এবং আমেরিকার সাথে নিরাপত্তা চুক্তি করছে যা মূলত এই অঞ্চলে আমেরিকার অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করছে।

যাই হোক ইসরাল ইরান আক্রমণের যে হুমকি দিয়েছে তা পুরোই অমূলক ও অসম্ভব। তার কারগুলো নিম্নে দেওয়া হলঃ

১। ইরানকে আক্রম করতে হলে তা অবশ্যই বিরাট এলাকা জুড়ে আকস্মিকভাবে করতে হবে।

২। আমেরিকা যখন ইরাকে তার সেনাবাহিনীকে ফিরিয়ে আনতে চাইছে , আক্রম হলে ইরান সেখানে ভয়ংকর সমস্যা তৈরি করতে পারে। কার এই অঞ্চলে শিয়া প্রধান দলগুলোর উপর ইরানের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।

৩। এই অঞ্চলে আমেরিকা তার ঘাঁটিগুলোকে কখনো ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে না কার ইরান তার ব্যালাস্টিক মিসাইলের মাধ্যমে ঐ অঞ্চলে আমেরিকার ও ইসরালের সকল স্থাপনাগুলোকে অল্প সময়ে ধ্বংস করতে সক্ষম।

৪। পারস্য উপসাগর ও হরমুজ প্রণালীর উপর ইরানের নিয়ন্ত্র বেশি। সুতরাং ইরান যদি এই অঞ্চলে সকল জাহাজ চলাচল বা বাণিজ্য বন্ধ করে দেয় তবে তা সরাসরি যুদ্ধের চাইতেও মারাত্বক হবে। কার এতে করে পৃথিবীর ৪০% তেল রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে এবং ভয়াবহ অর্থনৈতিক ধ্বস তৈরী করবে।

৫। এছাড়াও আমেরিকা ও ইরানের মধ্যে কিছু আঞ্চলিক স্বার্থের বন্ধন রয়েছে। যেমন- ইরাক ও আফগানিস্থান পুনর্গঠনে ইরান আমেরিকাকে সাহায্য করছে।

৬। ভূ-রাজনীতিক দিক থেকে আমরা দেখছি রাশিয়া পুনরায় শক্তি অর্জন করছে। এই অঞ্চলে এমনিতেই রাশিয়ার প্রভাব রয়েছে। এই অঞ্চলে পুরোনো প্রভাব ফিরিয়ে আনার জন্য রাশিয়া অবশ্যই ইরানের সাথে সুসম্পর্ক চায়, ফলে কখনোই আমেরিকার সাথে একমত হবে না। শুধু তাই না আমেরিকা যদি ইরান আক্রম করে তবে তা রাশিয়ার জন্য প্রভাব অর্জনের একটি সু্যোগও তৈরি করবে ।

৭। এছাড়াও আমেরিকা যেখানে দীর্ঘ দশ বছরেও আফগানিস্তানে জয়ী হতে পারছে না সেখানে ইরান আক্রম করে সে তার সম্মানের ঝুঁকি নিবে কি? অর্থনৈতিক মন্দায় যেখানে ইউরোপের দেশগুলো কাতর তখন নতুন আরেকটা যুদ্ধ শুরু করার ক্ষমতা তার আছে কি?

তাই ইসরাল এই মুহুর্তে আমেরিকার সাহায্য নিয়ে ইরান আক্রম করবে তা সম্ভব না। বরং এই ধরণের হুমকির পেছনে উদ্দেশ্য হল আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করা। ইরানকে একটি আতংক হিসাবে উপস্থাপন করার মাধ্যমে উপসাগরীয় অঞ্চলে ইরান বিদ্বেষ তৈরি করা ও এই অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলোকে আরো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসা।

একটা প্রবাদ শুনেছিলাম, পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তবেতাই আমি বলব এই হুমকি গুলো হলো আজাইড়া ফাপড়। আমেরিকা আজকে কাগজের বাঘে পরিত হয়েছে , মৃত্যুর প্রহর গুনা ছাড়া তার আর কিছুই করার নেই।

মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর, ২০১১

আলিম ও যুবক

একদিন এক যুবক এক আলিমের কাছে আসল, এসে বলল- হুযুর আমি তো এক তরুণ যুবক, কিন্তু সমস্যা হল আমার মাঝে প্রবল খায়েশ কাজ করে আমি যখন রাস্তা দিয়ে চলা ফেরা করি তখন আমি মেয়েদের দিকে না তাকিয়ে পারি না আমি এখন কি করতে পারি তখন আলিম চিন্তা করল, চিন্তা করার পর তাকে একটা দুধ ভর্তি গ্লাস দিল যার পুরোটায় দুধে কানায় কানায় পুর্ণ ছিল এবং তাকে বললআমি তোমাকে বাজারের একটি ঠিকানা দিচ্ছি তুমি এই দুধটুকু সোজা সেখানে পৌছিয়ে দিয়ে আসবে আলিম তাকে নির্দেশ দিল যে, গ্লাস থেকে এক ফোঁটা দুধও যাতে না পরে, তো যুবকটি বললতা কখনো হবে না অতপর সে তার এক ছাত্রকে তার সহযোগী করে আদেশ দিল, তুমি তার সাথে বাজারে যাও এবং সে যদি যাওয়ার সময় এই গ্লাস থেকে এক ফোঁটা দুধ ফেলে তবে তাকে তুমি চরমভাবে পিটাতে থাকবে যুবকটি সহজেই দুধটুকু বাজারে পৌছিয়ে দিল এবং এই সংবাদ হুযুরকে জানানোর জন্য সে দৌড়ে ছুটে আসল হুযুর জিজ্ঞাসা করলতুমি যাওয়ার সময় কয়টি মেয়ের চেহারা দেখেছো? যুবকটি সবিস্ময়ে বললহুযুর আমি তো বুঝতেই পারি নি আমার চারপাশে কি চলছিল আমি তো এই ভয়েই তটস্থ ছিলাম যে, আমি যদি দুধ ফেলি রাস্তায় সমবেত মানুষের সামনে আমাকে মার এবং অপমানিত হতে হবে হুযুর হাসল এবং বললমুমিনরা ঠিক এভাবেই আল্লাহকে ভয় করে এবং সে চিন্তা করে যদি সে আল্লাহর উপর বিশ্বাস দুধের ন্যায় ছিটকে ফেলে তবে তিনি সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কিয়ামত দিবসে সমগ্র সৃষ্টি জগতের সামনে থাকে অপমানিত করবেন এভাবেই সর্বদাই বিচার দিবসের চিন্তা মুমিনদের গুনাহ হওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখে